আবুল ফিদা
সরঞ্জাম
সাধারণ
মুদ্রণ/রপ্তানি
অন্যান্য প্রকল্পে
আবুল ফিদা | |
---|---|
জন্ম | إسماعيل بن علي بن محمود بن محمد بن عمر بن شاهنشاه بن أيوب بن شادي بن مروان নভেম্বর, ১২৭৩ |
মৃত্যু | ২৭ অক্টোবর ১৩৩১(1331-10-27) (বয়স ৫৭) |
ভাবগুরু | |
ইসমাইল ইবনে আলি ইবনে মাহমুদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে উমর ইবনে শাহানশাহ্ ইবনে আইয়ুব ইবনে শাদি ইবনে মারওয়া[১] ( আরবি: إسماعيل بن علي بن محمود بن محمد بن عمر بن شاهنشاه بن أيوب بن شادي بن مروان) (নভেম্বর ১২৭৩ – ২৭ অক্টোবর, ১৩৩১) ছিলেন মামলুক যুগের একজন সিরীয় ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদ, আইয়ুবীয় আমির এবং হামার স্থানীয় রাজ্যপাল।[২] তবে তিনি আবুল ফিদা' (আরবি: أبو الفداء, (বাংলা) আবুল ফিদা) নামেই অধিক পরিচিত।
তার নামে চাঁদে থাকা আবুলফিদা নামক চন্দ্রকূপটির (ক্রেটার) নামকরণ করা হয়েছে। তিনি কুর্দি বংশোদ্ভূত ছিলেন।
আবু-আল-ফিদা দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তার বাবা মালিক উল-আফজাল মঙ্গোল থেকে চলে এসেছিলেন। মালিক উল-আফজাল ছিলো হামার দ্বিতীয় আমির আল-মনসুর মুহাম্মদের ভাই। আবু-ফিদা ছিলেন আল-মুজাফফর দ্বিতীয় মাহমুদের নাতি। আবার আল-মুজাফফর দ্বিতীয় মাহমুদ ছিলেন আল-মোজাফফর উমরের নাতি, যিনি আবার ছিলেন সালাউদ্দিনের ভাগ্নে এবং নাজমুদ্দিন আইয়ুবের (মূল কুর্দিবংশীয় ব্যক্তি) নাতি।[৩]
বাল্যকালে তিনি কুরআন এবং বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন, কিন্তু ১২ বছর বয়স থেকে তিনি ক্রমশ সামরিক অভিযানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যেগুলোর বেশিরভাগই ছিলো প্রধানত ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে।[৪]
১২৮৫ সালে তিনি নাইটস অফ সেন্ট জন দুর্গ আক্রমণে উপস্থিত ছিলেন এবং ত্রিপোলি, একর ও কালআত আর-রুম অবরোধে অংশ নিয়েছিলেন। ১২৯৮ সালে তিনি মামলুক সুলতান মালিক আল-নাসিরের চাকরিতে প্রবেশ করেন এবং বারো বছর পরে তিনি হামার গভর্নর হিসাবে নিয়োজিত হয়েছিলেন। ১৩১২ সালে তিনি মালিক উস-সালহান উপাধি নিয়ে রাজপুত্র (প্রিন্স) হন এবং ১৩২০ সালে সুলতানের বংশগত পদমর্যাদার মালিক উল-মু'ইয়াদ উপাধি পেয়েছিলেন। [৪]
বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি একসাথে প্রশান্তি ও জাঁকজমক দিয়ে রাজত্ব করেছিলেন। নিজেকে সরকারের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি নিবেদিত করেছিলেন যার জন্য তিনি মূলত কীর্তিমান বলে গণ্য হন। তিনি পণ্ডিত ও গুণী ব্যক্তিদের জন্য ছিলেন একজন উপুড়হস্ত পৃষ্ঠপোষক, তারা তার দরবারে বিপুল সংখ্যায় আসতো। তিনি ১৩৩১ সালে মারা যান। [৪]
ফিদার তাকুয়িম আল-বুলদান (দেশসমূহের বিবরণ) রচনাটি অনেকটা টলেমি এবং মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসির ন্যায় পূর্বসূরীদের রচনায় প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের মতোই। ছক আকারে ও ২৮টি অধ্যায়ে ভাগ করে বিশ্বের প্রধান শহরগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন ভৌগোলিক বিষয়ে দীর্ঘ বিবরণী তুলে ধরা হয়েছে এতে। প্রতিটি নাম, দ্রাঘিমাংশ, অক্ষাংশ, জলবায়ু, বানান এবং পর্যবেক্ষণগুলো সাধারণত পূর্ববর্তী লেখকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। রচনার বিভিন্ন অংশ ইউরোপে ১৬৫০ সালের প্রথম দিকে প্রকাশ ও অনুবাদ করা হয়েছিল। [৪] আবু-ফিদা তার রচনায় চীনের কোয়ানজু শহরের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ সঠিকভাবে উল্লেখ করেছিলেন।
বইটিতে জলপথে প্রদক্ষিণ (সারকামনেভিগেশন) প্যারাডক্সের প্রথম জ্ঞাত ব্যাখ্যা রয়েছে। আবু-আল-ফিদা লিখেছেন যে, কোনো ব্যক্তি বিশ্বের পশ্চিম দিকে পুরোপুরি প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করলে তিনি স্থির পর্যবেক্ষকের চেয়ে একদিন কম গণনা করবেন, যেহেতু তিনি আকাশে সূর্যের আপাত গতির মতো একই পথে ভ্রমণ করবেন। পূর্ব দিকে ভ্রমণকারী কোনও ব্যক্তি স্থির পর্যবেক্ষকের চেয়ে আরও একদিন বেশি গুনবেন। [৫] এই ঘটনাটি দুই শতাব্দী পরে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল, যখন ম্যাগেলান–এলকানো অভিযান (১৫১৯-১৫২২) প্রথম প্রদক্ষিণ শেষ করেছিল। স্পেন থেকে বিশ্বজুড়ে পশ্চিম দিকে যাত্রা করার পরে, ৯ জুলাই ১৫২২ তারিখ বুধবারে (জাহাজের সময়) অনুপূরণের জন্য কেপ ভের্দিতে এই অভিযানটি হয়েছিলো। তবে স্থানীয়রা তাদের জানিয়েছিল যে দিনটি আসলে বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ১৫২২।[৬]
তার রচিত মানবতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (আরবি: المختصر في أخبار البشر তারিখ আল-মুকতাসার ফি আকবার আল-বাশার, এছাড়া এটি মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বা আবু আল-ফিদার ইতিহাস تاريخ أبى الفداء নামেও পরিচিত) লেখা হয়েছিল ১৩১৫ থেকে ১৩২৯ সালের মধ্যে, আলি ইবনে আসির রচিত "পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস" গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় (১২৩১ খ্রি.)। এটি পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ১৩২৯ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারণের বর্ষানুক্রমিক ইতিবৃত্তের আকারে লেখা রয়েছে।[৭]
এটি দুটি ভাগে বিভক্ত, একটি হলো প্রাক-ইসলামী আরবের ইতিহাস এবং অন্যটি হলো ১৩২৯ সাল অবধি ইসলামের ইতিহাস। এটি অন্যান্য আরব ঐতিহাসিকদের দ্বারাও হালনাগাদ হয়েছিলো, যেমন: ইবনে আল-ওয়ারদী ১৩৩৪ সাল অবধি এবং ইবনে আল শিহনা ১৩৩৩ সাল অবধি তা করেছিলো। এটি লাতিন [৮] ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং জাঁ গ্যাগনিয়ার (১৬৭০-১৭৪০) ও জোহান জ্যাকব রেইস্ক সহ (১৭৫৪) ১৮ তম শতাব্দীর অনেক প্রাচ্যবিদদের মুসলিম ইতিহাসবিদ্যায় প্রধান কাজ ছিলো এটির অনুবাদ করা।
কুনাশ (আরবি: الكُنّاش) নামে ওষুধ সম্পর্কিত একটি বইও লিখেছিলেন তিনি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]