আজারবাইজানইউরেশিয়ারককেসাস অঞ্চলে অবস্থিত। আজারবাইজানের ভূগোলে তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়: কাস্পিয়ান সাগরের তটরেখা দেশটির পূর্বে একটি প্রাকৃতিক সীমানা সৃষ্টি করেছে; উত্তরের বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালা; এবং দেশটির কেন্দ্রভাগের বিস্তৃত সমতলভূমি। আজারবাইজান আয়তনে মোটামুটি পর্তুগাল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের সমান, দেশটির আয়তন প্রায় ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার, যা পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট ভূমির ০.৫% এর চেয়েও কম। তিনটি ককেশীয় রাষ্ট্রের মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে আজারবাইজান সবচেয়ে বৃহত্তম রাষ্ট্র। নাখশিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হলো একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, এটি আর্মেনিয়ার অঞ্চলের একটি অংশ এবং নাগর্নো-কারাবাখ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দ্বারা আজারবাইজানের বাকী অংশ থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়ে গেছে। ১৯৯৪ সালে নাগর্নো-কারাবাখের মর্যাদা নিয়ে আপস-আলোচনা হয়।
দক্ষিণ ককেশাস পর্বতমালা অঞ্চলে অবস্থিত আজারবাইজানের পূর্বে ক্যাস্পিয়ান সাগর, উত্তরে জর্জিয়া এবং রাশিয়া, দক্ষিণে ইরান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিমে আর্মেনিয়া। নাখশিভানের উত্তর-পশ্চিমে একটি ছোট্ট অংশ তুরস্কের সীমানার সাথেও যুক্ত। আজারবাইজানের রাজধানী হচ্ছে প্রাচীন বাকু শহর, যা ক্যাস্পিয়ান সাগরের বৃহত্তম এবং সেরা বন্দর এবং দীর্ঘকাল ধরে প্রজাতন্ত্রের তেল শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু।[১][২]
ভূসংস্থান ও নিষ্কাশন
আজারবাইজানের ভূসংস্থানিক মানচিত্র
তুলনামূলকভাবে কম দূরত্বের মধ্যে নিম্নভূমি থেকে উচ্চভূমিতে উচ্চতার পরিবর্তন হয়; দেশটির প্রায় অর্ধেক অংশই পার্বত্য অঞ্চল। দেশটির উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হলো দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের উপ-ক্রান্তীয় মৃদুভাবে নতোন্নত পাহাড়, পাহাড়ের খাঁজ চা বাগান, কমলা বাগান এবং লেবুর বাগান দ্বারা ঢাকা; বাকুর কাছে কোবুস্তান পর্বতের উপত্যকায় অসংখ্য কর্দমাক্ত আগ্নেয়গিরি ও খনিজ ঝর্ণা আছে; এবং উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রসমতল থেকে আঠারো মিটারের নিচে অবস্থিত।
পূর্বদিকের কাস্পিয়ান উপকূল অঞ্চল এবং জর্জিয়া ও ইরানের সীমানা সংলগ্ন কিছু অঞ্চল বাদে আজারবাইজান পাহাড় দ্বারা আবদ্ধ। উত্তর-পূর্বে বৃহত্তর ককেশাস অঞ্চলের রাশিয়ার দাগেস্তান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত; পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর ককেশাস অঞ্চলের আর্মেনিয়ার সীমান্ত। একেবারে দক্ষিণ-পূর্বে তালিশ পর্বতমালা ইরানের সাথে সীমান্তের একটি অংশ তৈরি করেছে। সর্বাধিক উচ্চ ভূমি বৃহত্তর ককেশাসে দেখা যায়, এখানকার মাউন্ট বাজার-দিউজে সমুদ্রসমতল থেকে ৪,৪৬৬ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট। আটটি বৃহৎ নদী ককেশাস অঞ্চল থেকে মধ্য কুরা-আরাস নিম্নভূমি অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে এবং আজারবাইজানীয় নাম দ্বার আখ্যায়িত মত্কভারি নদী (কুরা) এবং এর প্রধান উপনদী আরাস দ্বারা পাললিক সমতলভূমি এবং সমুদ্র উপকূল বরাবর নিম্ন ব-দ্বীপ অঞ্চল গড়ে উঠেছে। মত্কভারি ককেশাস অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী, এটি বদ্বীপ গঠন করেছে এবং আরাসের সাথে মিলিত হওয়ার পর কিছুদূর প্রবাহীত হয়ে কাস্পিয়ান সাগরে পতিত হয়েছে। আজারবাইজানের বৃহত্তম জলাধার ৬০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মিংচেভি জলাধারটি পশ্চিম আজারবাইজানে কুরা নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। জলাশয়ের পানি দ্বারা জলবিদ্যুৎ তৈরি এবং কুরা-আরাস সমভূমির সেচের জন্য সরবরাহ করা হয়। দেশের বেশিরভাগ নদী নাব্য নয়। আজারবাইজানের প্রায় ১৫% ভূমি আবাদযোগ্য।
Baku
Ganja
Sumqayit
Mingachevir
Qaraçuxur
Shirvan
Nakhchivan City
Bakıxanov
Shaki
Yevlakh
Khankedi
Lankaran
Map of Azerbaijan
পর্বত
আজারবাইজান প্রায় পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। দেশের সর্বোচ্চ উচ্চ ভূমি বৃহত্তর ককেশাস অঞ্চলটি উত্তরে রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কাস্পিয়ান সাগরের আবসেরন উপদ্বীপের দিকে বিস্তৃত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বাজারদিউজে দাগি, এর উচ্চতা ৪,৪৮৫ মিটার, এটি আজারবাইজান-রাশিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত। ৩,৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট লেসার ককেশাস অঞ্চল পশ্চিমে আর্মেনিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। তালিশ পর্বতমালা দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে ইরানের সাথে সীমান্ত তৈরি করেছে।
বাকুর নিকটে অবস্থিত কবুস্তান পর্বতটি গভীর গিরিখাত দিয়ে ঘেরা, সেখান থেকে বুদ্বুদ কর্দমাক্ত আগ্নেয়গিরি এবং খনিজ ঝর্ণা প্রবাহিত হয়।[১][৩]
জলবায়ু
তাপমাত্রা
দেশটিতে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়, দক্ষিণ-পূর্বের উপক্রান্তিয় এবং আর্দ্র জলবায়ু থেকে মধ্য ও পূর্ব আজারবাইজান অঞ্চলে উপক্রান্তিয় ও শুষ্ক জলবায়ুতে পরিবর্তিত হয়। কাস্পিয়ান সাগরের তীর বরাবর এটি নাতিশীতোষ্ণ হয়, এবং উচু পর্বতসমূহ সাধারণত শীতল থাকে। কাস্পিয়ান অঞ্চলের বাকুতে হালকা আবহাওয়া বিরাজ করে, এখানে তাপমাত্রা জানুয়ারিতে গড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৯.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং জুলাই মাসে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে।[৪]
বৃষ্টিপাত
ভূ-প্রাকৃতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন যথা মহাদেশীয়, সামুদ্রিক, আর্কটিক, বাতাসের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্রোত সহ ৮ ধরনের বাতাসের গতি দেশটির জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় লেনেকেরানে (১,৬০০ থেকে ১,৮০০ মিলিমিটার) আর সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত আবশেরনে (২০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার)। ১৯৫৫ সালে বিলিসার স্টেশনে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।[৫]
পরিবেশগত সমস্যা
সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের কারণে সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো এই উপকূলরেখা বরাবর দেখা যাচ্ছে
বায়ু এবং পানি দূষণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক এবং বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দূষণের প্রধান উৎসসমূহের মধ্যে আছে তেল শোধনাগার এবং রাসায়নিক ও ধাতব শিল্প, যেগুলি ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত যুগে যেমন ছিল তেমনি অদক্ষতার সাথে চালিত হয়। তেল পরিশোধনাগারের কেন্দ্র বকুতে বাতাসের গুণমান অত্যন্ত খারাপ। কিছু প্রতিবেদনে বাকুর বাতাসকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে দূষিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রসমূহও এ জাতীয় সমস্যায় ভুগছে।
বাকু উপসাগর সহ কাস্পিয়ান সাগরে তেল নিঃসরণ এবং অশোধিত বা অপর্যাপ্ত পরিমানে শোধিত নর্দমার ময়লা নিস্কাষণের কারণে দূষণের ফলে সামুদ্রিক মাছের ডিম এবং মাছের ফলন হ্রাস পাচ্ছে। সোভিয়েত আমলে আজারবাইজানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাকী অংশের জন্য বিরল উপক্রান্তিয় ফসলের ফলন বৃদ্ধি করতে অধিক পরিমানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে চাপ দেওয়া হয়। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে কীটনাশক ডিডিটির অব্যাহত নিয়মিত ব্যবহার একটি মারাত্মক বিপর্যয় ছিল, যদিও এই রাসায়নিকটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের অত্যধিক প্রয়োগের ফলে ব্যাপকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ ঘটে এবং আজারবাইজানের বিজ্ঞানীরা জন্মগত ত্রুটি এবং অসুস্থতার সাথে এর সম্পর্ক খুজে বের করেছেন। প্রধানত মানবসৃষ্ট কাঠামোর দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক কারণসমূহের জন্য কাস্পিয়ান সাগরে পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, কয়েক দশক ধরে শুকানোর প্রবণতাটি উল্টে গিয়ে এখন পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন তা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে; ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে পানির গড় স্তর ১.৫ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ সংঘর্ষের কারণে প্রচুর গাছ গাছালি ধ্বংস করা হয়, আদিম অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে কৃষিজমি সামরিক বাহিনীর দখলে চরে যায়।
অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মতো আজারবাইজানও মস্কো কেন্দ্রিক পরিকল্পনার জের ধরে থাকা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে জটিল এক বিশাল পরিবেশগত পরিষ্করণ জটিলতার মুখোমুখি। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি আজারবাইজান সরকারের অংশ, তবে ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে এটি সীমিত তহবিলের সমালোচনামূলক প্রয়োগ লক্ষ্যবস্তু করা, দূষণের মান প্রতিষ্ঠা করা, বা পরিবেশগত বিধিবিধানের সাথে সম্মতি পর্যবেক্ষণে অকার্যকর ছিল। ১৯৯৪ সালের গোড়ার দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কাস্পিয়ান সাগর ফোরামে পরিকল্পনা অনুযায়ী আজারবাইজানকে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়।
প্রাকৃতিক বিপদ
খরা ও বন্যা; কাস্পিয়ান সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু নিম্নাঞ্চল হুমকির সম্মুখীন হয়েছে
পরিবেশ—বর্তমান সমস্যা
স্থানীয় বিজ্ঞানীরা তীব্র বাতাস, পানি এবং মাটি দূষণের কারণে আবসেরন ইয়াছাকলিগি (আপশেরন উপদ্বীপ) (বাকি ও সুমকাইত সহ) এবং ক্যাস্পিয়ান সাগরকে পরিবেশগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বস্ত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করেছেন; কীটনাশক হিসাবে ডিডিটি ব্যবহার করার কারণে মাটি দূষণ ঘটে এছাড়া তুলা উৎপাদনে ব্যবহৃত বিষাক্ত ডিফলিয়ান্ট থেকেও এটি ঘটে।
মোট আয়তন: ৮৬,৬০০ বর্গ কিলোমিটার - আয়তনে বিশ্বের ১১৩ তম দেশ।
ভূমি: ৮২,৬২৯ বর্গ কিলোমিটার
জলভাগ: ৩,৯৭১ বর্গ কিলোমিটার
দ্রষ্টব্য: নাখশিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র এবং নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে; ১৯৯১ সালের ২৬ নভেম্বর আজারবাইজানের সুপ্রিম সোভিয়েত এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত করেছিল।