ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার
টি. বি. ব্ল্যাকস্টোন মেমোরিয়াল গ্রন্থাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় অবস্থিত শিকাগো গণগ্রন্থাগার সংস্থার অংশ। এটি টিমোথি ব্ল্যাকস্টোনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। শিকাগোর স্থপতি সোলন এস. বিমার ভবনটির নকশা প্রণয়ন করেছেন। বর্তমানে এটি শিকাগো গণগ্রন্থাগার - ব্ল্যাকস্টোন শাখা হিসেবে পরিচিত এবং সাধারণভাবে একে ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার, বা ব্ল্যাকস্টোন শাখা এবং কখনো সংক্ষেপে ব্ল্যাকস্টোন বলা হয়।
Blackstone Library | |
ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগারের সম্মুখভাগ | |
দেশ | যুক্তরাষ্ট্র |
---|---|
প্রতিষ্ঠিত | ৮ জানুয়ারি ১৯০৪ |
স্থপতি | সোলন স্পেন্সার বিমান |
অবস্থান | ৪৯০৪ সাউথ লেক পার্ক অ্যাভিনিউ শিকাগো, ইলিনয় |
পরিষেবা এলাকা | হাইড পার্ক, কেনউড, ওকল্যান্ড |
স্থানাঙ্ক | ৪১°৪৮′২১″ উত্তর ৮৭°৩৫′২৫″ পশ্চিম / ৪১.৮০৫৮০০° উত্তর ৮৭.৫৯০২৫০° পশ্চিম |
এর শাখা | শিকাগো গণগ্রন্থাগার |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ![]() |
মানচিত্র | |
![]() |
১৯০২ সালে কনকর্ড গ্রানাইট ভবনের দুই বছর ব্যাপী নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯০৪ সালের ৮ জানুয়ারি সম্পন্ন করা হয়।[১] এটি শিকাগো গণগ্রন্থাগার সংস্থার প্রথম শাখা,[২] এবং সংস্থাটির ৭৯টি শাখার মধ্যে একমাত্র শাখা যা ব্যক্তিগত তহবিলের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে।[১]
ভবনটি শিকাগোর কুক কাউন্টির কেনউড কমিউনিটি এলাকায় অবস্থিত এবং হাইড পার্ক, কেনউড ও ওকল্যান্ড কমিউনিটি এলাকায় সেবা প্রদান করে। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি এর শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে।[৩] বর্তমানে গ্রন্থাগারটি ব্রোঞ্জ ও মেহগনি দিয়ে সজ্জিত এবং যার বৃত্তাকার ছাদে চিত্রকর্মে সজ্জিত। গ্রন্থাগারটি বিশেষভাবে তৈরি আসবাবপত্রে সজ্জিত এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই সেবা প্রদান করে।
ইতিহাস
গ্রন্থাগারটি টিমোথি বিচ ব্ল্যাকস্টোনের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে। যিনি ১৮৬৪ থেকে ১৮৯৯ পর্যন্ত শিকাগো অ্যান্ড অ্যাল্টন রেলরোডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন,[১][২][৪] যা তার সমসাময়িকদের চেয়ে বেশি মেয়াদের ছিল। এছাড়াও তিনি ইউনিয়ন স্টক ইয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯০০ সালের ২৬ মে তিনি মারা যান।[২] পূর্বে বর্তমান গ্রন্থাগারের ভূমি ব্ল্যাকস্টোনের মালিকাধীন ছিল। তিনি মরণোত্তর গ্রন্থাগারটি তৈরির জন্য এই জমি দান করেন। তার উইলের শেষইচ্ছা অনুযায়ী, তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ইসাবেলা নর্টন ব্ল্যাকস্টোন (১৮৩৮ - ১৯২৮) এই কাজ সম্পন্ন করেন। ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার শহরের প্রতি তার প্রতিদান, যেখানে তিনি অঢেল ধনসম্পদ অর্জন করেছিলেন এবং এটি তার সহৃদয়তার স্মৃতিস্তম্ভ। ব্ল্যাকস্টোনের আয়তন ১৩,৭৯৪ ফু২ (১,২৮১.৫ মি২) এবং এটি তৈরিতে ব্যায় $২৫০,০০০ (বর্তমানে $৭,৩৮৭,৫০০)।[৩][৫]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/13/Timothy_Blackstone_Library_Plaque.jpg/175px-Timothy_Blackstone_Library_Plaque.jpg)
ব্ল্যাকস্টোনরা ডাউনটাউনে বসবাস করলেও, হাইড পার্ক আবাসিক এলাকায় তার অসংখ্য ঘনিষ্ঠ বিত্তশালী বন্ধু ছিল, যা বর্তমানে কেনউড কমিউনিটি এলাকা বলে পরিচিত। ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগারের অনুদানের পূর্বে শিকাগো গণগ্রন্থাগার সংস্থা শহর জুড়ে পড়ার ঘরের জায়গা ভাড়া করে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং একক শাখার জন্য স্থান খুঁজছিল।[১] ইসাবেলা ব্ল্যাকস্টোন ১৯০৪ সালের ৮ জানুয়ারি, টিমোথি বি. ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগারের চাবি এবং কাগজপত্র শহরের গ্রন্থাগার বোর্ড সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার শিকাগো গণগ্রন্থাগার সংস্থার প্রথম শাখায় পরিণত হয়।[১] ভবনটি লেক পার্ক অ্যাভিনিউ ঠিকানা বজায় রাখে যদিও লেক পার্কের আবাসিক অংশটি কয়েক দশক আগেই আধা ব্লক পূর্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
গ্রন্থাগারটি কমপক্ষে তিনবার সংস্কার করা হয়েছে, যার ফলে এটি বর্ধিত, নবায়িত এবং হালনাগাতকরণ করা হয়েছে।[১] ১৯৩৮ থেকে ১৯৩৯ সালে বাচ্চাদের নতুন কক্ষ, একটি ওয়ার্কস প্রগ্রেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রকল্প,[১] $৬৮,৪০০ খরচে যোগ করা হয়।[৩] এই সংযোজনের সময় একটি হাওয়ার্ড ভ্যান ডোরেন শ টাউন হাউজ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল।[৭] ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আরেকটি বড় সংস্কার ঘটে।[৪] তিন বছরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ব্ল্যাকস্টোনকে পুনরায় উৎসর্গ করা হয়।[৪] ২০০৪ সালে শতবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রন্থাগারটি পুনরায় সংস্কার করা হয়।
ব্ল্যাকস্টোন তার বাবার স্মৃতিতে জেমস ব্ল্যাকস্টোন মেমোরিয়াল গ্রন্থাগার (১৮৯১, উন্মুক্ত ১৮৯৩) দান করেন ব্র্যানফোর্ড, কানেটিকাটে যা ব্ল্যাকস্টোনের জন্মস্থান। ব্র্যানফোর্ডের জেমস ব্ল্যাকস্টোন মেমোরিয়াল গ্রন্থাগার ছাড়াও ব্ল্যাকস্টোন, ম্যাসাচুসেটসে "ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগারটি" নামে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে।[৮] ব্র্যানফোর্ড এবং শিকাগোর গ্রন্থাগার দুটির স্থপতি সোলন এস. বিমান।
সেবা
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/54/Blackstone_interior.jpg/220px-Blackstone_interior.jpg)
শিকাগো গণগ্রন্থাগারের ৭৯টি শাখার একটি হিসেবে ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার হাইড পার্ক, কেনউড এবং ওকল্যাণ্ড কমিউনিটি এলাকায় সেবা প্রদান করে। এই এলাকাগুলোয় ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[৩] ২০০০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সেবা প্রদানকৃত এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৫০,০৮৪।[৩]
"ফ্রেন্ডস অব ব্ল্যাকস্টোন ব্র্যাঞ্চ লাইব্রেরি" ২০০৩ সালে গঠিত হয়, যা ব্ল্যাকস্টোন শাখাকে আনুমানিক ৩৪টি শাখার একটিতে পরিণত করে যাদের এরকম সাহায্য দল রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক সাহায্য দলটি শিকাগোর প্রথম শাখা গ্রন্থাগারের উপদেষ্টা পরিষদমণ্ডলী হিসেবে সেবা প্রদান করার চেষ্টা করে। এটি গ্রন্থাগারের ব্যবহার ও উন্নতি প্রচার করে এবং স্বেচ্ছাসেবক সাহায্য যোগান দেয় ও তহবিল গঠন করে।[৩]
ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগার শিকাগো গণগ্রন্থাগারের বেশিরভাগ কার্যক্রম ও অংশীদারত্বে অংশগ্রহণ করে যার মধ্যে গ্রেট কিডস মিউজিয়াম পাসপোর্ট প্রোগ্রাম, বড়দের মাসিক বই আলোচনা ক্লাব অন্যতম। এছাড়াও এখানে বহু বার্ষিক অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম আয়োজন করা হয়।[৯] শাখাটি বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যেমন হাইড পার্ক আর্ট সেন্টার এবং স্মার্ট জাদুঘরের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে। গ্রন্থাগারটি অন্যান্য শাখার মত বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সংযোগ এবং ইন্টারনেট ও প্রিন্টিং সুবিধা প্রদান করে। ব্ল্যাকস্টোনে ৫টি ইন্টারনেট টার্মিনাল রয়েছে যার আসন পূর্বে সংগ্রহ করতে হয়, এর প্রতি অধিবেশনের সময়কাল সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা এবং একটি এক্সপ্রেস টার্মিনাল যার আসন সংগ্রহ করতে হয় না, এর সর্বোচ্চ সময়কাল ১৫ মিনিট। বর্তমানে পাঠকরা বিনা মূল্যে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুইটি ইন্টারনেট সেশনের জন্য টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রতি পাতার জন্য সামান্য অর্থের বিনিময়ে শিকাগো গণগ্রন্থাগার সংস্থার যেকোনো স্থান থেকে প্রিন্ট করতে পারেন।[১০]
নকশা
স্থপতি সোলন এস. বিমান ভবনটি নকশা করেন এবং এটি ১৮৯৩ সালে ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশনে প্রদর্শিত বিমানের মার্চেন্ট টেইলর্স ভবন, উপহৃদের মুখোমুখি একটি গম্বুজবিশিষ্ট মন্দির,[১১] এবং এথেনিয় এক্রোপলিসের ইরেকথিয়ামের আদলে তৈরি।[১][২] গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী দেবী দেমেতের এরেখথেউসের শাসনামলে পৃথিবীতে কৃষি এবং সভ্যতা প্রদান করেন।[২] গ্রন্থাগারের রোটুন্ডা ম্যূরালগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের নাম রয়েছে: "শ্রম", "সাহিত্য", "শিল্প" এবং "বিজ্ঞান"।[১২]
ভবনটির বৈশিষ্ট্যের সারাংশ হলো:[১] টিফানি রীতির গম্বুজ; মার্বেলের তৈরি স্তম্ভ এবং রোটুন্ডা ও করিডোরের দেয়াল; ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশনের ম্যূরালশিল্পী অলিভার ডেনেট গ্রোভারের আঁকা ৪টি রোটুন্ডা ম্যূরাল; ১ ইঞ্চি (২.৫ সেমি) ইতালিয় মার্বেল মোজাইক মেঝে; কাচের মেজানিন মেঝে; ২,৮০০ পাউন্ড (১,৩০০ কেজি) ওজনের ব্রোঞ্জের পাত, তামার দৃঢ় সামনের বহিঃদরজা; ২টি ১৫০ পাউন্ড (৬৮ কেজি) ওজনের ব্রোঞ্জ এবং কাচের অন্তঃদরজা; ১২ ইঞ্চি (৩০ সেমি) পুরু গ্রানাইট দেয়াল; এবং আয়োনিক স্তম্ভ।
ভবনটির বড়দের পড়ার কক্ষটি নির্দিষ্টভাবে তৈরি মেহগনি আসবাবপত্র দ্বারা সজ্জিত।[৩] এছাড়াও এখানে মানানসই অন্তর্বিষ্ট তাক এবং বিশেষভাবে তৈরি ব্রোঞ্জ বাতি রয়েছে।[৩] সার্কুলেশন ডেস্ক এলাকায় দুই সারি বিশিষ্ট ব্রোঞ্জ সজ্জিত বইয়ের তাক রয়েছে।[৩] এখানের মেজানিন ফ্লোর কাচের টুকরো দ্বারা সজ্জিত।[৩]
সম্পর্কিত ভবন এবং রাস্তা
যদিও দক্ষিণ ব্ল্যাকস্টোন এভিনিউয়ের ফিফটি থার্ড স্ট্রিটের দক্ষিণের কিছু অংশ দুদিকের যান চলাচল অনুমোদন করে, গ্রন্থাগারের কাছে এটি উত্তরদিকের একমুখী রাস্তা যা ১৪৩৬ ইস্ট ব্লকের উত্তর দিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ৪৯০০ দক্ষিণে ব্ল্যাকস্টোন গ্রন্থাগারের পশ্চিমে (পিছনে) শেষ হয়। (কেনউডের মানচিত্র নিচের বহিঃসংযোগে এবং ডানের ছবিতে দেখুন)। গ্রন্থাগার নির্মাণের পরে রাস্তাটির নামও টিমোথি ব্ল্যাকস্টোনের নামে রাখা হয়।[১][১৩] গ্রন্থাগারটি ব্ল্যাকস্টোন এভিনিউয়ের নিকটে অবস্থান সত্ত্বেও এর ঠিকানা ধারণ করে না। ব্ল্যাকস্টোন হোটেল এবং নিকটবর্তী ব্ল্যাকস্টোন থিয়েটারও (বর্তমানে মের্লে রেসকিন থিয়েটার) নামকরণ করা হয়েছিল টিমোথি ব্ল্যাকস্টোনের নামে, তাদের জায়গায় যার বাসভবন অবস্থিত ছিল।
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
উৎস
বহিঃসংযোগ
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)