তিউনিসিয়া
তিউনিসিয়া (আরবি: تونس), সরকারী নাম তিউনিসীয় প্রজাতন্ত্র (আরবি: الجمهرية التونسية) উত্তর আফ্রিকার উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত দেশ। দেশটির মধ্য দিয়ে এটলাস পর্বতমালা চলে গেছে এবং দেশটিকে উত্তরের উর্বর সমভূমি ও দক্ষিণের শুষ্ক, উষ্ণ মরুময় অঞ্চলে ভাগ করেছে। ধারণা করা হয় যে, তিউনিস নামটি বার্বার জাতির ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ "শৈলান্তরীপ" অথবা "রাত কাটাবার স্থান"। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত তিউনিস দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আয়তনের দিক থেকে তিউনিসিয়া অন্যান্য উত্তর আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির তুলনায় খর্বাকৃতির। তিউনিসিয়া আফ্রিকার উত্তরতম দেশ। এর উত্তরে ও পূর্বে রয়েছে ভূমধ্যসাগর। এর পশ্চিমে আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে লিবিয়া। উত্তর আফ্রিকার অধিকাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত সাহারা মরুভূমি দক্ষিণ তিউনিসিয়া থেকে শুরু হয়েছে। দেশটির ৪৫% জায়গা সাহারা মরুভূমিতে পড়েছে। সামরিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে উত্তর আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণে অভিলাষী বহু সভ্যতার সাথে তিউনিসিয়ার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এদের মধ্যে আছে ফিনিসীয় জাতি, কার্থেজীয় জাতি, রোমান জাতি, আরব জাতি এবং উসমানীয় তুর্কি জাতি। আরব বসন্তে জয় পেলেও এর নিরাপত্তা দুর্বল। ২০১৫ সালে এক হামলায় ৩৮ জন নিহত হয়।
তিউনিসীয় প্রজাতন্ত্র الجمهورية التونسية আল্জুম্হুরিয়্যাত্তূনিসিয়্যা | |
---|---|
নীতিবাক্য: حرية، كرامة، عدالة، نظام Hurriya, Karāma, 'Adālah, Niẓām "freedom, dignity, Justice, Order" " স্বাধীনতা, সম্মান, সুবিচার, ধারা"[১] | |
জাতীয় সঙ্গীত: হুমাত আল-হিমা | |
![]() তিউনিসিয়া-এর অবস্থান (গাঢ় নীল) – আফ্রিকা-এ (হালকা নীল & ধূসর) | |
![]() | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | তিউনিস |
সরকারি ভাষা | আরবি[২] |
কথ্য ভাষা | |
ধর্ম |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | তিউনিসিয়ান |
সরকার | প্রজাতন্ত্র |
• রাষ্ট্রপতি | কায়েস সাইয়েদ |
• প্রধানমন্ত্রী | হিচেম মেচিচি |
স্বাধীনতা | |
• ফ্রান্স থেকে | মার্চ ২০ ১৯৫৬ |
আয়তন | |
• মোট | ১,৬৩,৬১০ কিমি২ (৬৩,১৭০ মা২) (৯১ তম) |
• পানি (%) | ৫.০ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৪ আনুমানিক | ১০,৯৮২,৭৫৪[৮] (৭৯ তম) |
• ঘনত্ব | ৬৩/কিমি২ (১৬৩.২/বর্গমাইল) (১৩৩ তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $১৩৬.৭৯৭ বিলিয়ন[৯] |
• মাথাপিছু | $১২,০৬৫[৯] |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $৪০.২৮৯ বিলিয়ন[৯] |
• মাথাপিছু | $৩,৫৫৩[৯] |
জিনি (২০১০) | ৩৬.১[১০] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (2016) | ![]() উচ্চ · 97th |
মুদ্রা | দিনার (TND) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+১ (CET) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+২ (CEST) |
কলিং কোড | ২১৬ |
ইন্টারনেট টিএলডি |
|
ইতিহাস
১৮৮১ সাল থেকে তিউনিসিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৬ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। আধুনিক তিউনিসিয়ার স্থপতি হাবিব বোরগুইবা দেশটিকে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন এবং ৩০ বছর ধরে দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিউনিসিয়া উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম; প্রায় সব তিউনিসীয় নাগরিক মুসলিম। কিন্তু সরকার ইসলামী মৌলবাদীদের রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে তিউনিসিয়া পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। এর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া, নয়নাভিরাম বেলাভূমি, বিচিত্র ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, সাহারার মরূদ্যান, এবং সুরক্ষিত প্রাচীন রোমান প্রত্নস্থলগুলি বিখ্যাত।
রাজনীতি
![]() | ![]() |
কায়েস সাইয়েদ ২০১৯ সাল থেকে তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি | ইউসুফ শাহেদ ২০১৬ সাল থেকে তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী |
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
তিউনিসিয়া ২৪টি গভর্নরেট (উইলায়েত)-এ বিভক্ত। দেশটিতে মোট ২৬৪টি জেলা (মুতামাদিয়াত) রয়েছে যেগুলো আবার বিভিন্ন পৌরসভা (বালাদিয়াত)[১৩] এবং সেক্টরে (ইমাদাত) বিভক্ত।[১৪]
ভূগোল
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/d5/Koppen-Geiger_Map_TUN_present.svg/220px-Koppen-Geiger_Map_TUN_present.svg.png)
তিউনিসিয়া উত্তর আফ্রিকা, আটলান্টিক মহাসাগরের নীল নদের বদ্বীপ এবং ভূমধ্য উপকূলের মধ্যে অবস্থিত।
জলবায়ু
এখানকার উত্তর অংশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। শীতকালে হালকা বৃষ্টি এবং গরমকাল শুষ্ক।[১৫] দেশটির দক্ষিণে মরুভূমি।
তিউনিসিয়া-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ১৪.৭ (৫৮.৫) | ১৫.৭ (৬০.৩) | ১৭.৬ (৬৩.৭) | ২০.৩ (৬৮.৫) | ২৪.৪ (৭৫.৯) | ২৮.৯ (৮৪.০) | ৩২.৪ (৯০.৩) | ৩২.৩ (৯০.১) | ২৯.২ (৮৪.৬) | ২৪.৬ (৭৬.৩) | ১৯.৬ (৬৭.৩) | ১৫.৮ (৬০.৪) | ২৩.০ (৭৩.৩) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ৬.৪ (৪৩.৫) | ৬.৫ (৪৩.৭) | ৮.২ (৪৬.৮) | ১০.৪ (৫০.৭) | ১৩.৮ (৫৬.৮) | ১৭.৭ (৬৩.৯) | ২০.১ (৬৮.২) | ২০.৭ (৬৯.৩) | ১৯ (৬৬) | ১৫.২ (৫৯.৪) | ১০.৭ (৫১.৩) | ৭.৫ (৪৫.৫) | ১৩.০ (৫৫.৪) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৫০.৫ (১.৯৯) | ৪৫.৩ (১.৭৮) | ৪৩.৪ (১.৭১) | ৩৫.৫ (১.৪০) | ২১ (০.৮) | ১০.৮ (০.৪৩) | ৩.৭ (০.১৫) | ৮.৮ (০.৩৫) | ১০.৫ (০.৪১) | ৩৮.৬ (১.৫২) | ৪৬.৪ (১.৮৩) | ৫৬.৪ (২.২২) | ৩৭০.৯ (১৪.৫৯) |
উৎস: ওয়েদারবেস[১৬] |
অর্থনীতি
জনসংখ্যা
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/d7/Bev%C3%B6lkerungspyramide_Tunesien_2016.png/290px-Bev%C3%B6lkerungspyramide_Tunesien_2016.png)
২০১৭ সালের আদমশুমারী অনুসারে তিউনিসিয়ার জনসংখ্যা ১,১৪,০৩,৮০০ জন।[১৭] এর মধ্যে ৯৮% আরব, ১% ইউরোপীয় ও ১% ইহুদি এবং অন্যান্য।
ধর্ম
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/30/Mosqu%C3%A9e_Zitouna_Kassus-2.jpg/220px-Mosqu%C3%A9e_Zitouna_Kassus-2.jpg)
তিউনিসিয়ার বেশিরভাগ মানুষই (প্রায় ৯৯%) মুসলমান এবং বাকি প্রায় ১% মানুষ খ্রিস্টান, ইহুদী বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। [8] মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশই সুন্নি ইসলামের মালিকি মাযহাবের অনুসারী। তবে তুর্কীরা হানাফি মাযহাবের অনুসারী হওয়ায় উসমানীয় আমলে তিউনিসিয়ায় এ মাযহাবের প্রচলন শুরু হয়েছিল। [১৮]
এছাড়াও দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার খ্রিস্টান রয়েছে যাদের অধিকাংশই (প্রায় ২২,০০০) ক্যাথলিক। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম হল ইহুদি ধর্ম যার অনুসারী প্রায় ৯০০ জন। এদের এক তৃতীয়াংশই রাজধানী এবং এর আশেপাশে বসবাস করে।
শিক্ষা
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/72/UIS_Literacy_Rate_Tunisia_population_plus15_1985_2015.png/220px-UIS_Literacy_Rate_Tunisia_population_plus15_1985_2015.png)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/45/Coll%C3%A8ge_Sadiki-Kassus.jpg/220px-Coll%C3%A8ge_Sadiki-Kassus.jpg)
২০০৮ সালে মোট প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ছিল ৭৮%।[১৯] কেবলমাত্র ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী লোকদের বিবেচনায় নিলে এ হার ৯৭.৩% এ চলে যায়।[২০] ১৯৯১ সাল থেকে দেশটিতে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সের শিশুদের জন্য মৌলিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত দ্য গ্লোবাল কম্পেটিটিভনেস রিপোর্ট ২০০৮-৯ অনুসারে "উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থার মানের" বিভাগে তিউনিসিয়ার অবস্থান ১৭ তম এবং "মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা" বিভাগে দেশটির অবস্থান ২১ তম।
সংস্কৃতি
তিউনিসিয়ার সংস্কৃতি আফ্রিকা মহাদেশকে এর থেকে আলাদা করেছে । ১৩৫০ সালে এক দার্শনিক এর নাম দেন ত্রিপিতি।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- The Official website of The Tunisian National Tourist Office UK & Ireland
- Government of Tunisia
- Tunisia Chamber of Deputies ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুলাই ২০১০ তারিখে (আরবি)
- Country Profile from BBC News
- Tunisia from Encyclopedia Britannica
- International Religious Freedom Report 2003 from US Department of State
- Tunisia from UCB Libraries GovPubs
- [১]