কাকাতুয়া
ক্যাকাটুইডি (Cacatuoidea) গোত্রের ২১টি প্রজাতির সবগুলোই কাকাতুয়া নামে পরিচিত। এ গোত্রটি ক্যাকাটুওইডি (Cacatuoidea) মহাগোত্রের অন্তর্গত একমাত্র গোত্র। প্রকৃত টিয়া (বা সিট্টাকোইডি, Psittacoidea) এবং নিউজিল্যান্ডের টিয়াদের (বা স্ট্রিগোপোইডি, Strigopoidea) সাথে মিলে এরা সিট্টাসিফর্মিস (Psittaciformes) টিয়ার বর্গ গঠন করেছে। এ পাখিটি মূলত অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ বা ইস্ট ইন্ডিজ বিশেষতঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন, মালয়সহ ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়। কাকাতুয়া শব্দটি এসেছে ইন্দোনেশীয় ভাষা কাকাতুয়া থেকে। ধারণা করা হয় শব্দটি ইন্দোনেশীয় কাকা থেকে উদ্ভূত হয়েছে যার অর্থ "টিয়া"। আরেকটি মতবাদ অনুসারে কাকাতুয়া শব্দের অর্থ "বড় বোন"। ইন্দোনেশীয় ভাষায় কাকাক অর্থ বোন আর তুয়া অর্থ বয়সে বড়।
কাকাতুয়া | |
---|---|
![]() | |
সালফারঝুঁটি কাকাতুয়া, যুক্তরাষ্ট্র | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Psittaciformes |
মহাপরিবার: | Cacatuoidea |
পরিবার: | Cacatuidae জর্জ রবার্ট গ্রে, ১৮৪০ |
গোষ্ঠীর ধরন | |
Cacatua Vieillot 1817[১] | |
গণ | |
Probosciger | |
![]() | |
Current range of cockatoos – red Finds of recent fossils – blue | |
প্রতিশব্দ | |
ঠোঁটের উপরের অংশের চোয়াল, নিচের চোয়ালকে ঢেকে রেখেছে।
বৈশিষ্ট্যাবলী
সকল কাকাতুয়ারই আকর্ষণীয় পালক এবং শক্তিশালী বাঁকানো ঠোঁট রয়েছে। অধিকাংশ প্রজাতিই সাদা রংয়ের। কিন্তু কিছু প্রজাতির গায়ের রঙ ধূসর, খয়েরী, উজ্জল কালো বর্ণের। কাকাতুয়া মাঝারি থেকে বড় তোতা পাখির চেয়েও বড় হতে পারে। দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার (১২ থেকে ২৪ ইঞ্চি) এবং ওজন ৩০০ থেকে ১,২০০ গ্রাম (০.৬৬ থেকে ২.৬ পাউন্ড) হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বৃহদাকৃতির শ্যামা কাকাতুয়ার দৈর্ঘ্য ৬৭ সেন্টিমিটার বা ২৬.৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোট প্রজাতির কাকাতুয়া হচ্ছে ককাটিয়েল। অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় এরা খুবই পাতলা। দীর্ঘ লেজসহ এর দৈর্ঘ্য ১৩ ইঞ্চি এবং ওজন ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম।[৩]
মাথার ঝুঁটি স্থির নয় তবে, সকল প্রজাতির কাকাতুয়ার মাঝেই বিরাজমান এবং অনেক প্রজাতিতেই তা দৃশ্যমান।[৪] ভূমিতে অবতরণ কিংবা ভূমি থেকে উড্ডয়নের সময় এ ঝুঁটি দেখা যায়।[৫] টিয়ে পাখির অনেক বৈশিষ্ট্যই কাকাতুয়ার মাঝে বিরাজমান। তন্মধ্যে - বাঁকা ঠোঁট ও পায়ের আঙ্গুল উল্লেখযোগ্য। পায়ের ধরন ক্ষুদ্র ও থাবাগুলো শক্তিশালী যা গাছের শাখা ধরতে বেশ সাহায্য করে।[৬] মাঝের দুই আঙ্গুল সামনের দিকে এবং কিনারার দুই আঙ্গুল পিছনের দিকে থাকে।[৭] বিস্তৃত ও লম্বা পাখার সাহায্যে তারা চলাফেরা করে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) চলার রেকর্ড রয়েছে।[৮] ক্ষুদ্র প্রজাতির কাকাতুয়ার গোলাকৃতি পাখা রয়েছে ও স্বল্প দূরত্বে চলাচল করে থাকে।
আবাসস্থল
উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে এরা জীবনধারন করে। কখনও কখনও জমির ফসলও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একত্রে খাবার গ্রহণ করতে এরা অভ্যস্ত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের উঁচু বৃক্ষের গর্তে থাকতে এরা পছন্দ করে এবং সেখানেই তারা বাসা বাঁধে। মূলত প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাখির গর্ত কিংবা পাহাড়ের গুহায় এরা বাসা তৈরী করে। স্ত্রীজাতীয় কাকাতুয়া দুইটি থেকে চারটি সাদা ডিম পারে। শাবকগুলো চোখ বোজা অবস্থায় থাকে এবং প্রায় তিন মাস শাবকদের বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্ত্রী-পুরুষ উভয় কাকাতুয়াই পালাক্রমে দেখাশোনা ও লালন-পালন করে। উভয়ের তত্ত্বাবধানেই কাকাতুয়া ছানাগুলো বড় হয়। কাকাতুয়ারা দল বেঁধে কখনো কখনো হাজারেরও অধিক একত্রে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়।
প্রজাতিভেদে বিভিন্ন রঙের কাকাতুয়া দেখা গেলেও সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সাদা রঙের। অন্যতম পোষা পাখি হিসেবে কাকাতুয়ার সুনাম রয়েছে। বুদ্ধিমত্তা, আকর্ষণীয়তা এবং মানুষের অনুকরণশীলতার কারণে এটি জনপ্রিয় খাঁচার পাখিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও, পৃথিবীর প্রায় সকল চিড়িয়াখানায় এদেরকে দেখা যায়।
প্রজাতি ও উপপ্রজাতিসমূহ
ক্যাকাটুইডি গোত্রের সাম্প্রতিক বিভাজন অনুসারে বর্তমানে জীবিত কাকাতুয়ার প্রজাতি ও উপপ্রজাতিগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল:
উপগোত্র নিম্ফিসিনি
উপগোত্র Calyptorhynchinae: শ্যামা কাকাতুয়া
- গণ ক্যালিপ্টোরাইঙ্কাস
- উপগণ ক্যালিপ্টোরাইঙ্কাস (Calyptorhynchus) – শ্যামা ও লাল কাকাতুয়া
- উপগণ জান্ডা – শ্যামা ও হলদে-সাদা কাকাতুয়া
- হলদেলেজ শ্যামা কাকাতুয়া, Calyptorhynchus (Zanda) funereus (Shaw, 1794)
- খাটোঠুঁটি শ্যামা কাকাতুয়া, Calyptorhynchus (Zanda) latirostris Carnaby, 1948
- লম্বাঠুঁটি শ্যামা কাকাতুয়া, Calyptorhynchus (Zanda) baudinii Lear, 1832
উপগোত্র ক্যাকাটুইনি
- জাতি মাইক্রোগ্লসিনি: One genus with one species, the black Palm Cockatoo.
- গণ প্রোবোসিগার
- তাল কাকাতুয়া, Probosciger aterrimus (Gmelin, 1788)
- গণ প্রোবোসিগার
- জাতি ক্যাকাটুইনি: চারটি গণের সাদা, গোলাপি ও ধূসর রঙের কাকাতুয়া।
- গণ ক্যালোসেফালন
- গ্যাঙ-গ্যাঙ কাকাতুয়া, Callocephalon fimbriatum (Grant, 1803)
- গণ এলোফাস
- গোলাপিবুক কাকাতুয়া, Eolophus roseicapilla (Vieillot, 1817)
- গণ লফোক্রোয়া
- গণ ক্যাকাটুয়া
- উপগণ ক্যাকাটুয়া – প্রকৃত সাদা কাকাতুয়া
- হলুদঝুঁটি কাকাতুয়া (ছোট সালফারঝুঁটি কাকাতুয়া নামে পরিচিত), Cacatua (Cacatua) sulphurea (Gmelin, 1788)
- অ্যাবটের কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) sulphurea abbotti (Oberholser, 1917)
- তিমুর কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) sulphurea parvula (Bonaparte, 1850)
- কমলাঝুঁটি কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) sulphurea citrinocristata (Fraser, 1844)
- সালফারঝুঁটি কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) galerita (Latham, 1790)
- নীলচক্ষু কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) ophthalmica Sclater, 1864
- শ্বেত কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) alba (Müller, 1776)
- স্যামনঝুঁটি কাকাতুয়া, Cacatua (Cacatua) moluccensis (Gmelin, 1788)
- হলুদঝুঁটি কাকাতুয়া (ছোট সালফারঝুঁটি কাকাতুয়া নামে পরিচিত), Cacatua (Cacatua) sulphurea (Gmelin, 1788)
- উপগণ লিকমেটিস – কোরেলা
- লম্বাঠুঁটি কোরেলা, Cacatua (Licmetis) tenuirostris (Kuhl, 1820)
- পশ্চিমের কোরেলা, Cacatua (Licmetis) pastinator (Gould, 1841)
- মুইরের কোরেলা, Cacatua (Licmetis) pastinator pastinator (Gould, 1841)
- বাটলারের কোরেলা, Cacatua (Licmetis) pastinator butleri Ford, J., 1987
- ছোট কোরেলা, Cacatua (Licmetis) sanguinea Gould, 1843
- গফিনের কোরেলা, Cacatua (Licmetis) goffiniana Roselaar and Michels, 2004[৯]
- সলোমনের কাকাতুয়া, Cacatua (Licmetis) ducorpsii Pucheran, 1853
- লালপায়ু কাকাতুয়া, Cacatua (Licmetis) haematuropygia (Müller, 1776)
- উপগণ ক্যাকাটুয়া – প্রকৃত সাদা কাকাতুয়া
- গণ ক্যালোসেফালন
আর্থিক উপযোগিতা
অতীব সুন্দর, মনোরম, আকর্ষণীয়, চিত্তাকর্ষক পাখি হিসেবে কাকাতুয়া যথেষ্ট আদরণীয়। এর বাণিজ্যিক মূল্যও অপরিসীম। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় বনের পাখি কাকাতুয়ারা দলবেঁধে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু কিছু প্রজাতির কাকাতুয়া ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে বিরক্তিকর পাখি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।[১০] এদেরকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে বন্দুকের গুলি ছোড়া, বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
বিপন্নতা
আইইউসিএন এবং বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্য মোতাবেক প্রায় সাত প্রজাতির কাকাতুয়া সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। তন্মধ্যে কমপক্ষে একটি প্রজাতি প্রায় বিপদগ্রস্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।[১১][১২] দুই ধরনের কাকাতুয়া মহাবিপন্ন অবস্থায় আছে।[১৩] অস্তিত্ব বিপন্নতার প্রধান কারণ হচ্ছে বনভূমির উজাড় ও বন্যপ্রাণীর ব্যবসা। সকল কাকাতুয়াই গাছে সৃষ্ট বাসার উপর নির্ভরশীল যা গাছ উজাড় হয়ে যাওয়ায় তাদের আবাসস্থলও ধ্বংসের পর্যায়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির কাকাতুয়ার বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ ধরনের আবাসস্থল তৈরীর প্রয়োজন পড়েছে। শুধুমাত্র ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রায় ৬৬,৬৫৪টি স্যামন কাকাতুয়া রপ্তানী করা হয়; যাতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কিংবা অবৈধভাবে রপ্তানীর সংখ্যাটি গণ্য করা হয়নি।[১৪]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)
- Australian Faunal Directory
- MyToos.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মে ২০১৬ তারিখে – site explaining many of the responsibilities of cockatoo ownership
- Cockatoo videos ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে on the Internet Bird Collection
টেমপ্লেট:Cockatoos