২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন

(২০১৩ শাহবাগ আন্দোলন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন (অন্যান্য নাম: শাহবাগ গণদাবি, শাহবাগ আন্দোলন, শাহবাগ গণ-অবরোধ, গণজাগরণ মঞ্চ) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ শুরু হয়[৪]। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে[৫]। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এতোগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে একসময় দেশটির অনেক স্থানেই সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।[৬][৭]

২০১৩ সালের শাহবাগ অবরোধ
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির শাহবাগ অবরোধকালের গণসমাবেশ
তারিখ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ (2013-02-05)
অবস্থান
২৩°৪৪′১৮″ উত্তর ৯০°২৩′৪৫″ পূর্ব / ২৩.৭৩৮৩৩° উত্তর ৯০.৩৯৫৮৩° পূর্ব / 23.73833; 90.39583
কারণ
  • ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত সকলের সর্ব্বোচ্চ সাজা প্রদানের দাবীতে।
  • জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা[১][২]
  • জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা [৩]
প্রক্রিয়াসমূহ
  • নাগরিক প্রতিরোধ
  • বিক্ষোভ
  • অনলাইন কার্যক্রম

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ২৫শে মার্চ রাতে ও ২৬শে মার্চ ভোর রাত জুড়ে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের রক্ত এবং প্রচুর নারীর ধর্ষণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। যুদ্ধকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয় যা ২০০৯ সালে কিছুটা সংশোধন করা হয়। এ আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ এ সকল অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার)-কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৮]

এরপর ৫ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু এতো বড় সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে সাধারণ জনগণ মেনে নিতে পারেননি। তারা শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেসক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়, বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়া, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি। শাহবাগের অনেকে বলেন তারা মৃত্যুদণ্ডের রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চত্বর ছেড়ে যাবেন না।[৯] অন্যদিকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হক বলেন "কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে"।[১০] শেষ পর্যন্ত সরকার জনতার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে আপিল করার ব্যবস্থা রাখে। যার ফলশ্রুতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মসূচির ফলে শাহবাগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।[১১]

প্রজন্ম চত্বর

শাহবাগ মোড়ে প্রতিবাদে সবাই।

এই আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শাহবাগ মোড় বা শাহবাগ চত্বরে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষের সমাবেশের কারণে এই চত্বরকে অনেকে প্রজন্ম চত্বর বলে ডেকেছেন। এই চত্বরে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিল, পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে শহীদ জননী-খ্যাত লেখিকা ও সমাজকর্মী জাহানারা ইমাম এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই গণআদালতের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার করেন। প্রজন্ম চত্বর বা শাহবাগ চত্বর এই উদ্যানের বেশ কাছেই অবস্থিত।[৯]

আন্দোলনের প্রকৃতি

সমাবেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের উপায় হিসেবে আন্দোলনকারীরা বেছে নিয়েছেন স্লোগান, গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদি। পোড়ানো হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের কুশপুত্তলিকা। আন্দোলনকারীদের দাবীগুলো ছিল- কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদান,[১২][১৩] যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদান,[১৪][১৫][১৬] জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা,[১][২] জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা।[৩]

শাহবাগ থেকে টিএসসি-র মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশের দেয়ালে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ছবি এঁকে জনতার সাথে সংহতি প্রকাশ করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী কামনা করে। তারা বন্দি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আব্দুল কাদের মোল্লা সহ অনেকের ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। তিরন্দাজ নামের একটি নাটকের দল অনৈতিহাসিক নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ করে।[৯]

প্রতিক্রিয়া

কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রক্রিয়া দ্রুততর করার দাবিতে ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তে বিক্ষোভ

বাংলাদেশে

আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা শাহবাগে এই আন্দোলন শুরু করলেও খুব দ্রুতই এই আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, সাংসদ, মন্ত্রী ও তারকারাও সংহতি প্রকাশ করে। পরে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রংপুর প্রভৃতি শহরে ছড়িয়ে পরে।

রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগ এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়। তাদের নেতারা শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। জামাত-শিবির বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করলেও বিএনপি এ নিয়ে প্রথম দিকে কোনো মন্তব্য করে নি। তবে আন্দোলনের অষ্টম দিন, ১২ ফেব্রুয়ারিতে এসে বিএনপি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান কারী তরুন সমাজকে স্বাগতম জানায়। সাথে সাথে বিএনপি এই আন্দোলন দলীয়করণের আশঙ্কাও করে।[১৭] পরবর্তীতে বিএনপি জামায়াতের পক্ষ নেয়।

সারা বিশ্বে

বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায়অস্ট্রেলিয়াতেও আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রবাসীরা এই আন্দোনলের সাথে একাত্ততা জানায়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগণ "শাহবাগ চত্বর" এর আদলে একত্রিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উইলিয়াম নিকোলাস, একজন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে শাহবাগ বিক্ষোভের সমালোচনা করেন।[১৮] অপরদিকে ভারত সরকার প্রথম থেকেই এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল।[১৯]

শাহবাগের অন্দোলন নিয়ে রচিত কিছু উল্লেখযোগ্য গান

একাত্তরের হাতিয়ার
(কথা,সুর ও কণ্ঠ- প্রীতম আহমেদ)

একাত্তরের হাতিয়ার
গর্জে উঠুক আরেকবার
রাজাকারের ফাঁসি হোক
শহীদরা পাক ন্যায় বিচার
ফাঁসি পাক রাজাকার
শহীদরা পাক ন্যায় বিচার
গন মিছিলে দামাল ছেলে মেয়ের দল
মুছিয়ে দেবে বিরাঙ্গনার চোখের জ্বল
এই প্রজন্ম গড়তে জানে জনস্রোত
নেবেই নেবে একাত্তরের প্রতিশোধ

শাহবাগের এই আন্দোলনকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংগীত শিল্পী কবীর সুমন,[২০][২১] বাংলাদেশের শিল্পী প্রীতম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের পারমিতা মুমু , লস এঞ্জেলসের আল আমিন বাবু, ব্যান্ড চিরকুটসহ আরও অনেকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে গান রচনা এবং প্রকাশ করে।[২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭][২৮][২৯]

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির

পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন করেছিল। পরবর্তীতে ছাত্রসংঘ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নাম ধারণ করে। একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে এবং তাদের আটককৃত ব্যক্তির তালিকা থেকে প্রমাণিত হয়। প্রথমে যে ৯ জনের বিচার করা হয় তাদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। জামায়াত এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। শাহবাগ আন্দোলনকে বানচাল করতে তাদের কিছু চেষ্টাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার দিন ও রায় ঘোষণার পরের দিনই রায় বাতিলের দাবিতে সারা দেশে হরতাল পালন করে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই শিবির ও জামায়াত কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগ আসতে থাকা মানুষকে বাঁধা দিতে চেষ্টা করে। রামপুরা, মগবাজার এবং মালিবাগে শিবিরকর্মীরা অহিংস আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে। তবে তাদের বাঁধা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।[৩০]

শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে যে বাংলাদেশী বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিলেন তারাও জামায়াতের বাধার সম্মুখীন হন। পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের ভাষা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেশ করার সময় স্থানীয় জামায়াত সমর্থকেরা সমাবেশকারীদের ঘেরাও করে। জামায়াতের এই সমর্থকেরা পুরো বিচার প্রক্রিয়াটিই বন্ধের দাবী জানায়।[৩১]

ফলাফল

বিক্ষোভকারীরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের জন্য সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে যাতে যুদ্ধঅপরাধীরা "দোষী সাব্যস্ত হলে দ্রুত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যায়"। এরপর এই কেস চলমান রাখতে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিস্পত্তির বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশ হয়। এতে একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের যেকোনো রায়ের বিরুদ্ধে আসামির পাশাপাশি সরকারেরও আপিলের সমান সুযোগ রাখা হয় সংশোধিত আইনে।[৩২]

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে খুন এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের জন্য আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।[৩৩]

১২ ডিসেম্বর ২০১৩, কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে তার শাস্তি কার্যকর হয়।[৩৪][৩৫]

সমালোচনা

সহিংসতামূলক এবং সংস্কৃতিবিরোধী স্লোগান

আন্দোলনের সময়, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান ব্যবহার করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে "একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর"। ("এক এক করে শিবির কর্মীদের ধরুন, এবং তাদের হত্যা করুন"), "রাজাকারের চামরা, কুত্তা দিয়া কামরা।" ("কুকুর দিয়ে রাজাকারদের চামড়া চিবাও")।[৩৬][৩৭][৩৮][৩৯][৪০]একাডেমিক পিয়াশ করিমের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আসিফ নজরুল, ফরহাদ মজহার ও মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বয়কট ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।

সরকারী মদদ

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই বিক্ষোভকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিল। আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ রাস্তা অবরোধ করতে সহায়তা করেছিল। নিরাপত্তা বাহিনী নেতাদের প্রতি প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে বলে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেজা জিয়া এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমালোচনা করে একাধিকবার। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সদস্যরাও এই বিক্ষোভে যোগ দেন। সমালোচকরা দাবি করেন, যুদ্ধের ৪২ বছর পর জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য সরকার নিজেই এই আন্দোলন আংশিকভাবে তৈরি করেছিল।[৪১]

হাসপাতাল, ব্যাংক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর

শাহবাগের বিক্ষোভকারীরা ইসলামী ব্যাংক এবং রেটিনা কোচিং সেন্টারের মতো জামায়াত-সমর্থিত/সহানুভূতিশীল প্রতিষ্ঠান বর্জন করার আহ্বান জানায়। শেষ পর্যন্ত, অনেক বিক্ষোভকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ভাঙচুর চালায় এবং আক্রমণ করে।[৪২][৪৩][৪৪]

জোরপূর্বক অংশগ্রহণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-এর বিরুদ্ধে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের ব্যবহার

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তারা সহানুভূতি ও জনসমর্থন অর্জনের উপায় হিসাবে কম বয়সী শিশুদের সহিংস স্লোগানে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছিল।[৪৫][৪৬]

হাসপাতাল রাস্তা অবরোধ

শাহবাগে অনেক হাসপাতাল রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল রাস্তাটি অবরুদ্ধ করে রাখার ফলে রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।[৪৭]

রাজনৈতিক প্রেরণা

ছবিতে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে আন্দোলন

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী