২০০৭-০৮ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড সফর
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখ থেকে ১৬ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ও দুইটি টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণের জন্য নিউজিল্যান্ড সফর করে। ২০০১-০২ মৌসুমে প্রথম সফরের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো নিউজিল্যান্ডে যায় ও ২০০৪-০৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের পর উভয় দেশের মধ্যকার তৃতীয় সিরিজ। এছাড়াও দল দু’টি ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব ও ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল।
২০০৭-০৮ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড সফর | ||
---|---|---|
দল | ![]() | ![]() |
তারিখ | ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৭ – ১৬ জানুয়ারি, ২০০৮ | |
অধিনায়ক | ড্যানিয়েল ভেট্টোরি | মোহাম্মদ আশরাফুল |
টেস্ট সংখ্যা | ২ | |
টেস্ট জয় | ২ | ০ |
সর্বাধিক রান (টেস্ট) | বেল (১২৮) ভেট্টোরি (১২৬) ওরাম (১১৮) | ইকবাল (১৫২) সিদ্দিকী (৯০) নাফিস (৬২) |
সর্বাধিক উইকেট (টেস্ট) | মার্টিন (১৩) ও’ব্রায়ান (৭) ওরাম (৬) | মর্তুজা (৭) হোসেন (৫) ইসলাম (৩) |
ওডিআই সংখ্যা | ৩ | |
ওডিআই জয় | ৩ | ০ |
সর্বাধিক রান (ওডিআই) | হাউ (১৬৯) ম্যাককুলাম (১৫৫) ফুলটন (১১৮) | ইকবাল (১০৬) আশরাফুল (৯৮) আহমেদ (৮১) |
সর্বাধিক উইকেট (ওডিআই) | মিলস (৯) ভেট্টোরি (৭) ওরাম (৪) | আল হাসান (৩) রেজা (২) রাজ্জাক (২) |
নিউজিল্যান্ড ওডিআই ও টেস্ট সিরিজের উভয়টিতেই হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম জয়ের অনুসন্ধানকে দীর্ঘতর করে তোলে। তারা ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রস্তুতিমূলক খেলায় পরাজিত করলেও তা আনুষ্ঠানিক খেলার স্বীকৃতি পায়নি। একইভাবে, এ সফরে বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড একাদশকে পরাজিত করলেও আনুষ্ঠানিক নিউজিল্যান্ড দল ছিল না। ফলে, এটি আনুষ্ঠানিক খেলার মর্যাদা পায়নি।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল
সিরিজের শুরুতে নিউজিল্যান্ড আইসিসি ওডিআই চ্যাম্পিয়নশীপে তৃতীয় স্থানে[১] ও আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছিল। সিরিজ শুরুর পূর্বে নিউজিল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে টেস্ট সিরিজে ২-০, ওডিআই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয় এবং অস্ট্রেলিয়ায় তারা ২-০ ব্যবধানে চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফি সিরিজ হারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
এর বিপরীতে বাংলাদেশ ওডিআই চ্যাম্পিয়নশীপ[১] ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে নবম স্থানে অবস্থান করে। তাদের পূর্বেকার অংশগ্রহণ ছিল ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা যাতে তারা সুপার এইট পর্বে পৌঁছেছিল। তাদের সাম্প্রতিক সিরিজ ছিল ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফর। ঐ সফরে তারা টেস্ট ও ওডিআই সিরিজের উভয়টিতেই ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল।
দলীয় সদস্য
দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় নিউজিল্যান্ডের পরাজয়ের পর লু ভিনসেন্ট, মাইকেল ম্যাসন ও গারেথ হপকিন্স - এ তিনজন খেলোয়াড় সফরকারী দল থেকে বাদ পড়েন ও স্টেট শিল্ডে খেলার জন্য তাদের প্রাদেশিক দলে ফেরৎ পাঠানো হয়।[২] পূর্ববর্তী দুই সফর থেকে হাঁটুর অস্ত্রোপচারের কারণে বাদ পড়া পিটার ফুলটন চারদিনের স্টেট চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় সুন্দর ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনার কারণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২] দ্বিতীয় খেলায় বোলিং করাকালে বাম কাঁধে আঘাত পাওয়ায় মার্ক গিলেস্পির বিকল্প হিসেবে তৃতীয় ওডিআইয়ে ম্যাসনকে পুনরায় দলে নেয়া হয়।[৩]
বাংলাদেশ তাদের দলে ক্যাপবিহীন অবস্থায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে জুনায়েদ সিদ্দিকীকে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করায় ফাস্ট বোলার নাজমুল হোসেনকে পুনরায় ডাকে।[৪] তুষার ইমরান ও সৈয়দ রাসেলের আঘাতপ্রাপ্তির ফলে সিরিজ খেলার জন্য দলে রাজিন সালেহ ও সাজিদুল ইসলামকে যুক্ত করা হয়।[৫][৬]
নিউজিল্যান্ড টেস্ট দলের সদস্যরূপে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ম্যাথু বেলকে পুনরায় যুক্ত করে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া মাইকেল পাপস, স্কট স্টাইরিস ও রস টেলরকে দলের বাইরে রাখে। দ্বিতীয় টেস্টের জন্য জিতেন প্যাটেলের সাথে খেলার জন্য পিটার ফুলটনকে পুনরায় ডাকে। কাঁধের আঘাত থেকে যদি সুস্থ হন তাহলে মার্ক গিলেস্পিকেও দলে ঠাঁই দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।[৭]
বাংলাদেশ দলে হাবিবুল বাশার, শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক জুনিয়রকে নেয়া হয়। অন্যদিকে, জাভেদ ওমর, তুষার ইমরান, নাজমুল হোসেন ও মেহরাব হোসেন জুনিয়রকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়।[৮]
প্রস্তুতিমূলক খেলা
নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস (১ম খেলা)
সফরে বাংলাদেশ প্রথম একদিনের খেলায় অংশগ্রহণ করে স্টেট শিল্ডের দল নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের বিপক্ষে। অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ও অভিষিক্ত জুনায়েদ সিদ্দিকী দলকে স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসার পূর্ব শুরুতেই তারা দুই উইকেট হারায় কটের মাধ্যমে।[১২] তারপর ৩২ ওভারে দুই উইকেটে ১২১ রান তোলার পর মাত্র ৫৬ রানের ব্যবধানে তারা পাঁচ উইকেট হারায়। এরপর নিচের সারির ব্যাটসম্যান ফরহাদ রেজা ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনিংসটিকে ২২২ রানে নিয়ে যান। জবাবে নিক হর্সলে তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ৯২ রান তোলেন ৯৯ বল মোকাবেলা করে। পাশাপাশি জেমস মার্শালের দ্রুত ঝটিকা ৩৯ বলের ৫৫ রানের ফলে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস অনায়াসেই জয় তুলে নেয়।[১৩]
খেলা চলাকালে বাংলাদেশ উদ্বোধনী বোলার সৈয়দ রাসেলের কলারবোনে আঘাত পেলে আরও ধাক্কা খায়।[১৪] দলে স্থলাভিষিক্ত সাজিদুল ইসলামও তার বাম কলারবোনে আঘাত পান।[৫]
নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস (২য় খেলা)
দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক খেলাটিও নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তা বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। শুরুতেই বৃষ্টি নামলে খেলাটিতে উভয় ইনিংস ৪১ ওভারে নির্ধারণ করা হয়। নর্দার্ন টসে জয় পেয়ে নির্ধারিত ওভারে ১৭৩/৭ তোলে। ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশী বোলিং ও ফিল্ডিং প্রথম খেলার তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে উত্তরণ দেখা যায়।[১৫]
অকল্যান্ড
সফরের তৃতীয় খেলাটি আরেকটি প্রাদেশিক দলের বিপক্ষে হয়। এবার তার অকল্যান্ডের মুখোমুখি হয়। টসে জয় পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ছাড়া অন্য কোন ব্যাটসম্যানই প্রকৃতপক্ষে ব্যাটিং অনুশীলন করার সুযোগ পাননি।[১৬] জবাবে অকল্যান্ড বাংলাদেশের ২৪২ রানকে খুব সহজেই টপকে যায়। রিচার্ড জোন্স দলের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৫ রান এবং অন্য ব্যাটসম্যানেরা তাদের ইনিংসে কমপক্ষে একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।[১৭]
টুয়েন্টি২০
ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাকল্পে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট একাদশের মধ্যকার একটি টুয়েন্টি২০ দাতব্য খেলার আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও খেলা শুরুর পূর্বে অতিরিক্ত $২৫০,০০০ মার্কিন ডলার দান করা হয়। ব্যাট করার আমন্ত্রণ পেয়ে নিউজিল্যান্ড ধীরলয়ে খেলা শুরু করে। ৫.৩ ওভারে তারা দুই উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ১৯ রান তোলে।[১৮] অধিকাংশ ব্যাটসম্যানকেই স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি ও অবিবেচনাপ্রসূত শটে তাদের পতন ঘটতে দেখা যায়। জেমস মার্শালের অপরাজিত ৩৩ রানে দলটি নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৩/৭ তোলে।[১৯]
বাংলাদেশও একইভাবে তাদের ইনিংস শুরু করে। শুরুতেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয়কে খুব দ্রুত হারায়।[১৮] মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদের দৃঢ়তায় দ্রুতলয়ে রান তুলতে গিয়ে রান আউটের শিকার হলেও খেলায় ফিরে আসে। তবে সাকিব আল হাসান, মেহরাব হোসেন ও দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফরহাদ রেজার সহায়তায় তিন ওভার বাকী থাকতেই খেলায় ফলাফল আসে। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং খেলা শেষে মন্তব্য করেন যে, ‘দলের ব্যাটিং পরীক্ষামূলক ছিল - এ বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে, খেলায় তাদের ক্রীড়াশৈলী তেমন আশাপ্রদ ছিল না এবং তা নিশ্চিতরূপেই দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’[২০]
ওডিআই সিরিজ
১ম ওডিআই
নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি টসে জয় পেয়ে বল বেছে নেন। ফলে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে। শুরুতেই দুই উইকেট খুঁইয়ে অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ও তামিম ইকবাল ৯৭-রানের জুটি গড়েন যাতে বাংলাদেশ চমৎকার দলীয় সংগ্রহ করবে বলে ধারণা করা হয়।[২১] মোহাম্মদ আশরাফুল ৫৭ বলে ৭০ রান তোলেন যা ভেট্টোরি অসাধারণরূপে আখ্যায়িত করেন।[২২] কিন্তু মাত্র ৫১ রানে বাদ-বাকী সাত উইকেটের পতন ঘটলে ২০১ রানে ইনিংস শেষ হয়। কোচ জেমি সিডন্স ধারণা করেছিলেন যে দলের সংগ্রহ ২৮০ রান উঠবে, নিদেনপক্ষে মনোযোগী হয়ে ২৫০ রান করতে পারবে।[২৩] জবাবে নিউজিল্যান্ড তেমন বাঁধা না পেয়ে ৪৪ বল বাকী থাকতেই ছয় উইকেটের জয় তুলে নেয়। তন্মধ্যে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জেমি হাউ ৮৮ রান তুলে জয়ের নেতৃত্বে ভূমিকা রাখেন।[২৪]
২য় ওডিআই
ভেট্টোরি আবারো টসে জয় পান। এবার প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামেন। নিউজিল্যান্ড তাদের ইনিংসে ৩৩৫ রান তোলে। ব্যাটিংয়ে নামা ছয় খেলোয়াড়ের সকলেই কমপক্ষে ৩০ রান তোলেন।[২৫] উদ্বোধনী জুটিতে ৬৩ রান তুললেও খুব দ্রুত তিন উইকেট খুঁইয়ে বসে বাংলাদেশ দল।[২৬] তখন থেকেই কখনো নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারেনি। বৃষ্টির কারণে বাকী সাত ওভার খেলা হয়নি।[২৭] খেলাশেষে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সিডন্স তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় বলেন যে তাদের পরিকল্পনা ছিল উইকেট রক্ষা করে শেষদিকে চূড়ান্ত হামলা করা। কিন্তু ঐ তিন উইকেট পতনের পর তারা উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে।[২৮]
৩য় ওডিআই
তৃতীয় ওডিআইয়ে দলের একমাত্র পরিবর্তন ছিল মাইকেল ম্যাসনের অন্তর্ভুক্তি। দ্বিতীয় খেলায় মার্ক গিলেস্পি আঘাত পেলে তার এ সুযোগ ঘটে।[২৯] অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় টস জয়ের পর ড্যানিয়েল ভেট্টোরি তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ শুরুতেই চার উইকেট হারায় ও ১৯ ওভার শেষে ৪৬/৪ তুলে গভীর সঙ্কটে পড়ে। এরপর তারা আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ও ৩৮তম ওভারেই ৯৩ রানে অল-আউট হয়। এতে ভেট্টোরি নিউজিল্যান্ডের শীর্ষ ওডিআই উইকেট সংগ্রাহক হন। তার পাঁচ উইকেট লাভকালে দ্বিতীয় উইকেট পেয়ে ক্রিস হ্যারিসের সংগ্রহকে অতিক্রম করেন।[২৯] পাশাপাশি পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিতে তিনি ২০০৭ সালে বিশ্বের শীর্ষ ওডিআই উইকেটশিকারীতে পরিণত হন। জবাবে বাংলাদেশী বোলারদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মাত্র ছয় ওভারেই কোন উইকেট না হারিয়ে জয়ে পৌঁছে যায়। ২৮৬ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম মাত্র ২৮ বলে অপরাজিত ৮০ রান তোলেন ও জেমি হাউ মাত্র আট বল মোকাবেলা করে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
টেস্ট সিরিজ
১ম টেস্ট
আরও একবার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি টসে জয় পেয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। তাদের প্রথম ইনিংসটি পুরোটাই শেষ একদিনের আন্তর্জাতিকের অনুরূপ ছিল। কেবলমাত্র উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ৫৩ রান তুলে শীর্ষে থাকেন। দলের আর কেউই তেমন বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ ১৩৭ রানে গুটিয়ে যায়। ক্রিস মার্টিন চার উইকেট নেন।[৩০] ১১৭ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় রিচার্ড কলিঞ্জের সাথে যৌথভাবে ৭ম স্থানে অবস্থান করেন ও জ্যাকব ওরাম অন্য তিনটি উইকেট নেন।[৩১]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f6/NZ_vs_Bangladesh_Test_1_Jan_5_2008.jpg/220px-NZ_vs_Bangladesh_Test_1_Jan_5_2008.jpg)
জবাবে নিউজিল্যান্ড প্রথমদিনেই সর্বমোট সংগ্রহকে অতিক্রম করে ও দিনশেষে ১৫৬/৪ তোলে। এ ইনিংসে নেতৃত্ব দেন ম্যাথু বেল। ২০০১ সালের পর তিনি তার প্রথম টেস্টে অংশ নেন। প্রথম দিনের খেলা শেষ হবার পর তিনি ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।[৩১] দ্বিতীয় দিন সকালের অধিবেশনে তিনি তার দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকান। এরপর মোহাম্মদ আশরাফুলের বলে আউট হন।[৩২] সর্বোচ্চ ১১৭ রান তুলে জ্যাকব ওরামও তিন অঙ্কের কোটায় পৌঁছেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র ৩২ রান ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ। দলের বাদ-বাকী ব্যাটসম্যানেরা তেমন অবদান রাখতে পারেননি। কেবলমাত্র চার জন খেলোয়াড় বিশেষ অধিক রান সংগ্রহ করতে পেরেছেন।[৩৩] ৩৫৭ রানে নিউজিল্যান্ড অল-আউট হয় যা সাত টেস্টের পর বাংলাদেশী বোলাররা ব্যাটিং দলকে প্রথমবারের মতো ডিসমিস করে।[৩২]
২২০ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসের তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন ধাঁচে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে। তামিম ইকবাল ও জুনায়েদ সিদ্দিকী - উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় দ্বিতীয় দিনশেষে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেন। তাদরে মধ্যকার ১৪৮ রানের জুটি বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে। ব্যাটসম্যানদ্বয় তাদের প্রথম টেস্ট খেলায় খেলতে নেমে যথাক্রমে ৭২ ও ৬৯ রান তোলে দিন শেষ করেন।[৩২] তবে এ জুটি তৃতীয় দিনের শুরুতেই বিদায় নেন ও মধ্যাহ্নভোজনের সময় ২০৬/৫-এ চলে যায়। এর অল্প কিছু সময় পরেই তারা ২৫৪ রানে অল-আউট হয়। মাত্র ৩৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে নিউজিল্যান্ড তৃতীয় দিনের চা বিরতির পূর্বে কেবলমাত্র ক্রেইগ কামিংয়ের উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয়।[৩৪]
খেলা শেষে ভেট্টোরি বলেন যে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে আক্রমণাত্মকধর্মী ফিল্ডিং সাজান ও সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং এবং কোচ জন ব্রেসওয়েল পূর্বরাতে খেলার পরিকল্পনা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেন যাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনা সম্ভব হয়।[৩৫]
২য় টেস্ট
১২-১৬ জানুয়ারি স্কোরকার্ড |
বনাম | ||
- আঘাতের কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবাল ব্যাট করতে পারেননি।
দ্বিতীয় টেস্টের শুরুটাও প্রথমটির ন্যায় একইভাবে শুরু হয়। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ধারাবাহিকভাবে নবমবারের মতো টস জয় করেন ও বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান। ডুনেডিন টেস্টের প্রথম ইনিংসের ন্যায় তাদের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে ও মধ্যাহ্নভোজন পর্যন্ত দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৬/৫।[৩৬] ক্রিস মার্টিন ও ইয়ান ও’ব্রায়ান দলের প্রধান উইকেটশিকারী ছিলেন। তারা যথাক্রমে পাঁচ ও তিন উইকেট তুলে নেন। এরফলে বাংলাদেশ ১৪৩ রানে অল-আউট হয়। তন্মধ্যে মার্টিনের পাঁচ উইকেটপ্রাপ্তি টেস্টে তার অষ্টম ছিল যা তাকে ১২৩ উইকেট নিয়ে ইয়ান চ্যাটফিল্ডের সাথে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা উইকেট লাভকারীদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে তুলে আনে।[৩৭]
জবাবে নিউজিল্যান্ড প্রথম দিনশেষে ১৩৪/৩ তুলে নয় রানে এগিয়ে যায়। জেমি হাউয়ের কাছ থেকে দলে ক্রমাগত চাপের মুখে দাঁড়ানো অবস্থায় ক্রেইগ কামিং ৪২ রান তুলে তৃতীয় ইনিংসে ধারাবাহিকভাবে লেগ বিফোর উইকেটে পরিণত হন। দিন শেষে স্টিফেন ফ্লেমিং ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে নিজ মাঠে প্রথম সেঞ্চুরির দিকে ধাবিত হচ্ছিলেন।[৩৮] দ্বিতীয় দিন সকালে ম্যাথু সিনক্লেয়ারকে আউট করার পূর্বে বাংলাদেশ দল ৯০ মিনিটে চারবার ক্যাচ ফেলে দেয়।[৩৯] কঠিন শট ফেলে দেয়া থেকে মুক্তির পর একই শটে ৮৭ রানে ফ্লেমিংয়ের পতন ঘটে। ভেট্টোরি ও ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ওভারপ্রতি ৫.২৮ রান তুলে ৮১ রানে জুটি গড়েন। ম্যাককুলাম আউট হলেও ভেট্টোরি ৯৪ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ৩৯৩ রান তুলে ২৫০ রানের ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও ব্যাটসম্যানদের বড় সংগ্রহের যোগ্যতার বিষয়ে কিছুটা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পাঁচ ব্যাটসম্যানের কমপক্ষে ৪০ রান তুললেও কেউই ১০০ রানের কোটা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হন।[৪০]
প্রথম ইনিংসের তুলনায় বাংলাদেশের ইনিংস তেমন ভালো হয়নি। ক্যাচ নষ্ট হয়ে যাওয়ার একটিতে চেষ্টা চালাতে গিয়ে বাম বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাত পাওয়ায় তামিম ইকবাল ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতে পারেননি।[৪১] দ্বিতীয় দিন শেষ হবার পর বাংলাদেশ তাদের পাঁচ উইকেট হারায়। সবগুলো উইকেটই উইকেটের পিছনে কট বিহাইন্ডে পরিণত হয়। তন্মধ্যে উইকেট-রক্ষক ম্যাককুলাম একটি ও বাদ-বাকীগুলো স্লিপে কটের মাধ্যমে ধরা পড়ে। দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫১/৫ ও নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর জন্য আরও ১৯৯ রানের দরকার পড়ে নতুবা ইনিংস পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হবে।[৪০] তৃতীয় দিনে বাংলাদেশকে অল-আউট করার জন্য ব্ল্যাক ক্যাপসদের আর মাত্র ২৫ ওভার বোলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে ও ইনিংসের ব্যবধানে জয় পায়। কেবলমাত্র সাকিব আল হাসান বাঁধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে অপরাজিত ৪১ রান তুলেন। এরফলে, বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বশেষ উইকেটে ৩০ রানের সর্বোচ্চ রান তোলার সাথে নিজেদেরকে ভাগ বসান।[৪২]
পরিসংখ্যান
টেস্ট | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্যাটিং[৪৩] | ||||||||
খেলোয়াড় | দল | ম্যাচ | ইনিংস | রান | গড় | সর্বোচ্চ | ১০০ | ৫০ |
তামিম ইকবাল | ![]() | ২ | ৩ | ১৫২ | ৫০.৬৬ | ৮৪ | ০ | ২ |
ম্যাথু বেল | ![]() | ২ | ৩ | ১২৮ | ৬৪.০০ | ১০৭ | ১ | ০ |
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি | ![]() | ২ | ২ | ১২৬ | ৬৩.০০ | ৯৪ | ০ | ১ |
জ্যাকব ওরাম | ![]() | ২ | ২ | ১১৮ | ৫৯.০০ | ১১৭ | ১ | ০ |
স্টিভেন ফ্লেমিং | ![]() | ২ | ২ | ১০১ | ৫০.৫০ | ৮৭ | ০ | ১ |
বোলিং[৪৪] | ||||||||
খেলোয়াড় | দল | ম্যাচ | ওভার | উইকেট | গড় | সেরা | ৫ উই | ১০ উই |
ক্রিস মার্টিন | ![]() | ২ | ৬২.১ | ১৩ | ১৬.৯২ | ৫/৬৫ | ১ | ০ |
ইয়ান ও'ব্রায়েন | ![]() | ২ | ৪৮ | ৭ | ১৬.৫৭ | ৩/৩৪ | ০ | ০ |
মাশরাফি বিন মর্তুজা | ![]() | ২ | ৫৬ | ৭ | ২৬.৫৮ | ৪/৭৪ | ০ | ০ |
জ্যাকব ওরাম | ![]() | ২ | ৩৯ | ৬ | ১১.১৬ | ৩/২৩ | ০ | ০ |
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি | ![]() | ২ | ৩৩.৩ | ৫ | ১৫.১৬ | ৪/৭০ | ০ | ০ |
ওডিআই | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্যাটিং[৪৫] | ||||||||
খেলোয়াড় | দল | ম্যাচ | ইনিংস | রান | গড় | সর্বোচ্চ | ১০০ | ৫০ |
জেমি হাউ | ![]() | ৩ | ৩ | ১৬৯ | ৮৪.৫০ | ৮৮ | ০ | ২ |
ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম | ![]() | ৩ | ৩ | ১৫৫ | ৭৭.৫০ | ৮০* | ০ | ১ |
পিটার ফুলটন | ![]() | ৩ | ২ | ১১৮ | ৫৯.০০ | ৮৩ | ০ | ১ |
তামিম ইকবাল | ![]() | ৩ | ৩ | ১০৬ | ৩৫.৩৩ | ৫০ | ০ | ১ |
মোহাম্মদ আশরাফুল | ![]() | ৩ | ৩ | ৯৮ | ৩২.৬৬ | ৭০ | ০ | ১ |
বোলিং[৪৬] | ||||||||
খেলোয়াড় | দল | ম্যাচ | ওভার | উইকেট | গড় | সেরা | ৫ উই | ১০ উই |
কাইল মিলস | ![]() | ৩ | ২৮.৫ | ৯ | ১২.৫৫ | ৪/৪০ | ০ | ০ |
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি | ![]() | ৩ | ২৫ | ৭ | ১২.১৪ | ৫/৭ | ১ | ০ |
জ্যাকব ওরাম | ![]() | ৩ | ২১.৩ | ৪ | ২৩.০০ | ৩/৩৬ | ০ | ০ |
মার্ক গিলেস্পি | ![]() | ২ | ৯ | ৩ | ১৪.৩৩ | ৩/২৭ | ০ | ০ |
সাকিব আল হাসান | ![]() | ৩ | ২০.৪ | ৫ | ৪২.৩৩ | ৩/৫৬ | ০ | ০ |