হেডফোন
হেডফোন হচ্ছে এক জোড়া ছোট লাউডস্পিকার ড্রাইভার যা ব্যবহারকারীর কানের উপর মাথার চারপাশে পরিধান করা হয়। এগুলি হলো ইলেক্ট্রোকাস্টিক পরিবর্তক, যা একটি বৈদ্যুতিক সংকেতকে একটি অনুরূপ শব্দে রূপান্তর করে। হেডফোনগুলি একক ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগতভাবে একটি অডিও উৎস শুনতে দেয়, যা একটি লাউডস্পিকারের বিপরীত, যা কাছের যে কেউ শোনার জন্য খোলা বাতাসে শব্দ নির্গত করে। হেডফোনগুলি ইয়ারস্পিকার, ইয়ারফোন[১] বা কথোপকথনে ক্যান[২] নামেও পরিচিত। বৃত্তাকার ('কানের চারপাশে') এবং সুপ্রা-আউরাল ('কানের ওপরে') হেডফোনগুলি মাথার উপরের অংশে একটি ব্যান্ড ব্যবহার করে স্পিকারগুলিকে ধরে রাখে। আরেক প্রকার, যা ইয়ারবাডস বা ইয়ারপিস[১] নামেও পরিচিত, ব্যবহারকারীর কানে প্লাগ করা পৃথক ইউনিট নিয়ে গঠিত। তৃতীয় প্রকার হলো হাড় পরিবাহী হেডফোন, যা সাধারণত মাথার পেছনের অংশে আবৃত থাকে এবং কানের খালের সামনে অবস্থান করে, যার ফলে কানের খাল খোলা থাকে। টেলিযোগাযোগ প্রসঙ্গে, হেডসেট হলো হেডফোন এবং মাইক্রোফোনের সংমিশ্রণ।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/00/S%C5%82uchawki_referencyjne_K-701_firmy_AKG.jpg/220px-S%C5%82uchawki_referencyjne_K-701_firmy_AKG.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2c/August_headphones.jpg/220px-August_headphones.jpg)
ইতিহাস
টেলিফোন বা ল্যান্ডফোন ব্যবহারের সময়ে ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে হাত খালি রাখার প্রয়োজন থেকে হেডফোন ব্যবহারের সূচনা ঘটেছে। সে সময়ে বেশ কয়েকটি পুনরাবৃত্তিমূলক পণ্য ছিল যা "হ্যান্ডস-ফ্রি" হেডফোনগুলির পূর্বসূরী। ১৮৯০-এর দশকে ইলেক্ট্রোফোন নামক একটি ব্রিটিশ কোম্পানি প্রথম একটি যন্ত্র তৈরি করে, যা তাদের গ্রাহকদের লন্ডনের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে এবং অপেরা হাউসে পারফরমেন্সের লাইভ ফিডের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করে। সেবার গ্রাহকেরা একজোড়া বিশাল ইয়ারফোনের মাধ্যমে পারফরম্যান্স শুনতে পারে যা চিবুকের নীচে সংযুক্ত, একটি দীর্ঘ রড দ্বারা ধরে থাকে।[৩]
ফরাসি প্রকৌশলী আর্নেস্ট মারকাডিয়ার ১৮৯১ সালে ইন-ইয়ার হেডফোনগুলির একটি সেট উন্মুক্ত করেছিলেন, "টেলিফোন-রিসিভারের উন্নতির জন্য" মার্কাডিয়ারকে ইউএস পেটেন্ট নম্বর ৪৫৪,১৩৮ দেওয়া হয়েছিল, যা অপারেটরের মাথায় ব্যবহারের সময় যথেষ্ট হালকা হয়।[৩]
হেডফোন কী
হেডফোন হল একজোড়া ট্রান্সডুসার লাউডস্পিকার ড্রাইভার। এটা মিডিয়া প্লেয়ার থেকে নির্গত হওয়া বিদ্যুতি তরঙ্গ রূপান্তরিত করে মানুষের কানের শ্রাবণ যোগ্য শব্দ তৈরি করে। হেডফোন সাধারণত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, সিডি, ডিভিডি-এর সাথে ব্যবহার করা হয়। হেডফোনের সাহায্যে আমরা অনেক কিছু শুনতে পারি হেডফোন কানে লাগিয়ে কোন ব্যক্তিকে ফোন করলে শব্দ শোনার সাথে সাথে কথা বলা যায়।
হেডফোন এর অপর নাম কী
হেডফোনকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয় সেগুলো হল
1. ইয়ারফোন
2. হেডসেট
3. স্টেরিওফোন
হেডফোন কয় প্রকার ও কী কী
সাধারণত হেডফোন দুই প্রকার। কিছু হেডফোন আছে যেগুলো তাদের মাধ্যমে কোন ডিভাইসে যুক্ত করা হয়। আবার কিছু হেডফোন আছে যেগুলো ব্লুটুথ এর মাধ্যমে কানেকশন করা হয় সুতরাং সংগঠনের ভিত্তিতে হেডফোন কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
1.Wired হেডফোন
2.Wireless হেডফোন
Wired হেডফোনঃ যে হেডফোনে তার থাকে এবং তারের এক প্রান্ত হেডফোনের সাথে যুক্ত থাকে। অপর প্রান্ত কোড থাকে যেটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের মধ্যে প্রবেশ করে কানেক্ট করা হয়।
Wireless হেডফোনঃ যে হেডফোনে তার থাকেনা। হেডফোনটি ব্লুটুথ এর মাধ্যমে কানেকশন করা হয়।
ব্লুটুথ হেডফোন কী
যে সকল হেডফোনে ব্লুটুথ সংযোগের সুবিধা থাকে সে সমস্ত হেডফোনকে ব্লুটুথ হেডফোন বলা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট ডিভাইস থেকে হেডফোনটিকে কন্ট্রোল করা হয় বেশিরভাগ ব্লুটুথ হেডফোনে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে এ সমস্ত হেডফোন চার্জ দিতে হয়।
হেডফোন ব্যবহারের নিয়ম
হেডফোন ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হলো
১) তার যুক্ত হেডফোন
তার যুক্ত হেডফোন যদি ব্যবহার করেন তাহলে তারের অপর প্রান্ত মোবাইল, ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করবেন তার সাথে যুক্ত করুন।
২) ব্লুটুথ হেডফোন
ব্লুটুথ হেডফোন সর্বপ্রথমে হেডফোনের চার্জ আছে কিনা তা লক্ষ্য করতে হবে। চার্জ না থাকলে দিতে হবে। তারপর হেডফোনটিকে মোবাইল বা ল্যাপটপের ব্লুটুথ অপশনে গিয়ে হেডফোনের নামটি সাথে paired করে কানেকশন করতে হবে।
হেডফোন কী ধরনের ডিভাইস
হেডফোনের মাধ্যমে সাউন্ড বা শব্দ নির্গত হয় তাই এটি হলো আউটপুট ডিভাইস।
হেডফোন কেনার আগে যা দেখা প্রয়োজন
1. বাজারে নানা হেডফোন পাওয়া যায়। আপনাকে একটি ভালো ব্যান্ডের হেডফোন কিনতে হবে।
2. যদি তার যুক্ত হেডফোন হয় তাহলে তারের কোয়ালিটি দেখে নিতে হবে।
3. যদি ব্লুটুথ হেডফোন হয় তাহলে মোবাইল বা ল্যাপটপের সাথে ভালো কানেকশন হচ্ছে কিনা তা পরখ করতে হবে।
4. ব্লুটুথ হেডফোন চার্জ কেমন যায় তা দেখতে হবে।
5. হেডফোনের সাউন্ড কেমন তাও লক্ষ্য করতে হবে।
6. হেডফোনের ওয়ারেন্টি আছে কিনা তা জানতে হবে।
হেডফোন এর সুবিধা
হেডফোন ব্যবহারে সুবিধা হলো-আপনি যখন কোনো জার্নি করবেন তখন যদি কোন মোবাইলে কথা বলেন তবে আপনার আশেপাশে যদি অন্য কোন সাউন্ড হয় তাহলে আপনি কথা ভালোভাবে শুনতে পারবেন না কিন্তু হেডফোন দিয়ে তা ভালোভাবে শুনতে পারবেন।
হেডফোন এর অসুবিধা
বেশিক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করলে আমাদের কানে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। তাই আমাদের কানে অনেক রকমের রোগ হতে পারে। কান যেহেতু আমাদের দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে হেডফোন ব্যবহার করলে আমাদের কোকলিয়া তে ভারসাম্য ধরে রাখতে অসুবিধা হয়।
হেডফোন ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রযুক্তি দিন দিন এগিয়ে চলেছে। এর সাথে এগিয়ে চলেছে প্রযুক্তির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। হেডফোন এমন এক প্রযুক্তি যা ছোট বড় যুবক-যুবতী সবাই ব্যবহার করে কিন্তু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক সবাই জানে না। আবার অনেকে জেনেও অবাধে সেটি ব্যবহার করে কিন্তু আপনি কি জানেন ছোট এই হেডফোনটি আপনার কি কি প্রভাব ফেলতে পারে যদি না জানেন তাহলে এই লেখাটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
১) কানের ইনফেকশন
অনেকেই হেডফোন পাশের মানুষের সাথে শেয়ার করে ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে কানে থাকা ব্যাক্টেরিয়া সহজেই একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। তাই নিজের হেডফোনটি আলাদাভাবে ব্যবহার করা উচিত। তবে অন্যের সাথে হেডফোন শেয়ার করে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এটিকে স্যানিটাইজ করে নিতে হবে।
২) শ্রবণ জটিলতা
আপনি যখন হেডফোন ব্যবহার করবেন তখন অডিও সরাসরি আপনার কানে প্রবেশ করতেই থাকে। ৯০ ডেসিবেল বা তার বেশি আওয়াজ যদি আপনার কানে যায় তাহলে শ্রবন জটিলতা ঘটতে পারে। তাই আপনি যদি হেডফোন ব্যবহার করতে চান তবে আপনার কানের কিছু বিশ্রাম দিতে ভুলবেন না এবং উচ্চ আওয়াজে কোনো কিছু শুনবেন না।
৩) বাতাস প্রবেশে বাধা
বর্তমানে হেডফোন কোম্পানিগুলো তাদের হেডফোন অডিও এক্সপেরিয়েন্স এর দিক ঠিকই নজর দিয়েছে। যার ফলে আপনি খুব ভালো কোয়ালিটির গান শুনতে পারবেন। কিন্তু কিছু হেডফোন আছে যা ব্যবহারের ফলে আপনার কানে ছিদ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে কোন পাতায় প্রবেশ করতে পারে না যার ফলে আপনার কানে ইনফেকশন কিংবা জটিল কোন কিছুর ঝুঁকি থেকেই যায়।
৪) কানে ব্যথা
যারা অতিরিক্ত পরিমাণে হেডফোন ব্যবহার করে তাদের সাধারণত কানের সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে কানে ব্যথা করে অথবা কানের ভেতরে বিরক্তিকর আওয়াজ হতে থাকে। এটি কিন্তু কানের ক্ষতির লক্ষণ।
৫) মস্তিষ্কের উপর খারাপ প্রভাব
হেডফোন দ্বারা সৃষ্টি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ আপনার মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিপদ ডেকে আনতে পারে আর যারা ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করেন তারা তো অত্যাধিক ঝুঁকিতে আছেন সরাসরি সাথে যুক্ত তাই হেডফোন খুব বাজে ভাবে আপনার মস্তিষ্কে আঘাত হানতে পারে তাই মস্তিষ্কের জন্য হেডফোন খারাপ প্রভাব ফেলে।
৬) কানে কম শোনা
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার করে তারা হেডফোন খোলার পর অনেকক্ষণ ভালোভাবে কানে শুনতে পায় না। এটি সাময়িক হলেও এর ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে যা বধিরতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৭) হেডফোনের কারণে দুর্ঘটনা
ইদানিং হেডফোন ব্যবহারের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও ট্রেন দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হেডফোন কানে দিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় তারা অনেক আওয়াজ শুনতে পায় না অথবা মনোযোগের অভাবে কতিপয় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
হেডফোন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
হেডফোন ব্যবহার করার কিছু সঠিক নিয়মগুলো হচ্ছে-
১. ছোট হেডফোন আপনার কানের ছিদ্র পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তাই বড় হেডফোন ব্যবহার করাই ভালো।
২. জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে আপনার হেডফোন আপনি নিজেই ব্যবহার করুন। হেডফোন কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. মাসে প্রতিমাসে অন্তত একবার হেডফোন কাভার পরিবর্তন করুন। সেটা সম্ভব না হলে অন্তত প্রতিমাসে একবার ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
৪. বাসে অথবা ট্রেনে ভ্রমণ করার সময়ে বা হাঁটার সময়ে হেডফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. আপনার হেডফোন দিয়ে উচ্চ আওয়াজে গান বা কোনো অডিও শোনা থেকে বিরত থাকুন।
হেডফোনের দাম কতো
বাজারে বিভিন্ন ধরনের হেডফোন পাওয়া যায়। যা ব্র্যান্ড ও কোয়ালিটি অনুযায়ী এর মূল্য ভিন্নতর হয়ে থাকে। যেমন ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের হেডফোন পাওয়া যায়। তবে ব্লুটুথ যুক্ত হেডফোনের দাম একটু বেশি হয়। আর তারযুক্ত ইয়ারফোন গুলোর দাম যথেষ্ট কম।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে হেডফোন সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।