হিংলাজ মাতা মন্দির
হিংলাজ মাতা মন্দির (বালোচি ও উর্দু: ہنگلاج ماتا) হল পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের লাসবেলা জেলায় মাকরান উপকূলে অবস্থিত হিংলাজ শহরে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। হিংগোল জাতীয় উদ্যানের মধ্যভাগে অবস্থিত এই মন্দিরটি হিংলাজ দেবী মন্দির, হিঙ্গুলা দেবী মন্দির ও নানি মন্দির নামেও পরিচিত। হিংলাজ মাতা মন্দির হিন্দুধর্মের শাক্ত সম্প্রদায়ের নিকট পবিত্র ৫১ শক্তিপীঠের[১] এবং পাকিস্তানে অবস্থিত দু’টি শক্তিপীঠের অন্যতম (পাকিস্তানের অপর শক্তিপীঠটি হল শিবহরকরায়)।[২] হিংগোল নদীর তীরে একটি পার্বত্য গুহায় দেবী দুর্গার বিশেষ রূপ হিংলাজ মাতার পূজাবেদিটি অবস্থিত।[৩] বিগত তিন দশকে এই স্থানটির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মন্দিরটি পাকিস্তানের বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের একতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।[৪] হিংলাজ যাত্রা হল পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ হিন্দু তীর্থযাত্রা। বসন্তকালে আয়োজিত এই যাত্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি হিন্দু অংশগ্রহণ করেন।[৫] ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত অবধূতের মরুতীর্থ হিংলাজ উপন্যাসে হিংলাজ তীর্থযাত্রীদের অপরাধবোধ ও পারস্পরিক সম্পর্ক এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের এক মনোজ্ঞ বিবরণ পাওয়া যায়।[৬]
হিংলাজ মাতা মন্দির ہنگلاج ماتا | |
---|---|
![]() হিংলাজ মাতা মন্দিরে দেবী হিংলাজের শিলামূর্তি | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | লাসবেলা জেলা |
ঈশ্বর | হিংলাজ মাতা (মহাশক্তির রূপভেদ) |
উৎসবসমূহ | এপ্রিল মাসে চার দিনের তীর্থযাত্রা |
অবস্থান | |
অবস্থান | হিংলাজ |
রাজ্য | বালোচিস্তান |
দেশ | পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ২৫.০°৩০′৫০″ উত্তর ৬৫.০°৩০′৫৫″ পূর্ব / ২৫.৫১৩৮৯° উত্তর ৬৫.৫১৫২৮° পূর্ব |
ওয়েবসাইট | |
www |
নাম-ব্যুৎপত্তি
হিংলাজ মাতার মৃত্তিকানির্মিত নিচু পূজাবেদিটি একটি ক্ষুদ্র প্রাকৃতিক গুহার মধ্যে অবস্থিত। এই বেদিতে দেবীর কোনও মনুষ্যনির্মিত মূর্তি নেই। একটি ক্ষুদ্র অনিয়তাকার পাথরকে হিংলাজ মাতা হিসেবে পূজা করা হয়। পাথরটি সিঁদুর দ্বারা পরিলিপ্ত। তা থেকেই সম্ভবত এই অঞ্চলের সংস্কৃত নাম হিঙ্গুলার উৎপত্তি এবং এই হিঙ্গুলা শব্দটি থেকেই বর্তমান নাম হিংলাজের উদ্ভব ঘটে।[৭]
অবস্থান
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/81/Baluchistan_Canyons.jpg/220px-Baluchistan_Canyons.jpg)
আরব সাগরের সৈকত থেকে ১২ মাইল (১৯ কিমি) দূরে এবং সিন্ধু নদের মোহনা থেকে ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) পশ্চিমে বালোচিস্তানের লিয়ারি তহসিলের এক প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকার একটি সংকীর্ণ গিরিখাতে হিংলাজ শক্তিপীঠের অবস্থান। এখানকার মাকরান মরু অঞ্চলে কিরথার পর্বতমালার একটি প্রসারিত অংশের শেষ প্রান্তে হিংগোল নদীর পশ্চিম তীরে হিংলাজ মাতার গুহামন্দিরটি অবস্থিত।[৮][৭] অঞ্চলটি হিংগোল জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত।[৯]
হিংলাজ মাতা মন্দিরের আশেপাশে অন্যান্য ধর্মস্থানগুলি হল গণেশ দেব মন্দির, মাতা কালী মন্দির, গুরু গোরখনাথ দুনি, ব্রহ্ম কুন্ড, তীর কুণ্ড, গুরু নানক খাড়াও, রামঝরোখা বেঠক, চোরাশি পর্বতে অনিল কুন্ড, চন্দ্রগুপ, খারি নদী ও অঘোর পূজাস্থান।[৯]
গুরুত্ব
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/51/Preperation_of_Hawan_at_Hinglaj_Mata_%28Rani_ki_Mandir%29_During_Yanglaj_Yatra_2017_Photo_by_Aliraza_Khatri.jpg/220px-Preperation_of_Hawan_at_Hinglaj_Mata_%28Rani_ki_Mandir%29_During_Yanglaj_Yatra_2017_Photo_by_Aliraza_Khatri.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/1e/Hawan_at_Hinglaj_Mata_%28Rani_ki_Mandir%29_During_Yanglaj_Yatra_2017_Photo_by_Aliraza_Khatri.jpg/220px-Hawan_at_Hinglaj_Mata_%28Rani_ki_Mandir%29_During_Yanglaj_Yatra_2017_Photo_by_Aliraza_Khatri.jpg)
কথিত আছে, হিংলাজ মাতা অত্যন্ত শক্তিশালী এক দেবী এবং তিনি তাঁর সকল ভক্তের কল্যাণ সাধন করেন। তাঁর প্রধান মন্দিরটি হিংলাজে হলেও প্রতিবেশী ভারতের গুজরাত ও রাজস্থান রাজ্যে হিংলাজ মাতার অনেকগুলি মন্দির রয়েছে।[১০] হিন্দুশাস্ত্রে, বিশেষত সংস্কৃত সাহিত্যে, এই তীর্থটি হিঙ্গুলা, হিঙ্গলাজা ও হিঙ্গুলতা নামে পরিচিত।[১১] পীঠাধিষ্ঠাত্রী দেবীও হিংলাজ মাতা, হিংলাজ দেবী ও হিঙ্গুলা দেবী (রক্তবর্ণা দেবী বা হিঙ্গুলার দেবী)[৭] ও কোট্টারি বা কোটাবী[১২] নামে পরিচিতা।
হিংলাজ মাতার প্রধান কিংবদন্তিটি শক্তিপীঠের সৃষ্টিকাহিনির সঙ্গে জড়িত। প্রজাপতি দক্ষের কন্যা সতী পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শিবকে বিবাহ করেছিলেন। এরপর দক্ষ তাঁর কন্যা ও জামাতাকে নিমন্ত্রণ না জানিয়েই এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। সতী অনাহুত অবস্থায় সেই যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলে দক্ষ তাঁকে উপেক্ষা করেন এবং শিবের নিন্দা করেন। পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞাগ্নিতে ঝাঁপ দিয়ে দেহত্যাগ করেন। তারপর শিব বীরভদ্রের রূপে সতীর মৃত্যুর জন্য দায়ী দক্ষকে প্রথমে হত্যা করেন এবং পরে তাঁকে ক্ষমা করে পুনর্জীবন দান করেন। এদিকে সতীর মৃত্যু হলেও তাঁর দেহটি ভষ্মীভূত হয়নি। শোকাহত শিব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে ব্রহ্মাণ্ডে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। পরিশেষে বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ১০৮টি খণ্ডে ছিন্ন করেন। এই খণ্ডগুলির মধ্যে ৫২টি পৃথিবীতে এবং অন্যগুলি অন্যান্য গ্রহে পতিত হয়ে এক-একটি শক্তিপীঠে পরিণত হয়। প্রতিটি শক্তিপীঠে দেবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপের পূজা প্রচলিত। প্রত্যেক শক্তিপীঠে শিবও ভৈরব অর্থাৎ পীঠাধিষ্ঠাত্রী দেবীর স্বামী তথা পীঠরক্ষক দেবতা হিসেবে পূজিত হন।[১৩] কথিত আছে, সতীর মস্তক হিংলাজে পতিত হয়েছিল।[৯][১৪][১০]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- Raja, Prajna; Raja, Harish (২০০০)। Prajna Yoga। Ocean Books (P) Ltd। পৃষ্ঠা 186। আইএসবিএন 81 87100-50-8।
- Kapoor, Subodh (২০০০)। The Indian Encyclopaedia: Biographical, Historical, Religious, Administrative, Ethnological, Commercial and Scientific. Hinayana-India (Central India)। Genesis Publishing Pvt Ltd। পৃষ্ঠা 2989। আইএসবিএন 9788177552676।
- Sircar, Dinesh Chandra (১৯৯৮)। The Śākta Pīṭhas Volume 8 of Religion and Ethics Series। Motilal Banarsidass Publ। পৃষ্ঠা 18–19, 35, 39। আইএসবিএন 9788120808799।
- Dalal, Roshen (১৯৯৮)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 158–59। আইএসবিএন 9780143414216।
বহিঃসংযোগ
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)