হার্দ-উৎপাদ
সংবহন শারীরবিদ্যায় হার্দ-উৎপাদ (ইংরেজি: Cardiac output) হল হৃৎপিন্ডের প্রতিটি নিলয় দ্বারা যে পরিমাণ রক্ত নির্দিষ্ট ধমনীতে উৎক্ষেপিত হয়। এটি , , or দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।[১]
নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা এটি নির্ধারিত করা সম্ভব:
এখানে, CO = হার্দ-উৎপাদ, HR = হৃৎস্পন্দনের হার ও SV = ঘাত পরিমাণ (স্ট্রোক ভলিউম)।
একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক হার্দ-উৎপাদের মান হয় পাঁচ লিটার প্রতি মিনিট। প্রতি মিনিটের হিসাবে এটি গণনা হওয়ার কারণে এটিকে মিনিট পরিমাণ ও বলা হয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের স্ট্রোক ভলিউম ৭০ মিলিলিটার ও হৃৎস্পন্দনের হার ৭২/মিনিট ধরা হলে, মিনিট পরিমাণ প্রায় ৫ লিটার/মিনিট হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি নিলয়ের উৎক্ষেপণ করা রক্তের পরিমাণ তাই সমগ্র হৃৎপিন্ডের দ্বারা উৎক্ষেপিত রক্তের পরিমাণ হার্দ-উৎপাদের দ্বিগুণ।
প্রতি মিনিটে প্রতি বর্গমিটার দেহতলের জন্য হার্দ-উৎপাদকে বলা হয় হৃদসূচক (Cardiac index)।
পরিমাপ পদ্ধতি
মানবদেহে হার্দ-উৎপাদ ফিকের নীতি অনুসরণে পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী অ্যাডোল্ফ ইউজিন ফিক এই পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। তিনি দেখান যে একক সময় যে পরিমাণ কোন গ্যাস ফুসফুসে প্রবেশ করে বা ফুসফুস থেকে বর্জিত হয় তা ফুসফুসে প্রবেশকারী ধমনীর রক্তে এবং ফুসফুস ত্যাগকারী শিরার রক্তে ওই গ্যাসের পার্থক্যের সমান।
- অক্সিজেন গ্রহণ পদ্ধতি
স্পাইরোমিটার বা ডগলাস ব্যাগ থেকে গ্যাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়।
ধরা যাক,
- কোন ব্যক্তি ফুসফুস থেকে প্রতি মিনিটে ২৫০ মিলিলিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে
- ওই ব্যক্তির ১০০ মিলিলিটার ধমনীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৯ মিলিলিটার এবং ১০০ মিলিলিটার শিরার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৪ মিলিলিটার।
তাহলে, অক্সিজেন এর পার্থক্য (১৯-১৪) বা ৫ মিলিলিটার।
সুতরাং, হার্দ-উৎপাদ (মিনিট পরিমাণ) = (২৫০÷৫)×১০০ = ৫০০০ মিলিলিটার বা ৫ লিটার।
নিয়ন্ত্রক
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/3f/2036_Summary_of_Factors_in_Cardiac_Output.jpg/220px-2036_Summary_of_Factors_in_Cardiac_Output.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/15/2031_Factors_in_Cardiac_Output.jpg/330px-2031_Factors_in_Cardiac_Output.jpg)
হার্দ-উৎপাদ মূলত কলার অক্সিজেন চাহিদা ওপর নির্ভরশীল।[৪]
- অত্যধিক ব্যায়ামের পর এটি বৃদ্ধি পায়।
- দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে শুয়ে থাকার সময় এটি বৃদ্ধি পায়।
- ঘুমানোর সময় এটি কমে যায়।
- হৃদরোগ ও রক্তক্ষরণের ফলে এটি কমে যায়।
- উত্তেজনা, পেশি সঞ্চালন ও জ্বর হলে এটি বেড়ে যায়।
- থাইরয়েড গ্রন্থির সক্রিয়তার সাথে এটি সমানুপাতিক।
- গর্ভাবস্থার শেষ দিকে মায়েদের হার্দ-উৎপাদ বাড়ে।