স্মিতা পাতিল
স্মিতা পাতিল (মারাঠি: स्मिता पाटील; জন্ম: ১৭ অক্টোবর, ১৯৫৫ - মৃত্যু: ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৬) মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, টেলিভিশন ও থিয়েটার কর্মী ছিলেন।[১][৩][৪] তিনি তার সময়কালে শ্রেষ্ঠ মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রীরূপে আখ্যায়িত হয়ে থাকেন।[৫] এক দশকেরও অধিক সময় অভিনয়কর্মে মনোনিবেশ ঘটান।[৬] এসময়ে হিন্দি ও মারাঠি ভাষার ৮০-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।[২]
স্মিতা পাতিল | |
---|---|
![]() ২০১৩ সালের একটি পোস্টকার্ড স্ট্যাম্পে স্মিতার ছবি | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮৬ | (বয়স ৩১)
মৃত্যুর কারণ | শিশু জন্মসংক্রান্ত জটিলতা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | অভিনেত্রী, টেলিভিশন সংবাদপাঠিকা |
কর্মজীবন | ১৯৭৪-১৯৮৫ (মৃত্যু) |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | মন্থন (১৯৭৭), ভূমিকা (১৯৭৭), আক্রোশ (১৯৮০), চক্র (১৯৮১), চিদাম্বরম (১৯৮৫), মির্চ মশলা (১৯৮৫) |
দাম্পত্য সঙ্গী | রাজ বাব্বর (১৯৮৬) |
সন্তান | প্রতীক বব্বর (পুত্র) |
পিতা-মাতা | শিবাজীরাও গিরিধর পাতিল বিদ্যাতাই পাতিল |
শৈশবকাল
স্মিতা পাতিলের জন্ম পুনেতে।[৭] কাহ্নবি মারাঠা পরিবারে মহারাষ্ট্রীয় রাজনীতিবিদ শিবাজীরাও গিরিধর পাতিল ও খান্দেশ প্রদেশের শিরপুর শহরের সমাজকর্মী বিদ্যাতাই পাতিল দম্পতির সন্তান তিনি। পুনের রেণুকা স্বরূপ মেমোরিয়াল হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি। ১৯৭০-এর দশকে ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দূরদর্শনে সংবাদ পাঠক হিসেবে প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় হাজির হন।[৮] পুনেতে অবস্থিত ভারতের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনার পাশাপাশি আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার সময় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল তাকে পর্দার অন্তরাল থেকে টেনে নিয়ে আসেন।[৯]
চলচ্চিত্র জীবন
শ্যাম বেনেগালের 'চরণদাস চোর' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে তার অভিষেক ঘটে।[১০][১১] ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীরূপেও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তার ভূমিকা ছিল। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে - মন্থন,[১][১১] ভূমিকা,[১][১১] আক্রোশ, চক্র, চিদাম্বরম ও মির্চ মশলা।[১][১২][১২][১৩]
একই প্রজন্মের অভিনেত্রীরূপে পরিচিত শাবানা আজমির সাথে তিনিও রাজনৈতিকধর্মী চলচ্চিত্রে অংশ নেন। এছাড়াও শ্যাম বেনেগাল,[১১] গোবিন্দ নিহালানি, সত্যজিৎ রায়,[৪] জি অরিন্দম এবং মৃণাল সেনের ন্যায় প্রখ্যাত পরিচালকদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি মুম্বইয়ের বাণিজ্যিকধর্মী হিন্দি চলচ্চিত্রেও তার পদচারণা ছিল।
তার ভাষায়,
আমি প্রায় পাঁচ বছর ক্ষুদ্র পরিসরের চলচ্চিত্রে অবস্থান করতে বদ্ধ পরিকর ছিলাম। আমি সকল ধরনের বাণিজ্যিকধর্মী চলচ্চিত্র প্রত্যাখ্যান করেছি।...
অভিনয়ের পাশাপাশি সক্রিয় নারীবাদী ছিলেন তিনি। মুম্বই ভিত্তিক ওম্যান্স সেন্টারের সদস্য ছিলেন। তিনি গভীরভাবে নারীসংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রসরতার পরিচয় দেন। চলচ্চিত্রেও চিরায়ত ভারতীয় সমাজের যৌন নিপীড়ন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের দূর্ভোগচিত্র চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটিয়েছেন।[১৪]
ব্যক্তিগত জীবন
প্রচণ্ড আবেগবশতঃ অভিনেতা রাজ বাব্বরের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।[১৫] এরফলে তিনি তার সমর্থক ও গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। তারা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গণমাধ্যমে ঝড় তোলেন। ফলশ্রুতিতে রাজবাব্বর তার স্ত্রী নাদিরা বাব্বরকে পরিত্যাগ করে পাতিলকে বিয়ে করতে বাধ্য হন।[১৬] পরবর্তীতে রাজ বাব্বরের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু পুত্র সন্তান প্রতীক বাব্বরকে[১৭] জন্মদানের দুই সপ্তাহ পর জন্মসংক্রান্ত জটিলতায় ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে।[৪]
মৃত্যু পরবর্তীকালে দশের অধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। তার মৃত্যুর প্রায় দুই দশক পর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন অভিযোগ করেন যে, স্মিতা পাতিলের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকদের গাফিলতিই পুরোপুরিভাবে জড়িত।[১৮]
সম্মাননা
১৯৮৪ সালে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরূপে দায়িত্ব পালন করেন স্মিতা পাতিল।[১৯] চক্র চলচ্চিত্র নির্মাণকালে স্মিতা পাতিল বোম্বের বস্তি পরিদর্শন করে সম্যক অবগত হয়েছিলেন। এ চলচ্চিত্রটি আরও একটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। চলচ্চিত্র জীবনে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন।
১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মির্চ মশলায় তার ভূমিকা ছিল অনবদ্য ও প্রশংসনীয়। এতে কর্মজীবী শ্রমিক হিসেবে লম্পট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায় তাকে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এপ্রিল, ২০১৩ সালে ফোর্বস সাময়িকী চলচ্চিত্রটিকে অভিনয়শৈলীর দিক দিয়ে ২৫তম অবস্থানে রাখে।[২০] ২০১১ সালে রেডিফ.কম নার্গিসের পর স্মিতাকে সর্বকালের দ্বিতীয় সেরা অভিনেত্রীরূপে তালিকাভুক্ত করে।[২১] ২০১২ সালে তার সম্মানে স্মিতা পাতিল ডকুমেন্টারি ও শর্টফিল্ম উৎসবের আয়োজন করে।[২২] ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবার্ষিকীতে ডাকবিভাগ তার মুখাবয়ব নিয়ে ৩ মে, ২০১৩ তারিখে ডাকটিকিট প্রকাশ করে।