স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্র

স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্র হলো পৃথিবীর জলীয় বাস্তুতন্ত্র এর একটি অংশ। এই বাস্তুতন্ত্রে, হ্রদ, পুকুর, নদী, ছোট নদী বা খাল , ঝর্ণা, বিল এবং জলাশয় অন্তর্ভুক্ত। [১] স্বাদুপানির জীবদের প্রকারভেদ বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে করা যায় যেমনঃ তাপমাত্রা, আলোর ভেদ্যতা, নিউট্রিয়েন্ট এবং উদ্ভিদের উপস্থিতি। সময়ের সাথে স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সমগ্র বাস্তুসংস্থানের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করেছে। [২]

স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রকে ল্যানটিক বাস্তুতন্ত্র (বদ্ধ পানি) এবং লুইটিক বাস্তুতন্ত্র (স্রোতশীল পানি) দুইভাগে ভাগ করা যায়। [১]

লিমোনলজি (এবং এর শাখা স্বাদুপানির জীবতন্ত্র) হলো স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের একটি শাখা যা এই সংক্রান্ত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। [১] এটি হাইড্রোবায়োলজি এর একটি শাখা।

প্রাথমিকভাবে স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি বৃদ্ধির কারনে।[৩] (উদাহরণস্বরুপ, কলেরা মহামারী শুরু হয় নর্দমার মাধ্যমে পানিদূষনের কারনে)। শুরুতে পরীক্ষাগুলো ব্যাকটেরিয়ার উপর না করে শুধু রাসায়নিক নির্দেশকগুলোর উপর করা হলেও পরবর্তীতে ব্যাকটেরিইয়া এবং সেই সাথে শৈবাল, ছত্রাক এবং প্রোটোযোয়ার উপরও পরীক্ষা করা শুরু হয়। পরবর্তীতে একটি নতুন ধরনের নীরিক্ষা পদ্ধতি শুরু হয় যেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রানী (মেরুদণ্ডী অনুজীব, ম্যাক্রোফাইট এবং মাছ) গণনা করা হয় এবং এর সাথে সম্পৃক্ত জলপ্রবাহের ধরন যাচাই করা হয়।[৪]

ঝুঁকি সমূহ

স্বাদুপানির জীববৈচিত্র্য পাঁচ ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, যেমনঃ অতিরিক্ত শক্তি শোষণ, পানি দূষণ, স্রোতের পরিবর্তন, আবাসস্থল ধ্বংস বা ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্য কোনো প্রাণীর আক্রমণ। [৫] সাম্প্রতিক বিলুপ্তির ধরনগুলো যাচাই করে দেখা যায়, এর পেছনের প্রধান কারণগুলো ছিল, অধঃক্ষেপণ, জলাশয়ের বিভাজন, জৈবিক ও রাসায়নিক দূষক, বাধ এবং আক্রমণকারী প্রাণী।[৬] যেসব প্রচলিত রাসায়নিক উপাদান বিশুদ্ধপানি দুষিত করে এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এর উপর প্রভাব ফেলে সেগুলো হলো অম্লতা, ইউট্রোফিকেশন, তামা এবং কীটনাশক ও রাসায়নিক সার[৭] জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অপ্রত্যাশিত সম্পৃক্ততার কারণে স্বাদু ও লোনা পানির মৎস্যের জীবনযাত্রা জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। সেই সাথে এই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন প্রভাবকের প্রভাবও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে যা স্বাদু ও লোনাপানির প্রাণীকুলকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। [৮]

স্বাদুপানির প্রাণীকুলের বিলুপ্তি

উত্তর আমেরিকায় উনিশ শতক থেকে প্রায় ১২৩ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। উত্তর আমেরিকার স্বাদুপানির প্রজাতিগুলোর মধ্যে ৪৮.৫% ঝিনুক, ২২.৮% শামুক, ৩২,৭% চিংড়ি, ২৫.৯% উভচর এবং ২১.২% মাছ হয় ঝুঁকিপুর্ণ অথবা বিপন্ন অবস্থায় আছে। [৬] আগামী শতকের মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতির বিলুপ্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। এর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আক্রমণাত্মক প্রজাতি, প্রভাব বিস্তারকারি প্রজাতির বিলুপ্তি এবং ইতিমধ্যে কার্যত বিলুপ্তির পথে থাকা প্রজাতি ( উদাহরনস্বরূপ যেসব প্রজাতি প্রজননের মাধ্যমে আর সংখ্যাবৃদ্ধি করতে অপারগ)।[৬] প্রাকৃ্তিক পরিবেশ সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণের পরেও উত্তর আমেরিকার স্বাদুপানির মৎস্য বিলুপ্তির হার পূর্ববর্তী বিলুপ্তি হারের তুলনায় প্রায় ৮৭৭ গুণ বেশি (৩,০০০,০০ বছরে ১ টি)। [৯] স্বাদুপানির প্রাণীকুলের বিলুপ্তির আনুমাণিক হার, স্থলভাগের প্রাণীদের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি এবং রেইনফরেস্টের প্রাণীদের বিলুপ্তি হারের সাথেও এর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।[৬] স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের এইরূপ ভয়াবহ অবস্থা থেকে জীববৈচিত্র্যকে উদ্ধার করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একটি দল একটি ইমার্জেন্সী অ্যাকশন প্ল্যান এর খসড়া তৈরী করেছে। [১০]

বায়োকারেন্ট, একটি স্বাদুপানির জৈব নিরীক্ষণ পদ্ধতি, এটি প্রধানত প্রাণীকুলের কাঠামো নিয়ে কাজ করলেও কিছুক্ষেত্রে কার্যকারী নির্দেশকগুলো যেমন জৈবরাসায়নিক (বা জৈবিক) অক্সিজেনের চাহিদা, সেডিমেন্ট অক্সিজেনের চাহিদা এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। [৪] বৈচিত্র্যময় শেণিবিন্যাস, সহজলভ্যতা, বিভিন্ন প্রভাবকের প্রতি সংবেদনশীলতা, সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাবের কারণে সাধারণত ম্যাক্রোইনভার্টিভ্রেট ধরনের প্রাণীকুলের কাঠামোর উপর অধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। [১১] তাছাড়া, এই জৈব নিরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে শৈবাল শ্রেণীর কাঠামো পরিমাপ করা হয় ( বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াটম ব্যবহার করে)। শৈবালও শ্রেণীগতভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ, সহজলভ্য, বিভিন্ন প্রভাবকের প্রতি অধিক সংবেদনশীল, সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। [১২] শৈবাল খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর কিছু প্রজাতি পরিবেশের কোনো পরিবর্তনকে দ্রুত ও সহজেই চিহ্নিত করতে পারে।[১২]

শ্রেণি কাঠামোর পাশাপাশি স্বাদুপানির প্রভাবকগুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া নিরীক্ষার মাধ্যমে করা গবেষণাগুলো জীবকুলের প্রকৃতি পরিবর্তন, বৃদ্ধিহারের পরিবর্তন, প্রজনন বা মৃত্যুহার ইত্যাদি পরিমাপ করতে সাহায্য করে। [৪] কিন্তু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, একক প্রজাতির উপর করা গবেষণার ফলাফল সবসময় প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং একাধিক প্রজাতির উপস্থিতিতে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।[৪]

স্বাদুপানি বাস্তুতন্ত্রের আদর্শ "স্বাস্থ্য" সংজ্ঞায়নের জন্য সাধারণত আদর্শ স্থানে গবেষণার কাজ করা হয়। এই স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা হয় যাতে এটি মানুষ এবং তার কাজের দ্বারা যথাসম্ভব কম প্রভাবিত হয়।[৪] তথাপি, সংরক্ষিত উপাদান যেমন ডায়াটম, ভালভ, ম্যাক্রোফাইট পরাগ, পোকা, চিটিন, এবং মাছের আঁশ ইত্যাদি ব্যবহার করে আদর্শ পরিবেশটি ক্ষণস্থায়ীভাবে ছোট পরিসরে তৈরী করা যায় যা মানুষের প্রভাব বা বাধার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবে। [৪] এসব ক্ষণস্থায়ী আদর্শ পরিবেশ সাধারণত স্থির পানিতে তৈরী করা সহজ হয় কেননা স্থির পানি চলমান পানির তুলনায় পানির উপাদানগুলো এবং জৈব নির্দেশকগুলো বেশি ধারণ ও সংরক্ষণ করতে পারে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Aquatic organisms টেমপ্লেট:Modelling ecosystems

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী