স্পিনোজার দর্শন

স্পিনোজার দর্শন বলতে সতের শতকে ইউরোপে বারুখ স্পিনোজা কর্তৃক সৃষ্ট পদ্ধতিবদ্ধ ও যৌক্তিক দর্শনকে বোঝায়।[১][২][৩] তার দর্শনে, কিছু পরষ্পর সুসঙ্গত মৌলিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে, স্পিনোজা জীবনের গূঢ় প্রশ্ন সমুহের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন “ঈশ্বরের অস্তিত্ব শুধুই দর্শনতাত্ত্বিক”।[৩][৪] যদিও তিনি দেকার্তে,[৫] ইউক্লিড,[৪] থমাস হবসের[৫] মত চিন্তাবিদ এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিক যেমন মাইমনিডস্‌[৫] কর্তৃক প্রবল ভাবে প্রভাবিত ছিলেন, তবুও তার দর্শনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ বহুলাংশেই ছিলো জিউডো-ক্রিশ্চিয়ান রীতি বহির্ভুত। আবেগ বিষয়ক স্পিনোজার অনেক ধারণা, যা আধুনিক মনোবিজ্ঞান চর্চার পূর্বসুরি, আজো চিন্তাবিদদের মধ্যে মতবিরোধের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। স্পিনোজার দর্শনের ‘জ্যামিতিক পদ্ধতি’ এমনকি প্রথম সারির চিন্তাবিদের পক্ষেও অনেক সময় অনুধাবন দুঃসাধ্য ছিলো। গ্যাটে এক স্বীকারক্তিতে বলেন, “বেশিরভাগ সময় স্পিনোজা কি বোঝাতে চাচ্ছেন সেটা আমি নিজেও ঠিক অনুধাবন করতে পারিনি”। এর একটা কারণ তার গ্রন্থ ‘ইথিক্স’ এ বেশ কিছু বিতর্কসাপেক্ষ অস্পষ্টতা রয়েছে এবং এর কঠোর গাণিতিক সংগঠন ইউক্লিডিয় জ্যামিতির আদলে গড়া। এ সত্তেও তার দর্শন আলবার্ট আইন্সটাইনসহ[৬] অন্য অনেক চিন্তাবিদ কে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়।[৭][৮][৯][১০][১১]

কার্যকরণের নীতি স্পিনোজার চিন্তা পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে; যেমন একটি গোলক দ্বিতীয় একটি গোলকের গতির কারণ হতে পারে, যেখানে এই প্রথম গোলকটিই আবার অতীতে দ্বিতীয় গোলকের প্রভাবে গতি লাভ করেছে, এভাবে প্রক্রিয়াটি পুনরাবর্তিত হতে থাকে।

যুক্তিনির্ভর জ্যামিতিক পদ্ধতি

পল গ্যঁগা(১৮৪৮–১৯০৩) প্রশ্ন করেছিলেন: “আমরা কোথা থেকে এসেছি? আমরা কী? আমরা কোথায় চলেছি? স্পিনোজার কাছে উত্তর ছিলো

স্পিনোজার দর্শনকে শূন্য থেকে একটি অভিধান তৈরি করার সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে দুয়েকটি শব্দের সংজ্ঞা ধরে নিয়ে মৌলিক কিছুর নীতির আলোকে পুরো একটা শব্দসম্ভার গঠন করা হয়। স্পিনোজার পদ্ধতি অনেকটা গণিতবিদদের জ্যামিতিক পদ্ধতির সাথে তুলনীয়, যেখানে মৌলিক কিছু উপপাদ্য স্বীকার্য হিসেবে ধরে নিয়ে এদের সাহায্যে জটিলতর উপপাদ্য প্রমাণ কয়া হয় এভাবেই ধাপে ধাপে সমগ্র্য জ্যামিতি গড়ে ওঠে। দেকার্তে পদ্ধতির সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, “পদ্ধতি হচ্ছে সেই সকল নির্ভরযোগ্য নিয়মসমষ্টি, যাদেরকে সহজে প্রয়োগ করা সম্ভব এবং যাদেরকে সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে কেউ কখনোই কোনো মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে না, বা এর চর্চার ফলে কারো মানসিক প্রচেষ্টার অপচয় হবে না, উপরন্তু ধীরে ধীরে এবং ধ্রুব হারে তার জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার অনুধাবন ক্ষমতার সীমার মধ্যে সত্যিকার উপলব্ধিতে উপনিত হয়।” স্পিনোজার দর্শন এমন এক চিন্তা-পদ্ধতি যা সঠিক প্রাথমিক অনুমিতি ও সেখান থেকে সঠিক ভাবে উপনিত সিদ্ধান্তের উপর সম্পুর্ণরূপে নির্ভরশীল। এমন হতে পারে, যদি স্পিনোজার প্রাথমিক অনুমিতিসমূহ ভ্রান্ত হয় অথবা সেখান থেকে নতুন সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার প্রক্রিয়া ভুল হয়, তাহলে তার সমগ্র দর্শনই ভ্রান্ত বলে পরিগণিত হবে। পদ্ধতিবদ্ধ দর্শন চর্চার, যেখানে একটা ধারণা আরেকটা ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠের, এটা একটা বড় ঝুকি। এ সত্তেও স্পিনোজার দর্শন পন্ডিতদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করে যাচ্ছে, এবং দর্শন ও বিজ্ঞানের উন্নয়নে ক্রমাগত অবদান রেখে চলেছে।

পদার্থ

স্পিনোজা তার দর্শনের মৌলিক নীতি থেকে জটিল ধারণা সমূহে উপস্থিত হয়েছেন ইউক্লিডের জ্যামিতির মতো অন্তর্নিহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ যুক্তির সাহায্যে।

পদার্থ বা অন্তঃসার বলতে অন্তর্নিহীত সারবস্তুকে বোঝায়। স্পিনোজার ভেবেছিলেন সবকিছুর সারবস্তু একটাই। তার মতে:

স্পিনোজার ‘সাবস্টেন্স’ হচ্ছে এমন কিছু, যা নিজের মধ্যেই আছে। যা অন্য কিছুর উপরই নির্ভর করে না, যা অস্তিত্বশীল, এবং নিজে অস্তিত্বের জন্য সে অন্য কোনো ধারণার উপর নির্ভরশীল নয়। এবং যা পুরোপুরি বাস্তব।

স্পিনোজার দর্শনে ‘সাবস্টেন্স’ ছাড়াও দ্বিতীয় যে মৌলিক ঘাঠনিক উপাদানটি রয়েছে তা হলো ‘কার্যকরণ’। যা ক্রিয়ার সাথে প্রতিকৃয়ার সম্পর্ক নির্ধারণ করে। স্পিনোজা লিখেছেন: “কোনো নির্দিষ্ট ক্রিয়ার অবশ্যই কোনো প্রতিক্রিয়া থাকবে, এবং অপর দিকে, যদি কোনো নির্দিষ্ট কারণ না থাকে তাহলে কোনো প্রতিক্রিয়ার অস্তিত্ব অসম্ভব”। অর্থাৎ, কোনো ক্রিয়া নেই? তাহলে কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই? এর অর্থ, শুরুতেই কোনো ক্রিয়াও ছিলোনা। স্পিনোজার কাছে এই বিশ্ব হচ্ছে কার্যকরণ সূত্রের এক বিশাল সমাহার, অনেকটা বিলিয়ার্ড টেবিলের মত। যেখানে একটি গতিশীল বল অপর একটি বলকে আঘাত করছে, এবং সেই আঘাতের ফলে অন্য বলটিও গতি লাভ করছে। প্রথম বলটি দ্বিতীয় বলের গতির কারণ, অর্থাৎ ক্রিয়া। এবং এই আঘাতের ফলে দ্বিতীয় বলের যে সরণ সেটা হচ্ছে প্রতিক্রিয়া। এখন যদি দ্বিতীয় বলটি না সরে, এর অর্থ হলো, প্রথম বলটি তাকে আঘাত করেনি। অর্থাৎ এখানে ক্রিয়া অনুপস্থিত। এই ক্রিয়া-প্রতিকৃয়ার সম্পর্ক অনুধাবন স্পিনোজার দর্শন বোঝার মৌলিক শর্ত।এই বৃহৎ পাথরটি কি ‘সাবস্টেন্স’? এটি বৃহদাকায়, কঠিন এবং ভয়ঙ্কর ভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছে।

কলারাডোর এই বৃহৎ পাথরটি কি ‘সাবস্টেন্স’? এটি বৃহদাকায়, কঠিন এবং ভারসাম্য রক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে।

স্পিনোজা, এর পরে, তার এই দুই মৌলিক ধারণা: সাবস্টেন্স ও কার্যকরণ, এর সাহায্যে বৃহত্তর উপসংহারে উপনিত হয়েছেন। এখন, যদি সাবস্টেন্স বা সারবস্তু বলতে আমরা বুঝি যা ‘নিজে থেকেই আছে’ এবং এই বিশ্ব যদি কার্যকরণের সূত্র দ্বারাই চালিত হয়, তাহলে আমরা কি বলব যে একটি পাথরও আসলে একটি সারবস্তু? এর অস্তিত্ব আছে। এটা কঠিন। বৃহৎ। এবং ধরা-ছোঁয়ার মধ্যেই। কিন্তু যদি পাশের ছবির দুই ব্যক্তি একটা লিভারের সাহায্যে এই পাথরটাকে নাড়ায় তাহলে এটা গড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি ভেঙ্গে টুকরো টুকরোও হয়ে যেতে পারে।

স্পিনোজার মতে যেহেতু ছবির দুই ব্যক্তি চাইলে এই পাথরটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে সেহেতু এই পাথরের আসলে কোনো স্বকীয় অস্তিত্ব নেই। বরং, এই পাথরের অস্তিত্ব এই দুই ব্যক্তি কি করেছে, না করেছে তার উপর নির্ভরশীল। তাই এই পাথর শুধু মাত্র নিজের অস্তিত্ব দিয়েই নিজেকে পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। এই দুই ব্যক্তির প্রভাবও তার অস্তিতের ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো বাহ্যিক বস্তুর প্রভাবকে, যেমন এখানে এই দুই ব্যক্তির প্রভাব, বাদ রেখে কারো পক্ষে এই পাথরের ধারণা সম্পুর্ণরুপে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।

হারিকেন রিটা গালফ অফ ম্যাক্সিকো থেকে উৎপন্ন হয়ে এসে এই পাথরটিকে ফেলে দিতে পারে, যদিও সাধারণত কলারাডো পৌছানোর আগেই হারিকেন দুর্বল হয়ে

স্পিনোজা ভেবেছেন এই দুই ব্যক্তি এবং এই পাথর অন্য কোনো শক্তি দ্বারাও প্রভাবিত হতে পারে, যেমন কোনো ঘূর্ণিঝড় যা এই দুই ব্যক্তিকে দূরে কোথাও উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। অথবা হয়তো একটি উল্কা এসে এদের সবাইকেই চুর্ণ করে দিতে পারে। এসব সম্ভবনার ও অস্তিত্ব রয়েছে। তাই স্পিনোজা বলেন, এইসব বাহ্যিক শক্তি, মানুষ, ঝড়, উল্কা, বাদ দিয়ে একটি পাথরকে অন্তঃসার হিসেবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারণ পাথরটির উপর এদের প্রভাব আছে। তার হলে দেখা যাচ্ছে, একটি পাথর শুধু নিজের অস্তিত্ব দিয়েই নিজেকে অন্তঃসার বা সাবস্টেন্স হিসেবে দাবি করতে পারছে না বরং অন্তঃসার এর চেয়ে ব্যপকতর একটি ধারণা।

এভাবে আমরা যদি পৃথিবী পেরিয়ে, সৌরজগৎ পেরিয়ে, নীহারিকা পেরিয়ে একেবারে মহাবিশ্বের সীমানাও হিসাব করি তাহলেও দেখতে পাব এই বিশ্বের প্রতিটি বস্তুই কোনো না কোনো ভাবে এই পাথরের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তার অর্থ, এই সব কিছু মিলেই আসলে সার্বিক ভাবে একটি ‘‘সাবস্টেন্স’’ গঠন করেছে।

স্পিনোজা লিখেছেন: “এই মহাবিশ্ব একই প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দুইটি ভিন্ন সাবস্টেন্স(সারবস্তু) থাকতে পারে না।” পাথরটি কোনো একক বস্তু ছিলো না, এবং সেই ব্যক্তিদ্বয়ও কোনো পৃথক সাবস্টেন্স ছিলোনা। কারণ তাদের একের উপর অন্যের ক্রিয়া প্রতিকৃয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যেমন, সেই দুই ব্যক্তি পাথরটিকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে, পাথরটিও তাদের চাপা দিতে পারে। তাই পাথর ও মানুষ আসলে একই সাবস্টেন্সের অংশ। স্পিনোজা অনুধাবন করেছিলেন মহাবিশ্বের সবকিছুর অন্তঃসার একই।

ধরি উইকিপিডিয়া একটি মহাবিশ্ব, তাহলে কি জিমি ওয়েলস উইকিপিডিয়ার ঈশ্বর? ওয়েলস এই অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া শুরু করেছিলেন। সে কি এর সৃষ্টিকর্তা? মানুষের একটা সহজাত প্রবণতা হচ্ছে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কোনো সত্তার অস্তিত্ব কল্পনা করা, যে আমাদের সকল কৃতকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করছে, এবং আমাদের অন্তরের অন্তস্থলে থাকা চিন্তাভাবনার সাপেক্ষে আমাদের বিচার করছে। স্পিনোজা বলেন এমন ঈশ্বরের অস্তিত্ব মিথ্যা

তাহলে ধরি, সবকিছু মিলিয়ে অন্তর্নিহিত সারবস্তু একটিই, মহাবিশ্ব। তাহলে কি এই মহাবিশ্বের বাইরে ঈশ্বরের মত কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তার অস্তিত্ব সম্ভব, যা বাইরে থেকেই মহাবিশ্বের ঘটনাবলি পরিচালনা করতে পারবে? স্পিনোজার নিজস্ব ধারণা মতে এমনটা অসম্ভব। যদি মহাবিশ্ব এবং ঈশ্বর নামক দুইটি পৃথক অস্তিত্বশীল সাবস্টেন্স থাকতো, তাহলে তাহলে তাদের এই ভিন্নতার কারণে তারা একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারতো না। আবার ঈশ্বর যদি মহাবিশ্বের কোনো কিছুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তাহলে সাবস্টেন্সের সংজ্ঞা অনুসারে তারা পৃথক সাবস্টেন্স হতে পারে না। বরং, অন্তর্নিহিত ভাবেই তারা হবে এক। স্পিনোজা এই যুক্তি থেকে স্পিনোজা উপসংহারে পৌছান যে ঈশ্বর এবং মহাবিশ্ব একই।

এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে স্পিনোজা বলেন, সাবস্টেন্স অবশ্যই অস্তিত্বশীল। অন্য কোনো কিছু থেকে এর সৃষ্টি হতে পারে না। এর জন্ম, জীবন বা মৃত্য নেই। বরং এটি একটি চিরন্তন অস্তিত্ব। সাবস্টেন্স যদি মানুষ বা অন্য কোনো সসীম বস্তুর মত আচরণ করে তাহলে সাবস্টেন্স এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধারণা ভেঙ্গে পড়ে।

এই চিন্তাকে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়, বস্তুর নিত্যতা নীতি, ও শক্তির নিত্যতা নীতি হিসাবে। একটি পাথরকে ভেঙ্গে টুকরো করা যেতে পারে, পিষে চূর্নবিচুর্ন করা যেতে পারে, গলিয়ে তরল এমনকি শক্তিতে রূপান্তর করা যেতে পারে, কিন্তু কোনো ক্লোজড সিস্টেমে কোনো কিছুকেই পুরোপুরি অস্তিত্বহীন করে ফেলা সম্ভব না। এটা কোনো না কোনো রূপে থেকেই যাবে। স্পিনোজার জগতে এমন কোনো ম্যাজিশিয়ান নেই যে শূন্য টুপির মধ্য থেকে খরগোশ তৈরি করতে পারে অথবা কোনো খরগোশ কে শূন্যে মিলিয়ে দিতে পারে।

গ্যালাক্সি চিরদিন বাইরের দিকে প্রসারিত হচ্ছে, স্পিনোজার মতে; এর কোনো শেষ নেই।[১৩]
স্পিনোজা থাকলে বিগ ব্যাং থীওরির সাথে দ্বিমত পোষণ করতেন। তার যুক্তিতে শূন্য থেকে কোনো কিছুর সৃষ্টি অসম্ভব, তাই বিগ ব্যাং এর পূর্বেও অন্য কোনো রূপে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ছিলো

সাবস্টেন্সকে এর পরে বর্ণনা করা হয় স্বউৎপন্ন। অর্থাৎ এটা নিজেই এর সৃষ্টির কারণ। অন্য কিছু থেকে এর সৃষ্টি হতে পারে না, কারণ সেক্ষেত্রে এটা সত্যিকার সাবস্টেন্স হতে পারবে না। যেহেতু সাবস্টেন্স এর জন্ম বা মৃত্য নেই সেহেতু ইউনিভার্স আসলে চিরায়ত(বা সবসময়ই ছিলো)। এমন কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, এবং এমন কোনো সময় আসবে না যখন এটা মিলিয়ে যাবে। স্পিনোজা থাকলে বিগ ব্যাং সম্পর্কে বলতেন বিগ ব্যাংএর পূর্বে কোনো পরমশূন্যতা ছিলোনা বরং কিছু একটা ছিলোই। সময় সামনে এবং পিছনের দিকে অসীম দৈর্ঘ্যে বিস্তৃত। সময়ের সূচনা বলে তাই কিছু নেই। এবং এর কোনো শেষও নেই। তার উপর, মহাবিশ্বও মহাশূন্যের মাঝে অসীমে বিস্তৃত এর কোনো সীমানা নেই, ছিলোওনা। এটা চলছে তো চলছেই। স্পিনোজা লিখেছেন: “সকল সাবস্টেন্সই অবশ্যই অসীম।”

স্পিনোজার মতে, আমরা মানুষ হিসাবে জন্মাই, বাঁচি, এবং মারা যাই। আমরা দেওয়াল ঘেরা বাড়িতে বসবাস করি, এবং সসীম বস্তুর সাহায্যে চিন্তা করি, তাই আমাদের পক্ষে অসীমে প্রশস্ত কোনো মহাবিশ্ব অথবা দেওয়ালহীন বাড়ি কল্পনা করা কঠিন।

দার্শনিকদের মতে মহাবিশ্ব আর মহাবিশ্বের ‘’ধারণার’’ মধ্যে একটা পার্থক্য হচ্ছে, একটি বাস্তব এবং এর বস্তুগত অস্তিত্ব আছে; আরেকটি হলো ধারণা সংক্রান্ত, দার্শনিকরা যাকে বলেন চিন্তা। স্পিনোজা এই ধারণা ও অস্তিত্বকে সবকিছুর(ঈশ্বর ও মহাবিশ্ব) দুইটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ আমরা বাস্তবতা কে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পারি, এবং ধারণাকে চিন্তায় ধারণ করতে পারি। অবশ্যই এছাড়াও অন্য আরো বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা আমরা অনুধাবনে অক্ষম। তাহলে কি এই ‘চিন্তা’ এবং ‘বাস্তবতা’ দুইটি আলাদা সাবস্টেন্স? না, স্পিনোজা বলেন, ধারণা ও বাস্তবতা আসলে একটি একক, অসীম, অবিভাজ্য সাবস্টেন্সের দুইটি গুণ।

স্পিনোজার মতে প্রকৃতি বা মহা বিশ্বের সবকিছুর একক স্বারবস্তু(সাবস্টেন্স) আছে; যাকে তিনি বলছেন ঈশ্বর। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার এই ঝরণার মঝেও ঈশ্বর আছে।

স্পিনোজার ভাষ্য মতে, ঈশ্বরই হচ্ছে মহাবিশ্বের বা প্রকৃতির ‘’একমাত্র’’ সাবস্টেন্স। তিনি লিখেছেন: “যা কিছু অস্তিত্বশীল, তা ঈশ্বরের মধ্যেই, ঈশ্বরের ধারণা ছাড়া অন্য কোনো ধারণাকেই গ্রহণ করা সম্ভব নয়, এবং গ্রহণ করা হবেও না”। কিন্তু আজও দার্শনিকরা এই বাক্যের অর্থ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত; কেউ ভাবে স্পিনোজা বলতে চেয়েছেন যে ঈশ্বর হচ্ছে প্রকৃতির একটি অতিপ্রাকৃত উপাদান অনেকটা স্পঞ্জের মধ্যে বিদ্যমান পানির মতো, অন্যরা মনে করেন স্পিনোজা বুঝিয়েছেন ঈশ্বর ও প্রকৃতি হচ্ছে মিলে মিশে একক বস্তু, যেমন ‘একটি ভেজা স্পঞ্জ’।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী