স্নেহজ অ্যাসিড

স্নেহজ অ্যাসিড বা স্নেহজ অম্ল (ইংরেজিতে ফ্যাটি অ্যাসিড) বলতে এক ধরনের জৈব যৌগকে, বিশেষ করে এক ধরনের স্নেহজ (অ্যালিফ্যাটিক) কার্বক্সিলিক অ্যাসিডকে বোঝায়, যেটির একটি (বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের) হাইড্রোকার্বন শৃঙ্খল মেরুদণ্ড থাকে, এবং সেই শৃঙ্খলটি একটি অন্তিম কার্বক্সিল মূলকের সাথে সংযুক্ত থাকে।[১][২] শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্য একটি হাইড্রোজেন পরমাণু (যেমন মিথানইক অ্যাসিড তথা ফরমিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে HCOOH) থেকে শুরু করে প্রায় ৩০টি কার্বন পরমাণুর সমান হতে পারে।[২][৩] স্নেহজ অ্যাসিডগুলি সাধারণত শাখায়িত বা অশাখায়িত হয়ে থাকে; তবে অশাখায়িতগুলির সংখ্যা বেশি।[২][১] ইথানয়িক অ্যাসিড (তথা অ্যাসিটিক অ্যাসিড), প্রোপানইক অ্যাসিড (তথা প্রোপিয়নিক অ্যাসিড) ও বিউটানইক অ্যাসিড (তথা বিউটেরিক অ্যাসিড) বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৮ থেকে ১০টি কার্বন পরমাণু বা তার চেয়ে বেশি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট স্নেহজ অ্যাসিডগুলিকে দীর্ঘ-শৃঙ্খলবিশিষ্ট স্নেহজ অ্যাসিড বলে; এগুলি প্রায়শই কিছু বিশেষ লিপিড তথা স্নেহজ বা মেদজাতীয় পদার্থের (যেমন গ্লিসারাইড, ফসফোলিপিড, স্টেরল, মোম, ইত্যাদি) গাঠনিক উপাদান হয়ে থাকে।[২] যেসব ফ্যাটি অ্যাসিডে ১৪ থেকে ২২ সংখ্যার মধ্যে জোড় সংখ্যক কার্বন পরমাণু থাকে, সেগুলি গ্লিসেরলের সাথে বিক্রিয়া করে লিপিড বা স্নেহজ পদার্থ গঠন করে। এগুলিতে স্নেহজ অ্যাসিডগুলি অ্যালকোহলের সাথে এস্টারীভূত অবস্থায় থাকে।[১]

বেশ কয়েকটি স্নেহজ অ্যাসিডের ত্রি-মাত্রিক উপস্থাপনা। সম্পৃক্ত স্নেহজ অ্যাসিডগুলির পুরোপুরি সরলরৈখিক শৃঙ্খল কাঠামো বিদ্যমান। অসম্পৃক্তগুলি সাধারণত বাঁকানো থাকে, যদি না তাদের বিষমপক্ষ (ট্রান্স) কাঠামো থাকে।

স্নেহজ অ্যাসিড মূলত তিন ধরনের হতে পারে: সম্পৃক্ত, অসম্পৃক্ত ও বহু-অসম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত স্নেহজ অ্যাসিডগুলির মেরুদণ্ডে কোনও দ্বিবন্ধন থাকে না; স্টিয়ারিক (অক্টাডেকানইক) অ্যাসিড ও পালমিটিক (হেক্সাডেকানইক) অ্যাসিড এরকম দুইটি অ্যাসিড। অসম্পৃক্ত স্নেহজ অ্যাসিডগুলির মেরুদণ্ডে একটি দ্বিবন্ধন থাকে, যেমন ওলিইক অ্যাসিড। অন্যদিকে বহু-অসম্পৃক্ত স্নেহজ অ্যাসিডগুলির মেরুদণ্ডে একাধিক দ্বিবন্ধন থাকে, যেমন লিনোলিইক অ্যাসিড ও লিনোলিনিক অ্যাসিড।[১][২]

বিটা-জারণ নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্নেহজ অ্যাসিডগুলির জারণ ঘটলে কার্বক্সিলিক অ্যাসিড শৃঙ্খল থেকে কার্বন পরমাণুর জোড়গুলির ক্রমাগত অপসারণ ঘটে ও এভাবে কোষের জন্য শক্তি নির্গত হয়। সাধারণত প্রতি একক ভরের জন্য স্নেহজ অ্যাসিডগুলি থেকে শর্করা তথা কার্বোহাইড্রেটের জারণের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তি নির্গত হয়।[১]

স্নেহজ অ্যাসিডের ভৌত ধর্মগুলি সেটির শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্য, অসম্পৃক্ততার মাত্রা ও শৃঙ্খলের শাখায়নের উপর নির্ভর করে। হ্রস্ব-শৃঙ্খলবিশিষ্ট স্নেহজ অ্যাসিডগুলি সাধারণত পানিতে দ্রবণীয় ঝাঁঝালো গন্ধবিশিষ্ট তরল হয়ে থাকে। শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে গলনাংক বৃদ্ধি পায় ও পানিতে দ্রাব্যতা হ্রাস পায়। অসম্পৃক্তায়ন ও শৃঙ্খলের শাখায়ন সাধারণত গলনাংক হ্রাস করে।[২]

সাধারণত জীবদেহের মধ্যে এগুলিকে স্বতন্ত্র রূপে পাওয়া যায় না, বরং তিনটি প্রধান শ্রেণীর এস্টার হিসাবে পাওয়া যায়: ট্রাইগ্লিসেরাইড, ফসফোলিপিড এবং কোলেস্টেরল এস্টার। যেকোনও রূপের স্নেহজ অ্যাসিড প্রাণীর খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস এবং কোষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত উপাদান।

ইতিহাস

স্নেহজ অ্যাসিডের (ফরাসি ভাষায় "আসিদ গ্রাস") ধারণাটি ১৮১৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী মিশেল ওজেন শেভ্রোল প্রথম উল্লেখ করেন।[৪][৫][৬] তবে তিনি প্রাথমিকভাবে কিছু বৈচিত্র্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন: গ্রেস আসিদ (Graisse acide "আম্লিক মেদ") এবং অ্যাসিড উইলো (Acide huileux "তৈলাক্ত অম্ল")।[৭]

স্নেহজ অ্যাসিডের প্রকারভেদ

বিষমপক্ষ সমাবয়বী (ট্রান্স-আইসোমারিক) ইলাইডিক অ্যাসিড (উপরে) এবং সমপক্ষ-সমাবয়বী (সিস-আইসোমারিক) ওলিইক অ্যাসিডের (নীচে) মধ্যে তুলনা।

স্নেহজ অ্যাসিডকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়: দৈর্ঘ্য দ্বারা, সম্পৃক্ত বনাম অসম্পৃক্ত দ্বারা, এমনকি জোড় বনাম বিজোড় কার্বন সংখ্যা দ্বারা, এবং রৈখিক বনাম শাখা-শৃঙ্খল দ্বারা।

আরও দেখুন

  • অপরিহার্য স্নেহজ অ্যাসিড

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী