সাহা আয়নীভবন সমীকরণ
সাহা আয়নীভবন সমীকরণ (ইংরাজি: Saha ionization equation) (সাহা-ল্যাংমিউয়র সমীকরণ নামেও পরিচিত) ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সমীকরণ, যা তাপমাত্রা ও চাপের সঙ্গে গ্যাসের আয়নীভবন অবস্থায় তাপীয় সাম্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।[১][২] তিনি সমীকরণটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং পরিসংখ্যান বলবিদ্যার ধারণার সমন্বয়ে উদ্ভাবন করেন। এই সমীকরণ তারাদের বর্ণালীর শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে এটি উপস্থাপন ও গবেষণা করেন।[৩][৪] পরবর্তীতে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে আর্ভিং ল্যাংমিউয়র এই বিষয়ে গবেষণা করেন।[৫]
সমীকরণ প্রতিষ্ঠা
একটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘনত্বের গ্যাসের জন্য, পরমাণুগুলির তাপীয় সংঘর্ষে কিছু পরমাণু আয়নে পরিণত হয়, যা আয়নীয় গ্যাস তৈরি করে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশের কক্ষপথে আবদ্ধ থাকা কিছু কিছু ইলেকট্রন যখন মুক্ত হয়, তখন সেগুলি পারমাণুবিক আয়ন এবং নিরপেক্ষ পরমাণুগুলির পার্শ্ববর্তী গ্যাসের সঙ্গে একটি স্বাধীন ইলেক্ট্রন গ্যাস-মেঘ গঠন করে। পরিবর্তে, এটি একটি তড়িৎক্ষেত্র তৈরি করে, যেখানে আধানগুলির গতি স্থানীয় চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে বিদ্যুৎসম পদার্থের প্লাজমা অবস্থা উৎপন্ন করে।
সাহা সমীকরণ তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং পরমাণুর আয়নীভবন শক্তির একটি অপেক্ষক হিসেবে যেকোনো গ্যাসের তাপীয় সাম্যাবস্থায় আয়নীভবন মাত্রা বর্ণনা করে। সাহা সমীকরণ কেবলমাত্র দুর্বলভাবে আয়নীয় প্লাসমাগুলির (যার ডিবাই দৈর্ঘ্য বড়) জন্য কার্যকরী। এর অর্থ হল আয়ন এবং ইলেক্ট্রনগুলির কুলম্বীয় মিথস্ক্রিয়া এবং অন্যান্য আয়নের ইলেকট্রন এবং ইলেকট্রনগুলির স্ক্রীনিং নগণ্য। একটি একক পরমাণু দ্বারা গঠিত গ্যাসের জন্য, সাহা সমীকরণ লেখা হয়:
যেখানে,
হল পরমাণুর ঘনত্ব, যেখানে পরমাণু থেকে i সংখ্যক ইলেকট্রন অপসারিত হয়েছে।
হল i-স্তরের আয়নের জন্য হ্রাসপ্রাপ্ত শক্তিস্তর
হল সর্বনিম্ন শক্তিস্তর i সংখ্যক ইলেকট্রন অপসারিত করে i-শক্তিস্তরে যেতে প্রয়োজনীয় শক্তি
হল ইলেকট্রন ঘনত্ব
হল ইলেকট্রনের তাপীয় দ্য ব্রয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য (de Broglie wavelength)
হল একটি ইলেকট্রনের ভর
হল গ্যাসের তাপমাত্রা
হল বোলজ্ম্যান ধ্রুবক
হল প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক।
রাশিমালা হল
ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তি। যেক্ষেত্রে একটি স্তরের আয়নীভবন গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আমরা পাই
, এবং মোট শক্তি n কে
দ্বারা প্রকাশ করা হয়।সাহা সমীকরণের সরলীকৃত রূপটি হল:
যেখানে হল আয়নীভবন শক্তি।
কণা ঘনত্ব
সাহা সমীকরণ দুটি ভিন্ন আয়নীভবন মাত্রার কণা ঘনত্বের অনুপাত নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষেত্রে সাহা সমীকরণের পরিচিত রাশিমালাটি হল
,
যেখানে Z হল পার্টিশন অপেক্ষক। সাহা সমীকরণটি রাসায়নিক সম্ভাব্যতার সমান্তরাল অবস্থার পুনঃস্থাপন হিসাবে দেখা যেতে পারে
এই সমীকরণ থেকে সহজেই বোঝা যায়, i শক্তিস্তর থেকে i+1 শক্তিস্তরে আয়নীয় করতে প্রয়োজনীয় বিভব সমান।বিভব সমান হওয়ায় সিস্টেমটি সাম্যাবস্থায় থাকে এবং আয়নায়নের কোনও পরিবর্তন হবে না।
সূচনাকালে মহাবিশ্ব
সাহা সমীকরণের আয়নীয় সাম্যাবস্থার মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিবর্তনের ব্যাখ্যা করা যায়। মহাবিস্ফোরণের পরে সকল পরমাণু প্রোটন ও ইলেকট্রন ত্যাগ করে আয়নীত হয়। সাহার মতানুসারে, যখন মহাবিশ্ব প্রসারিত ও শীতল হয়েছিল এবং তাপমাত্রা ৩,০০০ K-এ পৌঁছেছিল, তখন ইলেকট্রন হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে পুনরায় সংযোজিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, মহাবিশ্ব তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের জন্য মুক্ত হয়ে ওঠে। প্রায় ৩০০০ K-এর ১,০০০ অংশ লোহিত চ্যুতি দ্বারা ৩ K-এর মহাজাগতিক পটভূমি সৃষ্টি করে।
আরও দেখুন
- প্লাজমা পদার্থের (পদার্থবিদ্যা) তালিকা
- মেঘনাদ সাহা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- Derivation & Discussion by Hale Bradt
- A detailed derivation from the University of Utah Physics Department
- Lecture notes from the University of Maryland Department of Astronomy