সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ
সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ হল সাম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক মাত্রা। সাম্রাজ্যবাদ বলতে এখানে সভ্যতাগুলোর মধ্যে অসম সম্পর্কের সৃষ্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণকে বোঝায়, যে সম্পর্কে একটি সভ্যতা অন্য একটি সভ্যতার উপর আধিপত্য বিস্তার করে। সুতরাং, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ একটি কম শক্তিশালী সমাজের উপর সাধারণত একটি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী জাতির সংস্কৃতির প্রচার ও প্রয়োগ করার অভ্যাস; অন্য কথায়, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দেশগুলির সাংস্কৃতিক স্বৈরাচার যা বিশ্বজুড়ে নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ প্রচার ও নিজ স্বার্থের অনুকূলে সভ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়। ধারণাটি বিশেষ করে ইতিহাস, সংস্কৃতি অধ্যয়ন এবং উত্তরউপনিবেশবাদ তত্ত্ব ইত্যাদি বিদ্যাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।[১][২] সাধারণত অন্য রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবাধীন থাকা আরেকটি রাষ্ট্রের জন্য একটি ক্ষতিকর ব্যাপার যেহেতু সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র অন্য একটি দুর্বল রাষ্ট্রের বাজার ও অর্থনীতি দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে। সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের নানা রূপ দেখা যায়, এটি কখনও দাদাগিরি মনোভাব, সরকারি নীতি, বা সামরিক ভয়প্রদর্শনের মধ্য দিয়েও প্রকাশ পায়; তবে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্য দিয়ে সর্বদা সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার তথা জোরদার করা হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বড় একটি হাতিয়ার হলিউডের চলচ্চিত্র।[৩] সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের কবলে পড়ে ফাস্ট ফুড, ড্রিংকস, পিৎজা, পেপসি, কোকাকোলা মত অস্বাস্থ্যকর পানীয় ও খাদ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বাঙালিরা।[৪] ভুলে যাচ্ছি তারা নিজস্ব খাবারের নাম। পরিবর্তিত হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। ঢাকার শপিং মলে শোনা যায় না বাংলা গান, শোনা যায় পশ্চিমা সংগীত। ডিজনি, ভায়াকম, সিবিএসের মতো গণমাধ্যম কোম্পানিগুলো ‘অবাধ তথ্য প্রবাহে’র সুযোগ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিজেদের ইচ্ছামতো জনমত গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করছে।[৫]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/03/Le_chasseur_de_jaguars_et_son_fils_Novis_Manioc.jpeg/220px-Le_chasseur_de_jaguars_et_son_fils_Novis_Manioc.jpeg)
তাত্ত্বিক ভিত্তি
বর্তমানের অনেক বুদ্ধিজীবী যারা সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের কথা বলে তাদের অনেকে মিশেল ফুকো, এডওয়ার্ড সাইদ, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এবং অন্যান্য উত্তরকাঠামোবাদী ও উত্তরউপনিবেশবাদী তাত্ত্বিকদের রচনাকর্মের সাথে পরিচিত।[৬] উত্তরউপনিবেশবাদ তত্ত্বে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে অনেক সময় অতীত উপনিবেশায়নের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বা সামাজিক আচার হিসেবে দেখা হয়, যা পশ্চিমা আধিপত্যকে বজায় রাখতে সহায়তা করে।