সফিউর রহমান মুবারকপুরী

ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত

সফিউর রহমান মুবারকপুরী (১৯৪২-২০০৬) (আরবি: صفي الرحمن المباركفوري) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ আকবর ইবনে মোহাম্মদ আলী ইবনে আব্দুল মোমেন মুবারকপুরী আযমী[৩] তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামি লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস বা হাসিদবেত্তা। তার লেখা রাসূলের জীবনী গ্রন্থ আর্-রাহীকুল মাখতূম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই। এই বই এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, উপরে উল্লিখিত সময়টি তার সার্টিফিকেট এ উঠে আসলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি ভারতের আজমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মুবারকপুরে জন্মগ্রহন করেন।[৪] ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকহ, উছুলে ফিকহ, তাফসীর, হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।[৫] তিনি ১৯৬১ সালে শরিয়ত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন এবং মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও লেখালেখি শুরু করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে মদীনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল বিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সালের ১লা ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।[৬][৭]

সফিউর রহমান মুবারকপুরী
صفی الرحمن مبارکپوری
জন্ম৬ই জুন ১৯৪৩ (সার্টিফিকেট সংকলিত) [১]
মুবারকপুর, উত্তরপ্রদেশ, ভারত
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ২০০৬(2006-12-01) (বয়স ৬৩)[২]
পেশালেখক, গবেষক এবং মুহাদ্দিস
জাতীয়তাভারতীয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিআর্-রাহীকুল মাখতূম
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারFirst Prize by the Muslim World League

ব্যক্তিগত জীবন

জন্ম ও বংশ

ভারতের উত্তর প্রদেশের আযমগড় জেলার মুবারকপুর শহরটি বিখ্যাত তার তাঁত শিল্পের জন্য।এছাড়া মুবারকপুর বিখ্যাত ইলমে হাদিসের নক্ষত্রের সূতিকাগার হিসেবেও।সুনানে তিরমিজির বিশ্ববিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'তুহফাতুল আহওয়াযী'-এর লেখক আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ,মিশকাতের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ 'মিরআতুল মাফাতীহ' এর রচয়িতা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী ,আব্দুস সালাম মুবারকপুরী সহ আরো অনেক নন্দিত বিদ্বানদের জন্ম স্থান হচ্ছে মুবারকপুর।এই মুবারকপুরের ছোট্ট একটা শহর হুসাইনাবাদে ১৯৪২ সালের ৬ জুন জন্ম গ্রহণ করেন সফিউর রহমান। মুবারকপুরের দিকে সম্পৃক্ত করে মুবারকপুরী, আযমগড়ের দিকে সম্পৃক্ত করর তাকে আযমী আর হুসাইনাবাদের সথে যুক্ত করে কখনো কখনো হুসাইনাবাদীও বলা হয়ে থাকে।[৮]

শিক্ষা জীবন

বাল্যকলে নিজের দাদা মুহাম্মদ আকবর ও চাচা মাওলানা আব্দুছ ছামাদের কাছে কুরআন মাজিদ পাঠের মাধ্যমে শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় মুবারকপুরী। এরপর ১৯৪৮ সালে ভর্তি হন মুবারকপুরের দারুত তা'লিম মাদরাসায়। সেখানে তিনি ৬ বছর পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা করেন।সাথে চর্চা করেন ফার্সি ভাষা শিক্ষাও।অত:পর ১৯৫৪ সালের জুন মাসে ভর্তি হন মুবারকপুরের এহইয়াউল উলুম মাদ্রাসায়।সেখানে তিনি গভীর মনোযোগের সহিত আরবী ভাষা ও সাহিত্য,নাহু,ছরফ ও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন।এর দুই বছর পর তিনি মুবারকপুর থেকে বের হয়ে চলে যান মৌনাথভঞ্জন এলাকায়।সেখানে তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত আহলে হাদিস মাদ্রাসা 'ফয়েযে আম'-এ। সেখানে আরো পাঁচ বছর পড়াশোনা করেন।সেখানে তিনি আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ব্যাকরণ, তাফসীর, হাদিস, উসুলে হাদিস, ফিকহ, উসুলে ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। ১৯৬১ সালে সেখান থেকে ফারেগ হন, শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট লাভ করেন সাথে পাঠদান ও ফতওয়া প্রদানের অনুমতিও প্রাপ্ত হন। দারসে নিযামীর পাশাপাশি আল্লামা এলাহবাদ বোর্ডের অধীনে ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৌলব এবং ১৯৬০ সালে আলেম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৭৬ সালে ফাযেলে আদব ও ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেযেলে দ্বিনিয়াত পরীক্ষায়ও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।[৯]

মৃত্যু ও জানাযা

মুবারকপুরের এই ইলমী নক্ষত্রের পতন হয় ১ ডিসেম্বর ২০০৬,শুক্রবার দিন বিকেল ৩ টার দিকে নিজ গ্রাম হুসাইনাবাদে।পরদিন শনিবার তার সুযোগ্য পুত্র তৎকালীন 'জামিআ ইসলামিয়া মিমবারা' মাদরাসার শিক্ষক মুহাম্মদ ইয়াসির মাদানীর ইমামতিতে তার জানাযার সালাত অনুষ্ঠিত হয়।জানাযায় যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ।উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে যোগদেন মারকাযী জমঈয়ত আহলে হাদিস হিন্দ এর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শায়খ আসগার আলী সালাফি।[১০]

কর্মজীবন

১৯৬১ সালে 'ফয়যে আম' মাদরাসা থেকে ফারেগ হওয়ার পর তিনি এলাহবাদ এ,এবং পরে নাগপুরে শিক্ষকতা শুরু করেন।দু'বছর পর ১৯৬৩ সালে তিনি নিজের মাদরাসায় অর্থাৎ ফয়যে আমেই শিক্ষকতার ডাক অয়ান।সেখানে বছর দু'য়েক শিক্ষকতা করেন।এরপর যোগদন আযমগড়ের 'জামেআতুর রাশাদ' এ।সেখানে এক বছর শিক্ষকতা করে ১৯৬৬ যোগদেন মৌনাথভঞ্জনের 'জামিআ আছারিয়া দারুল হাদিসে'।সেখানে থাকেন উপাধ্যক্ষ হিসেবে, সেখানে কাটান ৩ বছর।

এরপর মধ্য পদেশের সিউনী জেলার ফয়যুল উলুম মাদরাসায় যোগ দেন।চার বছর সেখানে শিক্ষকতা করার পর ১৯৭২ সালের শেষের দিকে মুবারকপুরের 'দারুত তা'লীম' মাদরাসায় কমিটির পীড়াপীড়িতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদেন।দীর্ঘ সময় বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতার পর ভারতের আহলে হাদিস মাদরাসার ও ইলমের কেন্দ্র 'জামিআ সালাফিয়া" যেটা বেনারসে অবস্থিত। সেখানে তিনি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন জামিআর মুখপাত্র মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার(উর্দু) সম্পাদনার।

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় রাবেতাত আলমে ইসলামী,দারুসসালাম সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।[১১]


উল্লেখ্য যে,সফিউর রহমান মুবারকপুরী(রহ.) ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে ভারতের আহলে হাদিসদের কেন্দ্রীয় সংগঠন "মারকাযী জমঈয়ত আহলে হাদিস হিন্দ" এর আমীর নিযুক্ত হন।এছাড়াও তিনি পূর্বে সংগঠনটির উত্তর প্রদেশ অংশের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।কেন্দ্রীয় আমীর হওয়ার পর জমঈয়তের কর্ম পরিধি, পরিচিতি পূর্বের চেয়ে বেগবান হয়।[১২]

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

তার বিখ্যাত ও বহুল পরিচিত, গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে আর্-রাহীকুল মাখতূম (আরবী, উর্দু,বাংলা)[১৩][১৪][১৫] যা ১১৮২ টি বইয়ের মধ্যে প্রথমস্থান অধিকার করেছে।আর এই বইটিই বিশ্বব্যাপী তার গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকাংশেই বৃদ্ধি করেছে।

আরবী বই[১৬]

(১)আর্-রাহীকুল মাখতূম :

বইটি প্রতিযোগিতায় ১১৮২ টি বইয়ের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে।রাসুল(সা.) এর সিরাত বা জীবনীর উপর লিখিত একটা বহুল প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য বই এটি।

(২)রাওযাতুল আনওয়ার ফী সিরাতিন নাবিয়্যিল মুখতার:

এটি পূর্বোক্ত গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত করে লিখিত।

(৩)ইতহাফুল কিরাম:

ইবনে হাজার আসকালানী(রহ.) লিখিত 'বুলুগুল মারাম বইয়ের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ।

(৪)মিন্নাতুল মুনঈম:এটি তার লিখিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ।

(৫)শারহু আযহারুল আরব(অপ্রকাশিত)

(৬)ইবরাযুল হক ওয়াস সাওয়াব

(৭)আল ফিরকাতুন নাযিয়াহ ওয়াল ফিরাক আল ইসলামিয়াহ:

এটি তাঁর লিখিত সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ।

উর্দু বই[১৭]

(১)কাদিয়ানিয়াত আপনে আয়না মেঁ:

পথভ্রষ্ট কাদিয়ানি মতবাদের উপর লেখা।

(২)তারিখে আলে সউদ:

আলে সউদের ইতিহাস নিয়ে এটা লিখিত।

(৩)ইনকারে হাদিস কন?:

হাদিস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে লিখা গুরুত্বপূর্ণ বই।

(৪)ফিতনায়ে কাদিয়ানিয়াত আওর মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী:

এটি কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে ফাতিহে কাদিয়ান তথা কাদিয়ানী বিজয়ী খ্যাত আল্লামা সানাউল্লাহ অমৃতসরী(রহ.) এর বিভিন্ন খিদমাত নিয়ে লিখিত বই।

(৫)রাযমে হক ওয়া বাতিল

ইত্যাদি।


আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী