শ্রীলঙ্কার ইতিহাস

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

শ্রীলঙ্কার ইতিহাস বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের এবং দক্ষিণ এশীয়দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের ইতিহাসের সাথে জড়িত। শ্রীলঙ্কা দ্বীপে আাদি মানবের (বালঙ্গোদা মানব) যে দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল তা প্রায় ৩৮,০০০ বছর পূর্বেকার।

পালি ভাষায় লেখা মহাবংশ, দীপবংশ ও চোলবংশ নামক তিনটি বইয়ের ধারাবিবরণী ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে এই দ্বীপের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বংশাবলী সমূহ হতে উত্তর ভারত থেকে সিংহলিদের আগমনের সময় থেকে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যায়। দ্বীপটির আধুনিক ইতিহাস ৩য় শতাব্দীর সময়ে শুরু হয়েছে।[১][২][৩][৪] এই ধারাবিবরণীগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সিংহলিদের আদি পূর্বপুরুষদের দ্বারা তাম্বাপান্নি রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকে শ্রীলংকার ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে অনুরাধাপুর রাজ্যের রাজা পান্ডুকাভায়াকে শ্রীলঙ্কার প্রথম শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে আরহাথ মাহিন্দা (ভারতীয় সম্রাট অশোকের পুত্র) দ্বীপটিতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেন।

এই দ্বীপটি শুরুতে একীভূত থাকলেও পরের শতাব্দীতে বহু রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তবে এটি চোল শাসনের অধীনে একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য (খ্রিস্টাব্দ ৯৯৭-১০৭৭ এর মধ্যে) আবার একত্রিত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা অনুরাধাপুরা থেকে ক্যান্ডি সময়কাল পর্যন্ত ১৮১ জন সম্রাট দ্বারা শাসিত হয়েছিল।[৫][অনির্ভরযোগ্য উৎস?] ১৫৯৭-১৬৫৮ সালে দ্বীপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পর্তুগিজ শাসনের অধীনে ছিল। তবে আশি বছরের যুদ্ধে ডাচদের হস্তক্ষেপের কারণে পর্তুগিজরা সিলনে স্থাপিত উপনিবেশ হতে সরে যায়। কান্দিয়ান যুদ্ধের পর ১৮১৫ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে একত্রিত হয়। তবে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হওয়ার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ১৮১৮ সালে উভা বিদ্রোহ এবং ১৮৪৮ সালে মাতালে বিদ্রোহ নামক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দুটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা লাভ করেছিল। তবে দেশটিতে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল।

সিরিমাভো বন্দরনায়েকের অধীনে সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬২ সালে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। তবে সিরিমাভো সরকার সফলতার সাথে সে বিদ্রোহ দমন করে।

১৯৭২ সালে শ্রীলঙ্কা একটি প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা গ্রহণ করে। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কা তার নিজস্ব সংবিধান প্রবর্তন করে। সংবিধান অনুসারে, নির্বাহী রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সংবিধান প্রণয়নের পাঁচ বছর পর ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তবে ১৯৭১ এবং ১৯৮৭ সালেও শ্রীলঙ্কায় দুটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে এলটিটিই এর পরাজয়ের মাধ্যমে ২৫ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছিল।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কায অস্বাভাবিক় মূল্যস্ফীতি ও শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া ঘোষণার ফলে আন্দোলন চলমান রয়েছে। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেও পদত্যাগের চাপে রয়েছেন। [৬][৭] বর্তমানে দেশটিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজমান রয়েছে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

শ্রীলঙ্কায বালাঙ্গোদায় মানব ঔপনিবেশিকতার প্রমাণ দেখা যায়। বালাঙ্গোডা মানুষেরা আনুমানিক ১,২৫,০০০ বছর আগে দ্বীপে এসেছিলেন এবং গুহায় বসবাসকারী মেসোলিথিক শিকারী-সংগ্রাহক হিসেবে বসবাস করতেন। সুপরিচিত বাটাডোমবালেনা এবং ফা হিয়েন গুহা সহ এই গুহাগুলির মধ্যে অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে।

বালাঙ্গোদার মানুষ গাছ পুড়িয়ে মধ্য পাহাড়ে হর্টন সমভূমি তৈরি করেছিল। শ্রীলংকায় প্রায় ১৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সমভূমিতে ওটস এবং বার্লির চাষের নিদর্শন দেখা যায়। এ আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, এই উপদ্বীপে প্রথম দিকে কৃষি বিকশিত হয়েছিল।[৮]

শ্রীলঙ্কায় আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের অন্যতম হল গ্রানাইট টুল (প্রায় ৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য), পুড়ে যাওয়া কাঠের অবশিষ্টাংশ এবং মাটির পাত্র ইত্যাদি মেসোলিথিক যুগের সামগ্রী। ওয়ারানা রাজার মহা বিহার এবং কালাতুওয়াওয়া এলাকায় একটি গুহার আশেপাশে সাম্প্রতিককালে একটি খননকার্য পরিচালনার সময় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালের মানুষের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার স্থানীয় এলাকায় এবং ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মিশরে দারুচিনি পাওয়া গেছে, যা মিশর এবং দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রাথমিক বাণিজ্যের ইঙ্গিত দেয়। সম্ভবত বাইবেলের উল্লেখিত তার্শিশ এই দ্বীপে অবস্থিত ছিল। জেমস এমারসন টেনেন্ট গ্যালে নগরীতে সম্ভাব্য তার্শিশকে শনাক্ত করেছেন।[৯]

প্রোটোহিস্টোরিক প্রারম্ভিক লৌহ যুগ দক্ষিণ ভারতে অন্তত ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কায় এ যুগের প্রথম প্রকাশটি হয় রেডিওকার্বন-ডেটেড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০-৮০০ অনুরাধাপুরা এবং সিগিরিয়ায় আলিগালা আশ্রয়ে এ যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়।[১০]

প্রোটোহিস্টোরিক সময়কালে (১০০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্ব) শ্রীলঙ্কা সাংস্কৃতিকভাবে দক্ষিণ ভারতের সাথে একত্রিত ছিল[১১] এবং এ দুটি অঞ্চলে একই মেগালিথিক সমাধি, মৃৎপাত্র, লোহার প্রযুক্তি, চাষের কৌশল এবং মেগালিথিক গ্রাফিতির ব্যবহার দেখা যায়।[১২][১৩][১৪][১৫][১২]

অনুরাধাপুরায় শ্রীলঙ্কায় লৌহ যুগের সূচনার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে ৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে একটি বড় শহর-বসতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বসতিটি ছিল প্রায় ১৫ হেক্টর। তবে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ বসতিটি ৫০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল।[১৬] সিগিরিয়ার আলিগালার কাছেও একই সময়ের অনুরূপ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।[১৭]

শিকার সংগ্রাহক ব্যক্তিরা ওয়াননিয়ালা-আয়েত্তো বা ভেদাস নামে পরিচিত যারা এখনও দ্বীপের মধ্য, উভা এবং উত্তর-পূর্ব অংশে বাস করছেন। তারা সম্ভবত এ দ্বীপের প্রথম বাসিন্দা, বালাঙ্গোদা ম্যান-এর সরাসরি বংশধর। ধারণা করা হয়, আফ্রিকা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষ ছড়িয়ে পড়ার সময় তারা মূল ভূখণ্ড থেকে শ্রীলঙ্কা দ্বীপে চলে এসেছিলেন।

পরে ইন্দো আর্য অভিবাসীরা সিংহল নামে একটি অনন্য জলবাহী সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। তাদের কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম জলাধার এবং বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি বিশাল পিরামিড-সদৃশ স্তূপ (সিংহল ভাষায় দাগাবা) স্থাপত্য। শ্রীলঙ্কার সংস্কৃতির এই পর্বে প্রাথমিক বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তন দেখা গেছে।[১৮]

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ প্রাথমিক ইতিহাস বলতে অনুসারে, বুদ্ধ নাগা রাজাকে দেখার জন্য তিনবার শ্রীলংকা দ্বীপে গিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের উপকথা অনুসারে নাগা সাপ এমন এক প্রকার সাপ, যা ইচ্ছামত মানুষের রূপ নিতে পারে।[১৯]

দ্বীপের প্রাচীনতম গ্রন্থ দীপবংশ এবং মহাবংশ অনুসারে, এ দ্বীপে ইন্দো আর্যদের স্থানান্তরের আগে ইয়াক্কাস, নাগাস, রাক্কাস এবং দেবগণ প্রভৃতি জাতি বসবাস করত।

প্রাক-অনুরাধাপুর সময়কাল (৫৪৩-৩৭৭ খ্রিস্টপূর্ব)

ইন্দো-আর্য অভিবাসন

পালি ইতিহাস, দীপবংশ, মহাবংশ, থুপাবংশ, চুলাবংশ ইত্যাদি ঐতিহাসিক গ্রন্থ, বিভিন্ন পাথরের শিলালিপির একটি বৃহৎ সংগ্রহ, ভারতীয় এপিগ্রাফিক্যাল রেকর্ড, ইতিহাসের বার্মিজ সংস্করণ ইত্যাদি ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।[২০]

৪০০ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী মহানাম মহাবংশ নামক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এটি দীপবংশ, আত্তাকথা এবং তাঁর কাছে উপলব্ধ অন্যান্য লিখিত উৎস ব্যবহার করে রচিত এবং সেই সময়ের ভারতীয় ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সম্রাট অশোকের রাজত্বের একটি বিস্তারিত বিবরণ মহাবংশে লিপিবদ্ধ আছে। তবে,বুদ্ধের মৃত্যুর ২১৮ বছর পর অশোকের রাজ্যাভিষেকের আগের সময়ের বিবরণটি কিংবদন্তি বলে মনে করা হয়। বঙ্গ থেকে বিজয়া এবং তার ৭০০ অনুসারীর আগমনের সময়কাল হতে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া শুরু হয়। বিজয়ার সময় থেকে রাজবংশের বিবরণের বিস্তারিত বর্ণনা মহাবংশে দেওয়া আছে।[২১] বিজয়া একজন ভারতীয় রাজপুত্র, রাজা সিংহবাহু ("সিংহের অস্ত্রধারী মানুষ") এবং তার বোন রানী সিংহশিভালির জ্যেষ্ঠ পুত্র। এই উভয় সিংহলী নেতাই সিংহ এবং মানব রাজকন্যার মধ্যে একটি পৌরাণিক মিলন থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে উপকথায় বর্ণিত আছে। মহাবংশ অনুসারে, বিজয়া বুদ্ধের মৃত্যুর দিনেই অবতরণ করেছিলেন (মহাবংশের গিগারের ভূমিকা দেখুন)। বিজয়া এবং কুভেনির (স্থানীয় রাজত্বকারী রানী) গল্পটি গ্রীক কিংবদন্তির কথা মনে করিয়ে দেয় এবং প্রাচীন প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় লোককাহিনীতে এর একটি সাধারণ উৎস থাকতে পারে।

মহাবংশ অনুসারে, বিজয়া শ্রীলঙ্কায় মহাথিথার (মন্থোটা বা মান্নার) কাছে অবতরণ করেন এবং তাম্বাপর্ণি দ্বীপের নামকরণ করেন ("তাম্র রঙের বালি")।[২২][২৩] এই নামটি টলেমির প্রাচীন বিশ্বের মানচিত্রে প্রমাণিত। মহাবংশে বুদ্ধের তিনবার শ্রীলঙ্কা সফরের বর্ণনা রয়েছে। প্রথমত,একজন নাগা রাজা এবং তার জামাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ থামাতে এসেছিলেন যারা রুবি চেয়ার নিয়ে লড়াই করছিল। বৌদ্ধ উপকথা অনুসারে, তার শেষ সফরে তিনি সিরি পাডায় তার পায়ের চিহ্ন রেখে গেছেন। তবে ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মানুযায়ী সিরি পাডা হল মানুষের আদি পিতা আদম এর পায়ের ছাপ।

তামিরাভরানি হল শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীর পুরনো নাম (সিংহল ভাষায় মালওয়াতু ওয়া এবং তামিল ভাষায় আরুভি অরু নামে পরিচিত)। এই নদীটি রাজধানী অনুরাধাপুরা থেকে মহাথিথা (বর্তমানে মান্নার) সংযোগকারী একটি প্রধান সরবরাহ পথ ছিল। জলপথটি দক্ষিণ সিল্ক রুটে ভ্রমণকারী গ্রীক এবং চীনা জাহাজ দ্বারা ব্যবহৃত হত।

মাহাথির ছিল একটি প্রাচীন বন্দর যা শ্রীলঙ্কাকে ভারত এবং পারস্য উপসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছিল।[২৪]

বর্তমান সিংহলিরা হল ইন্দো আর্য এবং আদিবাসীদের মিশ্রণ।[২৫] সিংহলিরা ইন্দো-আর্য ভাষা, সংস্কৃতি, থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম, বংশগতি এবং শারীরিক নৃতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেশী দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃত।

অনুরাধাপুর সময়কাল (৩৭৭ খ্রিস্টপূর্ব-১০১৭ খ্রিস্টাব্দ)

পান্ড্য রাজ্যের মুদ্রা পাহাড়ের প্রতীক এবং হাতির মধ্যে একটি মন্দিরকে চিত্রিত করে। প্রাপ্তিস্থল:পান্ড্য, শ্রীলঙ্কা। সময়: খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দী

অনুরাধাপুর রাজ্যের প্রাথমিক যুগে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। শ্রীলঙ্কার প্রাথমিক বসতিগুলি মূলত পূর্ব, উত্তর মধ্য এবং উত্তর-পূর্ব এলাকার নদীগুলির কাছে তৈরি করা হয়েছিল, কেননা এর ফলে সারা বছর চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল প্রাপ্তির সুবিধা ছিল। রাজা ছিলেন দেশের শাসক এবং আইন, সেনাবাহিনী এবং বিশ্বাসের রক্ষাকর্তা। দেবানম্পিয়া তিসা (২৫০-২১০ খ্রিস্টপূর্ব) সিংহলী এবং মৌর্য বংশের রাজার বন্ধু ছিলেন। সম্রাট অশোকের সাথে তার সম্পর্কের ফলে উক্ত অঞ্চলে ২৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল। সঙ্গমিতা (মাহিন্দার বোন) জাম্বুকোলা (কঙ্কেসান্থুরাইয়ের পশ্চিমে) হতে একটি বোধির চারা এনেছিলেন। এই রাজার রাজত্ব থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম এবং শ্রীলঙ্কার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মৌর্য-সংস্কৃত অর্থশাস্ত্রে শ্রীলঙ্কার মুক্তা ও রত্নের উল্লেখ আছে। কৌলেয় (সংস্কৃত: कौलेय) নামক এক ধরনের মুক্তা সেই পাঠ্যটিতে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং এটি সিংহলের ময়ুরগ্রাম থেকে সংগৃহীত বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। সে সময় পারসমুদ্র (সংস্কৃত:पारसमुद्र) নামক একটি রত্ন সিংহল থেকে সংগ্রহ করা হতো।[২৬]

এল্লালান (২০৫-১৬১ খ্রিস্টপূর্ব) ছিলেন একজন তামিল রাজা যিনি রাজা আসালাকে হত্যা করার পর "পিহিতি রাতা" (মহাওয়েলির উত্তরে শ্রীলঙ্কা) শাসন করেছিলেন। এল্লালানের সময়ে কেলানি তিসা ছিলেন মায়া রাতার উপ-রাজা (দক্ষিণ-পশ্চিমে) এবং কাভান তিসা ছিলেন রুহুনার (দক্ষিণ-পূর্বে) একটি আঞ্চলিক উপ-রাজা। কাভান তিসা তিসা মহাবিহার, দিঘাবাপি ট্যাঙ্ক এবং সেরুভিলায় অনেক মন্দির তৈরি করেছিলেন। রাজা কাভান তিসার জ্যেষ্ঠ পুত্র দুতুগেমুনু (১৬১-১৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ২৫ বছর বয়সে দক্ষিণ ভারতীয় তামিল আক্রমণকারী ইলারাকে (৬৪ বছরের বেশি বয়সী) একক যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন, যা মহাবংশে বর্ণিত হয়েছে। ডুতুগেমুনু দ্বারা নির্মিত রুওয়ানওয়েলিসায়া হল পিরামিডের মতো অনুপাতের একটি দাগাবা এবং এটি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় হিসাবে বিবেচিত হত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পুলাহাট্টা (বা পুলাহাথা) পাঁচ দ্রাবিড়ের মধ্যে প্রথম হিসেবে বাহিয়া কর্তৃক পদচ্যুত হয়েছিল। তিনি পানায়া মারার দ্বারা পদচ্যুত হন এবং ৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দাথিকার তাকে হত্যা করেন। মারাকে ভালাগাম্বা প্রথম (৮৯-৭৭ খ্রিস্টপূর্ব) ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। এর ফলে তামিল শাসনের অবসান ঘটায়। এই সময়ে মহাবিহার থেরবাদ অভয়গিরি ("মহাযানপন্থী") মতবাদের বিরোধ দেখা দেয়। ত্রিপিটক আলুবিহার নামক গ্রন্থ মাতাল নামক অঞ্চলে পালি ভাষায় লেখা হয়েছিল। চুরা নাগা (৬৩-৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিলেন একজন মহানগান যিনি সহধর্মিণী অনুলা দ্বারা বিষ প্রয়োগের ফলে মারা গিয়েছিলেন। অনুলা পরে দ্বীপটির রানী হয়েছিলেন। রানী অনুলা (৪৮-৪৪ খ্রিস্টপূর্ব), চুরা নাগা এবং কুদা তিসার বিধবা স্ত্রী ছিলেন। তার অনেক প্রেমিক ছিল যাদের তিনি বিষ দিয়ে হত্যা করেছিলেন। ভাসাভা (৬৭-১১১) বল্লীপুরম সোনার থালায় নিজের নাম অঙ্কন করেছেন, অনুরাধাপুরাকে সুরক্ষিত করেছিলেন এবং এগারোটি ট্যাঙ্ক তৈরি করেছিলেন এবং অনেকগুলো আইন তৈরি করেছিলেন। গজবাহু প্রথম (১১৪-১৩৬) চোল রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন এবং বন্দীদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বুদ্ধের দাঁতের অবশেষ উদ্ধার করেছিলেন। সঙ্গম যুগের ক্লাসিক সাহিত্য গ্রন্থ মণিমেকলাই অনুযায়ী, মণিপল্লবের নাগা রাজার কন্যা পিলি ভালইর সঙ্গে (পিলিভালাই) চোল রাজা কিলিভালাভানের সাথে সম্পর্ক থেকে একজন রাজকুমারের জন্ম হয়েছিল। অন্য একটি সংস্করণে বলা হয়েছে যে "পল্লব" ব্রাহ্মণ অশ্বত্থামার সাথে নাগা রাজকুমারীর মিলন থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা বহুর প্লেটের ষষ্ঠ শ্লোকেও অনুমিতভাবে সমর্থিত হয়েছিল। এ সূত্র অনুসারে, "অশ্বত্থামা থেকে পল্লব নামে রাজার জন্ম হয়েছিল"।[২৭]

চতুর্থ শতাব্দীর রোমান মুদ্রা, চতুর্থ থেকে অষ্টম শতাব্দীর শ্রীলঙ্কার অনুকরণ।
শ্রীলঙ্কা থেকে রাষ্ট্রদূত (獅子國 Shiziguo) চীন (লিয়াং রাজবংশ), Wanghuitu (王会图), প্রায় ৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব

প্রাচীন তামিল দেশ (বর্তমানে দক্ষিণ ভারত) এবং শ্রীলঙ্কার সাথে রোমানদের বাণিজ্য ছিল।[২৮] তারা অনেক অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য বসতি স্থাপন করে যা পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অনেক পরেও টিকেছিল।[২৯]

মহাসেনের রাজত্বকালে (২৭৪-৩০১) থেরবাদ (মহা বিহার) এর অনুসারীরা নির্যাতিত হয়েছিল এবং বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখার আবির্ভাব হয়েছিল। পঞ্চম শতাব্দীর প্রথম দিকে পান্ডিয়ান রাজবংশের আবির্ভাব ঘটে। পান্ডু (৪২৯) ছিলেন সাতজন পান্ডিয়ান শাসকের মধ্যে প্রথম, ৪৫৫ সালে পিথ্যা ছিলেন এ বংশের শেষ শাসক। ধাতুসেন (৪৫৯-৪৭৭) "কালাওয়েভা" এবং তার ছেলে কাশ্যপ (৪৭৭-৪৯৫) বিখ্যাত সিগিরিয়া শিলা প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। সিগিরিয়া শিলা প্রাসাদে প্রাচীন সিংহলীর প্রায় ৭০০টি রক গ্রাফিতি তৈরি করা হয়েছিল।

প্রত্যাখ্যান

৯৯৩ সালে, রাজা চোল একটি বৃহৎ চোল সেনাবাহিনী পাঠান যা উত্তরে অনুরাধাপুর রাজ্য জয় করে এবং চোল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বে যোগ করে।[৩০] পুরো দ্বীপটি পরবর্তীকালে তার পুত্র রাজেন্দ্র চোলের শাসনামলে বিস্তীর্ণ চোল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হিসেবে জয় করা হয়।[৩১][৩২][৩৩][৩৪]

পোলোনারুয়া সময়কাল (১০৫৬-১২৩২)

পোলোনারুয়া রাজ্য ছিল শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় প্রধান সিংহলী রাজ্য। এটি ১০৫৫ থেকে বিজয়বাহুর অধীনে শাসিত হচ্ছিল এবং ১২১২ সাল পর্যন্ত লীলাবতীর শাসনের অধীনে ছিল। রাজারাজা প্রথমের অধীনে চোল বাহিনী দ্বারা অনুরাধাপুর রাজ্য আক্রমণ করার পর পোলোনারুয়া রাজ্যের উদ্ভব ঘটে এবং এর ফলে রুহুনা রাজ্য গঠন করা হয়।

প্রত্যাখ্যান

সদয়বর্মণ সুন্দরা পান্ড্যন প্রথম ১৩শ শতাব্দীতে শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করেন এবং উত্তর শ্রীলঙ্কার জাফনা রাজ্য দখলকারী চন্দ্রবানুকে পরাজিত করেন। [৩৫] সদয়বর্মণ সুন্দরা পান্ড্যন চন্দ্রভানুকে পান্ড্য শাসনের বশ্যতা স্বীকার করতে এবং পান্ড্য রাজবংশের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য করেছিলাম। কিন্তু পরে যখন চন্দ্রভানু যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠেন তখন তিনি আবার সিংগালি রাজ্য আক্রমণ করেন কিন্তু তিনি সদয়বর্মনের ভাই সুন্দর পান্ডিয়ানের কাছে পরাজিত হন (যাকে বীর পান্ড্যন প্রথম বলা হতো) এবং চন্দ্রভানু প্রাণ হারান।[৩৫] জাফনা রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী আর্য চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পান্ড্য রাজবংশের দ্বারা শ্রীলঙ্কা ৩য় বারের মতো আক্রমণ করা হয়েছিল।[৩৫]

ক্রান্তিকাল (১২৩২-১৫০৫)

সিলনের টলেমিক মানচিত্র (১৪৮২)

জাফনা কিংডম

জাফনা উপদ্বীপকে কেন্দ্র করে একটি উত্তরের রাজ্য ছিল, যা আর্যচক্রবর্তী রাজবংশ নামেও পরিচিত।[৩৬]

ডাম্বাদেনিয়া রাজ্য

কলিঙ্গ মাঘকে পরাজিত করার পর, রাজা পরক্রমবাহু দম্বাদেনিয়ায় তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ডাম্বাদেনিয়ায় দ্য সেক্রেড টুথ রিলিকের মন্দির তৈরি করেছিলেন।

গাম্পোলার রাজ্য

এটি রাজা বুওয়ানেকাবাহু চতুর্থ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি সাউলু বিজয়বাহুর পুত্র বলে কথিত আছে। এই সময়ে ইবনে বতুতা নামে একজন মুসলিম পর্যটক ও ভূগোলবিদ শ্রীলঙ্কায় আসেন এবং এ সম্পর্কে একটি বই লেখেন। গাদালাদেনিয়া বিহারায় গাম্পোলা সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরি প্রধান ভবন। লঙ্কাতিলাকা বিহারায়ও গাম্পোলায় নির্মিত একটি প্রধান ভবন।

কোট্টের রাজ্য

রাজা পরাক্রমবাহু এ সময়ে কোট্টের রাজ্য জয় করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সীতাওয়াকার রাজ্য

পর্তুগিজ যুগে সিথাওয়াকার রাজ্য স্বল্প সময়ের জন্য টিকে ছিল।

ভান্নিমাই

ভান্নিমাই (প্রায়শ ভান্নি নাড়ু হিসেবে অভিহিত) উত্তর শ্রীলঙ্কার জাফনা উপদ্বীপের দক্ষিণে ভানিয়ার প্রধানদের দ্বারা শাসিত সামন্ত ভূমি বিভাগ ছিল। পান্ডারা ভানিয়ান ক্যান্ডি নায়াকারদের সাথে মিত্রতা করে ১৮০২ সালে শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ ও ডাচ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। তিনি মুল্লাইটিভু এবং উত্তর ভান্নির অন্যান্য অংশকে ডাচ শাসন থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। ১৮০৩ সালে, পান্ডারা ভানিয়ান ব্রিটিশদের দ্বারা পরাজিত হয় এবং ভান্নি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে।[৩৭]

ষোড়শ শতাব্দীর সংকট (১৫০৫-১৫৯৪)

পর্তুগিজ হস্তক্ষেপ

১৬ শতকে নির্মিত পূর্ব প্রদেশের বাট্টিকালোয়াতে একটি পর্তুগিজ (পরে ডাচ) দুর্গ।

আধুনিক সময়ে পর্তুগিজরা প্রথম ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন। ১৫০৫ সালে লরেনকো ডি আলমেইদা প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে শ্রীলঙ্কায় আগমন করেছিলেন। তিনি দেখতে পান, দ্বীপটি সাতটি যুদ্ধরত রাজ্যে বিভক্ত এবং এটি অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করতে অক্ষম। পরবর্তীতে পর্তুগিজরা ১৫১৭ সালে কলম্বো বন্দর নগরীতে একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা করে এবং ধীরে ধীরে উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করে। ১৫৯২ সালে, সিংহলিরা তাদের রাজধানী ক্যান্ডির অভ্যন্তরীণ শহরে স্থানান্তরিত করে, যা আক্রমণকারীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে নগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও নিরাপদ করে। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় বিরতিহীন যুদ্ধ অব্যাহত ছিল।

পর্তুগিজদের মিশনারি অভিযানের কারণে অনেক নিম্নভূমির সিংহলিরা খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল যখন উপকূলীয় মুররা ধর্মীয়ভাবে নির্যাতিত হয়েছিল এবং কেন্দ্রীয় উচ্চভূমিতে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠরা পর্তুগিজদের দখলদারিত্ব এবং এর প্রভাবকে অপছন্দ করে এবং তাদের উদ্ধার করতে পারে এমন কোনো শক্তিকে স্বাগত জানায়। ১৬০২ সালে ডাচ ক্যাপ্টেন জোরিস ভ্যান স্পিলবার্গেন অবতরণ করলে, ক্যান্ডির রাজা তার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন।[৩৮]

ডাচ হস্তক্ষেপ

ক্যান্ডির রাজা দ্বিতীয় রাজাসিংহে ১৬৩৮ সালে ডাচদের সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন পর্তুগিজদের থেকে মুক্তি পেতে যারা দ্বীপের বেশিরভাগ উপকূলীয় অঞ্চল শাসন করেছিল। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল ডাচরা দ্বীপের উপর ডাচ বাণিজ্য একচেটিয়া অধিকারের বিনিময়ে কান্দিয়ান রাজার দখলকৃত উপকূলীয় অঞ্চলগুলি হস্তান্তর করবে। উভয় পক্ষই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ডাচরা ১৬৫৬ সালে কলম্বো এবং ১৬৫৮ সালে জাফনাপত্তনমের কাছে শেষ পর্তুগিজদের শক্ত ঘাঁটি দখল করে। ১৬৬০ সাল নাগাদ তারা ক্যান্ডির ভূমিবেষ্টিত রাজ্য ছাড়া পুরো দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করে। ডাচরা প্রোটেস্ট্যান্ট, ক্যাথলিক এবং অবশিষ্ট পর্তুগিজ বসতি স্থাপনকারীদের নিপীড়ন করেছিল কিন্তু বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলমানদের ক্ষতি করেনি। তবে পর্তুগিজদের তুলনায় ডাচরা জনগণের উপর অনেক বেশি কর আরোপ করত।[৩৮]

ক্যান্ডিয়ান সময়কাল (১৫৯৪-১৮১৫)

পর্তুগিজদের আক্রমণের পর, কোনাপ্পু বান্দারা (রাজা বিমলধর্মসুরিয়া) বুদ্ধিমত্তার সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং ক্যান্ডি রাজ্যের প্রথম রাজা হন। তিনি টেম্পল অফ দ্য সেক্রেড টুথ রিলিক তৈরি করেছিলেন। ১৮৩২ সালে শেষ রাজা শ্রী বিক্রম রাজাসিনহার মৃত্যুর মাধ্যমে রাজার সমাপ্তি ঘটে।[৩৯]

ঔপনিবেশিক শ্রীলঙ্কা (১৮১৫-১৯৪৮)

১৯ শতকের শেষের দিকে সিলনের জার্মান মানচিত্র।

নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডে ফরাসি নিয়ন্ত্রণ চালু থাকার ফলে নেদারল্যান্ডস শ্রীলঙ্কাকে ফরাসিদের হাতে তুলে দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এর ফলে গ্রেট ব্রিটেন ১৭৯৬ সালে দ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চল তথা সিলন দ্বীপ দখল করে। ১৮০২ সালে অ্যামিয়েন্সের চুক্তির ফলে নেদারল্যান্ডস আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপের ডাচ অংশ ব্রিটেনের হাতে তুলে দেয় এবং এটি একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশরা প্রথম কান্দিয়ান যুদ্ধে ক্যান্ডি রাজ্যে আক্রমণ করেছিল, কিন্তু তারা বিতাড়িত হয়েছিল। ১৮১৫ সালে ক্যান্ডি দ্বিতীয় কান্দিয়ান যুদ্ধে সংযুক্ত হয়, অবশেষে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পতন ঘটে।

উভা বিদ্রোহ দমনের পর ১৮৪০ সালের ক্রাউন ল্যান্ডস (অধিগ্রহণ) অধ্যাদেশ নং ১২ (কখনও কখনও ক্রাউন ল্যান্ডস অর্ডিন্যান্স বা ওয়েস্ট ল্যান্ডস অর্ডিন্যান্স বলা হয়) এর মাধ্যমে কান্দিয়ান কৃষকদের তাদের জমি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।[৪০] ব্রিটিশরা দেখেছিল যে শ্রীলঙ্কার উচ্চভূমি কফি, চা এবং রাবার চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, সিলন চা ব্রিটিশ বাজারের একটি প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছিল যা অল্প সংখ্যক ইউরোপীয় চা চাষীদের জন্য প্রচুর সম্পদের উৎস হয়ে যায়। চা বাগানের মালিকরা এস্টেটে কাজ করার জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে প্রচুর সংখ্যক তামিল শ্রমিককে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে আমদানি করেছিল, যারা শীঘ্রই দ্বীপের জনসংখ্যার ১০% এ পরিণত হয়েছিল।[৪১]

শীর্ষে: ১৭৩৩ সালে সিলানাস দ্বীপের একটি সমাধির ঢিবি থেকে প্রকাশিত কিছু অজানা চরিত্রের বর্ণনা থেকে চিত্রিত

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন আধা-ইউরোপীয় বার্ঘার, উচ্চ-বর্ণের সিংহলী এবং তামিলদের পক্ষ নিয়েছিল যারা প্রধানত দেশের উত্তরে কেন্দ্রীভূত ছিল। তথাপি, ব্রিটিশরাও শ্রীলঙ্কায় তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্র চালু করেছিল এবং ১৮৩৩ সালের প্রথম দিকে বার্ঘারদের সরকারের পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত সরকার আংশিকভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতো এবং ১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত মনোনীত সংসদ সদস্যের সংখ্যা নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৩১ সালে সিংহলি, তামিল এবং বার্ঘের অভিজাতদের প্রতিবাদের পরও সর্বজনীন ভোটাধিকার চালু করা হয়েছিল। তবে এ তিনটি সাধারণ মানুষকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।[৪১]

স্বাধীনতা আন্দোলন

সিলন ন্যাশনাল কংগ্রেস (সিএনসি) বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যদিও দলটি শীঘ্রই জাতিগত এবং বর্ণের বিভেদে বিভক্ত হয়েছিল। ইতিহাসবিদ কে.এম. ডি সিলভা বলেছেন যে সিলন তামিলদের সংখ্যালঘু মর্যাদা গ্রহণে অস্বীকৃতি সিলন জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। সিএনসি স্বাধীনতা (বা "স্বরাজ") চায়নি। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা আন্দোলন দুটি ধারায় বিভক্ত ছিল। এর প্রথম পক্ষ বা "সংবিধানবাদী" গোষ্ঠী সিলনের মর্যাদা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। অন্যদিকে এবং কলম্বো ইয়ুথ লিগ, গুনাসিংহের শ্রম আন্দোলন এবং জাফনা যুব কংগ্রেসের সাথে যুক্ত আরও কট্টরপন্থী দল। ১৯২৬ সালে জওহরলাল নেহরু, সরোজিনী নাইডু এবং অন্যান্য ভারতীয় নেতারা যখন সিলন সফরে গিয়েছিলেন তখন ভারতীয় উদাহরণ অনুসরণ করে এই সংগঠনগুলিই প্রথম "স্বরাজ" ("সরাসরি স্বাধীনতা") এর দাবি করেছিল।[৪২] ১৯৩১ সালে কমিশনের সংস্কার এবং সোলবেরি কমিশনের সুপারিশ মূলত ডিএস সেনানায়েকের নেতৃত্বে মন্ত্রী বোর্ডের ১৯৪৪ সালের খসড়া সংবিধানকে সমর্থন করে।[৪২] মার্কসবাদী লঙ্কা সামা সমাজ পার্টি (এলএসএসপি) ১৯৩৫ সালে যুব লীগ থেকে গঠিত হয়। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিকে তাদের নীতির ভিত্তি করে তুলেছিল।[৪৩] স্টেট কাউন্সিলে এন.এম. পেরেরা এবং ফিলিপ গুনাওয়ার্দেনা, কলভিন আর. ডি সিলভা, লেসলি গুনওয়ার্দেনে, ভিভিয়েন গুনোয়ার্ডেনে, এডমন্ড সামারকোডি এবং নাতেসা আইয়ারের মতো অন্যান্য সদস্যরা এই সংগ্রামে সহায়তা করেছিলেন। তারা সিংহলী এবং তামিল ভাষাকে ইংরেজির পরিবর্তে সরকারী ভাষা হিসাবে প্রতিস্থাপনেরও দাবি জানিয়েছিলেন। মার্কসবাদী দলগুলি ছিল একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু এবং তবুও তাদের আন্দোলনকে ব্রিটিশ প্রশাসন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ করছিল। তবে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে বিদ্রোহে জাগিয়ে তোলার অকার্যকর প্রচেষ্টা কিছু রক্তপাত এবং স্বাধীনতায় বিলম্ব ঘটাত। ১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় কাগজপত্রগুলি অনুসারে, যে মার্ক্সবাদী আন্দোলন ঔপনিবেশিক নীতিনির্ধারকদের উপর খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।[৪১]

১৯৩০-এর দশকে সাংবিধানিক সংস্কারের আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল সোলবারি কমিশন। তামিল সংগঠনটি তখন জি জি পোনাম্বালামের নেতৃত্বে ছিল, যিনি "সিলোনিজ পরিচয়" প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[৪৪] পোন্নাম্বলাম নিজেকে "গর্বিত দ্রাবিড়" ঘোষণা করেছিলেন এবং তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন পরিচয় ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সিংহলিদের আক্রমণ করেন এবং মহাবংশ নামে পরিচিত তাদের ঐতিহাসিক ইতিহাসের সমালোচনা করেন। ১৯৩৯ সালে প্রথম সিংহলি-তামিল দাঙ্গা হয়েছিল।[৪২][৪৫] পোনাম্বালাম সার্বজনীন ভোটাধিকারের বিরোধিতা করেছিলেন, বর্ণপ্রথাকে সমর্থন করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য সংখ্যালঘুদের (১৯৩১ সালে জনসংখ্যার ৩৫%) সংসদে সমান সংখ্যক আসন থাকা প্রয়োজন। সিংহলীরা ছিল জনসংখ্যার মোট ৬৫%। এই "৫০-৫০" বা "ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব" নীতিটি তখনকার তামিল রাজনীতির হল মার্ক হয়ে ওঠে। পোন্নাম্বালাম ব্রিটিশদেরকে "ঐতিহ্যগত তামিল এলাকায়" উপনিবেশ স্থাপন করার এবং বৌদ্ধ অস্থায়ী আইন দ্বারা বৌদ্ধদের পক্ষ নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। সোলবেরি কমিশন পোনাম্বালামের দাখিল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এমনকি তারা যাকে তাদের অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িক চরিত্র হিসাবে বর্ণনা করেছিল তার সমালোচনা করেছিল। সিংহলি লেখকরা দক্ষিণের নগর কেন্দ্রে তামিলদের বৃহৎ অভিবাসনের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। ইতিমধ্যে সেনানায়েকে, ব্যারন জয়তিলেকে, অলিভার গুনাতিলেকে এবং অন্যান্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মুখোমুখি না হয়েই সোলবারি কমিশনের কাছে লবিং করেছে। মন্ত্রিসভার খসড়াটি অনানুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালের খসড়া সংবিধানে পরিণত হয়।[৪২]

যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে ডিএস সেনানায়েক সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনের সমর্থনের দিকে পরিচালিত করেছিল। সিলনের স্বাধীনতা সমর্থনকারী ঔপনিবেশিক অফিসে একটি টেলিগ্রাম শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে সেনানায়েকে সরকারকে সাহায্য করেছিল বলে ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশদের করা সহযোগিতাও সদ্য স্বাধীন সরকারের জন্য খুব অনুকূল আর্থিক পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করেছিল।[৪১]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা ছিল ফ্রন্ট লাইন ব্রিটিশ ঘাঁটি। মার্কসবাদী সংগঠনের নেতৃত্বে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার বিরোধিতা করা হয় এবং এলএসএসপি-র স্বাধীনতাপন্থী গোষ্ঠীর নেতাদের ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪২ সালের ৫ এপ্রিল, ভারত মহাসাগরের অভিযানে জাপানী নৌবাহিনীর বোমা কলম্বোর খুব কাছে এসেছিল। জাপানি আক্রমণের ফলে ভারতীয় বণিকদের (যারা কলম্বো বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী) ফ্লাইট আক্রমণ করা হয়, যা সেনানায়েক সরকারের মুখোমুখি একটি বড় রাজনৈতিক সমস্যা দূর করে।[৪২] মার্কসবাদী নেতারাও ভারতে পালিয়ে যান যেখানে তারা সেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেন। সিলনের আন্দোলন ছিল ক্ষুদ্র, ইংরেজি-শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা প্রধানত শহুরে কেন্দ্রগুলিতে আবদ্ধ ছিল। এই দলগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন ফিলিপের ভাই রবার্ট গুনাওয়ার্দেনা। যুদ্ধের এই "বীরত্বপূর্ণ" কিন্তু অকার্যকর পদ্ধতির বিপরীতে, সেনানায়েক সরকার কমান্ডিং এলিটদের সাথে তার সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার সুবিধা নিয়েছিল। যুদ্ধে সিলন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন কলম্বোকে ইস্টার্ন থিয়েটারের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করেন। অলিভার গুনাতিলেকা দেশের রাবার এবং অন্যান্য কৃষি পণ্যের বাজারগুলিকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে কোষাগার পূরণ করেন। তা সত্ত্বেও, সিংহলিরা স্বাধীনতার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং সিংহলি সার্বভৌমত্ব, যুদ্ধের দেওয়া সুযোগগুলি ব্যবহার করে, ব্রিটেনের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দেয়।[৪১]


এই সময়ে মার্কসবাদীরা যুদ্ধকে একটি সাম্রাজ্যবাদী পক্ষের প্রদর্শন হিসাবে চিহ্নিত করে এবং একটি সর্বহারা বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা করে। তারা তাদের নগণ্য যুদ্ধ শক্তির তুলনায় অসম আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিল এবং সেনানায়েকে এবং অন্যান্য জাতিগত সিংহলী নেতাদের "সাংবিধানিক" পদ্ধতির বিরোধিতা করেছিল। কোকোস দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট বিদ্রোহী দল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল যা সিলোনিজদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। ব্রিটিশরা দাবি করেছিল যে, এলএসএসপি-এর এ কর্মে কিছু হাত ছিল, যদিও এটি স্পষ্ট নয়।[৪৬] গভর্নিং পার্টির দুই সদস্য, জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে এবং ডুডলি সেনানায়েকে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য জাপানিদের সাথে আলোচনা করেছিলেন। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় শ্রীলঙ্কানরা ব্রিটিশ বিরোধী ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর 'লঙ্কা রেজিমেন্ট' গঠন করে।[৪১]

ডি এস সেনানায়েকের নেতৃত্বে সংবিধানবাদীরা স্বাধীনতা লাভে সফল হন। ১৯৪৪ সালে সেনানায়েকের মন্ত্রী বোর্ডের খসড়াটি মূলত পরবর্তীতে সোলবারি সংবিধানে পরিণত হয়। অতঃপর ব্রিটিশরা শ্রীলঙ্কানদের ডোমিনিয়ন মর্যাদা এবং স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

স্বাধীনতা

সিংহলী নেতা ডন স্টিফেন সেনানায়েকে স্বাধীনতার ইস্যুতে সিএনসি ত্যাগ করেছিলেন এবং 'স্বাধীনতা অর্জনের' সংশোধিত লক্ষ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, যদিও তার আসল কারণগুলি আরও সূক্ষ্ম ছিল।[৪৭] পরবর্তীকালে তিনি ১৯৪৬ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) গঠন করেন[৪৮], যখন সোলবারি কমিশনের পর্দার আড়ালে লবিংয়ের ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধান সম্মত হয়। ১৯৪৭ সালের নির্বাচনে, ইউএনপি সংসদে সংখ্যালঘু আসন জিতেছিল, কিন্তু সলোমন বন্দরনায়েকের সিংহল মহাসভা পার্টি এবং জিজি-এর তামিল কংগ্রেসের সাথে জোট বাঁধে। তামিল-সাম্প্রদায়িক নেতা পোন্নাম্বালাম এবং তার সিংহলী নেতা বন্দরনায়েকের সফল অন্তর্ভুক্তি ছিল সেনানায়েকের একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভারসাম্যমূলক কাজ। তামিল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে শূন্যতা এবং পোনাম্বলামের মধ্যপন্থীতে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে তামিল আরাসু কাচ্চি ("ফেডারেল পার্টি") এর জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছিল। এটি এস.জে.ভি. চেলভানাইকামের নেতৃত্বে একটি তামিল সার্বভৌম দল ছিল।[৪১]

শ্রীলঙ্কা (১৯৫৮-বর্তমান)

আধিপত্য

৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮-এ ব্রিটেনের সাথে সামরিক চুক্তির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা ডোমিনিয়ন মর্যাদা লাভ করে। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদগুলিতে প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশরা আসীন ছিল এবং ব্রিটিশ বিমান ও সমুদ্র ঘাঁটিগুলি অক্ষত ছিল। পরবর্তীতে স্বাধীনতার দিকে উত্থাপিত হয় এবং সেনানায়েকে শ্রীলঙ্কার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৪৯ সালে, সিলন তামিলদের নেতাদের সম্মতিতে, ইউএনপি সরকার ভারতীয় তামিল বাগান কর্মীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।[৪২][৪৯] কান্দিয়ান সিংহলিদের সমর্থন পাওয়ার জন্য সেনানায়েককে এই কাজ করতে হয়েছিল, যারা চা বাগানের জনসংখ্যাকে হুমকি বোধ করেছিল। উল্লেখ্য, ভারতীয় তামিল জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ ছিল। ফলে "ভারতীয় তামিলদের" অন্তর্ভুক্তি কান্দিয়ান নেতাদের জন্য নির্বাচনী পরাজয়ের অর্থ হত। সেনানায়েকে ঘোড়া থেকে পড়ে ১৯৫২ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ডুডলি সেনানায়েকে তার স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ইউএনপির বিরুদ্ধে বাম দলগুলির ব্যাপক হরতাল ("সাধারণ ধর্মঘট") এর পরে পদত্যাগ করেন। তার পরে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন জন কোটেলাওয়ালা, একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ এবং ডুডলি সেনানায়েকের চাচা। কোটেলাওয়ালার বিশাল ব্যক্তিগত প্রতিপত্তি বা ডি.এস. সেনানায়েকের ন্যায় প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধি ছিল না।[৫০] তিনি জাতীয় ভাষার ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছিলেন যে ইস্যুটি ডিএস সেনানায়েকে দারুনভাবে পিছিয়ে রেখেছিলেন। তিনি সরকারী ভাষা হিসাবে সিংহলী এবং তামিলের মর্যাদা নিয়ে বিরোধপূর্ণ নীতি উল্লেখ করে তামিল এবং সিংহলিদের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বৌদ্ধ ভিক্ষু, যারা বন্দরনায়েকের সমর্থক ছিলেন তাদের আক্রমণ করে বৌদ্ধ লবির বিরোধিতা করেন।

১৯৫৬ সালে, সিনেট বিলুপ্ত করা হয় এবং সিংহলাকে সরকারী ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, তামিলকে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের বিচার বিভাগীয় কমিটির কাছে আপিল বাতিল করা হয়েছিল এবং মার্কসবাদী কর্মসূচির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এবং "মালিকানাধীন কোম্পানিগুলির দ্বারা চলমান ডিস-বিনিয়োগ রোধ করার জন্য" বৃক্ষরোপণ জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে, সিংহলী আইনটি চালু হয়। এটি বাণিজ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সিংহলাকে প্রথম এবং পছন্দের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ আইনটি অবিলম্বে কার্যকর হয়। ফলস্বরূপ, বিপুল সংখ্যক লোক (বেশিরভাগই বার্ঘাররা) বিদেশে বসবাস করার জন্য দেশ ছেড়েছিল কারণ তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে বৈষম্য অনুভব করেছিল। ১৯৫৮ সালে, সরকারের ভাষা নীতির প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে কলম্বোতে সিংহলি ও তামিলদের মধ্যে প্রথম বড় দাঙ্গা শুরু হয়।[৪১]

১৯৭১ সালের বিদ্রোহ

বামপন্থী সিংহলী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা যখন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বন্দরনায়েক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে তখন তা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। যদিও বিদ্রোহীরা অল্পবয়সী, দুর্বল সশস্ত্র এবং অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত ছিল, তবুও তারা দক্ষিণ ও মধ্য প্রদেশের প্রধান এলাকা দখল ও দখল করতে সফল হয়েছিল। তারা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পরাজিত হয়। তাদের ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা সরকারের জন্য একটি বড় সঙ্কট তৈরি করে এবং জাতির নিরাপত্তার প্রয়োজনের মৌলিক পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে।[৪১]

আন্দোলনটি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে রোহানা উইজেবীরা শুরু করেছিলেন, যিনি একজন মাওবাদী ছিলেন এবং সিলন কমিউনিস্ট পার্টির বেইজিংপন্থী শাখায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি পার্টির নেতাদের সাথে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধে ছিলেন এবং বিপ্লবী উদ্দেশ্যের অভাবের কারণে অধৈর্য হয়েছিলেন। যুব গোষ্ঠীর সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে তার সাফল্য এবং একজন গণ বক্তা হিসাবে তার জনপ্রিয়তা তাকে ১৯৬৭ সালে তার নিজস্ব আন্দোলন সংগঠিত করতে পরিচালিত করেছিল। প্রাথমিকভাবে কেবলমাত্র নতুন বাম হিসাবে চিহ্নিত, এই দলটি গ্রামীণ এলাকার ছাত্র এবং বেকার যুবকদের উপর আকৃষ্ট হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ষোল বছর হতে পঁচিশ-বয়স বয়স্ক গোষ্ঠী। এই নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই সংখ্যালঘু তথাকথিত 'নিম্ন' বর্ণের (কারভা এবং দুরভা) সদস্য ছিলেন যারা মনে করেছিলেন যে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ দেশের বামপন্থী জোটের দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছে। আদর্শের কর্মসূচি, তথাকথিত পাঁচ বক্তৃতা, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, দ্বীপের কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলির ব্যর্থতা এবং হঠাৎ করে সহিংসভাবে ক্ষমতা দখলের প্রয়োজনীয়তার আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে, এ গ্রুপটি দ্রুত প্রসারিত হয় এবং বেশ কয়েকটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। এই পরবর্তী সমর্থকদের মধ্যে কিছু পুলিশ স্টেশন, বিমানবন্দর এবং সামরিক সুবিধাগুলির স্কেচ সরবরাহ করেছিল যা বিদ্রোহের প্রাথমিক সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নতুন সদস্যদের সংগঠনে আরও শক্তভাবে আকৃষ্ট করার জন্য এবং আসন্ন সংঘর্ষের জন্য তাদের প্রস্তুত করার জন্য, উইজেভিরা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে "শিক্ষা শিবির" খোলেন। এই শিবিরগুলি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ এবং মৌলিক সামরিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদান করে।[৫১]

গোপন সেল এবং আঞ্চলিক কমান্ড তৈরি করার সময়, উইজেবীরার গ্রুপ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় জনসাধারণের ভূমিকা নিতে শুরু করে। তার কর্মীরা সিরিমাভো আর ডি বন্দরনায়েকের ইউনাইটেড ফ্রন্টের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালায়, কিন্তু একই সময়ে, যদি বন্দরনায়েকে সর্বহারা শ্রেণীর স্বার্থের কথা না বলেন, তখন তারা হিংসাত্মক বিদ্রোহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোস্টার এবং প্যামফলেট বিতরণ করে। এই সময়ের মধ্যে জারি করা একটি ইশতেহারে দলটি প্রথমবার জনতা বিমুক্তি পেরামুনা নামটি ব্যবহার করে। এই প্রকাশনার বিধ্বংসী সুরের কারণে, ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি সরকার উইজেবীরাকে নির্বাচনের সময় আটকে রেখেছিল, কিন্তু বিজয়ী বন্দরনায়েকে ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে তার মুক্তির আদেশ দেন। পরবর্তী কয়েক মাস রাজনৈতিকভাবে সহনশীল পরিবেশে, বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত বামপন্থী গোষ্ঠীর উপর জেভিপি(জনতা বিমুক্তি পেরামুনা) একটি বিদ্রোহের জন্য জনসাধারণের প্রচার এবং ব্যক্তিগত প্রস্তুতি উভয়ই তীব্র করেছে। যদিও তাদের দলটি তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল তবে তারা নির্বাচিত ব্যক্তিদের অপহরণ এবং দ্বীপ জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আকস্মিক ও একযোগে হামলার মাধ্যমে সরকারকে অচল করার আশা করেছিল। দলটির সদস্যদের সরবরাহকৃত তহবিল দিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু অস্ত্র কেনা হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ অংশে, তারা অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য পুলিশ স্টেশন এবং সেনা ক্যাম্পের বিরুদ্ধে অভিযানের উপর নির্ভর করত এবং তারা তাদের নিজস্ব বোমা তৈরি করত। উইজেবীরাকে গ্রেফতার করে জাফনা কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি বিদ্রোহের সময় জুড়ে থাকেন। তার গ্রেফতার এবং পুলিশি তদন্তের ক্রমবর্ধমান চাপের প্রতিক্রিয়ায়, অন্যান্য জেভিপি নেতারা অবিলম্বে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারা রাত ১১টার সময় বিদ্রোহ শুরু করতে সম্মত হন। ৫ এপ্রিল ১৯৭১ সালে শটগান, বোমা এবং মোলোটভ ককটেল দিয়ে সজ্জিত বিদ্রোহী দলগুলো দ্বীপের চারপাশের ৭৪টি থানার বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ শুরু করে এবং প্রধান শহুরে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে। আক্রমণগুলি দক্ষিণে সবচেয়ে সফল হয়েছিল। ১০ এপ্রিলের মধ্যে, বিদ্রোহীরা মাতারা জেলা এবং গল জেলার আম্বালাঙ্গোডা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং দক্ষিণ প্রদেশের অবশিষ্ট অঞ্চলগুলি দখল করার কাছাকাছি এসেছিল।

নতুন সরকার যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিদ্রোহের সময় বন্দরনায়েকে পাহারা দেওয়া হয় এবং মৌলিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ভারতকে আহ্বান জানাতে বাধ্য হয়। ভারতীয় ফ্রিগেটগুলি উপকূলে টহল দেয় এবং ভারতীয় সৈন্যরা কাতুনায়কায় বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাহারা দেয় এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার পাল্টা আক্রমণে সহায়তা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শ্রীলঙ্কার সর্ব-স্বেচ্ছাসেবী সেনাবাহিনীর কোনো যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না এবং বিদ্রোহ প্রতিরোধ যুদ্ধে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। যদিও পুলিশ অসহায়ভাবে কিছু এলাকা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল, অনেক জায়গায় সরকার স্থলবাহিনীর ক্ষমতায় তিনটি পরিষেবার কর্মীদের মোতায়েন করেছিল। রয়্যাল সিলন এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টারগুলি ত্রাণ সামগ্রী বিপজ্জনক পুলিশ স্টেশনগুলিতে পৌঁছে দেয় যখন সম্মিলিত পরিষেবা টহল বিদ্রোহীদের শহর এলাকা থেকে এবং গ্রামাঞ্চলে তাড়িয়ে দেয়। দুই সপ্তাহের লড়াইয়ের পর, সরকার কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া বাকি সব নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। মানবিক এবং রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই, বিজয়ের মূল্য অনেক বেশি ছিল। যুদ্ধে আনুমানিক দশ হাজার বিদ্রোহী মারা গিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই কিশোর বয়সে মারা গিয়েছিল, এবং সেনাবাহিনী অত্যধিক শক্তি ব্যবহার করেছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়েছিল। বিচ্ছিন্ন জনসংখ্যার উপর জয়লাভ করার জন্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত প্রতিরোধ করার জন্য, বন্দরনায়েকে মে এবং জুন ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং শুধুমাত্র শীর্ষ নেতাদেরই কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। উইজেবীরা, যিনি ইতিমধ্যেই বিদ্রোহের সময় আটক ছিলেন, তাকে বিশ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল এবং জেভিপিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

বিদ্রোহের পর ছয় বছরের জরুরি শাসনের অধীনে জেভিপি সুপ্ত ছিল। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির বিজয়ের পর, নতুন সরকার রাজনৈতিক সহনশীলতার সময়কালের সাথে ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছিল। উইজেবীরাকে মুক্ত করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং জেভিপি আইনি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ময়দানে প্রবেশ করেছিল। ১৯৮২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে, উইজেবিরা দুই লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভোট (জয়বর্ধনের ৩.২ মিলিয়নের তুলনায়) নিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিলেন। এই সময়কালে, এবং বিশেষ করে উত্তরে তামিল বিরোধ আরও তীব্র হয়ে উঠলে, জেভিপি-এর মতাদর্শ ও লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। প্রাথমিকভাবে মার্কসবাদী এবং তামিল এবং সিংহলী উভয় সম্প্রদায়ের নিপীড়িতদের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করে, এই দলটি তামিল বিদ্রোহের সাথে যেকোন আপসের বিরোধিতা করে একটি সিংহলী জাতীয়তাবাদী সংগঠন হিসাবে ক্রমবর্ধমানভাবে আবির্ভূত হয়। এই নতুন অভিযোজনটি ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ের তামিল-বিরোধী দাঙ্গায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সহিংসতা উসকে দেওয়ার ভূমিকার কারণে জেভিপিকে আবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এর নেতৃত্ব আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল।

ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গ্রুপটির কার্যক্রম তীব্রতর হয়। ভারতীয় সৈন্যদের উপস্থিতির সাথে উত্তরে তামিল স্বায়ত্তশাসনের সম্ভাবনা সিংহলি জাতীয়তাবাদের একটি তরঙ্গ এবং হঠাৎ করে সরকারবিরোধী সহিংসতার বৃদ্ধি ঘটায়। ১৯৮৭-এর সময় একটি নতুন গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে যেটি ছিল জেভিপি-এর একটি শাখা- দেশপ্রেমিক মুক্তি সংস্থা (দেশপ্রেমী জনতা বিয়াপাড়ায়া-ডিজেভি)। ডিজেভি ১৯৮৭ সালের আগস্টে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার দায় স্বীকার করে। এছাড়াও, দলটি ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর প্রচারণা চালায় এবং জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৭০টিরও বেশি সংসদ সদস্যকে হত্যা করে।

দলটির নতুন করে সহিংসতার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর অনুপ্রবেশের নতুন করে ভয় দেখা দিয়েছিল। ১৯৮৭ সালের মে মাসে পাল্লেকেলে সেনা ক্যাম্পে সফল অভিযানের পর, সরকার একটি তদন্ত পরিচালনা করে যার ফলে জেভিপি-এর সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে ৩৭ জন সৈন্যকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য, সরকার ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে জেভিপি-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করে এবং দলটিকে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। উইজেবীরাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা সত্ত্বেও, জেভিপি-এর সেই সময়ে কোন সুস্পষ্ট নেতৃত্ব ছিল না, এবং এটি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বা রাজনৈতিক কোনো সমন্বিত আক্রমণ চালানোর সংহতি ছিল কিনা তা অনিশ্চিত ছিল।

প্রজাতন্ত্র

শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ২২ মে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের মধ্যে, ভোটাররা বন্দরনায়েকের সমাজতান্ত্রিক নীতিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং নির্বাচন ইউএনপিকে জুনিয়াস জয়বর্ধনের অধীনে ক্ষমতায় ফিরিয়ে দেয়, একটি ইশতেহারে একটি বাজার অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি এবং "মুক্ত রেশন হল ৮ সিয়ার (কিলোগ্রাম) খাদ্যশস্য"। এসএলএফপি এবং বামপন্থী দলগুলি কার্যত সংসদে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, যদিও তারা ভোটের ৪০% অর্জন করেছিল। তামিল ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট বিরোধী দল হিসাবে অ্যাপাপিল্লাই অমিরথালিঙ্গমের নেতৃত্বে আবির্ভূত হয়। এটি শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক জাতিগত বিভাজন তৈরি করেছে।

ক্ষমতায় আসার পর জয়বর্ধনে সংবিধান পুনর্লিখনের নির্দেশ দেন। যে দলিলটি পুনর্লিখিত হয়েছিল সেই ১৯৭৮ সালের নতুন সংবিধান শ্রীলঙ্কায় শাসনের প্রকৃতিকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছে। এটি পূর্ববর্তী ওয়েস্টমিনস্টার শৈলীর সংসদীয় সরকারকে একটি শক্তিশালী প্রধান নির্বাহী দিয়ে ফ্রান্সের অনুকরণে একটি নতুন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সাথে প্রতিস্থাপন করেছে। রাষ্ট্রপতিকে ছয় বছরের মেয়াদের জন্য সরাসরি ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে এবং সংসদীয় অনুমোদনের সাথে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। জয়বর্ধনে নতুন সংবিধানের অধীনে প্রথম রাষ্ট্রপতি হন এবং সরকারী দলের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

নতুন শাসন এমন এক যুগের সূচনা করে যেটি এসএলএফপি-এর জন্য ভালো ছিল না। জয়বর্ধনের ইউএনপি সরকার ১৯৭০ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৮০ সালের অক্টোবরে, বন্দরনায়েকের রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিশেষাধিকার সাত বছরের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এবং এসএলএফপি একজন নতুন নেতা খুঁজতে বাধ্য হয়েছিল। দীর্ঘ ও বিভক্ত লড়াইয়ের পর দল তার ছেলে অনুরাকে বেছে নেয়। অনুরা বন্দরনায়েকে শীঘ্রই তার পিতার উত্তরাধিকারের রক্ষকের ভূমিকায় নিযুক্ত হন, কিন্তু তিনি একটি রাজনৈতিক দল উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন যেটি দলাদলির দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং সংসদে একটি ন্যূনতম ভূমিকায় নেমে আসে।

১৯৭৮ সালের সংবিধানে তামিল সংবেদনশীলতার জন্য যথেষ্ট ছাড় দেওয়া হয়েছিল। যদিও টিইউএলএফ সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেনি, তবুও তামিল সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনার আশায় সংসদে বসতে থাকে। টিইউএলএফ দ্বীপের জাতিগত সমস্যা সমাধানের জন্য জয়বর্ধনের একটি সর্বদলীয় সম্মেলনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। জয়বর্ধনের ইউএনপি শান্তি রক্ষার জন্য অন্যান্য ছাড় দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা জুড়ে সিংহলা সরকারী ভাষা এবং প্রশাসনের ভাষা রয়ে গেছে, কিন্তু তামিলকে একটি নতুন "জাতীয় ভাষা" মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক এবং শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে তামিল ব্যবহার করা হত। জয়বর্ধনে যুক্তফ্রন্ট সরকারের "প্রমিতকরণ" নীতি বাতিল করে একটি বড় তামিল অভিযোগও দূর করেছিলেন, যা তামিলদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মানদণ্ডকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। এছাড়াও, তিনি তামিল বেসামরিক কর্মচারীদের বিচার মন্ত্রী সহ অনেক শীর্ষ-স্তরের পদ গ্রহণের প্রস্তাব করেছিলেন।

টিইউএলএফ, ইউএনপি-র সাথে একত্রিত হয়ে সর্বদলীয় সম্মেলনের জন্য চাপ দিলে, তামিল টাইগাররা তাদের সন্ত্রাসী হামলা বাড়িয়েছিল যা তামিলদের বিরুদ্ধে সিংহলিদের প্রতিক্রিয়াকে উস্কে দিয়েছিল। জাফনা পুলিশ ইন্সপেক্টরের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় জয়বর্ধন সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং সৈন্য প্রেরণ করে, যাদের সন্ত্রাসী হুমকি নির্মূল করার জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল।

সরকার ১৯৭৯ সালে সন্ত্রাস প্রতিরোধ (অস্থায়ী বিধান) আইন পাস করে। আইনটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে প্রণীত হয়েছিল, কিন্তু পরে এটি স্থায়ী আইনে পরিণত হয়। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই কাজটিকে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে নিন্দা করেছে। এ আইন হওয়ার পরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। গেরিলারা উচ্চ লক্ষ্যবস্তু যেমন পোস্ট অফিস এবং পুলিশ ফাঁড়ির লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে শুরু করে এবং সরকারি পাল্টা আক্রমণকে উস্কে দেয়। যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বেসামরিক লোক ধরা পড়লে, গেরিলাদের ডাকা শুরু হলে "ছেলেদের" প্রতি তামিল সমর্থন প্রসারিত হয়। অন্যান্য বৃহৎ সুসজ্জিত গোষ্ঠীগুলি এলটিটিই-এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শুরু করে। অধিক পরিচিতদের মধ্যে রয়েছে তামিল ইলমের পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন, তামিল ইলম লিবারেশন আর্মি এবং তামিল ইলম লিবারেশন অর্গানাইজেশন। এই দলগুলোর প্রত্যেকেরই হাজার হাজার না হলেও শত শত লোকের সুসজ্জিত বাহিনী ছিল। সরকার দাবি করেছে যে অনেক সন্ত্রাসী ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রশিক্ষণ শিবির থেকে কাজ করছিল। ভারত সরকার বারবার এই দাবি অস্বীকার করেছে। সহিংসতার মাত্রা বাড়তে থাকায়, আলোচনার সম্ভাবনা ক্রমশ দূরবর্তী হয়ে উঠেছিল।

আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

জুলাই ১৯৮৩ সালে, তামিল টাইগাররা ভোটার তালিকা ব্যবহার করে ১৩ জন শ্রীলঙ্কার সেনা সৈন্যকে অতর্কিত আক্রমণ এবং হত্যা করার কারণে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, যাতে তামিলদের সঠিক ঠিকানা ছিল। তামিল সম্প্রদায় সিংহলি দাঙ্গাবাজদের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে দোকান, বাড়িঘর ধ্বংস করা, বর্বর মারধর এবং জাফনা লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেওয়া।[৫২] দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কয়েকজন সিংহলী তামিল প্রতিবেশীদের তাদের বাড়িতে রেখেছিল। এই দাঙ্গার সময় সরকার জনতা নিয়ন্ত্রণে কিছুই করেনি। রক্ষণশীল সরকার অনুমান করে মৃতের সংখ্যা ৪০০[৫৩], যখন প্রকৃত মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩,০০০ বলে মনে করা হয়।[৫৪] এছাড়াও প্রায় ১৮,০০০ তামিল বাড়ি এবং আরও ৫,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, দেড় লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছে যার ফলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যে এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশে অনেক তামিল লোক প্রবাসী হয়েছে।

১৭ নভেম্বর ২০০৫-এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মহিন্দ রাজাপক্ষ রনিল বিক্রমাসিংহকে মাত্র ১,৮০,০০০ ভোটে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি বিক্রমনায়েককে প্রধানমন্ত্রী এবং মঙ্গল সামারাবিরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এলটিটিই-এর সাথে আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় এবং একটি কম তীব্রতার সংঘাত শুরু হয়। ফেব্রুয়ারিতে আলোচনার পর সহিংসতা বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু এপ্রিলে আবার বৃদ্ধি পায় এবং ২০০৯ সালের মে মাসে এলটিটিই-এর সামরিক পরাজয়ের আগ পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।

শ্রীলঙ্কা সরকার ১৮ মে ২০০৯-এ সম্পূর্ণ বিজয় ঘোষণা করে। ১৯ মে ২০০৯-এ, জেনারেল সারাথ ফনসেকার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এলটিটিই-র বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে ২৬ বছরের অভিযান শেষ করে এবং সামরিক বাহিনী উত্তরের সমস্ত অবশিষ্ট এলটিটিই নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে। কিলিনোচ্চি (২ জানুয়ারী), এলিফ্যান্ট পাস (৯ জানুয়ারী) এবং শেষ পর্যন্ত পুরো মুল্লাইটিভু জেলা সহ প্রদেশ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা সফল হয়।

২২ মে ২০০৯-এ, শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব গোতাবায়া রাজাপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে জুলাই ২০০৬ থেকে ইলম যুদ্ধের চতুর্থ সময়ে শ্রীলঙ্কার সশস্ত্র বাহিনীর ৬,২৬১ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২৯,৫৫১ জন আহত হয়েছেন। ব্রিগেডিয়ার উদয়া নানায়াক্কারা যোগ করেছেন যে প্রায় ২২,০০০ যোদ্ধা মারা গিয়েছিল। এ যুদ্ধের ফলে ৮০,০০০-১,০০,০০০ বেসামরিক লোক মারা গেছে।[৫৫] শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে ২০০৯ সালে ইলম যুদ্ধ চতুর্থ পর্বের শেষ মাসগুলিতে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহী লিবারেশন টাইগারস অফ তামিল ইলম (তামিল টাইগার্স) দ্বারা যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে৷ অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধসমূহ হলো :

  1. উভয় পক্ষের দ্বারা বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক ভবনগুলিতে আক্রমণ।
  2. উভয় পক্ষের দ্বারা যোদ্ধা এবং বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড।
  3. শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এবং তাদের দ্বারা সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠীর দ্বারা জোরপূর্বক গুম।
  4. যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের জন্য খাদ্য, ওষুধ এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র ঘাটতি সৃষ্টি করা
  5. তামিল টাইগারদের দ্বারা শিশু নিয়োগ।[৫৬][৫৭]

ইউএনআরওডব্লিউ, হিউম্যান রাইটস ইমপ্যাক্ট লিটিগেশন ক্লিনিক, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং স্থায়ী পিপলস ট্রাইব্যুনাল সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তামিলদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে স্থায়ী গণ ট্রাইব্যুনাল সর্বসম্মতিক্রমে শ্রীলঙ্কাকে তামিল জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে।[৫৮][৫৯][৬০][৬১][৬২][৬৩][৬৪]

দ্বন্দ্ব-পরবর্তী সময়কাল

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সম্পন্ন হয়। মাহিন্দা রাজাপক্ষ ৫৯% ভোট নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হন, জেনারেল সারাথ ফনসেকাকে পরাজিত করেন যিনি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী প্রার্থী ছিলেন। ফনসেকা পরবর্তীকালে গ্রেফতার হন এবং কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হন।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষ বিরোধী দলের সাধারণ প্রার্থী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত হন এবং একই বছর সংসদ নির্বাচনে রনিল বিক্রমাসিংহের দ্বারা রাজাপক্ষর প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়[৬৫][৬৬] এবং এর ফলে ইউএনপি এবং এসএলএফপির মধ্যে ঐক্য সরকার গঠন করা হয়।[৬৭]

ইস্টার সানডে হামলা

২১ এপ্রিল ২০১৯ ইস্টার সানডের দিনে, শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা এবং বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে তিনটি বিলাসবহুল হোটেল, সমন্বিত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী আত্মঘাতী বোমা হামলার একটি সিরিজে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। কমপক্ষে ৪৫ জন বিদেশী নাগরিক, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং আটটি বোমারু বিমান হামলায় মোট ২৬৭ জন নিহত হয় এবং কমপক্ষে ৫০০ জন আহত হয়।[৬৮][৬৯][৭০][৭১][৭২][৭৩][৭৪][৭৫] হামলায় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের আটজনই শ্রীলঙ্কার নাগরিক ন্যাশনাল তৌহীদ জামাআতের সাথে যুক্ত। এটি সন্দেহভাজন বিদেশী সম্পর্কযুক্ত একটি স্থানীয় জঙ্গি ইসলামি গোষ্ঠী, যা পূর্বে বৌদ্ধ ও সুফিদের বিরুদ্ধে হামলার জন্য পরিচিত ছিল।[৭৬][৭৭]

ক্ষমতায় রাজাপক্ষ ভ্রাতৃদ্বয়

শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি, মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ২০১৯ সালে পুনরায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷[৭৮] নভেম্বর ২০১৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রাক্তন যুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষা প্রধান গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন৷ তিনি সিংহলী-বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল এসএলপিপি-এর প্রার্থী এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষর ভাই ছিলেন।[৭৯] ২০২০ সালের আগস্টে সংসদীয় নির্বাচনে রাজাপক্ষ ভাইদের নেতৃত্বে দলটি ব্যাপক বিজয় লাভ করে। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।[৮০]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী