শৈবধর্ম

হিন্দুধর্মের একটি সম্প্রদায়

শৈবধর্ম বা শৈবপন্থ বা শৈব পরম্পরা

শৈবধর্মের একমাত্র ঈশ্বর পরম আরাধ্য জগদীশ্বর ভগবান শিব।

(সংস্কৃত: शैव पंथ) হিন্দুধর্মের প্রধান মূলধারা গৌণশাখা্য গুলি হল বৈষ্ণবধর্ম, শাক্তধর্মস্মার্তধর্ম)। এই ধর্মের অনুগামীদের "শৈব" নামে অভিহিত করা হয়। শৈবধর্মে ঈশ্বরের সর্বচ্চ ্তসত্বাকে শিব নামে অবহিত করে থাকে; এই ধর্মের অনুগামীরা ভগবান শিবকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, প্রলয়কর্তা, সকল বস্তুর প্রকাশ ও ব্রহ্মস্বরূপ হিসেবে পুজার্চ্চনা করেন। ভারত, নেপালশ্রীলঙ্কায় শৈবধর্ম সুপ্রচলিত। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরইন্দোনেশিয়াতেও শৈবধর্মের প্রসার লক্ষিত হয বর্তমানে ISSGT নামক একটি শৈব পরম্পরার সংগঠন ভার্চুয়াল জগতে শৈবধর্মের প্রসার ও প্রচার করছে।়।

শৈবধর্মের প্রাচীন ইতিহাস নিরুপণ করা যায়নি। মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী কুরু বংশের কুল দেবতা ছিলেন ভগবান শিব। আর একারণেই কুরু বংশের একশত কৌরবপঞ্চপান্ডব এবং তাদের পিতৃপুরুষ সকলেই শৈবধর্মের উপাসক ছিলেন। প্রাচীন যুগে বাংলার গৌড়েশ্বর মহারাজ শশাংক ছিলেন শৈবধর্মের উপাসক। তিনি তার নামের প্রথমে পরম শৈব উপাধি ব্যবহার করতেন। আর্যাবর্তে পাশুপত সম্প্রদায় সবচেয়ে প্রাচীন শৈব ধর্মাবলম্বী। এছাড়া প্রাচীন বাংলার সেন বংশীয় রাজারা ছিলেন শৈবধর্মের উপাসক। সেন রাজারা তাদের রাজকার্যের শুরুতে ভগবান শিবের স্তবের প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষন সেন পিতামহ ও পিতৃদেবের শৈবধর্মের প্রতি অনুরাগ ত্যাগ করে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। এর ফলে রাজা লক্ষনকে অনেক দুর্গতি পোহাতে হয়েছিল। শৈবধর্মের সুন্দর নিয়ম নীতি ত্যাগ করে তিনি বৈষ্ণবীয় নিয়ম নীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে রাজকার্যে অমনোযোগী হয়ে পড়েন। তারপর একজন মুসলিম তুর্কি সেনাপতি মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী সৈন্যদলের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে রাজপ্রাসাদের পিছনের দরজা দিয়ে পলায়ন করে সপরিবারে প্রথম রাজধানী নবদ্বীপ (নদীয়া) থেকে নৌকাযোগে দ্বিতীয় রাজধানী পূর্ববঙ্গের মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে চলে আসেন। ধারণা করা হয় পিতামহ ও পিতৃদেবের শৈবধর্ম ত্যাগ করার কারণেই লক্ষন সেনের এরকম দুর্গতির কারণ ছিল। গেভিন ফ্লাডের মতে:

... A theology which elevates Rudra to the status of supreme being, the Lord (Sanskrit: Īśa) who is transcendent yet also has cosmological functions, as does Shiva in later traditions.[১]

তবে অনেকেই এর সাথে একমত নন। এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে, কারণ লক্ষ্মণ সেনের পর তার দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন (১২০৬-২৫) ও কেশব সেন (১২২৫-৩০) কিছুকাল পূর্ব বাংলা শাসন করেন। অবশ্য সেন শাসনের ভাঙন শুরু হয় লক্ষ্মণ সেনের শাসনের শেষে। আর অনেক ঐতিহাসিক গণ ই লক্ষ্মণ সেনের শাসনকার্য পরিচালনার প্রশংসা করে গেছেন।তবে গুপ্তযুগে (৩২০ – ৫০০ খ্রিষ্টাব্দ) পৌরাণিক হিন্দুধর্ম বিকাশলাভ করে। এই সময়ই শৈবধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। ক্রমে পৌরাণিক উপাখ্যানের কথক ও গায়কদের মাধ্যমে এই ধর্ম সমগ্র উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।[২]

প্রধান শাখাসমূহ

শৈব শাখাসমূহ

স্থান, প্রথা ও দর্শন ভেদে শৈবদের ভিন্ন ভিন্ন শাখা রয়েছে।[৩] শৈবধর্মের সুবিশাল ধর্মীয় সাহিত্যে একাধিক দার্শনিক মতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে "অভেদ" (অদ্বৈত), "ভেদ" (দ্বৈত) ও "ভেদাভেদ" (অদ্বৈত ও দ্বৈতের মিশ্রণ) শাখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৪]

শৈব ধর্মগ্রন্থ ও সাহিত্য

শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ্‌ (রচনাকাল: খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ - ২০০ অব্দ)[৫] শৈব দর্শনের প্রাচীনতম গ্রন্থ। এই গ্রন্থেই প্রথম শৈব দর্শন সুসংহতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।[৬] শিব পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, অগ্নি পুরাণবায়ু পুরাণ হল শৈবদের প্রধান পুরাণ গ্রন্থ। এগুলি সবকটিই মহাপুরাণ।[৭] শৈবদের প্রধান উপপুরাণগুলি হল সৌর পুরাণ, শিবধর্ম পুরাণ, শিবধর্মোত্তর পুরাণ, একাম্র পুরাণ, পরাশর পুরাণ, বশিষ্ঠ লিঙ্গ পুরাণবিখ্যাদ পুরাণ[৮]

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  • Bhandarkar, Ramakrishna Gopal (১৯১৩)। Vaisnavism, Śaivism, and Minor Religious Systems। New Delhi: Asian Educational Services। আইএসবিএন 81-206-0122-X  Third AES reprint edition, 1995.
  • Bhattacharyya (Editor), Haridas (১৯৫৬)। The Cultural Heritage of India। Calcutta: The Ramakrishna Mission Institute of Culture।  Four volumes.
  • Chakravarti, Mahadev (১৯৯৪), The Concept of Rudra-Śiva Through The Ages (Second Revised সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0053-2 
  • Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-43878-0 
  • Flood, Gavin (Editor) (২০০৩)। The Blackwell Companion to Hinduism। Malden, MA: Blackwell Publishing Ltd.। আইএসবিএন 1-4051-3251-5 
  • Keay, John (২০০০)। India: A History। New York: Grove Press। আইএসবিএন 0-8021-3797-0 
  • Tattwananda, Swami (১৯৮৪), Vaisnava Sects, Saiva Sects, Mother Worship (First Revised সংস্করণ), Calcutta: Firma KLM Private Ltd. 

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী