শক্তি (১৯৮২-এর চলচ্চিত্র)

হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র

শক্তি (হিন্দি: शक्ति) হিন্দি-ভাষায় নির্মিত ১৯৮২ সালের একটি ভারতীয় অপরাধ-মূলক কাহিনী চলচ্চিত্র। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এই চিত্রটির কাহিনীকার সেলিম–জাভেদ জুটি এবং মুশির-রিয়াজ প্রযোজিত এই ছবিতে দিলীপ কুমার, অমিতাভ বচ্চন, রাখি, স্মিতা পাতিল, এবং অমরেশ পুরী অভিনয় করেছেন। মূল প্লটটি ১৯৭৪ সালের তামিল ছবি থাঙা পথক্কম এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। পর্দায় প্রবীণ অভিনেতা দিলীপ কুমার ও বচ্চনকে একসঙ্গে দেখানোর জন্য প্রথম এবং একমাত্র চলচ্চিত্র হিসাবে 'শক্তি' উল্লেখযোগ্য।[১] ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত এই চিত্রটি সেরা চলচ্চিত্র, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা শব্দ সম্পাদনা এবং দিলীপ কুমার সেরা অভিনেতা সহ মোট চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস জয়লাভ করে।

শক্তি
পোস্টার
পরিচালকরমেশ সিপ্পি
প্রযোজকমুশির আলম
মহাম্মদ রিয়াজ
রচয়িতাসেলিম–জাভেদ
শ্রেষ্ঠাংশেদিলীপ কুমার
অমিতাভ বচ্চন
রাখি
স্মিতা পাতিল
কুলভূষণ খারবান্দা
অমরেশ পুরী
অনিল কাপুর
বিপি সাক্সেনা
সুরকাররাহুল দেব বর্মণ
চিত্রগ্রাহকএস.এম. আনোয়ার
সম্পাদকএম. এস. সিন্ডে
মুক্তি
  • ১ অক্টোবর ১৯৮২ (1982-10-01)
স্থিতিকাল১৬৭ মিনিট
দেশভারত
ভাষাহিন্দি

দিলীপ কুমার এবং অমিতাভ বচ্চন দুজনই সেরা অভিনেতার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তবে অমিতাভ বচ্চন না পেলেও কেবল দিলীপ কুমার এই পুরস্কার লাভ করেন। সিপ্পি বলেছিলেন যে "তাঁর ভূমিকাটি (বচ্চন) নিচু মাত্রার হলেও সুতীব্র ছিল। আমার মনে হয় না মিঃ বচ্চন যেভাবে অভিনয় করেছিলেন অন্য কেউ এই ভূমিকা তেমনভাবে পালন করতে পারতেন। তাঁকে একজন মর্মাহত ও আশাহত ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছিল"।[২]

কাহিনী

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার অশ্বিনী কুমার (দিলীপ কুমার) তার কিশোর নাতি রবি (অনিল কাপুর) কে নিতে রেলস্টেশনে আসেন। রবি সবেমাত্র স্নাতক বি.এ. শেষ করেই ফিরে আসছেন। দাদু তাঁকে তাঁর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রবি তৎক্ষনাত জবাব দেন যে তিনি একজন পুলিশ অফিসার হয়ে তাঁর দাদুর মতোই তাঁর দেশের সেবা করতে চান। কুমার তাঁকে বলেছিলেন যে পুলিশ অফিসার হওয়ার যাত্রা অনেক কঠোর চ্যালেঞ্জ পরিপূর্ণ এবং রবির এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কুমার তাঁর নিজের জীবনের গল্পটি একটি ফ্ল্যাশব্যাকে বর্ণনা শুরু করেন। কুমারের একটি সুখী পরিবার ছিল। রবির ঠাকুমা শীতল এবং পুত্র বিজয় - রবির বাবা। শহরকে অপরাধ মুক্ত করার সময় অশ্বিনী জে.কে. বর্মা (অমরিশ পুরি) নামে এক ভয়ঙ্কর অপরাধীর দলের বিরুদ্ধে সংঘর্যে নামেন। জে.কে. এর আধিপত্যকে হ্রাস করার জন্য তার ডান হাত যশবন্তকে তিনি গ্রেপ্তার করেন। তখন জে.কে. বিষয়টি নিজের হাতে নেয় এবং বিজয়কে অপহরণ করে। অশ্বিনীকে ডেকে জে.কে. একটি চুক্তি করার চেষ্টা করে: বিজয়ের জীবনের বদলে যশবন্তের স্বাধীনতা। গুণী পুলিশ অশ্বিনী ফোনে জানিয়ে দেন যে তাঁর একমাত্র পুত্র মারা গেলেও তিনি আইনের বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। অশ্বিনী জানেন না যে তাঁর কথোপকথন টেপ রেকর্ড করা হচ্ছে। বিজয় যখন টেপ রেকর্ডারে বাবার আওয়াজ শোনেন তখন তিনি বাবার কথা শুনে তাঁর প্রতি বাবার মনোভাব জেনে হতবাক ও ব্যথিত হন।

কোনও সাহায্য আসবে জেনে বিজয় নিজেই তার অপহরণকারীদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। যখন পুরো দলটি বিজয়ের সন্ধান করছে জে.কে.র গ্যাংয়ের আরও এক গুণ্ডা কে.ডি. নারানং (কুলভূষণ খারবান্দা) বিজয়কে খুঁজে পেয়েও অসহায় শিশুটির প্রতি করুণা করে তাকে নিরাপদে পালাতে সহায়তা করে। পুলিশ জে.কে.-এর আস্তানা সনাক্ত করলেও আবিষ্কার করে যে বিজয় নিখোঁজ। বিজয় পালিয়ে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছোন। তবে তিনি আস্তে আস্তে অবশ্যই নিজের বাবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। নারাং এবং জে.কে. পরে পরস্পরের শত্রু হয়ে ওঠে এবং জে.কে. আবিষ্কার করে যে বিজয়ের পালানোর পেছনে নারাং ছিল।

বছর পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিজয় (অমিতাভ বচ্চন) যুবক হয়ে ওঠেন এং তাঁর বাবা ও তাঁর বাবার ভালোবাসার আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। এমন সময়ে বিজয় রাস্তায় চার জন লোক শ্লীলতাহানীর চেষ্টায় উদ্যত রোমা (স্মিতা পাতিল) নামের এক যুবতীকে উদ্ধার করেন। এই মহিলাই রবি'র মা। বিজয় এবং রোমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একটি হোটেলের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার পদের চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় হোটেলের মালিক কে.ডি. নারাং পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি হস্তক্ষেপ করে বিজয়কে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগ করে নেন। বিজয় সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁর জীবন বাঁচিয়েছিল তার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও সামর্থ্যে তিনি কাজ করবেন।

তাদের অবৈধ ব্যবসায় পরস্পরের শত্রু হয়ে ওঠা জে.কে. এবং কেডির মধ্যে জে.কে. তার পথের কাঁটা কে.ডি. কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু বিজয় উপস্থিত হয়ে কে.ডি. কে উদ্ধার করে অচিরেই তার ডান হাত হয়ে ওঠেন। নারাংকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলে ক্ষুব্ধ জে.কে. প্রথমে বিজয়কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা তৈরি করে এবং ঠিক করে তারপরে নারাং ও অশ্বিনীর ব্যবস্থা করা হবে।

বিজয় এবং কে.ডি.-এর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সান্নিধ্য অশ্বিনী জানতে পেরে বিজয়কে তাঁর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। বিজয় রোমার সাথে থাকতে শুরু করেন। শীতল তাঁর ছেলেকে ভুল পথ ছেড়ে ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে রোমা বিজয়কে জানান যে তিনি গর্ভবতী। তাই বিজয় তাঁকে বিয়ে করেন। এক রাতে বিজয় এবং রোমা যখন একটি রেস্তোঁরায় ছিলেন তখন গণপত রাই নামে এক মাতাল রোমার কাছে প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করে। লোকটিকে আসলে যারা ভাড়া করেছিল তারা তাকে ধরে রেস্তোঁরার বাইরে বের করে দেয়। সে সময় একজন লোক রাইকে ছুরিকাঘাত করে। পরের দিন সকালে বিজয় বাড়ি ফিরলে অশ্বিনীর অনুগত অফিসার সুধাকর বিজয়কে পুলিশ হেফাজতে নেয়। ওয়ারেন্টে দাবি করা হয়েছে যে রাইকে বিজয় হত্যা করেছে। তবে অভিযোগটি মিথ্যা হিসাবে নির্ধারিত হলে বিজয়কে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি কে.ডি. র দলে পুরো সময়ের জন্য কাজ করা শুরু করেন।

জে.কে. নারাংয়ের মালামালের ট্রাক চুরি করে। বিজয় ট্রাকটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য নারাংয়ের কাছে একা যাওয়ার অনুরোধ করেন। নারাং রাজি হয়। জে.কে.র লোকদের সাথে তীব্র লড়াইয়ের পরে বিজয় নারাংয়ের ট্রাকটিকে তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তার আগে জে.কে.-কে জানিয়ে আসেন যে তিনি সেই একই ছেলে যাকে স্কুল থেকে অপহরণ করেছিল এবং বছরের পর বছর তিনি তার প্রতিশোধের অপেক্ষায় আছেন। সাংবাদিকরা অশ্বিনীকে প্রশ্ন তোলেন যে তাঁর নিজের ছেলেই কেডির গ্যাংয়ের একজন প্রখ্যাত গ্যাংস্টার। পুলিশ কমিশনার (অশোক কুমার) অশ্বিনীকে কেসটি অগ্রাহ্য করতে বলেন। অশ্বিনী অবশ্য তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন। তার মধ্যে দুর্বৃত্ত গুন্ডাদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে অশ্বিনী পদত্যাগ করবেন বলে জানান। কে.ডি., বিজয় এবং জে.কে. এর বেশিরভাগ গুন্ডা গ্রেপ্তার হলেও জে.কে. পলাতক রয়ে যায়। জে.কে. অশ্বিনীকে খুন করে ঝামেলা দূর করার জন্য অশ্বিনীর কাছে এলে শীতল স্বামীকে রক্ষা করতে গিয়ে জে.কে-র হাতে নিহত হন। বিজয় পুলিশের হেপাজত থেকে পালিয়ে গিয়ে জে.কে.-র মাথার খোঁজ শুরু করেন। বিজয় জানতে পারেন জে.কে. জাল শংসাপত্র ব্যবহার করে ভারত ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে।

বিজয় বিমানবন্দরে পৌঁছে শেষ পর্যন্ত ছদ্মবেশে থাকা জে.কে.কে হত্যা করে তাঁর মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন। অশ্বিনী বিজয়ের সন্ধান পেয়ে সেখানে হাজির হয়ে বিজয়কে পালিয়ে যেতে বারণ করেন। কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা যায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে অশ্বিনী ট্রিগার টেনে পলাতক ছেলের গতি রোধ করতে বিজয়কে মারাত্মকভাবে আহত করেন। অশ্বিনী ছুটে যান আহত ছেলের দিকে। বিজয় তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর বিদায়কালে তাঁর বাবাকে জানান যে তিনি সবসময় তাকে খুব ভালোবাসতেন। বিজয় মারা যান। অশ্বিনী বুঝতে পারেন যে বিজয়কে হত্যা করা একটা মূর্খ ধারণা এবং ট্রিগার টানার আগে কেন তিনি বিষয়টি নিয়ে দু'বার ভাবলেন না। এর পরই তিনি তৎক্ষণাত পুলিশ বাহিনী ছেড়ে দেন।

সেই দৃশ্যটি কাট্ করে যখন বর্তমান দৃশ্যে ফিরে আসে সেখানে দেখা যায় অশ্রুসিক্ত অশ্বিনী রবির কাছে ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন রবি পুলিশ অফিসার হওয়ার সিদ্ধান্তটি এখনও অনুসরণ করতে চান কিনা। রবি হৃদয় বিদারক কাহিনী শুনেও দৃঢ়তার সাথে ইতিবাচক জবাব দেন। কুমার ও রবির মা রোমা রবিকে আশীর্বাদ করেন। তারপর রওনা হওয়ার জন্য রবি একটি ট্রেন ধরেন এবং তার মাধ্যমে ভবিষ্যতে তিনি অফিসার হবেন - এই ইঙ্গিত দিয়ে ছবিটি শেষ হয়।

অভিনয়ে

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী