লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ঈলম

লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম বা এলটিটিই (তামিল: தமிழீழ விடுதலைப் புலிகள், প্রতিবর্ণী. তমিল্ড়ীল্ড় ভ়িটুতালৈপ্ পুলিকল়্); ইংরেজি: Liberation Tigers of Tamil Eelam)বা তামিল টাইগার[৬] শ্রীলঙ্কার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র গেরিলা সংগঠন ছিলো। তারা শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করে উত্তর এবং পূর্বাংশ নিয়ে পৃথক ও স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো যা শ্রীলঙ্কায় তামিল ঈলাম নামে পরিচিত।[৭] এছাড়াও, এলটিটিই তামিল টাইগার্স নামে সর্বসমক্ষে পরিচিত হয়ে আসছিলো। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মে, ১৯৭৬ সালে। এর প্রধান ছিলেন ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ, যিনি ১৮ মে, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সশস্ত্র বাহিনীর সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন।[৮] প্রভাকরণের মৃতদেহ দ্রুত দাহ করে ফেলা হয় এবং সরকারীবাহিনী সেখানে কোন জনসমাগম হতে দেয়নি।

লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম
தமிழீழ விடுதலைப் புலிகள்
নেতাভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ 
অপারেশনের তারিখ৫ মে, ১৯৭৬ - ১৯ মে, ২০০৯
উদ্দেশ্যপৃথক তামিল রাষ্ট্র গঠন
সক্রিয়তার অঞ্চল শ্রীলঙ্কা
 যুক্তরাজ্য
 কানাডা
 যুক্তরাষ্ট্র
 ইউরোপীয় ইউনিয়ন[১]
মতাদর্শতামিল জাতীয়তাবাদ
অবস্থাঅকার্যকর। মে, ২০০৯ সালে সামরিকভাবে পরাজিত।[২]
বার্ষিক রাজস্বসামরিক বাহিনীর কাছে পরাজয়ের পূর্বে $২০০-৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার[৩][৪]
রাজস্বের উৎসদেশত্যাগী তামিলদের কাছ থেকে দান, জোরপূর্বক আদায়[৫] জাহাজ ব্যবসা, অস্ত্র বিক্রয়, এলটিটিই নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে কর আদায়
পতাকা

মানবাধিকার লঙ্ঘন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এলটিটিই'র বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ন্যায় গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে। তারা মানবাধিকারের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করছে না এবং অসহযোগ আন্দোলনের ন্যায় নির্দিষ্ট মানদণ্ডের বিধি-বিধান পালন করছে না যাতে করে মনে হতে পারে যে তারা মুক্তিকামী যোদ্ধা। সেলক্ষ্যে সংগঠনটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[৯][১০][১১][১২] এফবিআই এলটিটিইকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।[১৩] অন্যান্য দেশও এলটিটিইকে একই পর্যায়ে ফেলেছে। অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এলটিটিইকে নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা এবং শিশুদেরকে ব্যবহার করার বিষয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছে।[১৪]

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি অনেকবার সাধারণ জনগণকে লক্ষ্য করে আক্রমণ কার্য্য পরিচালনা করেছে। উল্লেখযোগ্য আক্রমণের মধ্যে রয়েছে অরন্থালয়া গণহত্যা[১৫] অনুরাধাপুরা গণহত্যা,[১৬] কত্তানকুদি মসজিদে গণহত্যা,[১৭] the কেবিথিগোলেয়া গণহত্যা,[১৮] এবং দেহিওয়ালা গাড়ীতে বোমা হামলা অন্যতম।[১৯] অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোমা হামলায়ও অনেক নিরীহ গ্রাহক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।[১৯][২০]

নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ

এলটিটিইতে নারী যোদ্ধাদের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ ও যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন নিয়ে বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তামিল ইলমে নারীদেরকে সর্বদাই দ্বিতীয় সারিতে রাখা হয়েছে। এলটিটিই'র প্রণীত বিভিন্ন লিফলেট ও প্রচার-পুস্তিকায় নারীর সমতাবিধানের কথা তেমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, নারীর স্বাধীনতা অর্জনে জাতীয়তাবাদে আগ্রহ ও জাতিগত সহিংসতা দূরীকরণ ভিন্ন তাদের অধিকার অর্জন করা অসম্ভব।[২১][২২][২৩]

সংগঠনটি শিশুদেরকে নিয়োগ করে শ্রীলঙ্কা সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।[২৪][২৫][২৬] ২০০১ সাল থেকে এলটিটিই ৫,৭৯৪ শিশুকে তাদের র‌্যাংক অনুযায়ী এ কাজ করে।[২৭][২৮] ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের প্রেক্ষাপটে জুলাই, ২০০৩ সালে এলটিটিই কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে তারা শিশু সৈনিকদের সংগঠনে নিয়োগ বন্ধ করবে। কিন্তু ইউনিসেফ[২৯][৩০] এবং হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ[৩১] - উভয় সংস্থাই এ প্রতিশ্রুতিকে বাতিলপূর্বক অভিযুক্ত করেছে যে সুনামিতে আক্রান্ত অনাথ শিশুদেরকে সংগঠনে অংশগ্রহণের জন্যে তারা আরো উদ্বুদ্ধ করছে।[৩২] ১৮ জুন, ২০০৭ তারিখে এলটিটিই আঠারো বছরের কমবয়সী শিশুদেরকে মুক্তি দেয়। কিন্তু ইউনিসেফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, শিশুদেরকে নিয়োগ করা উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। বরঞ্চ, ২০০৭ সালে তারা আরো ৫০৬ শিশুকে নিযুক্ত করেছে।[৩৩]

হত্যাকাণ্ড পরিচালনা

এলটিটিই কর্তৃক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা[৩৪]
পদবীধারীসংখ্যা
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক দলের নেতা১০
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী
সংসদ সদস্য৩৭
স্থানীয় সরকারের সদস্য
প্রদেশিয়া সভার সদস্য২২
রাজনৈতিক দলের সংগঠক১৭
মেয়র

শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ড এলটিটিই কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল।[৩৫] ১ মে, ১৯৯৩ তারিখে অনুষ্ঠিত মে দিবসের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে এলটিটিই’র আত্মঘাতি বোমা হামলায় প্রেমাদাসা নিহত হন।[৩৬]

তামিল নাডুর মাদ্রাজ থেকে ৩০ মাইল দুরে শ্রীপেরুম্বুদুর লোক সভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচার-অভিযান সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে এলটিটিই'র কর্মী ও আত্মঘাতী বোমাবহনকারী থেনমঝি রাজারত্মম ২১ মে, ১৯৯১ সালে হত্যা করেছিলেন।[৩৭] ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৪ সালে থোটালঙ্গা-গ্র্যান্ডপাস এলাকায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সমাবেশে দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণে ব্যাপকসংখ্যক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছিলেন। ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপতি প্রার্থী গামিনি দিসানায়েকে, মন্ত্রী বীরসিংহে মালিমারাচ্চি, জি.এম. প্রেমাচন্দ্রা, ওসি আবেগানাসেকারা, গামিনি বিজেসেকারা প্রমূখ ব্যক্তিত্ব এ আক্রমণের শিকার হন।[৩৮][৩৯]

আকুরেসা এলাকার জুম্মা মসজিদে ২০০৯ সালের ১০ মার্চ তারিখে এলটিটিই'র আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারান। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মাহিন্দা বিজেসেকারা এতে গুরুতর আহত হন।[৪০]

দেশের উত্তর এবং পূর্বাংশে সামরিক বিষয়াদিতে আক্রমণ কার্য্য পরিচালিত হলেও সাধারণ জনগণও তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন অনেকবার। শক্তিশালী ও নিখুঁত আক্রমণ কার্য্য পরিচালনা করে কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ২০০১ সালের এ আক্রমণে অনেকগুলো বাণিজ্যিক বিমান এবং সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি ১৬ ব্যক্তিও নিহত হন।[৪১]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

LTTE web sites
Sri Lanka Government
International organizations
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী