রেণুকা রায়

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক এবং রাজনীতিবিদ

রেণুকা রায় ( ৪ জানুয়ারি ১৯০৪ - ১১ এপ্রিল ১৯৯৭) ছিলেন ভারতের একজন  স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক মতাদর্শে গান্ধীবাদী নেত্রী।[১][২]

রেণুকা রায়
সংসদ সদস্য, লোকসভা
কাজের মেয়াদ
১৯৫৭ – ১৯৬৭
পূর্বসূরীসুরেন্দ্রমোহন ঘোষ
উত্তরসূরীউমা রায়
সংসদীয় এলাকামালদা, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯০৪-০১-০৪)৪ জানুয়ারি ১৯০৪
কলকাতা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি(বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
মৃত্যু১১ এপ্রিল ১৯৯৭(1997-04-11) (বয়স ৯৩)
মালদা পশ্চিমবঙ্গ
জাতীয়তাভারতীয়
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীসত্যেন্দ্রনাথ রায় (বি.১৯২৫)
পিতামাতাসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (পিতা)
চারুলতা মুখোপাধ্যায় (মাতা)
পুরস্কার পদ্মভূষণ (১৯৮৮)

তিনি ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের সংস্কারক নিবারণ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বংশধর এবং আইসিএস সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের এবং স্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলনের উৎসাহী সমাজকর্মী ও নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের (এ আই ডব্লিউ সি'র) সভানেত্রী চারুলতা মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠা কন্যা। [৩]ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রথম এয়ার মার্শাল সুব্রত মুখার্জী (১৯১১-১৯৬০) ছিলেন তার অনুজ।[২] তার অন্য এক অনুজ প্রশান্ত মুখার্জি ছিলেন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কনিষ্ঠ ভগিনী ছিলেন নীতা সেন।

তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণে ভূষিত হন। [৪]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

রেণুকা মুখোপাধ্যায়ের শিক্ষা শুরু লন্ডনের কেসিংটন হাই স্কুলে (১৯১২-১৪) এই সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যনির্বাহক সমিতিতে তিনিই ছিলেন প্রথম একজন ভারতীয়, তার উপর মহিলা। পরে কলকাতায় এসে লরেটো হাউস, ডায়োশেসন স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন (১৯১৪-২০)। [২]

তিনি ষোল বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা বর্জনে কলেজ ছাড়েন এবং অসহযোগ আন্দোলনের যোগ দেন। সাবরমতী আশ্রমের একজন স্বেচ্ছাসেবী হন। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের প্রভাবও তার উপর যথেষ্ট ছিল। পরে তার পিতামাতা গান্ধীজিকে আশ্বস্ত করলে পড়াশোনার জন্য তিনি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে যোগ দেন । [৫] অল্প বয়সেই সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের সাথে তার বিবাহ হয়। [৩] [৬][৬] ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে ইন্ডিয়া সোসাইটি স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্নাতক হন এবং ওই বছরেই আই সি এস  সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের (যিনি পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব হন) সঙ্গে তার বিবাহ হয়। [২]

তার মাতামহ ও মাতামহী ছিলেন সেকালের সবচেয়ে বিশিষ্ট দম্পতি। মাতামহ প্রফেসর পি কে রায় ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি ফিল লাভ করেন এবং ভারতীয় শিক্ষা পরিষেবার সদস্য এবং কলকাতার মর্যাদাপূর্ণ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ ছিলেন। মাতামহী সরলা রায় ছিলেন একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী যিনি নারীমুক্তি এবং গোখলে মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য হওয়া প্রথম ভারতীয় মহিলা। সরলা রায় ছিলেন প্রখ্যাত ব্রাহ্ম সংস্কারক দুর্গামোহন দাসের কন্যা এবং লেডি অবলা বসুর ভগিনী এবং স্বনামধন্য দুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সতীশরঞ্জন দাশ ছিলেন ভ্রাতা এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ খুড়তুতো ভাই।

কর্মজীবন

ভারতে ফিরে, তিনি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্সে যোগ দেন এবং স্পেশাল সেক্রেটারি হিসাবে গান্ধীজির গ্রাম পুনর্গঠন কর্মসূচি অনুসারে কাজ করতে থাকেন। অগণিত মহিলাদের আশা আকাঙ্খার অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। মূল্যবোধ জাগ্রত করতে লড়াই করেছেন।  পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী শক্তি  ও করুণার আলোকবর্তিকা ছিলেন। পিতামাতার সম্পত্তিতে মহিলাদের অধিকার এবং উত্তরাধিকার অধিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের সভানেত্রী হন এবং ১৯৫৩-৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। [৬] ইতিমধ্যে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে  ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন।

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের মহিলাদের প্রতিনিধি হিসাবে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মনোনীত হন। তিনি ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের গণপরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন তিনি । [৩] [৬] ১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দে ইউনাইটেড নেশনস্ জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে দেশের প্রতিনিধি এবং ১৯৪৭-৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রভিশন্যাল পার্লামেন্টের সদস্যা ছিলেন।

তিনি ১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের  ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে  লোকসভার সদস্য ছিলেন এবং এই সময়েই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপদে তিনিই প্রথম বাঙালি মহিলা।[২] ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সমাজকল্যাণ এবং অনগ্রসর শ্রেণীর কল্যাণ সংক্রান্ত একটি কমিটির নেতৃত্ব দেন, যা রেণুকা রায় কমিটি নামে পরিচিত। [৭][৮]

রচিত গ্রন্থ

সমাজকর্মী রেণুকা রায় চা-বাগানে কর্মরত নারী ও কয়লাখনিতে নারীদের অবস্থা নিয়ে চর্চা করে ছোটো ছোটো পুস্তিকা রচনা করেন। ইংরাজীতে রচিত তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি  হল-

  • মাই রেমিনিসেন্সেস: সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিউরিং দ্য গান্ধীয়ান এরা অ্যান্ড আফটার[৫]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী