ম্যারি, স্কটসের রানী (৮ ডিসেম্বর ১৫৪২ - ৮ ফেব্রুয়ারি ১৫৮৭) , ম্যারি স্টুয়ার্ট অথবা স্কটল্যান্ডের প্রথম ম্যারি নামে পরিচিত। তিনি ১৪ ডিসেম্বর ১৫৪২ থেকে ২৪ জুলাই ১৫৬৭ পর্যন্ত স্কটল্যান্ডে রাজত্ব করেন। তিনি স্কটল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জেমস এর একমাত্র জীবিত ও বৈধ সন্তান ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ছয় দিন, তখন তার বাবা মারা যান এবং তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শৈশবের অধিকাংশই ফ্রান্সে কেটেছে। এ সময়ে বিভিন্ন রাজপ্রতিনিধিগণ স্কটল্যান্ডে শাসন করেন। ১৫৫৮ সালে ম্যারি 'ডফিন অফ ফ্রান্স' ফ্রান্সিস কে বিয়ে করেন। স্বামী ফ্রান্সিস ১৫৫৯ সালে সিংহাসনে বসার পর থেকে ১৯৬০ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ম্যারি স্কটল্যান্ডের রানী ছিলেন। স্বামী ফ্রান্সিস মারা যাবার পর তিনি ১৯ আগস্ট ১৫৬১ এ স্কটল্যান্ডে ফিরে যান। এর চার বছর পর তিনি দূর সম্পর্কের আত্মীয় হেনরি স্টুয়ার্ট, লর্ড ডার্নলিকে বিয়ে করেন এবং ১৫৬৬ সালের জুনে পুত্রসন্তান জেমস এর জন্ম দেন।
১৫৬৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডার্নলির বাসস্থানে বিস্ফোরণ ঘটলে তাকে বাগানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ডার্নলির মৃত্যুর জন্য জেমস হেপবার্ন , আর্ল অফ বথওয়েলকে দায়ী মনে করা হলেও একই বছরের এপ্রিলে তাকে বেকসুর খালাস করে দেয়া হয় এবং এর পরের মাসে ম্যারির সাথে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে ম্যারিকে লখ লিভেন ক্যাসলে বন্দী রাখা হয়। ২৪ জুলাই ১৫৬৭ এ ম্যারিকে নিজ পুত্রের কাছে শাসনভার ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। নিজ শাসন পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে তিনি দূর সম্পর্কের আত্মীয় ইংলান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের আশ্রয় চাইতে উত্তরের দিকে যাত্রা করেন। ম্যারি পূর্বে এলিজাবেথের সিংহাসন নিজের জন্য দাবি করেছিলেন এবং সে সময় বহু ইংরেজ ক্যাথলিক তার এ দাবি গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছিলেন। এ ইংরেজ ক্যাথলিকদের মধ্যে অনেকেই "রাইসিং অফ দ্য নর্থ" নামক বিদ্রোহের সাথে যুক্ত ছিলেন। এলিজাবেথ বিশ্বাস ছিল যে ম্যারি তার শাসনের পথে বিরাট বাঁধা এবং এ কারণে ম্যারিকে তিনি ইংল্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ ও জমিদার বাড়িতে বন্দী করে রাখেন। দীর্ঘ সাড়ে ১৮ বছর বন্দী থাকার পর ১৫৮৬ সালে তাকে এলিজাবেথকে হত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং পরবর্তী বছর ফোদারিংহে ক্যাসলে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।
শৈশব ও রাজত্ব
১৫৪২ সালের ৮ ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের লিনলিথগো প্যালেসে রাজা পঞ্চম জেমস ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফরাসি ম্যারি অফ গিস এর ঘরে ম্যারি জন্মগ্রহণ করেন। ধারণা করা হয় তার জন্ম নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে হয় এবং তিনি জেমস এর একমাত্র জীবিত ও বৈধ সন্তান। তার দাদী ছিলেন ইংল্যান্ডের অষ্টম হেনরির বোন মার্গারেট তুদর। সেই সূত্রে তিনি অষ্টম হেনরির আত্মীয়। জন্মের ছয় দিন পর ১৪ ডিসেম্বর পিতা জেমস এর মৃত্যু হলে তিনি সিংহাসনে বসেন। ধারণা করা হয়,সম্ভবত সলওয়ে যুদ্ধের পরিণামে স্নায়বিক দুর্বলতা অথবা অভিযানে দূষিত পানি পান তার মৃত্যুর কারণ ছিল।
জন নক্স লেখেন যে, মৃত্যুশয্যায় জেমস তার্কযান্যার জন্মের খবর শুনার পর বলেন যে,""It cam wi' a lass and it will gang wi' a lass!" রবার্ট দ্য ব্রুসের কন্যা মারজোরি ব্রুসের সাথে ওয়াল্টার স্টুয়ার্ট,স্কটল্যান্ডের ষষ্ঠ উচ্চ স্ট্যুঅর্ড এর বিবাহসূত্রে স্টুয়ার্ট বংশ সিংহাসনে বসে। জেমস তার এ উক্তি দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, তার বংশের রাজত্বের শুরু একজন মহিলার মাধ্যমে এবং এর শেষও হবে একজন মহিলার মাধ্যমে। তার এ বিখ্যাত উক্তি পরে সত্য হয় ,তবে ম্যারির মাধ্যমে নয়,বরং তার উত্তরসূরি গ্রেট ব্রিটেনের রানি আন এর মাধ্যমে।
ম্যারির জন্মের পর সেন্ট মাইকেল এর চার্চে তাকে খ্রিষ্টধ্রমে দীক্ষিত করা হয়। গুজব ছড়ায় যে ম্যারি অনেক দুর্বল ও নিস্তেজ ছিলেন,তবে রাল্ফ স্যাডলার নামক এক ইংরেজ কূটনীতিক ১৫৪৩ সালের মার্চে লিনলিথগো প্যালেসে শিশু ম্যারিকে দেখতে যান এবং তিনি বলেন যে,ম্যারি আমার দেখা এ বয়সের অন্য যে কোন শিশুর মতই সুস্থ এবং সে দীর্ঘজীবী হবে। শাসনভার গ্রহণের সময় ম্যারি নেহাত শিশু ছিলেন বিধায় তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজপ্রতিনিধিগণ তার স্থলে রাজ্য শাসন করেন।শুরু থেকেই রাজপ্রতিনিধি পদের প্রতি দুই পক্ষের দাবি ছিলঃ এক পক্ষ হল ক্যাথলিক কার্ডিনাল বীটন এবং অপরটি প্রোটেস্টান আর্ল অফ আরান। বীটন বলেন যে রাজা জেমস এর অসিয়তনামা অনুসারে রাজপ্রতিনিধি পদ তারই প্রাপ্য। কিন্তু বীটনের বিরোধীদের মতে, এ অসিয়তনামাটি নকল এবং তারা বীটনের দাবি নাকচ করে দেন। ১৫৫৪ সালে ম্যারির মা কর্তৃক অপসারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আরান রাজপ্রতিনিধি পদে নিয়োজিত ছিলেন।