মুসা বিন মৈমুন

মধ্যযুগীয় দার্শনিক

মুসা বিন মৈমুন (আরবি: موسى بن ميمون, প্রতিবর্ণীকৃত: Mūsā bin Maymūn, হিব্রু ভাষায়: מֹשֶׁה בֶּן־מַיְמוּן‎, Mōšeh ben-Maymūn, গ্রিক: Μωυσής Μαϊμωνίδης, Mōusḗs Maïmōnídēs, লাতিন: Moses Maimonides; ১১৩৮ – ১২০৪), ছিলেন একজন মধ্যযুগীয় সিফার্দি ইহুদি দার্শনিক যিনি মধ্যযুগের অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং প্রভাবশালী তোরাহ পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর সময়ে তিনি একজন প্রধান জ্যোতির্বিদ ও চিকিৎসকও ছিলেন এবং সালাহউদ্দিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেছিলেন।[৮][৯][১০][১১][১২]

মুসা বিন মৈমুন
মোশি বেন মৈমুন
মৈমুনের একটি দূরকল্পনামূলক ১৮শ শতকীয় চিত্রাঙ্কন
জন্ম৩০ মার্চ[১] বা ৬ এপ্রিল[২] ১১৩৫
সম্ভবত জন্ম ২৮ মার্চ বা ৪ এপ্রিল[৩] ১১৩৮
মৃত্যু১২ ডিসেম্বর ১২০৪
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মিশনাহ তোরাহ
দলালত আল-হাইরীন
দাম্পত্য সঙ্গী১. নথনেল বারুখের কন্যা
২. মীশায়েল হালেবির কন্যা
যুগমধ্যযুগীয় দর্শন
অঞ্চলমিশর
ধারাএরিস্টটলবাদ
প্রধান আগ্রহ
ধর্মীয় আইন, হালাখা
উল্লেখযোগ্য অবদান
মৈমুনের শপথ, মৈমুনের কানুন, সোনালি মধ্যক, বিশ্বাসের ১৩ নীতিমালা
ভাবশিষ্য
স্বাক্ষর

নাম

তিনি সাধারণত মাইমোনিডিজ (/mˈmɒnɪdz/ my-MON-i-deez) এবং আদ্যক্ষরা রম্বম (হিব্রু ভাষায়: רמב״ם‎)[note ১] নামেও পরিচিত।

জীবনী

তিনি ১১৩৩ বা ১১৩৩ খ্রীষ্টাব্দে তারণোৎসবের প্রাক্কালে মুরাবিতীয় সাম্রাজ্যের কর্দোবায় জন্মগ্রহণ করেন[১৩][১৪][১৫][১৬][১৭] এবং মরক্কোমিশরে একজন রব্বি, চিকিৎসক এবং দার্শনিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর মরদেহ নিম্ন গালীলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে তিবিরিয়ায় দাফন করা হয়েছিল।[১৮][১৯]

তাঁর জীবদ্দশায়, বেশিরভাগ ইহুদিরা এমনকি ইরাকইয়েমেন পর্যন্ত ইহুদি আইন ও নীতিশাস্ত্র সম্পর্কে মৈমুনের লেখাগুলি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্বাগত জানিয়েছিল। আলমোহাদ অঞ্চল থেকে অবাধে পালানোর জন্য মায়মোনাইডস নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । তারপর তিনি লেভান্ট বা মিশরে ইহুদি ধর্মে ফিরে আসেন।[২০] পরে ধর্মত্যাগী হিসেবে তার নিন্দা করা হয় এবং ইসলামী আদালতে তার বিচার করা হয়। কিন্তু বিচারক রায় দেন যে তার ধর্মান্তর জোরপূর্বক ছিল সেজন্য তা অবৈধ। [২১] মৈমুন যখন মিশরে ইহুদি সম্প্রদায়ের সম্মানিত প্রধান হয়ে উঠলেন, তাঁর লেখাগুলিতে বিশেষত স্পেনের কৌতুক সমালোচনাও ছিল।

বিশ্বাসের ১৩ মূলনীতি

বিশ্বাসের ১৩ মূলনীতি:

  1. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা ও শাসক; তিনি একাই মহাবিশ্বের সবকিছু তৈরি করেছিলেন, করেন ও করবেন।
  2. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—এক; এবং তাঁর একত্বের মতো কোনোরূপ একত্ব নেই; এবং শুধু তিনিই আমাদের ঈশ্বর, যিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন৷
  3. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—নিরাকার; এবং তিনি সমস্ত বস্তুগত বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত; এবং তাঁর সঙ্গে কোনোকিছুর তুলনা হতে পারে না।
  4. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—প্রথম ও শেষ।
  5. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—একাই উপাসনার যোগ্য, এবং অন্য কোনো সত্তা আমাদের উপাসনার যোগ্য নয়।
  6. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, নবীদের সব কথাই সত্য।
  7. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের রব্বি মোশির (মুসা)—তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক—নবুয়ত সত্য ছিল; এবং তিনি ছিলেন তাঁর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নবীদের মধ্যে প্রধান।
  8. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সমগ্র তোরাহ যা এখন আমাদের কাছে আছে তা অবিকৃত ও একই রয়েছে যেভাবে আমাদের রব্বি মোশির—তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক—প্রতি নাজিল হয়েছিল।
  9. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই তোরাহের কোনো পরিবর্তন হবে না, এবং সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—অন্য কোনো তোরাহ [বা নিয়ম] প্রদান করবেন না।
  10. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—মানুষের সকল কাজ ও চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অবগত, যেমন বলা হয়েছে: “তিনিই দান করেন তাদের চিন্তাশক্তি, লক্ষ্য করেন তাদের সকল কার্যকলাপ (গীতসংহিতা ৩৩:১৫)।”
  11. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তাঁর নাম—যারা তাঁর আদেশ পালন করে তাদের পুরস্কৃত করেন এবং যারা আদেশ লঙ্ঘন করে তাদের শাস্তি দেন।
  12. আমি মশীহের আগমনে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; এবং যদিও তাঁর আসতে দেরি হতে পারে, আমি প্রতিদিন তাঁর আগমনের প্রতীক্ষা করি।
  13. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এক সময় মৃতদের পুনরুত্থান ঘটবে যখন সেই সময়কাল সৃষ্টিকর্তাকে—ধন্য তাঁর নাম—খুশি করবে, এবং তাঁর স্মরণ চিরকালের জন্য উন্নীত হবে।

— মুসা বিন মৈমুন[২২][২৩]

আইনশাস্ত্রীয় কাজ

তাঁর চৌদ্দ খণ্ডের মিশনাহ তৌরাত এখনও তালমুদীয় আইনের কোডিং হিসাবে উল্লেখযোগ্য নীতিগত কর্তৃত্ব বহন করে।

দর্শন

প্রভাব

মৌখিক তাওরাহের একমাত্র সুস্পষ্ট প্রকাশক হিসাবে তাঁর অসামান্য মর্যাদাকে স্বীকৃতি হিসাবে তিনি কখনও কখনও “হা’নেশর হা’গাদোল" (মহান ঈগল) নামে পরিচিত হন।[২৪]

ইহুদি ঐতিহাসিকদের দ্বারা সম্মানিত হওয়া ছাড়াও মৈমুন ইসলামি ও আরব বিজ্ঞানের ইতিহাসেও অত্যন্ত বিশিষ্টভাবে চিত্রিত করা হয় এবং অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও এর উল্লেখ রয়েছে। আল ফারাবী, ইবনে সিনা এবং তাঁর সমসাময়িক ইবনে রুশদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি ইহুদিইসলামি উভয় দুনিয়ায় বিশিষ্ট দার্শনিক ও বহুবিদ্যাবিশারদ হয়ে উঠেছিলেন।

শ্রদ্ধা ও স্মারক

স্পেনের সমালোচনা করা সত্ত্বেও ইহুদি ইতিহাসের সর্বাধিক রব্বীয় পোসেক এবং দার্শনিকদের মধ্যে তাঁকে মরণোত্তর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর প্রচলিত রচনাটি ইহুদি পণ্ডিতের এক ভিত্তি সমন্বিত।

রচনাকর্ম ও গ্রন্থতালিকা

আলমোহাদ বংশের শাসনকালে মায়মোনাইডস ইবেরিয়ান উপদ্বীপে ইহুদি সংস্কৃতির স্বর্ণযুগে ধর্মভ্রষ্টতার উপর তার পত্র লিখেছিলেন। যেখানে তিনি ইহুদিদের গুরুতর অবস্থায় ইসলামে ধর্মান্তরকে সমর্থন করেন। যদিও তিনি এর পরিবর্তে দেশ ছাড়াকে সঠিক বলেছিলেন।[২৫]

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

অধিকতর পাঠ

  • Barzel, Uriel (১৯৯২)। Maimonides's Medical Writings: The Art of Cure Extracts5। Galen: Maimonides Research Institute। 
  • Bos, Gerrit (২০০২)। Maimonides. On Asthma (vol.1, vol.2)। Provo, Utah: Brigham Young University Press। 
  • Bos, Gerrit (২০০৭)। Maimonides. Medical Aphorisms Treatise 1–5 (6–9, 10–15, 16–21, 22–25)। Provo, Utah: Brigham Young University Press। 
  • Davidson, Herbert A. (২০০৫)। Moses Maimonides: The Man and his Works। Oxford University Press। 
  • Feldman, Rabbi Yaakov (২০০৮)। Shemonah Perakim: The Eight Chapters of the Rambam। Targum Press। 
  • Fox, Marvin (১৯৯০)। Interpreting Maimonides। Univ. of Chicago Press। 
  • Guttman, Julius (১৯৬৪)। David Silverman, সম্পাদক। Philosophies of Judaism। Philadelphia: Jewish Publication Society of America। 
  • Halbertal, Moshe (২০১৩)। Maimonides: Life and Thought। Princeton University Press। 
  • Hart Green, Kenneth (২০১৩)। Leo Strauss on Maimonides: The Complete Writings। Chicago: University of Chicago Press। 
  • Hartman, David (১৯৭৬)। Maimonides: Torah and Philosophic Quest । Philadelphia: Jewish Publication Society of America। 
  • Heschel, Abraham Joshua (১৯৮২)। Maimonides: The Life and Times of a Medieval Jewish Thinker। New York: Farrar Strauss। 
  • Husik, Isaac (২০০২) [1941]। A History of Jewish Philosophy। Dover Publications, Inc.।  Originally published by the Jewish Publication of America, Philadelphia.
  • Kaplan, Aryeh (১৯৯৪)। "Maimonides Principles: The Fundamentals of Jewish Faith"। The Aryeh Kaplan AnthologyI 
  • Kellner, Menachem (১৯৮৬)। Dogma in Medieval Jewish Thought । London: Oxford University press। 
  • Kohler, George Y. (২০১২)। "Reading Maimonides's Philosophy in 19th Century Germany"। Amsterdam Studies in Jewish Philosophy15 
  • Kraemer, Joel L. (২০০৮)। Maimonides: The Life and World of One of Civilization's Greatest Minds। Doubleday। 
  • Leaman, Daniel H.; Leaman, Frank; Leaman, Oliver (২০০৩)। History of Jewish Philosophy (Second সংস্করণ)। London and New York: Routledge।  See especially chapters 10 through 15.
  • Maimonides (১৯৬৩)। Suessmann Muntner, সম্পাদক। Moshe Ben Maimon (Maimonides) Medical Works (হিব্রু ভাষায়)। Moshe Ibn Tibbon কর্তৃক অনূদিত। Jerusalem: Mossad Harav Kook। ওসিএলসি 729184001 
  • Maimonides (১৯৬৭)। Mishnah, with Maimonides' Commentary (হিব্রু ভাষায়)। 3। Yosef Qafih কর্তৃক অনূদিত। Jerusalem: Mossad Harav Kook। ওসিএলসি 741081810 
  • Rosner, Fred (১৯৮৪–১৯৯৪)। Maimonides's Medical Writings। 7 Vols। Maimonides Research Institute।  (Volume 5 translated by Uriel Barzel; foreword by Fred Rosner.)
  • Seidenberg, David (২০০৫)। "Maimonides – His Thought Related to Ecology"The Encyclopedia of Religion and Nature 
  • Shapiro, Marc B. (১৯৯৩)। "Maimonides Thirteen Principles: The Last Word in Jewish Theology?"। The Torah U-Maddah Journal4 
  • Shapiro, Marc B. (২০০৮)। Studies in Maimonides and His Interpreters। Scranton (PA): University of Scranton Press। 
  • Sirat, Colette (১৯৮৫)। A History of Jewish Philosophy in the Middle Ages। Cambridge: Cambridge University Press।  See chapters 5 through 8.
  • Strauss, Leo (১৯৭৪)। Shlomo Pines, সম্পাদক। How to Begin to Study the Guide: The Guide of the Perplexed – Maimonides (আরবি ভাষায়)। 1। University of Chicago Press। 
  • Strauss, Leo (১৯৮৮)। Persecution and the Art of Writing । University of Chicago Press।  reprint
  • Stroumsa, Sarah (২০০৯)। Maimonides in His World: Portrait of a Mediterranean Thinker। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-0-691-13763-6 
  • Telushkin, Joseph (২০০৬)। A Code of Jewish Ethics। 1 (You Shall Be Holy)। New York: Bell Tower। ওসিএলসি 460444264 
  • Twersky, Isadore (১৯৭২)। I Twersky, সম্পাদক। A Maimonides Reader। New York: Behrman House। 
  • Twersky, Isador (১৯৮০)। "Introduction to the Code of Maimonides (Mishneh Torah"। Yale Judaica Series। New Haven and London। XII 

বহিঃসংযোগ

মৈমুন সম্পর্কিত
মৈমুনের রচনাকর্ম
মৈমুনের পাঠ্যাংশ
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী