মালা সেন

ভারতীয় লেখক

মালা সেন (৩রা জুন ১৯৪৭ - ২১শে মে ২০১১) ছিলেন একজন বাঙালি - ভারতীয় - ব্রিটিশ লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী। একজন কর্মী হিসাবে, তিনি ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে লন্ডনে নাগরিক অধিকারের সক্রিয়তা এবং জাতিগত সম্পর্ক কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন, তিনি এই কাজে ব্রিটিশ এশিয়ান এবং ব্রিটিশ ব্ল্যাক প্যান্থার্স আন্দোলনের অংশ ছিলেন।[১] পরে ভারতে তাঁর নারী অধিকার সক্রিয়তার জন্যও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। একজন লেখক হিসাবে, তিনি তাঁর বই ইণ্ডিয়া'স ব্যাণ্ডিট কুইন: দ্য ট্রু স্টোরি অফ ফুলন দেবী -র জন্য পরিচিত ছিলেন, এই গল্প থেকে ১৯৯৪ সালের প্রশংসিত চলচ্চিত্র ব্যান্ডিট কুইন তৈরি হয়েছিল। গ্রামীণ ভারতে মহিলাদের নিপীড়ন নিয়ে গবেষণা করার পর, তিনি ২০০১ সালে ডেথ বাই ফায়ার প্রকাশ করেন।[২][৩]

মালা সেন
চিত্র:Mala Sen 1947 2011.jpg
জন্ম(১৯৪৭-০৬-০৩)৩ জুন ১৯৪৭
মুসৌরি, ইউনাইটেড প্রভিন্স, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২১ মে ২০১১(2011-05-21) (বয়স ৬৩)
জাতীয়তাভারতীয়-ব্রিটিশ
অন্যান্য নামমালা ধোণ্ডি
শিক্ষাওয়েলহাম গার্লস' স্কুল
পেশালেখক, মানবাধিকার কর্মী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
ইণ্ডিয়া'স ব্যাণ্ডিট কুইন: দ্য ট্রি স্টোরি অফ ফুলন দেবী (১৯৯১);
ডেথ বাই ফায়ার: সতী, ডাউরি ডেথ অ্যাণ্ড ফিমেল ইনফ্যান্টিসাইড ইন মডার্ন ইণ্ডিয়া (২০০১)
দাম্পত্য সঙ্গীফারুখ ধোণ্ডি (বিবাহ ১৯৬৮; বিচ্ছেদ ১৯৭৬)

জীবনী

প্রারম্ভিক বছর

মালা সেন ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন, উত্তরাখণ্ডের মুসৌরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল লিওনেল প্রতীপ সেন এবং কল্যাণী গুপ্তার কন্যা। ১৯৫৩ সালে তাঁর পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদের পরে, তিনি বাবার কাছে বড় হয়ে ওঠেন।[৪] তিনি বাঙালির ঐতিহ্য ছিলেন।[৫] দেরাদুনের ওয়েলহাম গার্লস' স্কুলে পড়ার পর, তিনি মুম্বাইয়ের নির্মলা নিকেতন কলেজে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন।[২][৩] ১৯৬৫ সালে তিনি ফারুখ ধোণ্ডির সাথে ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান, ফারুখ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৃত্তি পেয়েছিলেন। তাঁরা ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়, যদিও তাঁরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।[২][৩]

লন্ডনে সক্রিয়তা

ইংল্যান্ডে আসার পর, মালা সেন খরচ চালানোয় সাহায্য করার জন্য একজন মহিলা দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন।[২] তিনি জাতি সম্পর্কের প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে আগ্রহ নিতে থাকেন। তিনি লিসেস্টারে ভারতীয় কারখানার শ্রমিকদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন।[২] তিনি রেস টুডে জার্নালে রিপোর্ট করেছেন লন্ডনের ইস্ট এন্ডে বাংলাদেশীরা কিভাবে কম মজুরিতে এবং অস্বাস্থ্যকর বা নিপীড়ক পরিস্থিতিতে কাজ করতেন, কিভাবে সেখানে যৌথ শয়নালয়ে (ডরমেটরি) শ্রমিকরা চব্বিশ ঘন্টা শয্যা ভাগাভাগি করে শুয়েছেন সে সম্পর্কে।[২] নিজেদের ভারতীয় পরিবার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করত, তারা অবিবাহিত হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় আবাসনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেনি। স্বামী এবং অন্যান্য কর্মীদের সাথে একত্রে, মালা সেন বেঙ্গলি হাউজিং অ্যাকশন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এই গোষ্ঠী পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপদ বসবাসের এলাকা হিসেবে ব্রিক লেন প্রতিষ্ঠা করে।[২]

ফারুখ ধোণ্ডির পাশাপাশি, মালা সেনও ব্রিটিশ ব্ল্যাক প্যান্থার্স আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।[১] তিনি রেস টুডে কালেকটিভের প্রথম দিকের সদস্য ছিলেন।[৬] পল ফিল্ড, রবিন বান্স, লীলা হাসান এবং মার্গারেট পিককের সম্পাদিত হিয়ার টু স্টে, হেয়ার টু ফাইট – এ রেস টুডে অ্যান্থোলজি (প্লুটো প্রেস, ২০১৯) -তে তাঁর লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁর লেখাগুলি এর আগে ১৯৭৩ এবং ১৯৮৮ সালের মধ্যে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।[৭]

গবেষণা এবং লেখা

মালা সেনকে টেলিভিশন তথ্যমূলক গবেষণার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভারতে থাকাকালীন, তিনি ফুলন দেবী নামে একটি নিম্নবর্ণের, দারিদ্র্য-পীড়িত মহিলার সম্পর্কে প্রেস রিপোর্টে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফুলন দেবী ১১ বছর বয়সে জোরপূর্বক বিয়ে, গণধর্ষণ এবং অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, ফুলন দেবী ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে চুরি করে দরিদ্রদের সহায়তা করতেন। ২৪ বছর বয়সে, তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণের ঠাকুর পুরুষদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যারা তাঁর গণধর্ষণে জড়িত ছিল। ১৯৮৩ সালে, তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। মালা সেন কারাগারে ফুলন দেবীর সাথে দেখা করতে যান, সেখানে তিনি ফুলন দেবীকে রাজি করান তাঁর জীবনের গল্প মুখে মুখে ব'লে সহ বন্দীদের দ্বারা লেখাতে, কারণ ফুলন নিজে নিজে লিখতে পারতেন না। ইণ্ডিয়া'স ব্যাণ্ডিট কুইন বইটি মালা সেনের আট বছর ধরে গবেষণার উপর ভিত্তি করে লেখা,[২] এটি পরবর্তীতে লন্ডনে প্রকাশিত হয়েছিল (হার্ভিল প্রেস, ১৯৯১; মার্গারেট বাসবি দ্বারা সম্পাদিত)।[৮][৯]

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, মালা সেনকে চ্যানেল ৪ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, ফুলন দেবী সম্পর্কে তাঁর বইয়ের উপর ভিত্তি করে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করার জন্য। শেখর কাপুর দ্বারা পরিচালিত, ১৯৯৪-এর ব্যান্ডিট কুইন ভারতের সমালোচকদের দ্বারা সবচেয়ে প্রশংসিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। কিন্তু এটি যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দেয় যখন, কানে এর প্রিমিয়ারের পর, মালা সেনের সমর্থিত সমাজ কর্মী অরুন্ধতী রায়, গণধর্ষণ দৃশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে এর মুক্তি নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতের পদক্ষেপের আহ্বান জানান। কারণ সেটি ফুলন দেবীর যৌন গোপনীয়তাকে আক্রমণ করেছিল।[২] £৪০,০০০ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পর, ফুলন দেবী তাঁর আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন এবং ছবিটি ভারতীয় দর্শকদের জন্য মুক্তি পায়। ফুলন দেবী ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সংসদ সদস্য হন কিন্তু দুই বছর পর তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।[২][৩]

ফুলন দেবীর জীবনের পটভূমি অনুসন্ধান করার সময়, মালা সেন গ্রামীণ ভারতে মহিলাদের উপর সাধারণ নির্যাতনের বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন, মহিলারা প্রায়শই এমন চাপের মধ্য দিয়ে যায় যে তারা নিজেদের মূল্যহীন বলে মনে করে। ফলস্বরূপ, তিনি ২০০১ সালে তাঁর দ্বিতীয় বই, ডেথ বাই ফায়ার: সতী, ডাউরি ডেথ অ্যাণ্ড ফিমেল ইনফ্যান্টিসাইড ইন মডার্ন ইণ্ডিয়া প্রকাশ করেন।[২] একটি আধা-আত্মজীবনীমূলক কাল্পনিক শৈলী অবলম্বন করে, তিনি তিনজন মহিলার গল্প বলেছেন, যাদের মধ্যে একজন ১৮ বছর বয়সী মহিলা যাকে তার স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। অন্য একজন মহিলাকে তার স্বামী আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং তৃতীয় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার শিশু কন্যাকে হত্যার অভিযোগে কারাদণ্ড। এই উদাহরণগুলি ধনী এবং দরিদ্রের জন্য আইন প্রয়োগের পার্থক্য বোঝাতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের উন্নতিতে কাজ করার জন্য এগুলি মহিলাদের জোটবদ্ধ হওয়ার দিকে পরিচালিত করেছে।[১০][১১]

মৃত্যু

মালা সেন ৬৩ বছর বয়সে ২০১১ সালের ২১শে মে তারিখে মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে, খাদ্যনালীর ক্যান্সারের জন্য একটি অপারেশন করার পর মারা যান। তাঁর অসুস্থতা সেই বছরের শুরুতে নির্ণয় করা হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি ভারতে এইচআইভি আক্রান্ত মহিলাদের সম্পর্কে একটি নতুন বইয়ের কাজ করছিলেন।[৩][১২] ২০১১ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে নেহেরু সেন্টারে তাঁর জন্য একটি স্মারক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।[১৩][১৪]

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইণ্ডিয়া'স ব্যাণ্ডিট কুইন: দ্য ট্রু স্টোরি অফ ফুলন দেবী, লন্ডন: হার্ভিল প্রেস, ১৯৯১।
  • ডেথ বাই ফায়ার: সতী, ডাউরি ডেথ অ্যাণ্ড ফিমেল ইনফ্যান্টিসাইড ইন মডার্ন ইণ্ডিয়া, লন্ডন: ডব্লিউঅ্যাণ্ডএন, ২০০১।

জনপ্রিয় সংস্কৃতি এবং উত্তরাধিকার

ব্যান্ডিট কুইন, একটি অত্যন্ত প্রশংসিত ১৯৯৪ সালের ভারতীয় চলচ্চিত্র, এটি তাঁর বই, ইণ্ডিয়া'স ব্যাণ্ডিট কুইন: দ্য ট্রু স্টোরি অফ ফুলন দেবী -র উপর ভিত্তি করে তৈরি।

ব্রিটিশ ব্ল্যাক প্যান্থারদের উপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালের একটি ব্রিটিশ নাটক মিনি-সিরিজ, গেরিলা -তে মালা সেন দ্বারা অনুপ্রাণিত প্রধান একটি মহিলা চরিত্রের নাম ছিল জস মিত্র। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফ্রিদা পিন্টো

মালা সেনের একটি ম্যুরাল তৈরি করেছেন শিল্পী জেসমিন কৌর সেহরা। এটি ব্রিক লেনে স্থাপন করা হয়েছে, এটি একটি ধারাবাহিকের অংশ যা ২০১৮ সালে টেট কালেক্টিভ দ্বারা "অজানা" -দের অবদান উদযাপন করার জন্য চালু করা হয়েছিল।[১৫]

২০২১ সালে ফটোগ্রাফার পল ট্রেভরের তোলা মালা সেনের একটি প্রতিকৃতি লন্ডনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারি কিনেছিল, তাদের স্থায়ী সংগ্রহের জন্য।[১৬]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী