মালা সিনহা
মালা সিনহা (নেপালি: माला सिन्हा; জন্ম: ১১ নভেম্বর, ১৯৩৬) কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী নেপালী ভাষাভাষী বিখ্যাত নেপালী-ভারতীয় অভিনেত্রী। একাধারে তিনি হিন্দি, বাংলা ও নেপালী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি তার প্রতিভাগুণে ও সহজাত সৌন্দর্য্যের কারণে দর্শকমহলে নন্দিত হয়ে আছেন। ১৯৫০-এর দশকের শুরু থেকে ১৯৭০-এর দশকের শেষভাগ পর্যন্ত হিন্দি চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন ও শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন। সিনহা শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তন্মধ্যে - পিয়াসা, ঢুল কা ফুল, অনপধ, দিল তেরা দিওয়ানা, গুমরাহ, হিমালয় কি গোদমে ও আঁখে অন্যতম।[২]
মালা সিনহা | |
---|---|
![]() ২০১২ সালে দাদাসাহেব ফালকে জয়ন্তী পুরস্কার অনুষ্ঠানের সংবাদ সম্মেলনে মালা সিনহা | |
জন্ম | আলদা সিনহা ১১ নভেম্বর ১৯৩৬ |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৫২-১৯৯৪ |
দাম্পত্য সঙ্গী | চিদাম্বর প্রসাদ লোহানী |
সন্তান | প্রতিভা সিনহা (কন্যা)[১] |
প্রারম্ভিক জীবন
প্রকৃতপক্ষে তার পরিবার নেপালী বংশোদ্ভূত। তারা কলকাতায় আসার পরপরই তার জন্ম হয়। পিতা-মাতা তার নাম রাখেন আলদা। বিদ্যালয়ের বন্ধুরা ব্যঙ্গ করে তাকে 'ডালডা' নামে ডাকতো। ফলশ্রুতিতে তার নাম পরিবর্তিত করে 'মালা' রাখা হয়।[৩] শৈশবেই তিনি নৃত্যকলা ও সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন।
অল ইন্ডিয়া রেডিও'র তালিকাভুক্ত গায়িকা ছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি কখনো স্বীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য শিল্পী হননি। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ১৯৭২ সালের লালকর চলচ্চিত্রটি।[৪] তবে, গায়িকা হিসেবে১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় মঞ্চে গান পরিবেশন করেছেন।
কর্মজীবন
শিশু শিল্পী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্র জয় বৈষ্ণ দেবীতে অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটে তার। পরবর্তীতে শ্রীকৃষ্ণ লীলা, যোগ বিয়োগ ও ঢুলিতে অংশ নেন তিনি। প্রথিতযশা বাঙালী পরিচালক অর্ধেন্দু বসু বিদ্যালয়ের একটি নাটকে তার অভিনয় দেখেছিলেন ও নায়িকা হিসেবে রোশনারা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তার পিতার কাছ থেকে অনুমতি নেন। এভাবেই সিনেমাসুলভ অভিষেক ঘটে তার।
কলকাতায় কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বোম্বে গমন করেন ও সেখানে তিনি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী গীতা বালি'র সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। তিনি তার প্রতি আকৃষ্ট হন ও পরিচালক কিদার শর্মা'র সাথে পরিচয় ঘটান। শর্মা রঙিন রাতে ছবিতে তাকে নায়িকা করেন। কিশোর কুমারের বিপরীতে লুকোচুরি নামক বাংলা ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। প্রদীপ কুমারের বিপরীতে প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্র বাদশাহ ও পরবর্তীতে একাদশীতে অভিনয় করেন। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দেন।[৫] কিশোর সাহুর হ্যামলেটে পুনরায় শীর্ষ চরিত্রে অভিনয় করেন। বক্স অফিসে তেমন সাড়া না জাগালেও পর্যালোচনার কাতারে আসেন।
ব্যক্তিগত জীবন
মধেশী বংশোদ্ভূত অভিবাসিত নেপালী দম্পতির সন্তানরূপে পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠী নেপালী অভিনেতা চিদাম্বর প্রসাদ লোহানির সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৬৬ সালে নেপালী চলচ্চিত্র মৈতিগড়ে অভিনয়কালে তারা পরিচিত হন। লোহানির আবাসন খাতের ব্যবসা রয়েছে। বিয়ের পর তিনি মুম্বইয়ে চলে আসেন ও অভিনয়কর্ম চালিয়ে যান;[২] অন্যদিকে তার স্বামী আবাসন ব্যবসা চালাতে নেপালে অবস্থান করেন।
তাদের সংসারে প্রতিভা সিনহা নাম্নী এক কন্যা রয়েছে।[৬][৭] প্রতিভাও বলিউডের সাবেক অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষার্ধ্বে এ দম্পতি ও তাদের কন্যা মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি বাংলোয় বসবাস করছেন।[৮][৯] মালা তার কন্যার চলচ্চিত্র জীবনে আগ্রহ দেখালেও স্বামী যেভাবে তাকে সহায়তা করেছেন, সে তুলনায় নিজ কন্যাকে একইভাবে সহায়তা করতে পারেননি তিনি।[১০]