মর্দানি
মর্দানি (অনু. পুরুষালি) হল ২০১৪ সালের একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র।[৩] ছবিটি প্রদীপ সরকার কর্তৃক পরিচালিত এবং আদিত্য চোপড়া প্রযোজিত হয়।[৪] ছবিটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন রানী মুখার্জী এবং তাঁর সঙ্গে সহায়ক চরিত্রে ছিলেন যীশু সেনগুপ্ত, তাহির রাজ ভাসিন এবং সানন্দ বর্মা। আখ্যানটি শিবাণী শিবাজি রায় নামে একজন নারী পুলিশ অফিসারকে ঘিরে তৈরি হয়, অপহৃত এক কিশোরীর সন্ধান করতে গিয়ে সে ভারতীয় মাফিয়াদের মানব পাচারের গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করে।[৫]
মর্দানি | |
---|---|
![]() | |
পরিচালক | প্রদীপ সরকার |
প্রযোজক | আদিত্য চোপড়া |
রচয়িতা | গোপী পুথরান |
শ্রেষ্ঠাংশে | রানী মুখার্জী তাহির রাজ ভাসিন যীশু সেনগুপ্ত সানন্দ বর্মা |
সুরকার | গান: সেলিম-সুলেমান সঙ্গীত: Julius Packiam[১] |
চিত্রগ্রাহক | আর্টুর জুরাউস্কি |
সম্পাদক | সঞ্জীব দত্ত |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | যশ রাজ ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১১ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹২১ কোটি[২] |
আয় | ₹৫৬.৭ কোটি[২] |
এটি ২০১৪ সালের ২২শে আগস্ট, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। মুখার্জীর অভিনয়ের প্রশংসা সহ ছবিটি ইতিবাচক পর্যালোচনা পায়, এবং এটি বাণিজ্যিক সাফল্যও পায়। এরপরে ২০১৯ সালে মর্দানি ২ শীর্ষক একটি সিকুয়েল হয়। মর্দানি ২ও সাফল্য পাবার পর প্রোডাকশন হাউস ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করে যে, মর্দানি পরম্পরার সম্ভাব্য তৃতীয় ভাগ, যার শিরোনাম হবে মর্দানি ৩ এবং সেখানেও রানী মুখার্জী শিবাণী শিবাজি রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করবেন।
ঘটনা
মুম্বই পুলিশের অপরাধ বিভাগের নিবেদিত-প্রাণ ইন্সপেক্টর শিবাণী শিবাজি রায় (রানী মুখার্জী), করণ রাস্তোগি (তাহির রাজ ভাসিন) নামে এক কুখ্যাত দিল্লি নিবাসী অপরাধ জগতের নেতৃস্থানী যুবকের খোঁজ চালাচ্ছিল। রাস্তোগি শিশু পাচার ও মাদকের সাথে জড়িত একটি সংগঠিত অপরাধী দল চালায়। শিবাণীর লক্ষ্য ছিল রাস্তোগিকে গ্রেপ্তার করা এবং রাস্তোগির লোকদের দ্বারা অপহৃত কিশোরী অনাথ পিয়ারিকে উদ্ধার করা। পিয়ারীর কাকা পিয়ারীকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলে, সেই সময় শিবানী তাকে বাঁচায়। তারপর থেকে শিবানী তাকে নিজের মেয়ের মতো যত্ন নেওয়া শুরু করে। শিবাণী ব্যক্তিগত তাগিদে নিজের কাজ ও কর্তব্যের অতিরিক্তভাবে করণকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করে। করণ কাট্যালের কাছ থেকে জানতে পারে শিবাণী তার দলের কাজকর্মে নজর রাখছে। সে শিবাণীকে জড়িত না হওয়ার জন্য সতর্ক করে। তাকে ধরার জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে শিবাণী তার এক সহযোগীকে খুঁজে বার করে, সেই লোকটি তাকে করণের সহযোগী, ওয়াকিলের খবর দেয়। রেগে গিয়ে করণ নিশ্চিত করে যে, পিয়ারিকে বিক্রি করা হবে এবং প্রতিদিনই তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হবে। সতর্কবার্তা হিসাবে, সে ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয় যে, শিবাণীর স্বামী ডাক্তার হিসাবে তার পেশার অপব্যবহার করে একজন মহিলা রোগীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ করেছে। শিবাণীর স্বামীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রাস্তোগি পিয়ারির একটি আঙুল কেটে শিবাণীর বাড়িতে উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দেয়।
শিবাণী দিল্লী যায় এবং নাইজেরিয়ার ওষুধ ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি ফাঁদ পাতে। এই ব্যবসায়ীরা করণ এবং ওয়াকিলের কাছে ব্যয়বহুল এবং বিরল দক্ষিণ আমেরিকানন কোকেন সরবরাহ করার ভান করে। তারা যখন দরাদরি করছিল সেই সময় শিবাণী তার দল নিয়ে হানা দেয়। করণ পালিয়ে যায়, ওয়াকিল ধরা পড়বে বুঝতে পেরে তার মোবাইল ফোনের সিম কার্ডটি নষ্ট করে প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তারপর আত্মহত্যা করে। কারণ, সে জানত সে ধরা পড়লে করণও ধরা পড়ে যাবে।
শিবাণী তদন্ত করতে করতে করণের বাড়ি পৌঁছে যায়, সেখানে করণের মা তাকে নেশাচ্ছন্ন করে দেয়। তাকে অপহরণ করা হয় এবং করণের পার্টিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে, সে পিয়ারিকে দেখতে পায়। সেখানে সে (পিয়ারী) এবং অন্যান্য অপহৃত মেয়েরা বেশ্যা হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়। শিবাণী একাকী এই পরিস্থিতি সামলায়, করণকে একটি ছোট্ট ঘরে আটকে মেয়েদের উদ্ধার করে। শিবাণী করণকে প্রচণ্ড মারধোর করে। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় দুর্বল ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে করণ আইনের হাত থেকে আবার পালাতে পারে বলে মনে করে শিবানী। তাই, শিবাণী করণকে অপহৃত ঐ মেয়েদের হাতে তুলে দেয়। মেয়েদের প্রচণ্ড পিটুনিতে করণের মৃত্যু ঘটে। করণের দলের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
চরিত্র চিত্রণ
- রানী মুখার্জী- বরিষ্ঠ ইন্সপেক্টর শিবাণী শিবাজি রায়, মুম্বই অপরাধ বিভাগের অফিসার[৬]
- তাহির রাজ ভাসিন- করণ 'ওয়াল্ট' রাস্তোগি, একজন অপরাধী এবং মাদকসেবী[৬]
- যীশু সেনগুপ্ত- ডঃ বিক্রম রায় (শিবাণীর স্বামী)
- অনন্ত বিধাত শর্মা- সানি কাট্যাল[৭]
- প্রিয়াঙ্কা শর্মা- শিবানীর মেয়ে পিয়ারি
- অভনীত কৌর- মীরা
- আহাদ আলী আমির- মিনহাস
- সানন্দ বর্মা- কপিল
- মোনা আম্বেগাঁওকার- ওয়াল্টের মা মীনু রাস্তোগি
- মাহিকা শর্মা- ওয়াল্টের শিকার
- পিটার মুক্সকা ম্যানুয়েল- এমবোসো
- সঞ্জয় তানেজা- মুখ্যমন্ত্রী তানেজা
- সাহেব দাস মানিকপুরী- পাকিয়া
- অনিল জর্জ ওয়াল্টের সহকারী আইনজীবী
- মিখাইল ইয়াওয়ালকার- সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর বলিন্দর সিং সোধা[৮]
প্রযোজনা
বিকাশ
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, চলচ্চিত্রটিতে অপরাধ শাখার কর্মকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করতে যাওয়া রানী মুখার্জী তাঁর ভূমিকার জন্য গবেষণার অংশ হিসাবে মুম্বই পুলিশ অপরাধ শাখার প্রধানের সাথে দেখা করেছিলেন।[৯] জল্পনা ছিল যে তাঁর ভূমিকাটি আইপিএস অফিসার মীরা বোরওয়ঙ্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যিনি মুম্বাই ২৬/১১ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।[১০] তাঁর ভূমিকাটির জন্য, মুখার্জী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য বিকাশপ্রাপ্ত স্ব-প্রতিরক্ষা মূলক রাস্তায় লড়াই ক্রেভ মাগাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এটি পরিচালনা করেছিলেন প্রদীপ সরকার এবং রচনা করেছিলেন গোপী পুথরান।[১১] চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন পোলিশ আর্টুর জুরাউস্কি।[১২]
সাউন্ডট্র্যাক
# | শিরোনাম | গায়ক | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|
১ | "মর্দানি সংগীত" | সুনিধি চৌহান এবং বিজয় প্রকাশ | ০৫:০৪ |
বিপণন এবং মুক্তি
২০১৪ সালের ২৪শে জুন ছবিটির অফিশিয়াল খণ্ডচিত্র (ট্রেলার) প্রকাশিত হয়েছিল।[১৩] কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র অনুমোদন পর্ষদ জানিয়ে ছিল যে অশ্লীলতার ব্যবহার এবং একটি কিশোরী ধর্ষণের চিত্রিত দৃশ্য ট্রেলার থেকে অপসারণ করতে হবে।[১৪]
চলচ্চিত্রের সামাজিক বার্তা এবং এটি ভারতীয় নারীদের ওপর যে প্রভাব ফেলতে পারে তার কারণে, ছবিটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহে, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এই ছবিটিকে কর মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন।[১৫] এর পরে উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র এই ছবিকে করমুক্ত করেছিল।
পাকিস্তানে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সেন্সর ছবিটিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য শংসাপত্র দিয়েছিল কিন্তু কয়েকটি দৃশ্যে তারা আপত্তি জানিয়েছিল। বোর্ডটি সাতটি দৃশ্য কেটে বাদ দিতে চেয়েছিল এবং কিছু দৃশ্য ঝাপসা করে দিতে চেয়েছিল তবে চলচ্চিত্র নির্মাতারা মনে করেছিলেন "এর ফলে চলচ্চিত্রটির আখ্যানের সারাংশ হারিয়ে যাবে" এবং তাই পাকিস্তানে ছবিটি মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[১৬]
২০১৫ সালের ২৯শে জানুয়ারী, পোল্যান্ডের অন্যতম প্রাচীন আর্ট হাউজ থিয়েটার, ওয়ার্স এর কিনো মুরানাও থিয়েটারে, মর্দানি মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটি দর্শকদের কাছ থেকে দণ্ডায়মান অভ্যর্থনা পেয়েছিল এবং রানী মুখার্জী তাঁর ব্যতিক্রমী অভিনয় ও এরকম একটি প্রাসঙ্গিক এবং সংবেদনশীল চলচ্চিত্রের অংশ হওয়ার জন্য সকলের অভিনন্দন পেয়েছিলেন।[১৭]
প্রতিক্রিয়া
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
মিড ডে মর্দানিকে পাঁচের মধ্যে চারটি তারা দেয় এবং লিখেছে প্রদীপ সরকার "একটি বাস্তববাদী এবং বাধ্যতামূলক গল্প উপহার দিয়েছেন, যে কিছুতেই হাল ছাড়বে না এমন ইন্সপেক্টর হিসাবে, রানী মুখার্জীর অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে খারাপ লোককে ধরে আনা, কী হতে পারে তা দেখিয়েছেন"।[১৮] সুভাষ কে. ঝা এই ছবিটিকে পাঁচটির মধ্যে চারটি তারা দিয়েছিলেন, এবং ছবির সাউন্ডট্র্যাকের ব্যবহারের প্রশংসা করেন।[১৯] বলিউড হাঙ্গামার তরুণ আদর্শ লিখেছেন, "কঠোর মনস্ক পুলিশের অংশটি অভিনয় করা, যারা মানব পাচার ব্যবসার কারবার চালায় তাদের ধাওয়া করা, রানী জীবনের প্রতি সত্য থাকেন এবং তাঁর চরিত্রটিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তীব্রতা, শক্তি এবং মর্যাদার সঙ্গে উন্নীত করেছেন। যে যন্ত্রণা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটি তাঁর মুখে দৃশ্যমান হয় এবং সেটি অন্যতম প্রধান কারণ যা এই গল্পটিকে বিশ্বাস করা সহজ করে তোলে।" [২০]
বক্স অফিস
কইমোই বলেছে যে মর্দানির ৪০ কোটি টাকা আয় ছবিটিতে বিনিয়োগের দ্বিগুণ।[২১]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মর্দানি (ইংরেজি)
- রটেন টম্যাটোসে মর্দানি (ইংরেজি)