মরিয়ম আব্দুলহাদি আল-খাজা
মরিয়ম আবদুলহাদি আল-খাজা (জন্ম: ২৬ জুন, ১৯৮৭)[১] একজন বাহরাইনি মানবাধিকার কর্মী। তিনি বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী আবদুলহাদি আল-খাজার মেয়ে। মরিয়ম গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের উপ-পরিচালক।[২]
মরিয়ম আব্দুলহাদি আল-খাজা | |
---|---|
مريم عبد الهادي الخواجة | |
![]() মরিয়ম আল-খাজা বিবিসির সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে | |
জন্ম | |
শিক্ষা | বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে বিএ এবং আমেরিকান স্টাডিজ |
পেশা | মানবাধিকার কর্মী |
কর্মজীবন | ২০০৭–বর্তমান |
পিতা-মাতা | আবদুলহাদি আল-খাজা খাদিজা আল-মুসাওভি |
আত্মীয় | যয়নব আল-খাজা (বোন) |
ওয়েবসাইট | www |
জীবনী
মরিয়ম সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন, তার মায়ের নাম খাদিজা আল-মুসাওভি এবং তার পিতা হচ্ছেন আবদুলহাদি আল-খাজা; যিনি ডেনিশ-বাহরাইন মানবাধিকার কর্মী। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তার পিতাকে বাহরাইনে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল দুই বছর। তার পরিবার ডেনমার্কে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিল।[৩] সেখানে তারা ২০০১ সাল পর্যন্ত বাস করত। পরে তাদের বাহরাইনে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[৪] ২০০৯ সালে বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর , তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের পূর্ণ বৃত্তি লাভ করেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যখন তিনি বাহরাইনে ফিরে আসেন। তখন তার পিতার খ্যাতির কারণে তিনি সরকারের সমালোচক হিসেবে জনসংযোগ বা শিক্ষায় চাকরি খুঁজে পাননি। ফলে তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্থা “মারকাযুল বাহরাইন” এ মানবাধিকার কর্মী হিসাবে চাকরি শুরু করেন। তিনি বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্ব পান এবং এ সংস্থার সহ-সভাপতি হন।[৫] ২২ জুন, ২০১১ তারিখে, গণতন্ত্রের দাবিতে “বাহরাইন বিদ্রোহে” তার পিতার ভূমিকার ফলস্বরূপ "একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরী ও পরিচালনা" করার জন্য সামরিক আদালতের রায়ে তার পিতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।[৬]
কর্মজীবন
মানবাধিকার কার্যক্রম
মরিয়ম তার শৈশবকাল থেকেই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমর্থনে বিক্ষোভ এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশগ্রহণে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বাহরাইনে সাংবাদিকদের জন্য অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছিলেন, যারা বিদেশ থেকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট করতে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে, মরিয়ম জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সাথে দেখা করার জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে জাতিসংঘ ভবনে প্রতিনিধিদলে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে একটি গণ আবেদন করেছিলেন। ২০০৮ সালে, টম ল্যান্টোস কমিশন অন হিউম্যান রাইটস বাহরাইনে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য মরিয়মকে ডেকেছিলেন। মরিয়মসহ এই অধিবেশনে যেসব কর্মী বক্তব্য রাখেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার মিডিয়ায় একটি ধোঁয়াশামূলক প্রচারণা চালায়। তাদের বিষয়টি বেশ কয়েকটি সংস্থার দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। যেমন ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস (ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডারস), ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার এবং বৈশ্বিক মানবাধিকার আন্দোলন।
বাহরাইন বিদ্রোহে অংশগ্রহণ
“আল-মাসিরাতু আল-বাহরানিয়্যা” এ অংশগ্রহণের পর ২০১১ সালে মরিয়ম গণতন্ত্রপন্থীদের সহায়তার জন্য বিদেশের একটি কলেজে এবং সম্মেলনে বক্তৃতা করার জন্য ভ্রমণ করেন। এই সফরের সময়, তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় আলোচনা করেন।[৭] তিনি বলেন, তার মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি নাবিল রজবকে বাহরাইন ছাড়তে বাধা দেওয়া হয়। তিনি বাহরাইনের বাইরে জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসময় বাইরের গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয় এবং কমপক্ষে ৫০০ বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। লাজু সাতুরেক বলেন, তখন “বাহরাইন হিউম্যান রাইটস সেন্টার” সুপারিশ করে যে মরিয়ম বাহরাইনের বাইরে থাকুক কারণ সে ফিরে আসলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।[৮]
এপ্রিল মাসে, মরিয়ম আমেরিকা এবং ইসলামিক ওয়ার্ল্ড [৯] এ হিলারি ক্লিন্টন এর সাথে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি তাকে তার বাবা এবং তার দুই আত্মীয়ের গ্রেফতারের কাহিনী বলেন এবং তার কাছে আবেদন করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বাহরাইনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান নেবে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাহরাইন সরকার বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে।[১০] মে মাসে, মরিয়ম ওসলো ফ্রিডমস ফোরামে বাহরাইনে সরকারী সহিংসতার বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন।[৩] বাহরাইনে মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে প্রমাণ উপস্থাপন করেন ।
ইন্টারনেট কার্যকলাপ
মরিয়ম বাহরাইন বিদ্রোহের আগে টুইটার বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন না এবং সে সময় তার ৩০ এর বেশি অনুসারি ছিল না। কিন্তু ১৫ জুন, ৬৫,০০০ এরও বেশি অনুসারী হয় এবং তাতে ১,০০০,০০০ এরও বেশি টুইট ছিল।[১১] বিক্ষোভের সময় অনেক সংবাদ সংস্থা তাদের পত্রিকায় ছাপায়। এমন সময় যে যখন রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়, তখন মরিয়ম সক্রিয়ভাবে টুইট করেছেন।
হুমকি এবং হয়রানি
মরিয়ম সরকার সমর্থকদের কাছ থেকে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন।[৫] যার কারণে তিনি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর দ্য ডিফেন্স অ্যান্ড প্রমোশন অব ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন সম্মেলনে উপস্থিত হননি। জুনের প্রথম দিকে তিনি মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার পর লেবাননে চলে যান।[১২] ওসলো ফ্রিডম ফোরামে (যা ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল) তার ভাষণ দেওয়ার পর, টুইটারে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ, মৌলবাদ এবং ইরানি সরকারের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা শুরু হয়। বাহরাইনকে "বিশ্বাসঘাতকতা" করার অভিযোগে অসলো ফ্রিডম ফোরামে বেশ কয়েকটি ইমেল পাঠানো হয়েছিল। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করভিস কমিউনিকেশনের জিওপলিটিক্যাল সলিউশন বিভাগে বেশিরভাগ টুইট, ব্লগ এবং অনলাইন হয়রানির উৎপত্তি হয়েছিল। প্রচারাভিযানে একটি বর্জনীয় বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা স্পষ্টভাবে তখন সংগঠিত হয়েছিল।[১৩] আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মতে ২০১১ সালের মে মাসের শুরুতে নাবিল রজব এবং মরিয়মের বিরুদ্ধে "বাহরাইন কর্তৃপক্ষের সক্রিয় সহায়তায়" একটি অজানা স্মিয়ার ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল।[১৪] ৩০ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে, মানামায় তার বাবার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এ অভিযোগে যে মরিয়ম পুলিশ অফিসারকে লাঞ্ছিত করেছে। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন এবং তার বিচার বিঘ্নিত করা হলে ২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে বাহরাইন ত্যাগ করেন। ডিসেম্বরে, তার অনুপস্থিতিতে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাহরাইন সরকার বলে যে মরিয়মের গ্রেফতার বৈধ ছিল।[১৫]