মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা

আটলান্টিক মহাসাগরের টেকটোনিক প্লেটের সীমানা

মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা (এমএআর) হল একটি মধ্য মহাসাগর শৈলশিরা। এটি একটি ভূত্বকীয় পাতের বিচ্ছিন্ন সীমানা বা গঠনমূলক ভূত্বকীয় পাত যেটি আটলান্টিক মহাসাগরের তল বরাবর অবস্থিত এবং বিশ্বের দীর্ঘতম পর্বতশ্রেণীর অংশ। উত্তর আটলান্টিকে এটি ইউরেশীয় ভূত্বকীয় পাত ও আফ্রিকান ভূত্বকীয় পাত থেকে উত্তর আমেরিকান পাতকে পৃথক করে। এগুলি উত্তর এবং দক্ষিণে অ্যাজোরেস ত্রি-সম্মিলনের অংশ। দক্ষিণ আটলান্টিকে, এটি আফ্রিকান এবং দক্ষিণ আমেরিকান ভূত্বকীয় পাতকে পৃথক করে। এই শৈলশিরাটি গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে গাক্কেল শৈলশিরা (মধ্য-আর্কটিক শৈলশিরা)সংযুক্তি থেকে শুরু করে দক্ষিণমুখী হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিকের বুভেট ত্রি-সম্মিলন পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার বেশিরভাগই অংশই জলের নিচে আছে, এর কিছু অংশ সমুদ্র তল থেকে উপরে প্রসারিত হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ আইসল্যান্ড হল এর একটি অংশ। শৈলশিরাটির বছরে ২.৫ সেন্টিমিটার (১ ইঞ্চি) করে প্রসারিত হচ্ছে।[১]

মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার একটি গভীরতামিতিক মানচিত্র

আবিষ্কার

অ্যানিমেশনে প্যানজিয়ার পৃথকীকরণ

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে একটি শৈলশিরা আছে, তা প্রথম অনুমান করেছিলেন ম্যাথু ফন্টেইন মরি,১৮৫৩ সালে। ইউএসএস ডলফিন য়ের (নৌবাহিনীর পালতোলা জাহাজ) সংগ্রহ করা আওয়াজের উপর ভিত্তি করে তিনি এই অনুমান করেছিলেন। ১৮৭২ সালে, এইচএমএস চ্যালেঞ্জারের অভিযানের পর দক্ষিণ আটলান্টিকে শৈলশিরার অস্তিত্ব এবং এর প্রসারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। [২][৩] জাহাজে চার্লস ওয়াইভিল থমসনের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল, আটলান্টিকের অপর পাড়ে টেলিগ্রাফের তার নিয়ে যাওয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার সময় আটলান্টিকের মাঝখানে একটি বৃহত উত্থান আবিষ্কার করেছিলেন।[৪] ১৯৫২ সালে, এই শৈলশিরার অস্তিত্ব শব্দের প্রতিফলন দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল[৫] এবং জার্মান আবহাওয়া অভিযানের সময়, ভারত মহাসাগরের আগুলাস অন্তরীপের চারিদিক জুড়ে এর প্রসারণ দেখা গিয়েছিল।[৬]

১৯৫০ এর দশকে, ব্রুস হিজেন, মরিস এউইং, মেরি থার্প এবং অন্যদের দ্বারা সমুদ্রতলের মানচিত্র প্রস্তুত করার সময় মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা এবং উপত্যকাগুলির একটি অদ্ভুত গভীরতামিতি প্রকাশিত হয়েছিল।[৭] দেখা গিয়েছিল এর মধ্য উপত্যকা ভূমিকম্পের দিক থেকে সক্রিয় এবং বহু ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র[৮][৯] এউইং, হিজেন এবং থার্প আবিষ্কার করেছিলেন যে এই শৈলশিরা পৃথিবীর সমস্ত মহাসমুদ্রের তলে প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মূলত অবিরত মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার একটি অংশ।[১০] বিশ্বব্যাপী এই শৈলশিরা আবিষ্কারের ফলে সমুদ্রতলদেশ প্রসারণ তত্ত্ব এবং ওয়েগনারের মহাদেশীয় প্রবাহ এবং ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্বের সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা আসে। এই শৈলশিরা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া অতি মহাদেশীয় প্যানজিয়ার অনুমানমূলক ভাঙ্গনের কেন্দ্রস্থল।

উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

আইসল্যান্ডে মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা থিংভেৎলির জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে গেছে, এই উদ্যান পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য

মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরায় একটি গভীর রিফ্ট উপত্যকা রয়েছে। এটি শৈলশিরার প্রায় পুরো দৈর্ঘ্য ধরে অক্ষ বরাবর চলেছে। এই উপত্যকাটি সংলগ্ন ভূত্বকীয় পাতের মধ্যে প্রকৃত সীমানা চিহ্নিত করেছে, যেখানে ম্যান্টল থেকে ম্যাগমা সমুদ্রতলায় পৌঁছোয়, তারপর লাভা হিসেবে বিষ্ফোরিত হয়ে বার হয় এবং ভূত্বকীয় পাতের জন্য নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বক পদার্থ তৈরি করে।

নিরক্ষরেখার কাছে, রোমানচে পরিখা মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরাকে উত্তর আটলান্টিক শৈলশিরা এবং দক্ষিণ আটলান্টিক শৈলশিরায় বিভক্ত করেছে। এই পরিখাটি একটি সরু ডুবোজাহাজ পরিখা যার সর্বাধিক গভীরতা ৭,৭৫৮ মি (২৫,৪৫৩ ফু), এটি আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম অবস্থানগুলির মধ্যে একটি। এই পরিখাটি অবশ্য উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকান পাত বা ইউরেশিয়ান এবং আফ্রিকান পাতগুলির মধ্যে সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয় না।

দ্বীপপুঞ্জ

উত্তর থেকে দক্ষিণে, মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা বা এর কাছের দ্বীপগুলি এবং তাদের নিজ নিজ সর্বোচ্চ শিখর এবং অবস্থান:

উত্তর গোলার্ধ (উত্তর আটলান্টিক শৈলশিরা):

  1. ইয়ান মায়েন (বিয়ারেনবার্গ, ২২৭৭ মি (৭১°০৬′ উত্তর ০৮°১২′ পশ্চিম / ৭১.১০০° উত্তর ৮.২০০° পশ্চিম / 71.100; -8.200), [[উত্তর মহাসাগর}উত্তর মহাসাগরে]]
  2. আইসল্যান্ড (ভানাডালশ্নুকুর এ ভাত্‌নাইয়োকুত্‌ল, ২১০৯.৬ মি(৬৪°০১′ উত্তর ১৬°৪১′ পশ্চিম / ৬৪.০১৭° উত্তর ১৬.৬৮৩° পশ্চিম / 64.017; -16.683), এর মধ্যে দিয়ে শৈলশিরাটি গেছে
  3. আজোরস পন্টা ডো পিকো বা পিকো আল্টো, পিকো দ্বীপ, ২৩৫১ মি, (৩৮°২৮′০″ উত্তর ২৮°২৪′০″ পশ্চিম / ৩৮.৪৬৬৬৭° উত্তর ২৮.৪০০০০° পশ্চিম / 38.46667; -28.40000)
  4. সেন্ট পিটার এবং পল রকস (দক্ষিণ-পশ্চিম শিলা, ২২.৫ মিটার, ০০°৫৫′০৮″ উত্তর ২৯°২০′৩৫″ পশ্চিম / ০.৯১৮৮৯° উত্তর ২৯.৩৪৩০৬° পশ্চিম / 0.91889; -29.34306)

দক্ষিণ গোলার্ধ (দক্ষিণ আটলান্টিক শৈলশিরা):

  1. অ্যাসেনশন দ্বীপ (শিখর, সবুজ মাউন্টেন, ৮৫৯ মি, ০৭°৫৯′ দক্ষিণ ১৪°২৫′ পশ্চিম / ৭.৯৮৩° দক্ষিণ ১৪.৪১৭° পশ্চিম / -7.983; -14.417)
  2. সেন্ট হেলেনা (ডায়ানার পিক, ৮১৮ মি ১৫°৫৭′ দক্ষিণ ৫°৪১′ পশ্চিম / ১৫.৯৫০° দক্ষিণ ৫.৬৮৩° পশ্চিম / -15.950; -5.683)
  3. ত্রিস্তান দা কুনহা (কুইন মেরি শিখর, ২০৬২ মি ৩৭°০৫′ দক্ষিণ ১২°১৭′ পশ্চিম / ৩৭.০৮৩° দক্ষিণ ১২.২৮৩° পশ্চিম / -37.083; -12.283)
  4. গফ দ্বীপ (এডিনবার্গ শিখর, ৯০৯ মি ৪০°২০′ দক্ষিণ ১০°০০′ পশ্চিম / ৪০.৩৩৩° দক্ষিণ ১০.০০০° পশ্চিম / -40.333; -10.000)
  5. বোভেট আইল্যান্ড (ওলাটোপ্পেন, ৭৮০ মি ৫৪°২৪′ দক্ষিণ ০৩°২১′ পূর্ব / ৫৪.৪০০° দক্ষিণ ৩.৩৫০° পূর্ব / -54.400; 3.350)

আইসল্যান্ড

দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডের নিকটবর্তী মধ্য-আটলান্টিক রিজের ডুবোজাহাজ ভাগটি রেকজানিজ শৈলশিরা হিসাবে পরিচিত। আইসল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার অংশটি নিওভলক্যানিক অঞ্চল নামেও পরিচিত। আইসল্যান্ডের উত্তরে জর্নস ফ্র্যাকচার জোন আইসল্যান্ডকে কোলবেইনসে শৈলশিরার সাথে যুক্ত করেছে।

ভূতত্ত্ব

মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরার বেসালটিক শিলা, সংগ্রহকারী হারকিউলিস আরওভ। ২০০৫ সালে হারানো শহর অভিযানে এগুলি সংগৃহীত হয়।
মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরাগুলির একটি সাধারণ ব্যাখ্যার জন্য, দেখুন মধ্য মহাসাগর শৈলশিরা এবং সমুদ্রতলদেশ প্রসারণ

এই শৈলশিরাটি মধ্য-আটলান্টিক উত্থান নামে পরিচিত একটি ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, এটি একটি ক্রমবর্ধমান স্ফীত অংশ যা আটলান্টিক মহাসাগরের দৈর্ঘ্য বরাবর গেছে, এই সরলরৈখিক স্ফীতির সর্বোচ্চ অংশে আছে শৈলশিরাটি। মনে করা হয় এই স্ফীতিটি তৈরি হয়েছে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উর্ধ্বগামী পরিচলন বল দিয়ে, যে বল মহাসাগরীয় ভূত্বক এবং অশ্মমণ্ডলকে ওপর দিকে তুলে দিয়েছে। এই বিচ্ছিন্ন সীমানা প্রথম গঠিত হয়েছিল ট্রায়াসিক যুগে, যখন পরপর কয়েকটি ত্রিসম্মলনী (তিনটি ভূত্বকীয় পাতের সংযোগস্থল গ্র্যাবেন (ভূত্বকের নেমে যাওয়া অংশ) শৈলশিরা গঠনের জন্য প্যানজিয়াতে একত্রিত হয়েছিল। সাধারণত, প্রদত্ত তিন বাহু গ্র্যাবেনের মাত্র দুটি বাহু একটি বিচ্ছিন্ন প্লেটের সীমানার অংশ হয়ে যায়। তৃতীয় বাহুটিকে বলা হয় অলাকোজেন, এবং মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার অলাকোজেনগুলি আমেরিকা এবং আফ্রিকায় দেখতে পাওয়া অনেক বড় নদীর উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল (এর মধ্যে আছে মিসিসিপি নদী, আমাজন নদী এবং নাইজার নদী)। উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলে নিউ ব্রান্সউইক এবং কানাডার নোভা স্কোশিয়া মধ্যে অবস্থিত ফান্ডি অববাহিকা প্রাচীন মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার প্রমাণ।[১১][১২]

আরও দেখুন

  • Atlantis Massif
  • Canadian Arctic Rift System
  • Central Atlantic Magmatic Province
  • Charlie-Gibbs Fracture Zone
  • East Pacific Rise
  • Fifteen-Twenty Fracture Zone
  • Researcher Ridge

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানসামাজিক সমস্যালামিনে ইয়ামালকোপা আমেরিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপউয়েফা ইউরো ২০২৪আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)মুকেশ আম্বানিঅপারেশন সার্চলাইটছয় দফা আন্দোলনরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বাংলাদেশআশুরাযুক্তফ্রন্টবাংলা ভাষা আন্দোলনব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলশেখ মুজিবুর রহমানস্পেন জাতীয় ফুটবল দলকাজী নজরুল ইসলামআনহেল দি মারিয়ালিওনেল মেসিলাহোর প্রস্তাববাংলাদেশের সংবিধানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাফিফা বিশ্বকাপফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকারাজাকারকারবালার যুদ্ধমিয়া খলিফাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহকিম কার্দাশিয়ানভূমি পরিমাপ