মগ জাতি

মগ আরাকান নিবাসী জাতি বিশেষ। জাতিতত্ববিদেরা এদের ইন্দো-চীন নিবাসী বলে মনে করেন। এদের মধ্যে মারমগরি, ভূঁইয়া মগ, বড়ুয়া মগ, রাজবংশী মগ, মারমা মগ, রোয়াং মগ, ভ্যুমিয়া মগ ইত্যাদি নামে জাত বিভাগ আছে।[১]

শ্রেণী ভাগ

এই সাতটি শ্রেণীকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. ভ্যুমিয়া
  2. রাজবংশী
  3. মারমা মগ

মগ দস্যু

মোগল সাম্রাজ্যের সঙ্গে শত্রুতার কারণে আরাকানের মগ দস্যুরা পর্তুগিজ জলদস্যুদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তৎকালীন মোগল-শাসনাধীন বাংলায় অবাধ লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্বিচারে নারীদের উপর অত্যাচার চালাত।[২]মগ দস্যুরা বাংলার উপকূল থেকে লোকজন ধরে নিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করত। মগদের বর্বরতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায় ড. আহমদ শরীফের লেখায়। তিনি লিখেছেন, ‘মগ জলদস্যুরা জলপথে বাঙলাদেশের ভুলুয়া, সন্দ্বীপ, সংগ্রামগড়, বিক্রমপুর, সোনারগাঁ, বাকলা, যশোর, ভূষণা ও হুগলী লুণ্ঠন করত। তারা হিন্দু-মুসলিম, নারী-পুরুষ ও বড়-ছোট-নির্বিশেষে ধরে নিয়ে যেত। হাতের তালু ফুঁড়ে বেত চালিয়ে গরু-ছাগলের মতো বেঁধে নৌকার পাটাতনে ঠাঁই দিত। মুরগীকে যেভাবে দানা ছিটিয়ে দেওয়া হয়, তাদেরও তেমনি চাউল ছুড়ে দেওয়া হত খাবার জন্যে। এ অবহেলা ও পীড়নের পরেও যারা বেঁচে থাকত তাদেরকে ভাগ করে নিত মগে-পর্তুগীজে।[৩]

মগের মুল্লুক

বাংলায় অতীতে বিভিন্ন দেশের জলদস্যুরা আসতো চুরি ডাকাতি বা সম্পদ লুট করতে। তাদের নিয়ে অনেক গল্প কবিতা ছড়া লেখা হয়েছে। একটি ভয়ানক দস্যু আসতো মগ রাজার দেশ থেকে। এরা ছিল মূলত পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের রাজাকার বাহিনী। মগরা আমাদের অঞ্চলে এসে যে অরাজকতার সৃষ্টি করতো তার মাত্রা বোঝানোর জন্য বলা হতো মগের মুল্লুক অর্থাৎ যা খুশি তাই করার দেশ। অনেকের মতে মগ মানেই আরাকানী আর মগের মুল্লুক মানে আরকান রাজ্য।

মগের মুল্লুকের অবসান

আরাকান-রাজের সৈন্যদলের মধ্যে অনেক মগ ও অবৈতনিক পর্তুগিজ সৈন্য ছিল। এরা বছরে বারোমাস লুণ্ঠন, অপহরণ ও অত্যাচার চালাত। ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খাঁ সেনাপতি হুসেনবেগের সহায়তায় আরাকান-রাজকে সম্পূর্ণ পরাজিত করে মোগলদের হৃত-ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন; ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতি ওমেদ খাঁ ও হুসেনবেগ চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ দখল করে। শায়েস্তা খাঁর এই দুর্ধর্ষ অভিযানে চট্টগ্রাম থেকে পর্তুগিজ ও মগেরা অতি ক্ষিপ্রকারিতায় পালানোর (স্থানীয়ভাবে এই ঘটনা 'মগ-ধাওনি' নামে খ্যাত ছিল) সময় ১,২২৩টি কামান ফেলে যায়, কিন্তু অধিকাংশ ধনসম্পদ ঘড়ায় করে মাটিতে পুঁতে রেখে যায় (পরবর্তীকালে, মগ-পুরোহিতরা সাঙ্কেতিক মানচিত্রের সাহায্যে গোপনে এইসব স্থানে এসে ঘড়াগুলি উঠিয়ে নিয়ে যেতেন)। এইভাবে গোটা বাংলায় "মগের মুল্লুক"-এর অবসান ঘটে।[৪]

কলকাতায় মগ দস্যু

ইংরেজ শাসনেও পর্তুগিজ হার্মাদদের দস্যুতার কথা শোনা যেত; ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দেও কলকাতায় মগ দস্যুর ভয় ছিল জনসমাজে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকার হাওড়ার শিবপুরে (এখনকার বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে) গঙ্গার একটা বাঁধ তৈরি করে মগ ও পর্তুগিজ দস্যুদের আগমন পথ বন্ধ করে দেন।

তথ্যসূত্র

বহির্পঠন

  • বিশ্বকোষ, শ্রীনগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত (ত্রয়োদশ খন্ড), কলকাতা, ১৩০৯ বঙ্গাব্দ, ৬৭৮ পৃষ্ঠা
  • বিশ্বকোষ
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী