ভেঁপু

যানবাহনে স্থাপিত সতর্কতামূলক শব্দ-সৃষ্টিকারী যন্ত্র

ভেঁপু বলতে মোটরযান, বাস, সাইকেল, রেলগাড়ি, ট্রামগাড়ি এবং অন্যান্য ধরনের যানবাহনে স্থাপিত যন্ত্রকে বোঝায়, যেটি উচ্চশব্দ সৃষ্টি করে রাস্তার অন্যান্য ব্যবহারকারী যানচালক বা পথচারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কতামূলক বা যোগাযোগমূলক সঙ্কেত প্রেরণ করে।[১] যন্ত্রটি "প্যাঁ-পোঁ", "পিপ-পিপ", "পপ-পপ", "গোঁ-গোঁ", "ভোঁ", ইত্যাদি শব্দ করে থাকে। একে ইংরেজিতে "হর্ন" (অর্থাৎ "শিঙা") বলা হয়। যানচালক ভেঁপু (হর্ন) ব্যবহার করে অন্যান্য চালকদেরকে বা পথচারীদেরকে গাড়ির অবস্থিতি বা নিকটবর্তী হবার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন, কিংবা অন্য কোনও বিপদ বা ঝুঁকির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বেশির ভাগ দেশে মোটরযান, জাহাজ ও রেলগাড়িতে ভেঁপু স্থাপন করা ও সতর্কতার প্রয়োজনে এর ব্যবহার আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। সাইকেলে বা রিকশায় ভেঁপুর পরিবর্তে অন্য ধরনের শ্রবণযোগ্য সতর্কতামূলক শব্দসৃষ্টিকারী যন্ত্র, যেমন ঘণ্টার ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

গাড়িতে যুক্ত করা ভেঁপু।

ভেঁপু বাজানোর ধরন

চালকেরা সাধারণত অন্য চালকের উদ্দেশ্যে একবার বা পরপর দুইবার ছোট করে ভেঁপু বাজিয়ে থাকেন, যার উদ্দেশ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা কদাচিৎ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। সতর্কসংকেত প্রেরণের জন্য কিংবা বিরক্তি প্রকাশের জন্য দীর্ঘসময় ধরে ভেঁপু বাজানো হতে পারে। এছাড়া পথচারীদেরকে যানের উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্যও ছোট করে একবার ভেঁপু বাজানো হতে পারে।

ভেঁপু বাজানোর বিধি

উন্নত দেশগুলিতে যত্রতত্র যখন তখন ভেঁপু (হর্ন) বাজানো নিষেধ ও সাধারণত কাজটিকে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, এবং এর পরিবর্তে পার্শ্বদর্শী দর্পণ (side view mirror) বা পশ্চাতদর্শী দর্পণ (rear view mirror) ব্যবহার করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। কেবলমাত্র সড়কের নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে ভেঁপু বাজানো আইনগতভাবে সিদ্ধ। এর বাইরে অন্য যেকোনও কারণে যেমন বিরক্তি প্রকাশের জন্য ভেঁপু বাজানোকে অত্যন্ত খারাপ চোখে দেখা হয়। গভীর রাতে ভেঁপু বাজানো অনেক দেশে নিষেধ। এছাড়া এসব দেশে গাড়ি থেমে থাকা অবস্থায় ভেঁপু বাজানো আইনত নিষেধ। হাসপাতাল এলাকাতেও সাধারণত জোরে ভেঁপু বাজাতে নিরুৎসাহিত করা হয়। যেমন যুক্তরাজ্যের মহাসড়ক যানচলাচলের বিধিমালায় লেখা হয়েছে "Never sound your horn aggressively. You must not use your horn while stationary on the road, ...when driving in a built-up area between the hours of 11.30 pm and 7.00 am" অর্থাৎ "কখনোই আক্রমণাত্মকভাবে ভেঁপু বাজাবেন না। রাস্তাতে থামা অবস্থায় [এবং] রাত সাড়ে এগারোটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কোনও পৌর এলাকাতে ভেঁপু বাজানো নিষেধ"।[২]

স্বাস্থ্যের উপর উচ্চমাত্রায় ভেঁপু বাজানোর প্রভাব

গাড়ির ভেতরে বসা চালকের তুলনায় পথচারীর কাছে ভেঁপুর শব্দ প্রায় ৪০ ডেসিবেল বেশি উচ্চমাত্রার মনে হয়, এবং এটির ব্যবহার পথচারীকে চমকে দিতে পারে, তার মনে বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে, তার মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে এবং তার ভেতরে অন্যান্য নেতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন হৃদবিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের গবেষণা সাময়িকীর একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী যানবাহনের শব্দদূষণের কারণে যে মানসিক চাপজনিত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তার থেকে দেহে গ্রন্থিরস বা হরমোনের অনাকাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিঃসরণ হতে পারে, এবং এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।[৩]

ঔদক ভেঁপুর ব্যবহার

বিদ্যুৎচালিত ভেঁপুর পরিবর্তে কিছু কিছু যানে ঔদক ভেঁপু (হাইড্রলিক হর্ন) ব্যবহার করা হতে পারে। এই ভেঁপুগুলি শব্দদূষক হিসেবে চিহ্নিত, কেননা এগুলি মানুষের শ্রবণ সহনসীমার বাইরে ১৩০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিমালা (২০০৬) অনুযায়ী ব্যস্ত রাস্তাতে অপশব্দ বা অবাঞ্ছিত আওয়াজের মাত্রা ৭৫ ডেসিবেলের উপরে ওঠা নিষিদ্ধ। এ কারণে বাংলাদেশের ঔদক ভেঁপুগুলির ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।[৪]

ভেঁপুর গঠন

গাঠনিকভাবে ভেঁপু (হর্ন) একটি সরল বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র যাতে বিদ্যুৎচুম্বকীয় কুণ্ডলী ও স্থিতিস্থাপক যান্ত্রিক কুণ্ডলী তথা স্প্রিং ব্যবহার করে একটি গোল চ্যাপ্টা পাতলা ধাতব পর্দাতে কম্পন সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ সৃষ্টি করা হয় এবং সেটিকে চোঙের মাধ্যমে বিবর্ধিত করা হয়। সাধারণত যানবাহন আকারে যত বড় হয়, তার ভেঁপুর শব্দ ততো নিচু গ্রামের (নিম্ন কম্পাঙ্কের) ও গভীর করে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। ফলে শ্রোতা ভেঁপুর শব্দ শুনে যানবাহনের আকার অনুমান করতে পারে।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানসামাজিক সমস্যালামিনে ইয়ামালকোপা আমেরিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপউয়েফা ইউরো ২০২৪আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)মুকেশ আম্বানিঅপারেশন সার্চলাইটছয় দফা আন্দোলনরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বাংলাদেশআশুরাযুক্তফ্রন্টবাংলা ভাষা আন্দোলনব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলশেখ মুজিবুর রহমানস্পেন জাতীয় ফুটবল দলকাজী নজরুল ইসলামআনহেল দি মারিয়ালিওনেল মেসিলাহোর প্রস্তাববাংলাদেশের সংবিধানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাফিফা বিশ্বকাপফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকারাজাকারকারবালার যুদ্ধমিয়া খলিফাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহকিম কার্দাশিয়ানভূমি পরিমাপ