ভিয়া আউগুস্তা

ইবেরীয় উপদ্বীপে রোমানদের নির্মিত দীর্ঘতম ও ব্যস্ততম প্রাচীন রাস্তা

ভিয়া আউগুস্তা (লাতিন - Via Augusta) হল প্রাচীন হিসপানিয়া, অর্থাৎ ইবেরীয় উপদ্বীপে, বর্তমান স্পেনের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত দীর্ঘতম রোমান সড়ক। প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ[১] এই রাস্তাটি দক্ষিণে গাদেস (বর্তমান কাদিথ) থেকে ভূমধ্যসাগরের তীর বরাবর উত্তরে পিরিনীয় পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রোমান আমলে হিসপানিয়ার সাথে ইতালির স্থলপথে যোগাযোগের মূল যোগসূত্র ছিল এই ভিয়া আউগুস্তা।[২]

দক্ষিণে কাদিথ থেকে উত্তরে নারবোনা পর্যন্ত বিস্তৃত রোমান রাস্তা ভিয়া আউগুস্তার মানচিত্র
ভিকারেলো পেয়ালায় গাদেস থেকে রোম পর্যন্ত ভিয়া আউগুস্তা ধরে যাত্রাপথের বিবরণ

বিভিন্ন প্রাচীন নথিপত্রেই, যেমন - খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে প্রস্তুত রোমান রাস্তার মানচিত্র ইটিনেরারিয়াম আন্তোনিনি বা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের ভিকারেলো পেয়ালায় রোমান আমলের হিসপানিয়ার এই ব্যস্ততম রাস্তাটির বিস্তৃত উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩] দক্ষিণপশ্চিম স্পেনের বর্তমান কাদিথ থেকে শুরু হয়ে রাস্তাটি ভূমধ্যসাগরের তীর বরাবর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও শহরের মধ্য দিয়ে গিয়ে উত্তরে বর্তমান কাতালুনিয়ার লা জুঙ্কেরা শহরের কাছে অন্য আরেক প্রাচীন রোমান রাস্তা ভিয়া দমিতিয়ার সাথে মিলিত হয়ে তৎকালীন গল, বর্তমান ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূল বরাবর এগিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করে রোমের দিকে এগিয়ে যায়। ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে এই রাস্তাটি বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়েছে - ভিয়া এরাক্লেয়া (হারকিউলিস সরণী), কামিনো দে আনিবল (হানিবলের রাস্তা), কামিনো দে সান ভিথেন্তে মারতির (সাধু ভিনসেন্টের রাস্তা), রুতা দেল এস্পারতো, প্রভৃতি। রোমের সম্রাট অগাস্টাসের আদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৮ - ২ অব্দের মধ্যে পিরেনিজ থেকে কার্তাগো নোভা হয়ে গাদেস পর্যন্ত বিস্তৃত পুরনো রাস্তা ভিয়া এরাক্লেয়ার অবশিষ্টাংশকে সংস্কার করে এই নতুন রাস্তাটি তৈরি হয়। তখন থেকেই সম্রাট অগাস্টাসের নামে এর নতুন পরিচিতি দাঁড়ায় ভিয়া আউগুস্তা[৪] অর্থাৎ, সম্রাট অগাস্টাসের সময়ের অনেক আগে থেকেই রাস্তাটির অস্তিত্ব ছিল। বস্তুত রোম প্রজাতন্ত্রের আমলেই দক্ষিণ হিসপানিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বন্দরের সাথে রোমের যোগাযোগের অন্যতম গুরূত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল এ' রাস্তাটি।[৫] পরবর্তীকালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের রাস্তা ও বাণিজ্যপথ হিসেবে ভিয়া আউগুস্তার গূরুত্ব বজায় থাকে।.১০ম শতাব্দীতে স্পেনের মুসলমান আমলেও রাস্তাটি যথেষ্ট পরিমাণেই ব্যবহৃত হত।[৬] বর্তমানে স্পেনের একাধিক রাস্তা, যেমন - এন-৪, এন-৪২০, এন-৩৪০, প্রভৃতি ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন এক্সপ্রেসওয়ে (এ-৭, এপি-৭, এ-৭০) অংশত ভিয়া আউগুস্তার প্রাচীন ট্র্যাক বরাবর নির্মিত হয়েছে। সত্যি বলতে এন-৩৪০ রাস্তাটির বেশ কিছু অংশে বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত পুরনো রোমান রাস্তাই যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হত। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে এই রাস্তাটি পাকা হয়। রোমান আমলে নির্মিত এই ঐতিহাসিক রাস্তাটি বর্তমানে তার অন্তত ৯৬টি স্মারক স্থাপত্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংরক্ষণ উদ্যোগ "ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের রোমান রাস্তাসমূহ"-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

পথের বিবরণ ও তৎসংলগ্ন স্মারকসমূহ

শয়তানের সেতু (Puente del diablo) - ১২৮৩ খ্রিস্টাব্দে তৈরি কাতালুনিয়ার মারতোরেল'এ ইয়োব্রেগাত নদীর উপর এই গথিক সেতুটি ভিয়া আউগুস্তার অংশ ছিল। এই সেতুর ভিত্তি আরও পুরনো একটি রোমান সেতুর ভিত্তির উপর স্থাপিত।

কাতালুনিয়া

ভিয়া আউগুস্তার (বর্তমান এন-৩৪০) উপর স্থাপিত আর্ক দে বেরা

ভিয়া আউগুস্তার এই অংশ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার লম্বা। এখানে রাস্তাটি জিরোনা শহরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং বার্সেলোনা ও তারাগোনা শহরের পাশ দিয়ে গেছে। এছাড়াও কাতালুনিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার সময় ভিয়া আউগুস্তা আরো যেসব অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে, সেগুলি হল -

উচ্চ আমপুরদান, পুরনো পেনেদেস, প্লা দে লেস্তানি, সেলভা, বাইয়েস ওরিয়েন্তাল, মারেসমে, বাই ইয়োব্রেগাত, বাই পেনেদেস, বাই কাম্প, বাই এবরে, মন্তসিয়া, প্রভৃতি।

লা জুঙ্কেরার কাছে পানিসারের গিরিপথ দিয়ে পিরেনিজ পর্বতমালা পেরিয়ে ভিয়া আউগুস্তা ইবেরীয় উপদ্বীপে প্রবেশ করে কাতালুনিয়া, ভ্যালেন্সিয়াআন্দালুসিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে উপদ্বীপের দক্ষিণপশ্চিম প্রান্তে অতলান্ত মহাসাগর উপকূলে বন্দরশহর কাদিথ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

বার্থিনো (বার্সেলোনা) থেকে তারাকো (তারাগোনা) যাওয়ার পথে এই পথ যেখানে ইয়োব্রেগাত নদী পার হয়, সেখানে বর্তমান মারতোরেল'এ খ্রিস্টপূর্ব ১০ অব্দে রোমানরা একটি সেতু (শয়তানের সেতু; পুয়েন্তে দেল দিয়াবলো) তৈরি করে।[৭] বর্তমানে সেখানে সেই পুরনো সেতুটির ভিতের উপরেই ১২৮৩ - ১২৮৯ সালে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক পায়ে চলা গথিক সেতু বর্তমান।[৮]

এই পথ ধরে আরও অগ্রসর হলে বর্তমান তারাগোনা, রোমান আমলের তারাকোর ২০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে রোডা দে বেরার কাছে বর্তমান স্পেনের জাতীয় রাস্তা এন-৩৪০ (প্রাচীন ভিয়া আউগুস্তা)'এর উপর একটি বিজয় তোরণ (কাতালুনীয় ভাষায় আর্ক দে বেরা) দেখতে পাওয়া যায়। এটি ১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট আউগুস্তুসের (সিজার অগাস্টাস) আমলে নির্মিত। ২০০০ সালে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় স্থান পেয়েছে।[৯]

ভ্যালেন্সিয়া

আরকো রোমানো দে কাবানেস

ভিয়া আউগুস্তা এরপরে দক্ষিণে ভ্যালেন্সিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রবেশ করে। এখানে তিনটি প্রদেশ আলিকান্তে, কাস্তেইয়োন ও ভ্যালেন্সিয়ার মধ্য দিয়ে এই পথ ৪২৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে। এরমধ্যে একটা বড় অংশে ভূমধ্যসাগরের থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার বা তারও কম। ভ্যালেন্সিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের যে এলাকাগুলির মধ্যে দিয়ে এই রোমান রাস্তা অতিক্রম করে সেগুলি হল -

  • কাস্তেইয়োন - কাস্তেইয়োন দে লা প্লানা, ত্রাইগেরা, লা খানা, সান মাতেউ, লা সালথাদেইয়া, লেস কোভেস দে ভিনরোমা, কাবানেস, লা পোবলা দে তোরনেসা, বোরিওল, ভিলা-রেয়াল, বোরিয়ানা, হিলহেস
  • ভ্যালেন্সিয়া - সাগুন্তো, ভ্যালেন্সিয়া, আলবালাত দে লা রিবেরা, হাতিবা, মোইহেন্ত
  • আলিকান্তে - বিয়েনা, সাখ, এলদা, মনোবার, আসপে, এল রেবোইয়েদো, তোরেইয়ানো, এলখ, রোখালেস, বেনিখোপার
বেনিওচের কাছে ভিয়া আউগুস্তার সংরক্ষিত অংশ

কাস্তেইয়োন প্রদেশে কাবানেস শহরের কাছে রোমান আমলে তৈরি একটি স্মারক তোরণ দেখতে পাওয়া যায়। যতদূর সম্ভব খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে তৈরি ৬ মিটার উঁচু এই স্মারক তোরণটি ভিয়া আউগুস্তার উপরই অবস্থিত ছিল। বর্তমানে হাইওয়ে সিভি-১৫৭'র উপর এই তোরণটি অবস্থিত।[১০][১১] আরকো রোমানো দে কাবানেস নামে পরিচিত এই তোরণটি ১৯৩১ সালে ঐতিহাসিক-শৈল্পিক মনুমেন্ট (Monumento Histórico-Artístico) হিসেবে ঘোষণ করা হয়।[১০] ২০০৪ সালে কাবানেস শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের অন্যান্য রোমান স্মারকের সাথে এই তোরণটিকেও সংরক্ষণের বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।[১২]

বেনিওচ শহরের কাছে আরও একটি স্মারক দেখতে পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক সিভি-১০-এর একটা অংশে মূল রোমান রাস্তার কিছুটা অংশ সংরক্ষিত রয়েছে।[১৩][১৪]

এছাড়াও সাগুন্তো ও ভ্যালেন্সিয়া শহরের মধ্যে দিয়ে ভিয়া আউগুস্তার প্রাচীন পথের আশেপাশে রোমান যুগের বেশ কিছু স্মারক এখনও চোখে পড়ে। এগুলির মধ্যে সাগুন্তোর দুর্গ (Castillo de Sagunto) সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯৩১ সালে এটি স্পেনের জাতীয় স্মারক (Monumento nacional) ঘোষিত হয়।[১৫]

আন্দালুসিয়া

পুয়েন্তে রোমানো দে ভাদোইয়ানো, লিনারেস, খায়েন।

তৃতীয় পর্যায়ে এই দুই সহস্রাধিক বছর পুরনো রোমান রাজপথটি দক্ষিণ স্পেনে গুয়াদালকিবির নদী বরাবর আন্দালুসিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত খায়েন, কর্দোবা ও সেভিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে গিয়ে কাদিথ প্রদেশে প্রাচীন সমুদ্রবন্দর গাদেস (বর্তমান কাদিথ) পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এই পর্যায়ে এই রোমান রাজপথ যেসব স্থানের মধ্য দিয়ে গিয়েছে বা ছুঁয়ে গেছে, সেগুলি হল -

  • সান্তিপোনথে, কারমোনা, লা লুইসিয়ানা, এথিখা, আলমোদোবার দেল রিও, কর্দোবা, মন্তোরো, আলমেদিনিয়া, পুয়েন্তে খেনিল, ওসুনা, মার্চেনা, খেরেথ ও কাদিথ

রাজপথের এই অংশেও বহু উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্মারক ও স্থাপত্য চোখে পড়ে। যেমন - পুয়েন্তে দে ভাদোইয়ানো। এটি খায়েন প্রদেশের একটি প্রাচীন প্রস্তর নির্মিত পায়ে চলা সেতু। হাইওয়ে এ-৩১২'র নিকটে অবস্থিত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রোমানদের নির্মিত এই সেতুটি ১০ মিটার লম্বা ও এর অর্ধবৃত্তাকার খিলানটির উচ্চতা (ব্যাসার্ধ) প্রায় ৩.৫ মিটার। গুয়ারিথাস নদীর উপর স্থাপিত এই ঐতিহাসিক সেতুটি বর্তমানে ৬ একর জায়গাবিশিষ্ট একটি জাতীয় প্রাকৃতিক উদ্যান - এল পিয়েলাগোর (el Piélago) মধ্যে অবস্থিত। ভিলচেস পৌর অঞ্চল থেকে লিনারেস শহরের দিকে যেতে পথিমধ্যে এই সেতুটি দেখতে পাওয়া যায়।[১৬][১৭][১৮] বর্তমানে এটি স্পেনে ঐতিহাসিক স্থাপত্য (Monumento histórico) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও এই অঞ্চলে ভিয়া আউগুস্তার প্রাচীন পথের উপর যেসব উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নির্মাণ বা তার ধ্বংসাবশেষের উপর পরবর্তীকালে নির্মিত স্থাপত্য চোখে পড়ে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - পুয়েন্তে রোমানো দে কর্দোবা, পুয়েন্তে দে আন্দুখার (এই সেতুটির আটটি খিলানে এখনও রোমান যুগের স্থাপত্য সংরক্ষিত রয়েছে)[১৯], প্রভৃতি।

সেভিয়া ও কারমোনা শহরের মধ্যবর্তী এক স্থানে ভিয়া আউগুস্তার রোমান যুগের পুরনো চেহারা সুন্দরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও কারমোনা শহরপ্রাকারের সেভিয়া ফটক ও রোমান নেক্রোপোলিস (Necrópolis Romana de Carmona) ভিয়া আউগুস্তা সংলগ্ন অঞ্চলে রোমান যুগের বা তারও আগের কার্থেজীয় স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।[২০]

নির্মাণ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি

  • এমনকি সেই যুগেও এই রাস্তা নির্মাণের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রথমে রাস্তাটি কোন কোন অঞ্চল দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবে তার পরিকল্পনা ছকা হয়েছিল এবং সেই উদ্দেশ্যে জমি জরিপ করা হয়েছিল। রাস্তার পরিকল্পনার তৈরি হয়েছিল স্থানীয় ভূমিরূপ, জমির ঢাল এবং ইতিমধ্যেই থাকা ইবেরীয় যুগের বিভিন্ন রাস্তার কথা মাথায় রেখেই।
  • কাজ আরম্ভ হলে বহুক্ষেত্রেই এই কাজের উদ্দেশ্যে রোমান লিজিওনের সৈনিকদের ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • রাস্তাটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে তার ভিতের জন্য যে পরিখা খনন করা হয়েছিল তার প্রস্থ ছিল ৭.৩০ মিটার ও গভীরতা ছিল ১.১০ মিটার।
  • এরপর তিনটি স্তরে রাস্তাটি নির্মিত হয়। প্রথম স্তরটি তৈরি হয় স্টাটুমেন (এবড়ো খেবড়ো পাথর, ভাঙা ইঁটের টুকরো ও কাঁকুরে লাল মাটি) দিয়ে। এর উপরের দ্বিতীয় স্তরে ছিল মূলত ইঁট ও পাথরের ছোট ছোট টুকরো। তৃতীয় তথা সর্বোচ্চ স্তরটি নির্মিত হয়েছিল কাঁকুরে মাটি বা গ্র্যাভেল দিয়ে।
  • এর উপরে ছিল রাস্তার মূল উপরিতল। এটি তৈরি হয়েছিল চ্যাপ্টা পাথরের ছোট ছোট স্ল্যাব বা কোথাও কোথাও টাইলস বসিয়ে।
  • রাস্তাটি গড়ে ৪ - ৬ মিটার চওড়া করে তৈরি করা হয়েছিল। তবে কিছু কিছু জায়গায় এর প্রস্থ ছিল ১০ - ১৪ মিটার। শুধুমাত্র শহর এলাকাগুলিতে রাস্তার দুইপাশে হাঁটার জন্য সাইডওয়াক তৈরি করা হয়েছিল। এগুলি প্রস্থে ছিল ৩ - ১০ মিটার চওড়া।[২১]

ইতিহাস

এল মুসেও আরকেওলোখিকা দে লোরকা (মুরথিয়া) সংগ্রহশালায় রক্ষিত রোমান যুগের মাইলফলক। এতে খোদিত তথ্য থেকে আমরা ভিয়া আউগুস্তার নির্মাতা হিসেবে সম্রাট আউগুস্তুসের নাম জানতে পারি।

ভিয়া আউগুস্তা প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছিল একটি ভিয়া মিলিতারিস বা সামরিক রাস্তা হিসেবে। সেই কারণেই এর নির্মাণে রোমান লিজিয়নের সৈন্যদের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কর্দোবার কাছে একটি ভাঙা মাইলস্টোন পাওয়া গেছে; তার উপরে খোদিত লেখা থেকেও জানা যায় ৯০ খ্রিষ্টাব্দে এই রাস্তা যখন সারাই করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়, তখনও এর প্রাথমিক পরিচয় ছিল 'সামরিক রাস্তা' হিসেবেই।[২২] কিন্তু সাধারণ যোগাযোগের উদ্দেশ্যেও এই রাস্তা ব্যবহৃত হত। বস্তুত রোম থেকে অতলান্ত মহাসাগর পর্যন্ত যোগাযোগের উদ্দেশ্যে রাস্তার যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল, তার মূল মেরুদণ্ডই ছিল এই রাস্তাটি।[২৩] ভালেন্তিয়া (ভ্যালেন্সিয়া), সাগুন্তুম (সাগুন্তো), লুসেনতুম (আলিকান্তে), সেতাবিস (হাতিবা), ইলিসি (এলচে), প্রভৃতি শহরগুলি এই রাজপথকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।[২৪]

এই রোমান রাস্তায় নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর মাইলফলক বসানো ছিল। এই মাইলফলকগুলি মূলত কাপিটাস (শুরু) থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দূরত্ব নির্দেশ করতো। ফলকগুলি ছিল চোঙাকৃতি, উচ্চতায় ২ - ৩ মিটার, ব্যাস ৫০ - ৮০ সেমি। এই চোঙাকৃতি ফলকগুলি চৌকো বেদীর উপর বসানো থাকতো। এগুলি ছিল সাধারণভাবে গ্রানাইট বা বালিপাথর (sandstone) নির্মিত। এগুলিতে দূরত্বের হিসেব রক্ষিত হত রোমান মাইলের (১৪৮০ মিটার বা হাজার পা; এখানে এক পা দূরত্ব অর্থ জোড়া পদক্ষেপে যতটা অতিক্রম করা যায়; রোমানরা একে মিলে পাসুম, mille passum বলে অভিহিত করতো) হিসেবে।[২৫] এছাড়াও এইসব ফলকে আরও নানা তথ্য দেওয়া থাকত: রাস্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, নির্মাতা বা সংস্কারকের নাম, কাছাকাছি শহর এবং তার দূরত্ব, কখনও কখনও রাস্তার সূচনাস্থল (কাপুত ভিই) এবং শেষও (তেরমিনুস ভিই)।[৪]

নির্মাণ ইতিহাস

ভিয়া আউগুস্তার প্রথম পরিকল্পনা সম্রাট অগাস্টাসের আমলে রোমের বিভিন্ন প্রদেশগুলির যে পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক সংস্কার হয়, তার সাথে যুক্ত। প্রশাসনিক প্রয়োজনেই এইসময় রোমের অধীন বিভিন্ন প্রদেশগুলির সাথে রোমের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে অনেক জায়গাতেই নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়। যেমন, খ্রিস্টপূর্ব ২০ - ১৯ অব্দে তৎকালীন গলে (বর্তমান ফ্রান্সে) তৈরি হয় ভিয়া আগ্রিপা। প্রখ্যাত ভৌগোলিক স্ট্রাবোর লেখাতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।[২৬][২৭] খ্রিস্টপূর্ব ১৬ - ১৩ অব্দে সম্রাট অগাস্টাস যখন ইবেরীয় উপদ্বীপে আসেন[২৮], তিনি নিজের চোখেই সেখানে রাস্তার প্রয়োজনিয়তা দেখতে পান। এরপরেই তিনি সেখানে একটি রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ জারি করেন।[২৯] স্পেনের মুরথিয়া প্রদেশের লোরকা শহরের কাছে পাওয়া একাধিক ফলকে খোদিত তথ্য থেকে আমরা এ' সম্পর্কে জানতে পারি।[৩০][৩১][৩২] সমগ্র হিসপানিয়া এইসময় রোমের অধীনে এসে যাওয়ায় তার পক্ষে এইধরনের একটি বড় রাস্তার প্রকল্পে হাত দেওয়া সম্ভব হয়। রাস্তাটি সমগ্র হিসপানিয়া জুড়ে একটি বৃহৎ রাস্তার নেটওয়ার্কের অঙ্গ হিসেবেই তৈরি হয়। বিভিন্ন স্থানীয় রাস্তাকে যুক্ত করে এই সুবৃহৎ রাস্তার নেটওয়ার্কটির মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ২১০০০ কিলোমিটার বা ১৩০০০ মাইল।[২] খ্রিস্টপূর্ব ৮ - ২ অব্দের মধ্যে ভিয়া আউগুস্তার মূল রাস্তাটি তৈরি হয়।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী