ভবেশচন্দ্র সান্যাল
ভবেশচন্দ্র সান্যাল সাধারণত বি. সি. সান্যাল নামে পরিচিত (২২শে এপ্রিল ১৯০১ - ৯ই আগস্ট ২০০৩), ভারতীয় শিল্পে আধুনিকতার চূড়ামণিস্বরূপ হিসেবে বিবেচিত। তিনি ভারতীয় চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং তিন প্রজন্মের শিল্পীদের শিল্পকলা শিক্ষক ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি যে কেবল তিনবার - ১৯০৫, ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজন দেখেছেন তাই নয়; বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় শিল্পের সমস্ত পর্যায়গুলিও প্রত্যক্ষ করেছেন।[১][২] তাঁর উল্লেখযোগ্য চিত্রগুলির মধ্যে আছে উড়ন্ত কাকতাড়ুয়া , গরুর পাল , হতাশা এবং শান্তির পথে। শান্তির পথে চিত্রটিতে তিনি মহাত্মা গান্ধীকে এঁকেছেন একটি হিন্দু ও একটি মুসলিম সন্তানের সাথে।[৩]
বি. সি. সান্যাল | |
---|---|
জন্ম | ধুবড়ী, আসাম | ২২ এপ্রিল ১৯০১
মৃত্যু | ৯ আগস্ট ২০০৩ নতুন দিল্লি | (বয়স ১০২)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | ভবেশচন্দ্র সান্যাল |
পেশা | চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, শিল্পকলা শিক্ষক |
১৯৮৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[৪] ১৯৮০ সালে ভারতের জাতীয় চারুকলা একাডেমী, ললিত কলা একাডেমী থেকে তাঁকে ভিজ্যুয়াল শিল্পকলায় ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ললিত কলা একাডেমী ফেলো আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
১৯০২ সালে ধুবড়ীর এক বাঙালি পরিবারে তাঁর জন্ম। শৈশবেই তিনি ১৯০৫ সালের বাংলার বিভাগ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। জীবনের একটি বিরাট আঘাত হিসেবে তিনি ছয় বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। এরপর তাঁর মা তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন। মায়ের পুতুল তৈরির প্রতি ভালবাসা তাঁর মধ্যে ভাস্কর হবার মনোবৃত্তি জাগিয়ে তুলেছিল।[২]
পরে তিনি গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট (জিসিএসি), কলকাতা থেকে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি পার্সি ব্রাউন এবং জে.পি. গাঙ্গুলির মতো শিক্ষককে পেয়েছিলেন।
কর্মজীবন
১৯২০ সালে, তিনি শ্রীরামপুর কলেজ অব আর্টে যোগ দেন, যেখানে তিনি পরবর্তী ছয় বছর চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য অনুশীলন করে এবং শিক্ষাদান করে অতিবাহিত করেছিলেন। এই সময়কালে তিনি বেঙ্গল স্কুলের সদস্যপদ নেননি বা ভিক্টোরীয় শিক্ষাদানের পক্ষে ছিলেন না, কিন্তু তাঁর এক নিজস্ব স্বতন্ত্র শৈলী তৈরী করেছিলেন, যা সকলের চোখে পড়েছিল।[৫]
১৯২৯ সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘোরানোর মত একটি ঘটনা ঘটে, যখন তাঁকে একটি পাঞ্জাবি প্রতিষ্ঠান কৃষ্ণা প্লাস্টার দ্বারা নিযুক্ত করা হয়েছিল, লাহোরে গিয়ে সম্প্রতি শহীদ নেতা, লালা লাজপত রায়ের একটি আবক্ষ মূর্তি তৈরী করে দেওয়ার জন্য। তার কিছুদিন পরেই ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন। তাঁর আরো অন্যান্য কিছু কাজ বাকি থাকায় তিনি সেখানে থেকে যান এবং তার পরেই মেয়ো স্কুল অব আর্টস, লাহোর (বর্তমানে ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস কলেজ নামে পরিচিত) এর উপ-অধ্যক্ষ হন। এটি শুরু করেছিলেন লকউড কিপলিং (লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং) এর পিতা)। এখানকার দুই ছাত্র সতীশ গুজরাল এবং কৃষেণ খান্না স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট আধুনিকতাবাদী হয়েছিলেন। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়ো কলেজে ছিলেন, এরপর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, কারণ ব্রিটিশ রাজ তাঁকে একজন "উত্তেজনা সৃষ্টিকারী" হিসাবে দেখছিল।
পরবর্তীকালে, ১৯৩৭ সালে তিনি লাহোর কলেজ অব আর্ট স্থাপন করেন,[৬] যেটি ছিল একটি চিত্রশালাসহ বিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে এটি চালু হয় ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজের প্রাঙ্গনে, এর প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ ডঃ এসকে দত্তের আমন্ত্রণে। পরবর্তীতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছিল দয়াল সিং প্রাসাদের সর্বনিম্ন তলে। এর উদ্বোধনের সময় এখানে সেই সময়ের লাহোরের বিশিষ্ট শিল্পীদের একটি প্রদর্শনী করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে শিক্ষাদান চালিয়ে যান।
আরো পড়ুন
- Bhabesh Chandra Sanyal Ed. Jaya Appasamy, S. A. Krishnan. Lalit Kala Akademi, 1967.