ব্যাং ক্বাং কেন্দ্রীয় কারাগার
ব্যাং ক্বাং কেন্দ্রীয় কারাগার (থাই: บางขวาง) থাইল্যান্ডের নন্থাবুর প্রদেশের একটি পুরুষ কারাগার। এটি ব্যাংকক থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে চায়ো ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত। এটি থাইল্যান্ডের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ কারেকশন’ এর একটি অংশ। ২০০৯ সালে এখানে ৪,১৬৩ জন বন্দী ছিল।[১]
![]() | |
অবস্থান | নন্দাবুড়ি, থাইল্যান্ড |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ১৩°৫০′৪৮″ উত্তর ১০০°২৯′৩৫″ পূর্ব / ১৩.৮৪৬৬৭° উত্তর ১০০.৪৯৩০৬° পূর্ব |
অবস্থা | সক্রিয় |
নিরাপত্তা শ্রেণি | সর্বাধিক সুরক্ষা |
খোলা হয় | ১৯৩৩ |
ব্যবস্থাপক | থাই সংশোধন বিভাগ |
ইতিহাস
এই কারাগারে বহু বিদেশী বন্দী আছে। এটি একটি কঠোর কারাগার যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীরা থাকে। প্রত্যেক বন্দীকে এখানে সাজার প্রথম তিন মাস পায়ে শিকল পরে থাকতে হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের শিকল পায়ে স্থায়ীভাবে ঝালাই করে লাগিয়ে দেওয়া হতো,[২] তবে ২০১৩ সালে এই প্রথা বাতিল করা হয়।[৩] ‘দি ডেমেজ ডান’ বইতে ভূতপূর্ব বন্দী ও মাদক পাচারকারী ওয়ারেন ফেলোস বলেন এই কারাগারটি ‘বিগ টাইগার’ নামে থাইদের কাছে পরিচিত ছিল কারণ এরা অপরাধীর সন্ধানে চুপিসারে ঘুরে বেড়াতো আর আটক করতো।[৪] ফেলোস এর সহচর পল হাওয়ার্ডও এই কারাগারে সাজার কিছু সময় আটক ছিলেন।বন্দীরা প্রতিদিন একবাটি ভাত ও তরকারির স্যুপ পেয়ে থাকেন। অন্যান্য খাবার ক্যান্টিন থেকে কিনে খেতে হয়। কারাগারটি ‘চিট ফান্ড’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। ক্যান্টিনে প্রত্যেক বন্দীর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট আছে। দরিদ্র বন্দীরা খাবার কেনার টাকা আয় করতে ধনী বন্দী ও কারারক্ষীদের বিভিন্ন কাজকর্ম করে থাকে। কিছু পশ্চিমা বন্দী; বিশেষত ব্রিটিশ, আমেরিকান ও কানাডিয়ানরা কিছু অতিরিক্ত মাসিক অনুদান পায়। থাই বন্দীদের লাল চাল ‘খাও ডায়েং’ এবং বিদেশী বন্দীদের সাদা চাল পরিবেশন করা হতো। তবে একসময় এই বৈষম্য রহিত করা হয়। বর্তমানে সকল বন্দীকে একই সাদা চালের ভাত দেওয়া হয়।
উল্লেখযোগ্য বিদেশী বন্দী
২০০৯ সালে ব্যাং ক্বাঙে নয়জন ব্রিটিশ বন্দী ছিল। এদের একজন মিচেল কনেল উত্তেজক নেশাদ্রব্য চোরাচালানের দায়ে ৯৯ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন (যা মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে দেওয়া এবং পরবর্তীকালে কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়)। অন্য একজন এন্ড্রু হাওক, হিরোইন পাচারের অভিযোগে ৫০ বছরের কারাদণ্ড লাভ করেন। তিনি পরে ক্ষমা পান এবং কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। এন্ড্রু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাং ক্বাং থেকে ছাড়া পান। অন্যদিকে মিচেল কনেলকে অবশিষ্ট সাজা ভোগের জন্য যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানো হয়। সে যুক্তরাজ্যের বন্দী বিনিময় চুক্তির সাহায্যে সুবিধা লাভ করে।১৯৯৬ সালে হিরোইন রপ্তানির প্রচেষ্টা করতে গিয়ে লি উইলিয়াম গ্রেপ্তার হন এবং তার ২০০ বছরের কারাদণ্ড হয় (যা পরে কমিয়ে ৯৯ বছর করা হয়)। তিনি দশবছর ধরে শিকলে আবদ্ধ ছিলেন (এর মধ্যে পাঁচ বছর নিঃসঙ্গ কারাবাস) এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ব্রিটিশ দূতাবাস দ্বিপাক্ষিক বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে তার সাজার অবশিষ্টাংশ ব্রিটিশ হেফাজতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতিবাহিত করার জন্য আবেদন করে। ২০১১ সালে তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত নেওয়া হয় এবং এইচএমপি রাই হিল কারাগারে একটি খ্রিস্টান ভজনালয়ে পিয়ানোতে স্তবগান বাজানোর কাজ করেন। এসময় তিনি মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রিও অর্জন করেন। ১৫ বছর কারাদণ্ড ভোগের পর ২০১৬ সালে সম্রাটের ক্ষমায় তিনি মুক্তিলাভ করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের হাজত
এই কারাগারে থাইল্যান্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা থাকে এবং এখানেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০০৯ সালে এখানে ৭৪৩ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষ কয়েদী ছিল।[১]১৯৯৫ সালে এলান জন ডেভিস নামক এক ব্রিটিশ নাগরিক ব্যাং ক্বাঙের মৃত্যুদণ্ডিত আসামীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনিই থাইল্যান্ডে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত প্রথম ইউরোপিয়ান।[৫]
আরও দেখুন
- ব্যাংকক হিলটন