বিষ্ণুরাম মেধি

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

বিষ্ণুরাম মেধি (ইংরেজি: Bishnuram Medhi; অসমীয়া: বিষ্ণুরাম মেধি) অসমের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৫৭ সনের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৪ সনের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি মাদ্রাস রাজ্য বর্তমান চেন্নাই-এর রাজ্যপাল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[২]

অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
বিষ্ণুরাম মেধি
অসমর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
১৯৮৯ সালের স্ট্যাম্পে বিষ্ণুরাম
মুখ্যমন্ত্রী[১]
কাজের মেয়াদ
১২ আগস্ট, ১৯৫০ – ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৫৭[১]
নেতাভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
পূর্বসূরীগোপীনাথ বরদলৈ
উত্তরসূরীবিমলা প্রসাদ চলিহা[১]
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৪ এপ্রিল, ১৮৮৮
হাজো
মৃত্যু২১ জানুয়ারী, ১৯৮১
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীনির্মলা মেধি
জীবিকারাজনীতি, অধিবক্তা
ধর্মহিন্দু
১৯৮৯ সালের স্ট্যাম্পে বিষ্ণু রাম মেধি

প্রারম্ভিক

১৮৮৮ সনের ২৮ এপ্রিল তারিখে অসমের গুয়াহাটির নিকটবর্তী হাজো নামক স্থানের এক দরিদ্র পরিবারে বিষ্ণুরাম মেধির জন্ম হয়। ১৯০৫ সনে গুয়াহাটির সরকারি উচ্চ ইংরেজি স্কুল ( বর্তমান নাম কটন কলেজিয়েট) থেকে মেট্রিকুলেশন সম্পূর্ণ করেন।[৩] তারপর তিনি অক্সফোর্ড মিশন হোষ্টেলে বসবাস করে প্রেসিডেন্সী কলেজে নামভর্তি করেন। ১৯১১ সনে তিনি রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৩ সনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।[৪]

১৯১৪ সনে বিষ্ণুরাম মেধি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৫ সনে তিনি গুয়াহাটিতে উকালতি আরম্ভ করেন। ১৯৩১ সনে কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ে উকীল হিসেবে নামভর্তি করেন। তিনিই ছিলেন অসমের প্রথম শ্রেনীর উকিল। সেই সময়ে জনগনেরা তাকে বাঘ উকিল আখ্যা দিয়েছিল।[৪]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা

১৯২০ দশকে বিষ্ণুরাম মেধি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯২১ সনে সংঘটিত অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৬ সনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পাণ্ডুতে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত অধিবেশনে তিনি উপেন্দ্র সেন ও কুলধর চলিহার সহিত অর্থসচিবের দায়িত্ব বহন করেছিলেন।[৪] ১৯৩০ সনে তিনি অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি রুপে নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৫]

স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক জীবন

লোকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান

১৯৩৮ সনে বিষ্ণুরাম মেধি গুয়াহাটি লোকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান রুপে নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন গুয়াহাটি লোকেল বোর্ডের প্রথম কংগ্রেসি চেয়ারম্যান। তার নির্দেশমতে লোকেল চেয়ারম্যানের কার্য্যালয়ে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।[৪]

বিত্ত ও রাজহ মন্ত্রী

১৯৪৬ সনে বিষ্ণুরাম মেধি হাজো বিধান সভা সমষ্টি থেকে অসম বিধান সভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি গোপীনাথ বরদলৈ-এর মন্ত্রীসভায় বিত্ত ও রাজহ মন্ত্রীর দায়িত্ব বহন করেন। ১৯৫০ সন পর্যন্ত তিনি সেই পদের দায়িত্ব বহন করেন।[৪]

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে

১৯৫০ সনের ৫ আগস্ট তারিখে হঠাৎ করে গোপীনাথ বরদলৈ-এর মৃত্যু হয়। তার কয়েকদিন পর ১২ আগস্ট তারিখে অসম কংগ্রেস সংসদি দলের সন্মতিক্রমে তাকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়।[৬] ১৯৫২ সনে অসমে প্রথমবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেস দল সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করে। বিষ্ণুরাম মেধির নেতৃত্বে কংগ্রেস দল সরকার গঠন করে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব বহন করার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সন্মুখীন হন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কালা বাজারের আবির্ভাব, পরিবহনের দুরবস্থা, ভারত বিভাজনের সময় পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত বাঙালীদের প্রভাব, ব্রহ্মপুত্রের দলং, তৈল শোধনাগার, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, ১৯৫৫ সনে রাজ্য পুনর গঠনের সমস্যা ইত্যাদি। [৪]

রাজ্যপাল হিসেবে

মাদ্রাজের (বর্তমান চেন্নাই) রাজ্যপালের পদ লাভ করে ১৯৫৭ সনের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে অসমের নেতৃত্ব ত্যাগ করেন। ১৯৫৮ সনের ৮ জানুয়ারি তারিখে তিনি অসম থেকে মাদ্রাস অভিমুখে রওনা হন। ১৯৫৮ সনের ২৪ জানুয়ারি তারিখে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ তাকে মাদ্রাসের রাজ্যপাল রুপে নিযুক্তি প্রদান করেন। তিনিই রাজ্যপাল পদ প্রাপ্ত অসমের প্রথমের ব্যক্তি। নেতৃত্বভার বহন করার পরেই মাদ্রাসে হরিজন ও মারোয়ারদের সহিত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। কিন্তু বিষ্ণুরাম মেধি অতি সহজেই সংঘর্ষের দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম হয়েছিলেন। নীলগিরির নিকটবর্তী স্থান ও কুরমবাসে শিক্ষার প্রসার করার জন্য তিনি অশেষ চেষ্টা করেন। মাদ্রাসে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেকবার কেরেলার রাজ্যপাল ও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভি.ভি.গিরির সহিত সাক্ষাৎ করেছিলেন। মাদ্রাসে থাকাকালীন সময়ে তিনি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও এডিনবার্গের ডিউক, যুগোশ্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্সাল টিটো ও তার পত্নী, পশ্চিম জার্মানীর প্রেসিডেন্ট ডঃ লুকবেক, গ্রীসের রাজা-রানী ও কম্বোদিয়ার রাজা-রানী ইত্যাদি প্রসিদ্ধ ব্যক্তির সহিত আলোচনা করার সুবিধা পেয়েছিলেন।[৪] ১৯৬৪ সনের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি রাজ্যপালের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।তারপর তিনি অসমের ফিরে আসেন।

অসমের রাজনীতিতে পুনরায় পত্যাবর্তন

মাদ্রাস থেকে ফিরে এসে তিনি পুনরায় অসমের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৭ সনে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি হাজো সমষ্টি থেকে বিধান সভায় নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সনের ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি হাজো বিধান সভার সমষ্টির বিধায়ক রুপে কার্যনির্বাহ করেন।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন

আইনের শিক্ষা সমাপ্ত করে বিষ্ণুরাম মেধি উত্তর গুয়াহাটির জীবন চন্দ্র চৌধুরীর কন্যা নির্মলা মেধিকে বিবাহ করেন। বিবাহের সময় নির্মলা মেধির বয়স ছিল মাত্র ১১বৎসর।[৪] তাদের সন্তান ছিলনা। স্বাধীনতা আন্দোলন, জেল, সামাজিক কর্ম ও কংগ্রেসের গঠনে আত্মনিয়োগ করার জন্য তিনি প্রায় বেশীর ভাগ সময় পত্নীর থেকে দূরে থাকত হত।

মৃত্যু

১৯৮১ সনের ২১ জানুয়ারি তারিখে বিষ্ণুরাম মেধির মৃত্যু হয়। [৭]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী