বিশ্বায়ন

আন্তঃদেশীয় আর্থনীতিক প্রপঞ্চ

বিশ্বায়ন (globalization) বা ভুবনায়ন বিংশ শতকের শেষভাগে উদ্ভূত এমন একটি আন্তর্জাতিক অবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান,উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে।

এই ছবিটি থেকে বিশ্বায়ন সম্পর্কে জানতে পারবো।

এটি পারস্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সকল কিছুর উপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বায়ন বিষয়টি নিয়ে আক্ষরিক অর্থে গবেষণা নতুন করে শুরু হলেও এই ব্যাপারটি বেশ প্রাচীনই বলতে হবে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও তখন কোনো সাধারণ নীতিমালা ছিল না। হাজার বছর পূর্বে মধ্যযুগে সিল্ক রোড ধরে ইউরোপের সাথে মধ্য এশিয়া হয়ে চীনের বাণিজ্য চলত।

বিশ্বায়নের ধারণা

পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশেষ করে ১৮০০ শতকের প্রথমার্ধে বাষ্পীয় পোত ও টেলিগ্রাফের উন্নয়নের পর থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষ বা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধির যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে বিশ্বায়ন বলে। জাতিরাষ্ট্রসমূহ ও লোকজনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য, চিন্তাভাবনা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্বায়ন হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়, যার রয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিমুখ। কিন্তু বিশ্বায়নের ইতিহাসের বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে বিতর্ক ও কূটনীতি।

অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পণ্য, পরিসেবা এবং পুঁজি, প্রযুক্তি ও উপাত্তের অথর্নৈতিক সম্পদ। বাষ্পীয় শকট, বাষ্পীয় পোত, জেট ইঞ্জিন এবং কনটেইনারবাহী জাহাজ ইত্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে কতিপয় সুবিধা নিয়ে এসেছে, সেইসাথে টেলিগ্রাফ-এর আধুনিক প্রজন্ম ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছে। এগুলোর উন্নয়ন বিশ্বায়নের প্রধান উপাদান এবং এগুলো অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকতর আন্তঃনির্ভরতার সৃষ্টি করেছে।

যদিও অধিকাংশ পণ্ডিত বিশ্বায়নের উৎপত্তি আধুনিক সময়ে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন; তবে অনেকে এটি ইউরোপীয়দের সামুদ্রিক আবিষ্কারের মহান যুগের, অর্থাৎ নতুন পৃথিবীতে অভিযানের অনেক আগে এর ইতিহাসের সন্ধান করেন, কেউ কেউ আবার খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের কথা বলে থাকেন। ব্যাপক মাত্রায় বিশ্বায়ন শুরু হয়েছিলো ১৮২০-এর দশকে। উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুতে বিশ্ব অর্থনীতি ও সংস্কৃতির যোগসূত্র (connectivity) খুবই দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পায়। বিশ্বায়ন পরিভাষাটি সাম্প্রতিক, ১৯৭০-এর দশক থেকে এটি বর্তমান অর্থে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বিশ্বায়নের চারটি মৌলিক দিক চিহ্নিত করেছে; যথা- (১) বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন, (২) পুঁজি ও বিনিয়োগ সঞ্চালন, (৩) অভিগমন ও মানুষজনের বিচরণ এবং (৪) জ্ঞান বিতরণ। এছাড়াও পরিবেশগত পরিবর্তন, যেমন- বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পানি, বায়ু দূষণের সীমা অতিক্রম এবং সমুদ্রে মাছের অত্যাহরণ বিশ্বায়নের সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি, আর্থসামাজিক সম্পদ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। তাত্ত্বিক ভাষায় বিশ্বায়নকে সাধারণভাবে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত করা হয়; যথা- (১) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, (২) সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ও (৩) রাজনৈতিক বিশ্বায়ন। অবশ্য কেউ কেউ আবার পরিবেশগত বিশ্বায়ন নামে অপর একটি ভাগ যোগ করে একে চারভাগে বিভক্ত করেও আলোচনা করে থাকে।

বিশ্বগ্রাম ও বিশ্বায়নের পার্থক্য

বিশ্বায়ন একটি সামগ্রিক ধারণা, যার কারণে সমগ্র বিশ্বে পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ এবং বিনিময় সংঘটিত হয়। শিক্ষা, গবেষণা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদিত পণ্য, সংস্কৃতি কোন নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।বিশ্বায়ন এর ফলে আমরা যেমন আমাদের প্রস্তুতকৃত পোশাক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছি, ঠিক তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা আসে। জাহাজ, বিমান সহ বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত বাহন, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে এবং একই সাথে বিশ্বায় এর দ্রুতপ্রসার ঘটে।বিশ্বগ্রাম: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ আজ একক সমাজে বাস করে। মুহূর্তের মধ্যেই একজন অন্যজনের খবর নিতে পারে, সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে। সীমানা আজ যেন কোন বাধাই না। মানুষ এখন কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক থেকে বিশ্বের নাগরিক হয়ে উঠছে। বিশ্বায়ন এর ফলেই এটা সম্ভব হয়ে উঠছে।বিশ্বায়ন এবং বিশ্বগ্রাম কে Cause and effect তত্ত্বের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে বিশ্বায়ন হচ্ছে cause আর বিশ্বগ্রাম হচ্ছে effect. অর্থাৎ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাই হচ্ছে বিশ্বগ্রাম।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী