বিটা ক্ষয়
নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে বিটাক্ষয় হল একধরনের তেজসক্রিয় ক্ষয় যেখানে বিটা রশ্মি ও নিউট্রন নির্গত হয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে। যেমন: ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার পর প্রোটন,নিউট্রনে পরিণত হয়। বিটা ক্ষয় হল দুর্বল নিউক্লিয় বলের একটি ফলাফল।[১][২]
বর্ণনা
বিটা ক্ষয় দুই প্রকার।যথা:১.বিটা ঋণাত্মক এবং বিটা ধনাত্মক।ঋণাত্মক বিটা ক্ষয়ে একটি ইলেক্ট্রন ও ইলেক্ট্রন নিউট্রন প্রতিকণিকা নির্গত করে নিউট্রন,প্রোটনে পরিণত হয়।আবার বিটা ধনাত্মক ক্ষয়ে একটি পজিট্রন ও ইলেক্ট্রন নিউট্রন নির্গত হয়ে প্রোটন,নিউট্রনে পরিণত হয়।
আবিষ্কার
১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেল ইউরেনিয়ামে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে মেরি ও পিয়ের কুরি থোরিয়াম, পোলোনিয়াম এবং রেডিয়ামে তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করেন। ১৮৯৯ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড তেজস্ক্রিয় নিঃসরণকে দুটি ভাগে ভাগ করেন: আলফা এবং বিটা (বর্তমানে বিটা মাইনাস)। আলফা রশ্মি কাগজ বা অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা স্তর দ্বারা আটকানো যেতে পারে, যখন বিটা রশ্মি অ্যালুমিনিয়ামের বেশ কয়েকটি মিলিমিটার ভেদ করতে পারে। ১৯০০ সালে পল ভিলার্ড আরও অনুপ্রবেশকারী ধরনের বিকিরণ শনাক্ত করেন, যা রাদারফোর্ড ১৯০৩ সালে মৌলিকভাবে নতুন ধরনের বিকিরণ হিসাবে শনাক্ত করেন এবং গামা রশ্মি নামকরণ করেন। আলফা, বিটা এবং গামা হল গ্রীক বর্ণমালার প্রথম তিনটি অক্ষর।
১৯০০ সালে বেকেরেল ক্যাথোড রশ্মি অধ্যয়ন এবং ইলেক্ট্রন শনাক্ত করতে জে.জে. থমসন দ্বারা ব্যবহৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে বিটা কণার ভর-থেকে-চার্জ অনুপাত (m/e) পরিমাপ করেন। তিনি দেখতে পান যে বিটা কণার m/e ঠিক থমসনের ইলেক্ট্রনের m/e এর মতোই। তাই তিনি প্রস্তাব করেন যে বিটা কণা আসলে ইলেক্ট্রন।[৩]
১৯০১ সালে রাদারফোর্ড এবং ফ্রেডরিক সোড্ডি দেখান যে আলফা এবং বিটা তেজস্ক্রিয়তা একটি রাসায়নিক মৌলের পরমাণুর অন্য রাসায়নিক মৌলের পরমাণুতে রূপান্তরিত হওয়ার সাথে জড়িত। ১৯১৩ সালে, আরও তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের পণ্য জানা হওয়ার পরে, সোড্ডি এবং কাজিমিয়ার্জ ফজানস স্বাধীনভাবে তাদের তেজস্ক্রিয় স্থানচ্যুতি সূত্র প্রস্তাব করেন, যা বলে যে বিটা (অর্থাৎ, β−) নিঃসরণ একটি উপাদান থেকে অন্য একটি উপাদান তৈরি করে যা পর্যায় সারণিতে ডানদিকে এক স্থানে অবস্থিত, যখন আলফা নিঃসরণ এমন একটি উপাদান তৈরি করে যা পর্যায় সারণিতে দুটি স্থানে বামে অবস্থিত।
তেজস্ক্রিয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা যা আমাদের চারপাশে রয়েছে। এটি পরমাণু বোমা এবং পারমাণবিক চুল্লীর মতো প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হয়। তেজস্ক্রিয়তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমাদেরকে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের অনেক মৌলিক নীতিগুলিকে বুঝতে সাহায্য করেছে।
ধনাত্মক বিটা ক্ষয়
ধনাত্মক বিটা ক্ষয়ে পরমাণুতে নিউক্লিয় সংখ্যা তার পূর্ববর্তি পরমাণুর নিউক্লিয় সংখ্যার চেয়ে এক কম হয়।p → n+(e^+)+vনিউট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এটি ঘটে থাকে।
ঋণাত্মক বিটা ক্ষয়
ঋণাত্মক বিটা ক্ষয়ের কারণে পরমাণু পারমাণবিক সংখ্যা এক করে বেরে যায়।n→p+(e^-)+vনিউট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এটি ঘটে থাকে।