বিজ্ঞান পরিষদ
বিজ্ঞান পরিষদ বা বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি বলতে এক ধরনের বিদ্বান পরিষদ (বিশেষ উচ্চশিক্ষায়তনিক বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান) বা বিদ্বৎসমাজকে (বিজ্ঞানীদের সম্মানসূচক সমাজ) বোঝায় যেটি গবেষণা, শিক্ষা ও তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উন্নতি সাধনের কাজে নিয়োজিত। এটি দেশভেদে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্থায়িত হতেও বা না-ও হতে পারে। কিছু কিছু রাষ্ট্রীয় আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট বিজ্ঞান পরিষদকে সম্মানার্থে জাতীয় বিদ্বান পরিষদ কিংবা (রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে) রাজকীয় বিজ্ঞান পরিষদের মর্যাদায় উন্নীত করা হতে পারে। পরিষদের সদস্য ও বিশিষ্ট সভ্যরা কোনও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে তাঁদের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান বা পেশাদারি কৃতিত্বের কারণে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।[১]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/aa/Main_building_of_the_Royal_Swedish_Academy_of_Sciences_%28Kungliga_Vetenskapsakademien%29%2C_Frescati%2C_Norra_Djurg%C3%A5rden%2C_Stockholm.jpg/260px-Main_building_of_the_Royal_Swedish_Academy_of_Sciences_%28Kungliga_Vetenskapsakademien%29%2C_Frescati%2C_Norra_Djurg%C3%A5rden%2C_Stockholm.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/14/Mariankatu_5.jpg/260px-Mariankatu_5.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/55/Pontifical_Academy_of_Sciences%2C_Vatican_-_entrance.jpg/260px-Pontifical_Academy_of_Sciences%2C_Vatican_-_entrance.jpg)
কর্মকাণ্ডের পরিধি
বিজ্ঞান পরিষদগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণার পক্ষে প্রচারণা চালায়, বিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে ও জনসাধারণের কাছে বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্প্রচার করে। বিজ্ঞান পরিষদ একটিমাত্র বৈজ্ঞানিক বা পেশাদার ক্ষেত্র নয়, বরং বহুসংখ্যক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, যাদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, ভূবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শাস্ত্র অন্যতম। এই বহুশাস্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জটিল বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলীর পূর্ণাঙ্গ অনুধাবন সহজ হয়। বিজ্ঞান পরিষদ হয় নিজে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পাদন করে অথবা অন্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সহায়তা করে। মৌলিক ও ফলিত ব্যবহারিক গবেষণা - উভয়ই সম্পাদন করা হতে পারে। বিজ্ঞান পরিষদগুলি সমকক্ষীয় পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুণমান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। পরিষদ গবেষণা সাময়িকী প্রকাশনা, সম্মেলনের আয়োজন ও সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কাজটি করতে পারে। এছাড়া অনেক বিজ্ঞান পরিষদ শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, যাদের মধ্যে বিজ্ঞানী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে বিজ্ঞান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান অন্তর্ভুক্ত। এ উদ্দেশ্যে তারা কর্মশালা, বক্তৃতামালা ও শিক্ষামূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে পারে। বিজ্ঞান পরিষদগুলি প্রায়শই সরকার ও সরকারি বা বেসরকারি নীতিনির্ধারকদেরকে বৈজ্ঞানিক বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ-সুপারিশ প্রদান করে থাকে। তারা বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রকাশ করতে পারে, যার মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়। বিজ্ঞান পরিষদগুলি প্রায়শই একে অপরের সাথে ও আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনগুলির সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। ফলে রাষ্ট্রের সীমা অতিক্রম করে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের বিনিময় আরও জোরালো হয়। বিজ্ঞান পরিষদ্গুলি প্রায়ই জনসংযোগমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, যার উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেততনা বৃদ্ধি করা। এ লক্ষ্যে তারা জনসমক্ষে বক্তৃতা, প্রদর্শনী ও অন্যান্য উদ্যোগের আয়োজন করতে পারে, যাতে বৃহত্তর শ্রোতা-দর্শকের কাছে বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলি সম্প্রচার করা সম্ভব হয়। বিজ্ঞান পরিষদগুলির অনেকেই মহাফেজখানা, গ্রন্থাগার এবং বিজ্ঞানের ইতিহাস ও প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীদের অবদানের প্রতি নিবেদিত জাদুঘর সৃষ্টি ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজ করে থাকে। পরিষদগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অনুসরণীয় নৈতিক আদর্শমানগুলি প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের কাজও করতে পারে, বিজ্ঞানে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারে আলোচনায় গবেষণার সততা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহের নৈতিক প্রশ্নগুলি নিয়ে অবদান রাখতে পারে। তারা বিশিষ্ট সভ্যপদ বা সদস্যপদ প্রদানের ব্যবস্থার মাধ্যমে বিজ্ঞানে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি ও সম্মাননা প্রদান করতে পারে। তারা উদীয়মান গবেষকদেরকে উৎসাহিত করতে বৃত্তি ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে পারে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
টেমপ্লেট:Asian Academies of Sciencesটেমপ্লেট:European Academies of Sciences