বাহামা দ্বীপপুঞ্জ

উত্তর আমেরিকার দেশ

বাহামা দ্বীপপুঞ্জ( /bəˈhɑːməz/ /bəˈhɑːməz/ ), অফিসিয়ালি কমনওয়েলথ অফ দ্য বাহামাস নামে পরিচিত,[৮] আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি দেশ।[৯]

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কমনওয়েলথ

বাহামা দ্বীপপুঞ্জ
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের জাতীয় পতাকা
পতাকা
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: "Forward, Upward, Onward Together"
জাতীয় সঙ্গীত: "বাহামাসে পদযাত্রা "

রাজকীয় সঙ্গীত: "গড সেইভ দ্য কিং"
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান
রাজধানীনাসাউ
সরকারি ভাষাইংরেজি
সরকারসংসদীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র[১][২]
• রাজা
তৃতীয় চার্লস
• গভর্নর জেনারেল
আর্থার দিওন হান্না
• প্রধানমন্ত্রী
হিউবার্ট ইনগ্রাহাম
স্বাধীন 
[যুক্তরাজ্য]থেকে
• Self-governing
১৯৬৪
• পূর্ন স্বাধীন
১০ জুলাই, ১৯৭৩[৩]
আয়তন
• মোট
১৩,৮৭৮ কিমি (৫,৩৫৮ মা) (১৬০তম)
• পানি (%)
২৮%
জনসংখ্যা
• ২০০৯ আনুমানিক
৩০৭,৪৫১[৪] (১৭৭তম)
• ১৯৯০ আদমশুমারি
২৫৪,৬৮৫
• ঘনত্ব
২৩.২৭/কিমি (৬০.৩/বর্গমাইল) (১৮১তম)
জিডিপি (পিপিপি)2017 আনুমানিক
• মোট
$9.374 billion[৫]
• মাথাপিছু
$25,173[৫]
জিডিপি (মনোনীত)2017 আনুমানিক
• মোট
$9.172 billion[৫]
• মাথাপিছু
$24,630[৫]
জিনি (2001)57[৬]
উচ্চ
মানব উন্নয়ন সূচক (2014)বৃদ্ধি 0.790[৭]
উচ্চ · 55th
মুদ্রাডলার (BSD)
সময় অঞ্চলইউটিসি-৫ (EST)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি-৪ (EDT)
কলিং কোড১-২৪২
ইন্টারনেট টিএলডি.bs
বাহামার কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের মানচিত্র

এটি লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের ভূমির ৯৭% জুড়ে অবস্থিত এবং দ্বীপপুঞ্জের ৮৮% জনসংখ্যার বাসস্থান । সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ ৭০০এর বেশি দ্বীপ, অণুদ্বীপ, প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপটি আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে, কিউবার উত্তরে অবস্থিত, হিস্পানিওলা (হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র )এবং তুর্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্ ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ফ্লোরিডা র পূর্বে অবস্থিত। এর রাজধানী নাসাউ নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপে অবস্থিত। দ্য রয়েল বাহামাস ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী বাহামা ৪,৭০,০০০ কিমি২ (১,৮০,০০০ মা২) সমুদ্রপৃষ্ঠ জুড়ে রয়েছে ।[১০]

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আদি বাসিন্দাদের বলা হয় লুকায়ান যারা ছিল আরকান ভাষী তাইনোদের একটি শাখা[১১]। লুকায়ানরা ছিল নিরীহ শান্তিপ্রিয় জাতি। কলম্বাসই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ১৪৯২ সালে "নতুন পৃথিবী " হিসেবে এ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যে সব স্প্যানিশরা বাহামায় আসে তারা স্থানীয় লুকায়ানদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের দূরের দ্বীপে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রী করে দেয়। যার ফলে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ১৫১৩ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় জনমানবহীন ছিল যতদিন না ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা এখানে বসতি স্থাপন শুরু করে। ইংরেজরা বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথে জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ১৭১৮ সালে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ রয়েল কলোনী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে ইংরাজদের পরাজয়ের পর হাজার হাজার ইংরাজ অনুগামী তাদের ক্রীতদাসদের নিয়ে আমেরিকা থেকে বাহামায় চলে আসে ও বৃটিশ সরকারের অনুদান পাওয়া জমিতে আবাদের, প্রধানত তুলাচাষের, কাজ শুরু করে। সেই আফ্রিকান ক্রীতদাস ও তাদের বংশধররাই বর্তমান বাহামার সিংহভাগ জনসংখ্যা গঠন করে ।

১৮০৭ সালে বৃটিশ সরকার আন্তর্দেশীয় দাসব্যবসায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এসময় অবৈধভাবে দাসব্যবসায়ে লিপ্ত এরকম বহু জাহাজ থেকে ইংরাজ রয়েল নেভি ক্রীতদাসদের মুক্ত করে ও তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে সেমিনোল যুদ্ধের সময় কিছু উত্তর আমেরিকান ক্রীতদাস ও সেমিনোল ফ্লোরিডা থেকে পালিয়ে বাহামায় চলে আসে। তবে বাহামার অভ্যন্তরে, প্রধানত আবাদগুলিতে, ক্রীতদাসপ্রথা চালু ছিল ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত। ১৮৩৪ সালে বৃটিশ সরকার আইন করে দাসপ্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটালে বাহামাতেও এর অবসান ঘটে। বর্তমানে আফ্রো-বাহামিয়ানদের সংখ্যা ৩৩২,৬৩৪ জন যা মোট জনসংখ্যার ৯০%।

১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাহামা ইংরাজ শাসনের অধীনে ছিল যদিও স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের তরফ থেকে ক্রমশই বাড়ছিল। ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই বাহামা স্বাধীনতা অর্জন করে ও স্যার লিনডেন পিন্ডলিং এর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বাহামা কমনওয়েল্থ রিয়াল্মসের সদস্য় যাদের শীর্ষপদে রয়েছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ[১২]। বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পরই এর স্থান)। এর অর্থনৈতিক উন্নতির মূল কারণ হচ্ছে পর্যটন শিল্প ও আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা।[১৩]

বাহামা নামের উৎস

দক্ষিণ আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আদিবাসী লুকায়ানরা হল বাহামা দ্বীপের মূল অধিবাসী। লুকায়ান ভাষায় বাহামা শব্দের অর্থ হল “বিরাট দ্বীপ” (লার্জ আপার মিডল আইল্যাণ্ড)। সম্ভবতঃ তা থেকেই দ্বীপের এই নাম।ইংরেজরা পরে এর নামকরণ করে গ্র্যাণ্ড বাহামা[১৪]। বাহামার ট্যুরিস্ট গাই়ড বইগুলিতে হামেশাই বলা হয়ে থাকে বাহামা নামটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ “বাজা-মার” থেকে যার অর্থ কিনা “অগভীর সমুদ্র”। অধ্যাপক উল্ফগ্যাং অবশ্যই একথা মানতে রাজী নন। তিনি বলেন, সমুদ্রের থেকে দ্বীপ শব্দটির সংগেই বাহামার সাদৃশ্য বেশি[১৫]। পুরাতত্ত্ববিদ আইজ্যাক টেলর মনে করেন বাহামা নামটি এসেছে “বিমানি” বা “বিমিনি” থেকে। বিমিনি হল বাহামার পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত যমজ দ্বীপ। হাইতির স্প্যানিয়ার্ডদের ধারণা জন ম্যান্ডেভিলের ভ্রমণকাহিনীতে উল্লিখিত “ফাউন্টেন অফ ইউথ” (যে ঝর্ণার জলে স্নান করলে যৌবন পুনরুদ্ধার হয়)এই দ্বীপেই রয়েছে। [১৬]

ইতিহাস

প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ

আনুমানিক ৮০০ খৃষ্টাব্দে আরাওয়াক জাতির একটি শাখা ক্য়ারিবিয়ান সমুদ্র পেরিয়ে বাহামা দ্বীপে এসে উপস্থিত হয় ও বসতি স্থাপন করে। এখানে তাদের পরিচয় হয় লুকায়ান নামে[১৭]। লুকায়ানরাই বাহামার আদিমতম অধিবাসী। আরাওয়াক জাতির অন্য়ান্য় শাখা ক্য়ারিবিয়ান সাগরের কিউবা, জামাইকা, হিসপানিওলা প্রভৃতি দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাইনো নামে পরিচিত। লুকায়ানরা ছিল শান্তিপ্রিয়, সুসংগঠিত সমাজবদ্ধ মানুষ। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আগমনের সময় বাহামায় আনুমানিক লুকায়ান জনসংখ্য়া ছিল ৪০,০০০[১৮]

স্পেনীয়দের আগমন

আমেরিকার যে দ্বীপে কলম্বাস প্রথম পা রাখেন, তিনি তার নাম রেখেছিলেন স্যান স্যালভাডর। যদিও দ্বীপটির সঠিক অবস্থান জানা যায় না, তবে এটি যে বাহামা দ্বীপপুন্জের অন্তর্গত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।, অনেক গবেষক মনে করেন এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাহামার সান সালভেদর দ্বীপ (পূর্ব নাম ওয়েটিং আইল্যাণ্ড)। আবার ১৯৮৬তে কলম্বাসের লগবুকের ভিত্তিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার লেখক-সম্পাদক জোসেফ জাজ গণনা করে দেখান যে দ্বীপে কলম্বাস পদার্পণ করেছিলেন সেটি হল দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সামানা ক্য

দ্বীপে পদার্পণ করে কলম্বাস প্রথমে লুকায়ানদের রাজার সংগে যোগাযোগ করেন, উপহার বিনিময় করেন ও নিকটবর্তী গ্রেটার অ্যান্টিলেসের অন্যান্য দ্বীপে অভিযানের পূর্বে এই দ্বীপে স্প্যানিশ রাজার “ক্রাউন অফ ক্যাস্টিল”-এর অধিকার ঘোষণা করে যান [১৯]।১৪৯৪ খৃষ্টাব্দে স্পেন এবং পর্তুগাল, তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহত্তম শক্তি-র মধ্য়ে ইতিহাস প্রখ্য়াত চুক্তি ট্রিটি অফ টরডেসিলা স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী নবাবিষ্কৃত আমেরিকার ভূমি সম্পদ, সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য় করে, স্পেন এবং পর্তুগাল নিজেদের মধ্য়ে ভাগ করে নেয়। স্পেনের ভাগে আসে বাহামা দ্বীপপুন্জ। স্প্য়ানিশরা এসেই লুকায়ানদের সংগে নানা অসদাচারণ করতে শুরু করে, তাদের সম্পত্তি কেড়ে নেয় এবং অনেককে ক্রীতদাসে পরিণত করে হিস্পানিওলা, কিউবা প্রভৃতি দ্বীপে রুপার খনিতে মজদুরের কাজে বা সমুদ্রে মুক্তা-ডুবুরীর কাজে যেতে বাধ্য করে[২০]। সেখানকার কঠিন পরিশ্রমে,অস্বাস্থ্য়কর পরিবেশে, নানারকম ব্য়াধিতে বহু শ্রমিকের মৃত্য়ু হয়। অচিরে বাহামা একটি প্রায় জনমানবহীন স্থানে পর্যবসিত হয়।[২১]

ইংরেজদের আগমন

লুকায়ানদের বিলুপ্তির পর প্রায় ১৫০ বছর বাহামা পরিত্য়ক্ত অবস্থায় ছিল। সেসময় বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথ জলদস্য়ুদের স্বর্গভূমি হয়ে ওঠে। ইউরোপ থেকে আমেরিকাগামী মালবাহী জাহাজগুলি এদের লক্ষ্য ছিল। ১৬২৯ খৃষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের সম্রাট প্রথম চার্লস্ অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট হীথকে বাহামার উপস্বত্ব দান করেন যার অন্য়তম প্রধান উদ্দেশ্য় ছিল জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করা। কিন্তু রবার্ট হীথ বাহামায় বসতি স্থাপনের কোনো উৎসাহ দেখাননি [২২]। ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে ইংল্য়াণ্ডে রাজশক্তির সংগে ধর্মীয় সংঘাতের ফলে পিউরিটান গোষ্ঠীর একটি শাখা বৃটিশ অধিকৃত বারমুডা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য় হয় এবং উইলিয়াম সেইলের নেতৃত্বে তারা বাহামায় এসে পৌঁছায়। যে দ্বীপে তারা প্রথম আসে তার নাম রাখে এলিউথেরা, গ্রিক ভাষায় যার অর্থ হল স্বাধীনতা। গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দের কারণে সেইল পরে অনুগামীদের নিয়ে অন্য একটি দ্বীপে চলে আসেন, দ্বীপটি বর্তমানে নিউ প্রভিডেন্স নামে পরিচিত। এটি বাহামার সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ, বাহামার রাজধানী নাসাউ এই দ্বীপে অবস্থিত। বাহামার অভিজ্ঞতা সেইলস বা তার সংগীদের পক্ষে সুখকর হয়নি। সেখানকার কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেইলস সহ অনেকেই অবশেষে বারমুডা ফিরে যান [২৩]

১৬৭০ খৃষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস উত্তর আমেরিকায় বৃটিশ উপনিবেশের ক্য়ারোলিনা প্রভিন্সের শাসককে (লর্ড প্রোপাইটর)- বাণিজ্য় রাজস্ব এবং প্রশাসনের অধিকার সহ বাহামা দ্বীপপুন্জের ইজারা দেন[২৪]। কিন্তু প্রোপাইটর জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ বা দেশের প্রতিরক্ষা কার্যে ব্যর্থ হন।[২৫] রাজধানী নাসাউ উপর্যুপরি বিদেশী, প্রধানত স্প্যানিশ, আক্রমণের শিকার হয়। ১৬৮৪ সালের স্প্যানিশ হামলা ও ১৭০৩ সালের স্পেন ও ফ্রান্সের যৌথ হামলা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য [২৬][২৭]

অষ্টাদশ শতাব্দী

১৭১৮ সালে প্রধানত জলদস্য়ুদের উৎপাত বন্ধ করবার তাগিদে বাহামাকে সরাসরি বৃটিশ রাজশাসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং উড্স রজার্সকে বাহামার শাসক নিযুক্ত করা হয়। রজার্স ব্য়ক্তিগত জীবনে একজন দুর্ধর্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিক ছিলেন। তিনি কঠোর হস্তে শাসনভার গ্রহণ করেন এবং দক্ষতার সঙ্গে বিদেশি ও জলদস্য়ুদের আক্রমণ প্রতিহত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হন [২৮]। ১৭১৮ সালে স্পেনের সঙ্গে বৃটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং হল্য়ান্ড- ইউরোপের এই চার সম্মিলিত শক্তির যে যুদ্ধ বাধে (ওয়ার অব্ কোয়াড্রপল অ্যালিয়ান্স) তার জের হিসাবে ১৭২০ সালে স্প্য়ানিশ শক্তি পুনরায় নিউ প্রভিডেন্স দখলের উদ্দেশ্য়ে নাসাউ আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সে অভিযান ব্য়র্থ হয়। ১৭২৮ সালে গভর্নর জর্জ ফেনি বাহামার বৃটিশ অধিবাসিদের জন্য় স্বায়ত্ত্বশাসনের উদ্য়োগ নেন[২৯] যার ফলে ১৭২৯ সালে বাহামায়একটি স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়।[৩০][৩১]

১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার নৌবাহিনী বাহামায় হামলা চালায় ও সাময়িকভাবে নাসাউ আমেরিকার অধীনে চলে আসে। আবার ১৭৮২ সালে স্প্য়ানিশরা যখন মেক্সিকো থেকে বৃটিশদের উৎখাত করতে যুদ্ধ চালাচ্ছে সেসময় স্প্য়ানিশ নৌবাহিনী নাসাউর উপকুলে হাজির হয় এবং বাহামা বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। পরে ১৭৮৩ সালের প্য়ারিস চুক্তির ভিত্তিতে ফ্লোরিডার বিনিময়ে বাহামা বৃটিশ অধিকারে আসে। ১৭৮৪ সালে বাহামাকে বৃটিশ উপনিবেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। [৩২]

আমেরিকার স্বাধীনতালাভের পর নবনির্মিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণের ধনশালী জোতদারসহ বহু বৃটিশ অনুগামী তাদের নিগ্রো ক্রীতদাসদের নিয়ে বাহামায় চলে আসে[৩৩]। এদের মধ্য়ে স্কটল্য়ান্ডের অভিজাতবংশীয় লর্ড ডানমোর বা ডেভেনক্সের মতন সম্ভ্রান্ত ব্য়ক্তিরাও ছিলেন। এদের আসার ফলে বাহামা জনবহুল হয়ে ওঠে। বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে জমির মালিকানা দেওয়া হয় যেখানে তারা প্রথমে তুলা চাষ ও পরে কৃষিনির্ভর অন্য়ান্য় কাজ শুরু করে। শীঘ্রই এরা একটি উল্লেখযোগ্য় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।[৩৪] কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আফ্রিকান-আমেরিকান ক্রীতদাসেরা এসেছিল তাদের উত্তরসূরীরাই ক্রমে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা লাভ করে।

ঊনবিংশ শতাব্দী

অষ্টাদশ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে উত্তর আমেরিকা ও সংলগ্ন ক্য়ারিবিয়ান অঞ্চলে ব্য়াপক ক্রীতদাসপ্রথা প্রচলিত ছিল, বাহামাও তার ব্য়তিক্রম ছিল না। দাসেদের মধ্য়ে একাধিক বিদ্রোহের ঘটনা ইংল্য়ান্ড পার্লামেন্টের সদস্য়দের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলে।১৮৩০ সালে এক্জুমা দ্বীপের পম্পেই আবাদের দাসবিদ্রোহ ও ১৮৩১ সালে ক্য়াট আইল্য়ান্ডের গোল্ডেন গ্রোভ আবাদের দাসবিদ্রোহ এর মধ্য়ে উল্লেখযোগ্য়[৩৫][৩৬]।১৮০৭ সালে ইংল্য়ান্ড আংশিকভাবে, প্রধানত আন্তর্জাতিক স্তরে, দাসব্য়বসায় বন্ধ করে দেয়। বৃটিশ যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথার বিলুপ্তির জন্য় ক্রীতদাস ব্য়বসায়ে নিযুক্ত অন্য়ান্য় দেশগুলির ওপরেও চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং তাদের নৌবাহিনী রয়াল নেভিকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন ক্রীতদাসবাহী জাহাজগুলি থেকে ক্রীতদাসদের উদ্ধার করার পরওয়ানা দেয়।[৩৭][৩৮] এইভাবে বহু আফ্রিকান ক্রীতদাসকে উদ্ধার করে তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে ফ্লোরিডায় আমেরিকানদের সঙ্গে আদিবাসী সেমিনোলদের সংঘর্ষের সময়, যা সেমিনোল বা ফ্লোরিডা ওয়ার নামে পরিচিত. বহু ক্রীতদাস ও আফ্রিকান-সেমিনোল বাহামায় পালিয়ে আসে। এদের অধিকাংশ উত্তরপশ্চিমে বাহামার বৃহত্তম দ্বীপ অ্যান্ড্রস দ্বীপে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সমৃদ্ধ রেড-বে গ্রাম গড়ে তোলে। প্রত্য়ক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী ১৮২৩ সালে ৩০০ জনের এরকম একটি দল বাহামিয়ান ডিঙি বা ভেলায় চড়ে এখানে এসে পৌঁছেছিল। এদের অনেকে এখনো তাদের সনাতন ঝুড়ি বানানো বা সমাধি নির্মাণের কাজে নিযুক্ত[৩৯]। ১৮১৮ সালে ইংল্য়ান্ড ঘোষণা করে বৃটিশ অধিকৃত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বহির্ভূত যেসব ক্রীতদাস বাহামায় আসবে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ১৮৩০ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্য়ে বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন আমেরিকান ক্রীতদাস এবং ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্য়ে ৪৪৭ জন ক্রীতদাস মুক্তি পায়। কমেট এবং এনকোমিয়াম নামে আমেরিকার দুটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ- যথাক্রমে ডিসেম্বর ১৮৩০ ও ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪ সালে বাহামার আবাকো দ্বীপের কাছে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়। যাত্রীদের মধ্য়ে কমেটে ১৬৫ ও এনকোমিয়ামে ৪৮ জন ক্রীতদাস ছিল। উদ্ধারকার্যের শেষে মালিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও জাহাজের দাসেদের মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও পরে ১৮৫৫ সালে ইংল্য়ান্ড- আমেরিকার এক চুক্তির ভিত্তিতে এ বাবদ তাদের কিছু ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়।[৪০]

১৮৩৪ সালে ইংল্য়ান্ড সরকার দাসব্য়বসায়কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮৩৫ সালে আমেরিকার আর একটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ “এন্টারপ্রাইজ” যখন বাহামায় আসে জাহাজের ৭৮জন দাসকে মুক্ত করা হয়। অনুরূপে হারমোজা জাহাজ যখন ১৮৪০ সালে আবাকো দ্বীপের কাছে ভেঙে পড়ে তখন জাহাজের ৩৮জন ক্রীতদাসযাত্রীকে মুক্ত করা হয়[৪১]। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য় ঘটনাটি ঘটে ১৮৪১ সালের নভেম্বর মাসে ক্রিওল জাহাজে। ১৩৫ জন ক্রীতদাস নিয়ে জাহাজটি ভার্জিনিয়া থেকে নিউ অর্লিন্সের উদ্দেশ্য়ে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু পথে দাসেরা বিদ্রোহ করে ও জাহাজটিকে নাসাউ যেতে বাধ্য় করে। পরিশেষে বাহামিয়ান কর্তৃপক্ষ ১২৮ জন দাসকে মুক্ত করে যারা দ্বীপেই থেকে যায়। ক্রিওলের ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দাসবিদ্রোহের ঘটনা বলে মনে করা হয়[৪২]

১৮৬০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় যখন রাষ্ট্রযন্ত্র দক্ষিণের রাজ্য়গুলির জন্য় সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেয় তখন তারা বাহামা করিডরকে জাহাজ চলাচলের জন্য় ব্য়বহার করত, এর ফলে বাহামার অর্থনীতির প্রসার ঘটে।[৪৩][৪৪]

বিংশ শতাব্দী- প্রথম ভাগ

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকগুলি ছিল বাহামার পক্ষে এক কঠিন পরীক্ষার সময়। ১৯৩৯ সালে বাহামার অন্য়তম প্রধান শিল্প স্পন্জ শিল্প ধরাশায়ী হয় এবং বহু মানুষ প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা তাদের কর্মসংস্থান হারায়। বিদেশি ব্য়াংকগুলির বাণিজ্য় বিস্তার লাভ করে কিন্তু সেখানে প্রধানত সংখ্য়ালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গরাই চাকরি পেত। মন্দা অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য়ের মাঝে অধিবাসিরা কোনোমতে কৃষি অথবা মৎস্য়শিকারের মাধ্য়মে দিন গুজরান করত।[৪৫]

১৯৪০ সালে ইংল্য়ান্ডের (প্রাক্তন) রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড বা ডিউক অব্ উইন্ডসর বাহামার গভর্নর নিযুক্ত হন ও এই পদে ১৯৪৫ অবধি আসীন থাকেন। শাসনভার নিয়ে ডিউক বাহামার দারিদ্র্য় দূরীকরণের জন্য় নানা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেন। ১৯৪০ সালের ২৯শে অক্টোবর বাহামার প্রশাসন পরিচালনার জন্য় স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়। ১৯৪২ সালের নাসাউ রায়ট-বর্ধিত বেতনের দাবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের যে সংঘর্ষ বাধে- তার সমাধানেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দেন।[৪৬] ১৯৪৫ সালে ডিউক পদত্য়াগ করেন[৪৭]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়(১৯৪৫-১৯৭৩)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নূতন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হয়। ১৯৫০ সালে বাহামায় দুটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এদের মধ্য়ে "ইউনাইটেড বাহামিয়ান পার্টি" বা "ইউবিপি" ছিল ইংরেজ-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র। অপরপক্ষে প্রগ্রেসিভ লিবারাল পার্টি বা পিএলপি ছিল সংখ্য়াগরিষ্ঠ অ্যাফ্রো-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র।[৪৮]

বাহামাকে আভ্য়ন্তরীণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দিয়ে নতুন সংবিধান গঠিত হয় ৭ জানুয়ারী, ১৯৬৪ সালে। ইউবিপি দলের সার রোলান্ড সিমোনেট হলেন প্রথম মুখ্য়মন্ত্রী[৪৯][৫০]। ১৯৬৭ সালে পিএলপি দলের লিন্ডেন পিন্ডলিং বাহামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মুখ্য়মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রপ্রধান পদের নাম মুখ্য়মন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ঐবছরই পিন্ডলিং বাহামার জন্য় পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করেন।[৫১] আভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে বাহামাকে অধিকতর প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে নতুন সংবিধান রচিত হয়[৫২]। ১৯৭১ সালে পিএলপি দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট বা এফএনএম নামে মধ্য়পন্থী নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে, ইউবিপি দল তার সাথে যুক্ত হয়। এফএনএম হয়ে দাঁড়ায় পিএলপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ।[৫৩]

বৃটিশ হাউস অফ লর্ডস ২২ জুন ১৯৭৩ তারিখে বাহামার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।[৫৪] ১০ জুলাই ১৯৭৩ প্রিন্স চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে বাহামাকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করেন ও প্রধানমন্ত্রী লিন্ডেন পিন্ডলিংএর হাতে সরকারী নথি তুলে দেন।[৫৫] এই তারিখটি বাহামার স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। একই দিনে বাহামা কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এ যোগদান করে।বর্তমানে বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমের সদস্য় (কমনওয়েলথ অন্তর্ভুক্ত এমন ১৫টি রাষ্ট্র যাদের শীর্ষপ্রধান ইংল্য়ান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ)। স্যার মিলো বাটলার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারী প্রতিনিধি স্বরূপ বাহামার প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন[৫৬]

স্বাধীনতা-উত্তর কাল

১৯৭৩ সালের ২২ আগস্ট বাহামা ইন্টারনেশনাল মনিটরি ফান্ড, বিশ্বব্যাংক এবং ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে যোগদান করে।[৫৭][৫৮] পরবর্তী দুই দশক একাধিক নির্বাচনে জয়লাভের ফলে বাহামার রাজনৈতিক পটভূমিতে পিএলপি-র প্রাধান্য় অক্ষুণ্ণ থাকে। নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ পিন্ডলিংএর জনপ্রিয়তায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। এই সময় পর্যটন ও বৈদেশিক ব্য়াংকিং- প্রধানত এই দুই শিল্পের উপর নির্ভর করে বাহামার অর্থনীতির প্রভূত প্রসার ঘটে ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। বাহামার সমৃদ্ধিতে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিবেশি দেশগুলি, প্রধানত হাইতি থেকে, বহু লোক এখানে বসবাস করতে চলে আসে।[৫৯]

১৯৯২ সালে পিন্ডলিং এফএনএম-এর হাবার্ট ইনগ্রাহামের কাছে পরাজিত হন। ইনগ্রাহাম পরবর্তী ১৯৯৭-র নির্বাচনেও জয়লাভ করেন কিন্তু ২০০২-র নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং পিএলপি পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে বাহামার রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে পিএলপি এবং এফএনএম-এর মধ্য়ে হস্তান্তরিত হতে থাকে। ২০০৭ থেকে ২০১২ পুনরায় হাবার্ট ইনগ্রাহামের নেতৃত্বে এফএনএম-, ২০১২ থেকে ২০১৭ পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে পিএলপি এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ অবধি হাবার্ট মিনিসের নেতৃত্বে এফএনএম ক্ষমতাসীন থাকে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এ বিধ্বস্ত অর্থনীতির ধাক্বা সামলাতে এক অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এফএনএম বিরোধী পিএলপির কাছে পরাজিত হয়[৬০]। ফিলিপ ডেভিস ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।[৬১]

ভূগোল

অসংখ্য় ছোট বড় দ্বীপের সমষ্টি বাহামা দ্বীপমালা। অতলান্তিক মহাসাগরের ৮০০কিলোমিটার (৫০০মাইল) ধরে এই দ্বীপগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিমে রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, দক্ষিণে কিউবা ও হিস্পানিওয়ালা, পূবে বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ। ২০ ডিগ্রী থেকে ২৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭২ ডিগ্রী থেকে ৮০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এর সীমানা নির্দেশ করছে। সর্বসমেত ৭০০টি গ্বীপ ও ২৪০০টি প্রবালদ্বীপ বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত, এদের মধ্য়ে মাত্র ত্রিশটিতে জনবসতি রয়েছে।মোট আয়তন ১০০১০ বর্গ কিলোমিটার।[৬২]

বাহামার সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ দ্বীপ হল নিউ প্রভিডেন্স। এই দ্বীপেই বাহামার রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। অন্য় জনঅধ্য়ুষিত দ্বীপগুলির মধ্য়ে গ্র্য়ান্ড বাহামা, ইলিউথেরা, ক্য়াট আইল্য়ান্ড, রাম ক্য়ে, লং আইল্য়ান্ড, স্য়ান স্য়ালভাডর, রাগেড আইল্য়ান্ড, অ্যাকলিন্স, ক্রুকেড আইল্য়ান্ড, এক্জিউমা, বেরি আইল্য়ান্ড, মায়াগুয়ানা, বিমিনি, গ্রেট অ্যাবাকো, গ্রেট ইনাগুয়া উল্লেখযোগ্য়। বৃহত্তম দ্বীপ হল অ্যান্ড্রোস। সবকটি দ্বীপই অনুচ্চ সমতলভূমির উপর অবস্থিত। পাড়ের খাড়াই কোনোখানেই ১৫ থেকে ২০মিটার (৪৯ থেকে৬৬ ফুট) –এর বেশি নয়। ক্য়াট আইল্য়ান্ডের মাউন্ট অ্যালভার্নিয়া (পূর্বের নাম কোমো পাহাড় বা কোমো হিল) হল দ্বীপপুন্জের সর্বোচ্চ স্থান যা কিনা ৬৪মি বা ২১০ ফুট।[৬৩]

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিত্তিতে সমগ্র দ্বীপপুন্জকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, শুষ্ক বনাঞ্চল, পাইন মোজাইক অঞ্চল ও উপকূলবর্তী লোনা মাটির ম্য়ানগ্রোভ বনাঞ্চল।[৬৪] ২০১৯ এর তথ্য় অনুযায়ী বাহামার ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্স ৭.৩৫/১০, অর্থাৎ বাহামার বনভূমির উপর মনুষ্য়কৃত পরিবর্তনের প্রভাব কম।[৬৫]

জলবায়ু

কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী বাহামার জলবায়ু মুখ্য়তঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাভানা তৃণভূমির জলবায়ু সদৃশ। উষ্ণ এবং আর্দ্র অথবা শীতল এবং শুষ্ক- এই দুই ধরনের আবহাওয়া বাহামার ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য়। বিষুবরেখার নিকটবর্তীতা, ক্রান্তীয় উষ্ণ প্রস্রবণ এবং নিম্ন উচ্চতার দরুণ বাহামার আবহাওয়া সর্বদাই উষ্ণ থাকে, শীতের উপস্থিতি বিশেষ টের পাওয়া যায় না।[৬৬]

ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য় অনুযায়ী এখানে বর্ষা নামে গ্রীষ্মকালে এবং গ্রীষ্মই এখানে আর্দ্রতম ঋতু। বাহামার দ্বীপগুলিতে উষ্ণতম ও শীতলতম মাসগুলির মধ্য়ে তাপমাত্রার পার্থক্য় বড়জোর ৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। উত্তর আমেরিকা থেকে আগত শৈত্য়প্রবাহ মাঝে মাঝে বাহামার তাপমাত্রাকে ১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের নীচে নামিয়ে নিয়ে যায়, তবে তুষারপাতের কথা কখনো শোনা যায় না, কেবল ১৯৭৭ সালের ১৯শে জানুয়ারি তারিখে একবারই বাহামার বাতাসে বর্ষার জলকণার সঙ্গে তুষারকণাও ভাসতে দেখা গিয়েছিল[৬৭]। বছরের অধিকাংশ সময়ে বাহামার প্রকৃতি থাকে শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জ্বল।[৬৮]

ক্রান্তীয় ঝঞ্ঝা-ঘূর্ণিবাত্য়া কখনো কখনো বাহামার উপর আছড়ে পড়ে। ১৯৯২ সালে হারিকেন অ্যান্ড্রিয়ু বাহামার উত্তর ভূখন্ডের উপর আর ১৯৯৯ সালে হারিকেন ফ্লয়েড পূর্ব ভূখন্ডের উপর দিয়ে বয়ে যায়। ২০১৯এর সেপ্টেম্বর মাসে কুখ্য়াত হারিকেন ডোরিয়ান তীব্র গতিতে আবাকো ও গ্রান্ড বাহামা দ্বীপকে আঘাত করে, বাহামার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কার্যতঃ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধ্বংসের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার, নিহতের সংখ্য়া অন্তত ৫০ বা তারও বেশি। ১৩০০ জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।[৬৯][৭০][৭১]

ভূতত্ত্ব

বাহামার নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল প্রত্নতাত্তিক যুগে, আনুমানিক ২০ কোটি বছর আগে, যখন ভূপৃষ্ঠতলে সবেমাত্র ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বর্তমানে এটি ৭০০ দ্বীপ, প্রবালদ্বীপ ও বালিয়াড়ির সমষ্টি এক দ্বীপপুন্জ। এর পাড়ের কাছের যে চুনাপাথরের স্তর, তা জমতে শুরু করেছিল অন্ততঃ ক্রিটেশাস যুগ থেকে (মেসোজোইক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ১৪৪ মিলিয়ন বছর আগে) এবং সম্ভবতঃ জুরাসিক যুগ থেকে (ট্রায়াসিক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ২০০ মিলিয়ন বছর আগে)। বর্তমানে এই স্তরের ঘনত্ব ৪.৫ কিলেমিটারেরও বেশি (২.৮মাইল)[৭২] । সমগ্র স্তরটি নিজের ভরে প্রতি হাজার বছরে ৩.৬সেমি গতিতে সমুগ্রগর্ভে নেমে যাচ্ছে।[৭৩]

বাহামা দ্বীপপুন্জ বৃহত্তর লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অংশবিশেষ। বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ, সমুদ্র-নিমজ্জিত মৌচির, সিলভার ও নাভিদাদ ব্যাংকও লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অন্তর্ভুক্ত।। অতীতে ১৫ কোটি বছর আগে, উত্তর অতলান্তিক মহাসাগর সৃষ্টির গোড়ার দিকে, যখন বাহামা প্ল্য়াটফর্ম প্রথম গঠিত হয় তখন মূল বাহামা ছাড়াও দক্ষিণ ফ্লোরিডা, উত্তর কিউবা, টার্ক, কাইকো এবং বর্তমানে সমুদ্রমগ্ন ব্লেক উপত্য়কাও এর সংগে যুক্ত ছিল।[৭৪] যে ৬.৪ কিলোমিটার গভীর চুনাপাথরের স্তর বাহামার বৈশিষ্ট্য় তা অতীতে ক্রিটেশাস যুগে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের থেকে প্রসারিত একটি অগভীর অংশের উপর জমা হতে শুরু করে। যেমন যেমন চুনাপাথর মিশ্রিত পলি জমতে থাকে তেমন তেমন অংশটি নিজের ভারেই নীচে নেমে যেতে থাকে। এইভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সমুদ্রতল ও কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গড়ে ওঠে। এরপরে প্রায় ৮কোটি বছর আগে উপসাগরীয় প্রবাহ অঞ্চলটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এর ফলে ব্লেক উপত্য়কা সাগরে ডুবে যায় আর বাহামা কিউবা, ফ্লোরিডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে। , দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে একাধিক বেলাভূমির সৃষ্টি হয়। এদের মধ্য়ে কে সাল, লিটল ও গ্রেট বাহামা উল্লেখযোগ্য়।চুনামিশ্রিত পলি অথবা প্রবালকীট এখনো বাহামার সমুদ্রতট ধরে হাজার বছরে ২০ মিমি হারে জমা হয়ে চলেছে। প্রবালপ্রাচীর এদের ধরে রাখে।[৭৫]

এই প্রবাল সঞ্চয় প্রক্রিয়ার বেশিটাই সম্পন্ন হয়েছিল টার্সিয়ারি যুগ অর্থাৎ ছয় থেকে আড়াই কোটি বছর আগে।এরপরে হিমযুগ শুরু হলে প্রক্রিয়াটি ব্য়াহত হয়। এই কারণে সমুদ্রতল থেকে নীচে অন্ততঃ ৩৬ মিটার গভীরে গেলে প্রবালস্তরের প্রাচুর্য দেখতে পাওয়া যায়। সাগরের লোনা জল বালির মধ্য়ে ঢুকে পড়ে তার তাপমাত্রা এবং লবনাক্ততা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে উলাইট, সিমেন্টেড উইডস বা গ্রেপস্টোন, দানব স্ট্রোমাটোলাইট প্রভৃতি পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়।

তীরের উলাইট কণাগুলি বায়ুবাহিত হয়ে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে স্তূপাকারে জমা হয় ও পরস্পর সংলগ্ন একাধিক বালিয়াড়ির সৃষ্টি করে। তীরের কাছে এগুলি প্রধানত বালিয়াড়ি হিসাবে থাকলেও দ্বীপের অভ্য়ন্তরে কণাগুলি বৃষ্টির জলের প্রভাবে দ্রুত প্রস্তরীভূত হয়ে যায় ও অনুচ্চ শৈলশ্রেণী বা টিলা গঠন করে যাকে ইওলিয়ানাইট বলা হয়[৭৬] বেশিরভাগ দ্বীপে এগুলির উচ্চতা 30 থেকে 45 মিটার (98 থেকে 148 ফুট) যদিও ক্যাট আইল্যান্ডের টিলার উচ্চতা 60 মিটার (200 ফুট)। টিলাগুলির মধ্যবর্তী জমি হ্রদ এবং জলাভূমি গঠনের জন্য উপযোগী।

বাহামায় কোনো নদী নেই কিন্তু বেশ কয়েকটি বড়বড় হ্রদ রয়েছে। নিউ প্রভিডেন্স, সান সালভাডর, গ্রেট ইনাগুয়া দ্বীপের হ্রদ উল্লেখযোগ্য়।বাহামার মাটি চুনাপাথর সমৃদ্ধ।আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে চুনাপাথরের দ্রুত ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা বাহামার ভূপৃষ্ঠকে একটি বৈশিষ্ট্য় প্রদান করেছে যা "বাহামিয়ান কার্স্ট" নামে পরিচিত। এদের মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থিত কন্দর বা পটহোল, সামুদ্রিক গহ্বর বা ব্লু হোল, সিংকহোল, তটভূমির ভঙ্গুর নুড়িপথ বা বীচরক প্রভৃতি। দক্ষিণ অ্যান্ড্রস দ্বীপে কয়েকটি ব্লু হোল দেখতে পাওয়া যায়। লং আইল্য়ান্ড দ্বীপে ডিনের ব্লু হোল গভীরতায় বিশ্বের দ্বিতীয়। বীচরকের মধ্য়ে রয়েছে বিমিনি দ্বীপের ০.৮কিমি দৈর্ঘের সুদীর্ঘ বিমিনি রোড ("পেভমেন্ট অব আটলান্টিস")।টাইডাল ফ্ল্য়াট বা টাইডাল ক্রীকই সচরাচর দেখা যায় যাদের মধ্য় দিয়ে জোয়ার ভাঁটার জল বয়ে যায় তবে জল নিষ্কাশনের জন্য় ক্য়ানিয়নগুলি যথা গ্রেট বাহামা ক্য়ানিয়ন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক।[৭৭]

বাহামা দ্বীপগুলির স্তরবিন্যাস তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তরে প্লেইস্টোসিন বা হিমযুগের মধ্যভাগে গঠিত ঘুলঘুলি সদৃশ আউলস হোল দেখা যায়। দ্বিতীয় স্তরে আছে হিমযুগের শেষভাগে গঠিত গ্রোটো বিচ যা প্রথম স্তরকে আচ্ছাদিত ও সুরক্ষিত করেছে।শেষ স্তরে রয়েছে হলোসিন যুগের রাইস বে ফর্মেশন যখন কৃষিকার্যের উন্মেষ ঘটেছিল। তবে এমন নয় যে স্তরগুলি নিয়ম মেনে সময়ানুযায়ী পরপর সাজানো।বরং পাশাপাশিও অবস্থিত হতে পারে। গ্রোটো বিচের উপস্থিতি সর্বাধিক দেখা যায়।টেরা রোসা প্যালিওসয়েলকেও গ্রোটো বিচের মতন প্রথম স্তরের আউলস হোলকে ঢেকে থাকতে দেখা গিয়েছে।[৭৮]

সরকার এবং রাজনীতি

বাহামা একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে একজন গভর্নর-জেনারেল তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজনৈতিক এবং আইনগত নিয়মগুলি ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্টমিনস্টার প্রথাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমসের সদস্য।[৭৯][৮০]

প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রধান এবং সংসদে সংখ্য়াগরিষ্ঠ দলের নেতা।প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের সদস্য়দের মধ্য় থেকে মন্ত্রি নির্বাচন করে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। দেশের পরিচালন ব্য়বস্থার দায়িত্ব ও ক্ষমতা মন্ত্রিসভার উপর ন্য়স্ত থাকে। বর্তমান গভর্নর-জেনারেল হলেন মাননীয় কর্নেলিয়াস এ. স্মিথ, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন মাননীয় ফিলিপ ডেভিস এমপি।[৮১][৮২]

আইন প্রণয়নের জন্য় দেশে বাইকামেরাল বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় শাসনব্য়বস্থা চালু।এর ৩৮-সদস্যের নিম্নকক্ষ বা হাউস অফ অ্যাসেম্বলি প্রতি জেলা থেকে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত, এবং ১৬-সদস্যের উচ্চকক্ষ বা সেনেট, গভর্নর-জেনারেল মনোনীত ১৬জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। ১৬জন প্রতিনিধিদের মধ্য়ে গভর্নর-জেনারেল, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নয়জন, বিরোধী দলের নেতার পরামর্শে চারজন এবং বিরোধী নেতার সাথে পরামর্শের পর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনজনকে মনোনয়ন করেন। ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমের মতন এখানেও প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দিতে পারেন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদের মধ্যে যেকোনো সময় একটি সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন।[৮৩]

বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণ, আন্দোলন এবং সম্মেলনের স্বাধীনতা বাহামার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার।সংবিধান অনুযায়ী বাহামার বিচার বিভাগ সংসদ ও প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ পৃথক ব্য়বস্থা।

রাজনৈতিক পরিবেশ

বাহামাতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল- বামপন্থী প্রগ্রেসিভ লিবারেল পার্টি (পিএলপি) এবং মধ্য়পন্থী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট(এফ এনএম)। অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে যারা সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেনি; এর মধ্যে রয়েছে বাহামাস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, কোয়ালিশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম, বাহামিয়ান ন্যাশনালিস্ট পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স।[৮৪]

বৈদেশিক সম্পর্ক

বাহামার সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট বৃটেনের ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে।ওয়াশিংটনে একজন রাষ্ট্রদূত এবং লন্ডনে হাইকমিশনার বাহামার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। 'হারিকেন ডোরিয়ান'-এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দুর্যোগ প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা, পুনর্গঠন, মডুলার আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিকেল ইভাকুয়েশন বোট প্রভৃতির জন্য় বাহামাকে $৩.৬ মিলিয়ন অর্থসাহা্য্য় দেয়।[৮৫]। বাহামা প্রতিবেশি ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্রগুলির সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে।[৮৬][৮৭]

সেনা বাহিনী

বাহামিয়ান সেনাবাহিনীকে বলা হয় রয়্যাল বাহামা ডিফেন্স ফোর্স (RBDF)। ১৯৮০ সালে এটি গঠিত হয়।দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও সীমান্তের অধিকার সুনিশ্চিত করা, জলসীমায় টহল দেওয়া, দুর্যোগের সময়ে সহায়তা এবং ত্রাণ সরবরাহ করা, মাদক চোরাচালান বন্ধ করা, সমুদ্রপথের নাবিকদের সাহায্য় করা প্রভৃতি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব [৮৮]।এটি ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (CARICOM) এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা টাস্ক ফোর্সের সদস্য।[92] বাহামার নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত একটি স্থল ইউনিট যার নাম কমান্ডো স্কোয়াড্রন (রেজিমেন্ট) এবং একটি এয়ার উইং (এয়ার ফোর্স)।[৮৯]

প্রশাসনিক বিভাগ

বাহামার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হল নিউ প্রভিডেন্স- জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ এখানে বাস করে এবং এখানেই রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। এর প্রশাসন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।বাকী জেলাগুলি স্থানীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৯৬ সালে, বাহামিয়ান সংসদ বিভিন্ন দ্বীপের জন্য "স্থানীয় সরকার আইন" প্রণয়ন করে।এই আইনের বলে ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড বা প্রান্তিক দ্বীপগুলির জন্য় পৃথক প্রশাসক পদের, বিভিন্ন জেলার জন্য় স্থানীয় জেলা কাউন্সিলর পদের সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় শহর কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইনের সামগ্রিক লক্ষ্য হল কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিভিন্ন নির্বাচিত নেতাদের তাদের নিজ নিজ জেলার বিষয়গুলি পরিচালনা ও তদারকি করবার ক্ষমতা দেওয়া। মোট ৩২টি জেলা রয়েছে, যেখানে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়। বর্তমানে ১১০ জন কাউন্সিলর এবং ২৮১ জন টাউন কমিটির সদস্য বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর এবং টাউন কমিটির সদস্যদের অন্য়তম দায়িত্ব হল প্রত্য়েকের নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য় বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্য়বহার সুনিশ্চিত করা।[৯০]

নিউ প্রভিডেন্স ভিন্ন বাহামার অন্য় জেলাগুলি হল- ১. অ্যাকলিনস . ২.বেরি আইল্য়ান্ড, ৩. বিমিনি ৪. ব্ল্য়াক পয়েন্ট একজুমা ৫. ক্য়াট আইল্য়ান্ড ৬. সেন্ট্রাল আবাকো ৭. সেন্ট্রাল অ্যান্ড্রস ৮.সেন্ট্রাল এলিউথেরা ৯. গ্র্য়ান্ড বাহামা(সিটি অব ফ্রী পোর্ট)১০. ক্রুকেড আইল্য়ান্ড ১১. ইস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা ১২. একজুমা ১৩. গ্র্য়ান্ড কে আবাকো১৪ . হার্বার আইল্য়ান্ড এলিউথেরা ১৫. হোপ টাউন আবাকো ১৬. ইনাগুয়া ১৭. লং আইল্য়ান্ড ১৮. ম্য়ানগ্রোভ সিটি অ্যান্ড্রস ১৯. মায়াগুনা ২০. মুর আইল্য়ান্ড, আবাকো ২১. নর্থ আবাকো ২২. নর্থ অ্যান্ড্রস ২৩.নর্থ এলিউথেরা ২৪.রাগড আইল্য়ান্ড ২৫.রাম কে ২৬. সান সালভাডর ২৭. সাউথ আবাকো ২৮. সাউথ অ্যান্ড্রস ২৯. সাউথ এলিউথেরা ৩০. স্প্য়ানিশ ওয়েলস এলিউথেরা ৩১. ওয়েস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা[৯১]

অর্থনীতি

জনপ্রতি জিডিপির ভিত্তিতে বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ। বাহামার অর্থনীতি পর্যটনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল । বাহামিয়ান জিডিপির প্রায় ৫0% পর্যটন শিল্পের অবদান। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসাধারণের কর্মসংস্থানের উৎসও পর্যটন শিল্প[৯২][৯৩]। নিউ প্রভিডেন্স এবং গ্র্য়ান্ড বাহামা দ্বীপ দুটি পর্যটনের মূল কেন্দ্র। পর্যটকরা অধিকাংশই আসেন আমেরিকা থেকে। বিভিন্ন প্রমোদ ভ্রমণের মধ্য়ে বাহামার নৌকাবিহার পর্যটকদের অন্য়তম আকর্ষণ। ২০১২সালে বাহামা ৫.৮ মিলিয়ন দর্শক আকর্ষণ করেছিল, যাদের মধ্যে ৭০% এরও বেশি ছিল জলবিহারের দর্শক।[৯৪]

পর্যটনের পরে, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হল আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা বা অফশোর ফিনান্স। জিডিপির প্রায় ১৫% এখান থেকে আসে। বাহামায় কোনো আয়কর বা কর্পোরেট ট্যাক্স নেই এবং এখানে আর্থিক লেনদেনের গোপনীয়তাও বজায় রাখা হয়।এই কারণে শতাধিক বিদেশি ব্য়াংক এবং ট্রাস্ট কোম্পানি বাহামায় তাদের শাখা খুলেছে‍। জাতীয় ব্যাঙ্ক হল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ দ্য বাহামাস, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় মুদ্রা হল বাহামিয়ান ডলার; দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে মার্কিন মুদ্রাও গৃহীত হয়।[৯৫]

বাহামায় কম্পিটিটিভ ট্য়াক্স রেজিম চালু রয়েছে যে ব্য়বস্থায় বিভিন্ন ব্য়ক্তিগত করে হ্রাস ঘটিয়ে উপভোক্তা করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। বাহামায় কোনো ব্য়ক্তিগত কর যথা আয়কর, কর্পোরেট কর, মূলধন লাভ কর, বা সম্পদ কর নেই। সরকারী ব্যয়গুলি পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল যা প্রাথমিকভাবে পর্যটন এবং বহির্বাণিজ্যের উপর আরোপ করা হয়। সরকার আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, লাইসেন্স ফি, এবং স্ট্যাম্প ট্যাক্স থেকে তার রাজস্ব সংগ্রহ করে। সামাজিক সুরক্ষার ভার বহন করে বেতনকর যার ৩.৯% দেয় কর্মচারীরা ও ৫.৯% দেয় নিয়োগকর্তা। হয়।২০১০ সালে, জিডিপির শতাংশ হিসাবে সামগ্রিক করের পরিমাণ ছিল ১৭.২%।[৯৬]

কৃষি বাহামাবাসিদের সনাতন জীবিকা হলেও বর্তমান অর্থনীতিতে এর অবদান সামান্য়, জিডিপির মাত্র ৫-৭% এবং কর্মসংস্থানেও ক্ষেত্রটির ভূমিকা সীমিত। বাহামার জমি সাধারণত অনুর্বর এবং মাটি অগভীর। দেশের প্রায় সব খাদ্যসামগ্রী আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু নানারকম ফলের চাষের পক্ষে সহায়ক। প্রধান ফলের মধ্যে রয়েছে টমেটো, আনারস, কলা, আম, পেয়ারা, স্যাপোডিলা (একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ গাছের ফল), সোরসপ, জাম্বুরা এবং সামুদ্রিক আঙ্গুর [৯৭]। গলদা চিংড়ি প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছকে কেন্দ্র করে সংক্ষিপ্তাকারে মৎস্য়শিল্প গড়ে উঠেছে। কিছু শূকর, ভেড়া এবং গবাদি পশু পালন করা হয়।

শিল্প ও বাণিজ্য়ের মধ্য়ে রয়েছে রম এবং অন্যান্য মদের উৎপাদন কেন্দ্র সহ সিমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস,টিনজাত ফল এবং প্রসেস্ড স্পাইনি লবস্টার প্রভৃতির উৎপাদন শিল্প। বাহামার বহির্বাণিজ্য়ের সিংহভাগ অধিকার করে আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে চীন, পানামা, আয়ারল্যান্ড, ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, তুর্কস এবং কাইকোস, যুক্তরাজ্য এবং জাপান। প্রধান আমদানির মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম, খাদ্য পণ্য এবং খনিজ জ্বালানি। প্রধান রপ্তানি হল পেট্রোলিয়াম এবং রক লবস্টার।[৯৮]


পরিবহন

নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং অধিকাংশ জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে পাকা রাস্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বাহামাতে প্রায় ১৬২০ কিমি (১০১০ মাইল) পাকা রাস্তা রয়েছে। আন্তঃদ্বীপ পরিবহন প্রধানত জাহাজ ও আকাশপথে পরিচালিত হয়। মেইল বোট নামে পরিচিত ছোট মোটর জাহাজের একটি বহর নাসাউ এবং আউট দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যাত্রী, মালবাহী এবং ডাক পরিবহন করে। নাসাউ এবং ফ্রিপোর্ট দেশের প্রধান দুটি বন্দর। ফ্রিপোর্টে একটি বড় কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টও রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য বিদেশী যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ বাহামিয়ান বন্দর পরিদর্শন করে। দেশের 61টি বিমানবন্দর রয়েছে,যেখানে বিভিন্ন থাকার ব্যবস্থা এবং সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই কেবল অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা দেয়, তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং এক্সুমাতে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি অন্যান্য বাহামিয়ান দ্বীপগুলির সাথেও সংযোগ করে।প্রধান বিমানবন্দর হল নিউ প্রভিডেন্সের লিন্ডেন পিন্ডলিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের গ্র্যান্ড বাহামা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অ্যাবাকো দ্বীপে লিওনার্ড এম. থম্পসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পূর্বে মার্শ হারবার বিমানবন্দর)।[৯৯]

জনতত্ত্ব

বাহামার আনুমানিক জনসংখ্যা ৩,৮৫,৬৩৭ যার মধ্যে

১৪ বছর বা অনূর্ধ ১৪~ ২৫.৯%

১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর~ ৬৭.২%
৬৫ বছর বা তার বেশি~ ৬.৯%
২০১০সালের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী-জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৯২৫% জন্মহার ১৭.৮১/১,000 মৃত্যুহার ৯.৩৫/১,000, শিশুমৃত্যুর হার ২৩.২১/১,000এবং অভিবাসন হার −২.১৩ /১,000। জীবিত জন্ম। [১০০]গড় আয়ু ৬৯.৮৭ বছর: মহিলাদের জন্য ৭৩.৪৯ বছর, পুরুষদের জন্য ৬৬.৩২ বছর।[১০১]


জাতিগত এবং বর্ণগত গোষ্ঠী

২০১০ সালে জনগণনায় জনসংখ্যার ৯০.৬% নিজেদেরকে কালো, ৪.৭% সাদা এবং ২.১% মিশ্র (আফ্রিকান এবং ইউরোপীয়) হিসাবে চিহ্নিত করে। প্রসংগত,বাহামায় বর্ণনির্নয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধি নেই, নাগরিকের অভিমতই চূড়ান্ত।== শ্বেতাঙ্গরা যথাক্রমে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে আগত ইংরেজ ঔপনিবেশিক ও আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের বৃটিশভক্তদের বংশধর। কিছু গ্রীক রয়েছেন যারা ১৯০০ সালে স্পন্জ শিল্পে সাহায্য করতে এসেছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্বসূরীরা ছিলেন দাস,শ্রমিক অথবা অভিবাসী।[১০২][১০৩]

ধর্ম

বাহামার অধিবাসীরা প্রধানত খ্রিস্টান, যার মধ্যে প্রোটেস্ট্যান্ট ৭০% ও রোমান ক্যাথলিক ১৪%। প্রোটেস্ট্যান্টদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপ্টিস্টরা ৩৫%, অ্যাংলিকান ১৫%, পেন্টেকোস্টাল ৮%, চার্চ অফ গড ৫ %, সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট ৫% এবং মেথডিস্ট ৪%। [১০৪] ইহুদিদের একটি ছোট সম্প্রদায় রয়েছে। কলম্বাস অভিযানের দোভাষী একজন ইহুদি ছিলেন বলে মনে করা হয়।[১০৫] আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দ্বীপে ইহুদি সংখ্যা ২০০,মতভেদে ৩০০ [১০৬]| মুসলমানদেরও স্বল্প উপস্থিতি রয়েছে।[১০৭] ঔপনিবেশিক যুগে কিছু ক্রীতদাস এবং মুক্ত আফ্রিকানরা মুসলিম ছিল, বর্তমানে দ্বীপের প্রায় ৩০০ অধিবাসী মুসলিম। এছাড়াও বাহাই, হিন্দু, রাস্তাফেরিয়ান এবং পুরাতন আফ্রিকান ধর্ম ওবেহের অনুসরণকারীদের ছোট ছোট সম্প্রদায় রয়েছে।[১০৮]

ভাষা

বাহামার সরকারী ভাষা ইংরেজি। অনেক মানুষ একটি ইংরেজি ভিত্তিক ক্রিওল ভাষায় কথা বলে যাকে বলা হয় বাহামিয়ান ইংরেজি বা শুধুই "বাহামিয়ানিজ"[১০৯]।"বাহামিয়ানিজ" নামটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন লরেন্টে গিবস নামে একজন বাহামিয়ান লেখক এবং অভিনেতা, তাঁর একটি কবিতায়। তারপর থেকে নামটির ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে [১১০][১১১]। হাইতিয়ান ক্রিওল, একটি ফরাসি-ভিত্তিক ক্রিওল ভাষা যা বাহামার হাইতিয়ানরা ব্যবহার করে থাকে। হাইতিয়ানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫%। এটিকে বাহামিয়ান ইংরেজি থেকে আলাদা করার জন্য সহজভাবে ক্রিওল বলা হয় [১১২]


শিক্ষা

২০১১ সালের তথ্যানুসারে, বাহামায় প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯৫% সাক্ষর। জাতীয় উচ্চশিক্ষা বা বিদ্যালয় পরবর্তী শিক্ষার জন্য রয়েছে বাহামা বিশ্ববিদ্যায় বা ইউনিভার্সিটি অফ দ্য বাহামাস (ইউবি)।ইউবি স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং তুলনীয় ডিগ্রী প্রদান করে । ইউবি-র তিনটি ক্যাম্পাস এবং দেশ জুড়ে অনেক শিক্ষাদান ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাহামা কলেজ নামে কাজ শুরু করে কিন্তু ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর বাহামা বিশ্ববিদ্যালয় পদে উন্নীত হয়[১১৩]

সংস্কৃতি

বাহামার সংস্কৃতি হল আফ্রিকান, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান- এই তিন দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণ।[১১৪]

বাহামিয়ান খাদ্য়তালিকায় ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকান এবং ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষ্য়করা যায়। কিছু অঞ্চলের উৎসব সেই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ফসল, ফল বা খাবারের সাথে যুক্ত থাকে, যেমন গ্রেগরি টাউন, এলিউথেরাতে "আনারস ফেস্ট" বা অ্যান্ড্রোসে "ক্র্যাব ফেস্ট"।

বাহামিয়ান সাহিত্য কবিতা, ছোটগল্প, নাটক এবং কল্প-কাহিনী সমৃদ্ধ।পারিপার্শ্বিক জগৎ ও সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিবিধ প্রতিক্রিয়া রচনাগুলির উপাদান। সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব, পরিশীলনের অদম্য প্রচেষ্টা, আত্ম অনুসন্ধান, অতীতেরস্মৃতিচারণ এবং সর্বোপরি সৌন্দর্যের উপলব্ধি রচনাগুলিরমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যিকদের মধ্যে সুসান ওয়ালেস, পার্সিভাল মিলার, রবার্ট জনসন, রেমন্ড ব্রাউন, ও.এম. স্মিথ, উইলিয়াম জনসন, এডি মিনিস এবং উইনস্টন সন্ডার্সের নাম উল্লেখযোগ্য।[১১৫][১১৬]বাহামার বিভিন্ন দ্বীপের জনপ্রিয় লোককাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রোস দ্বীপের “লুসকা” এবং “চিকচার্নি” প্রাণী, এক্সুমা দ্বীপের “প্রিটি মলি” এবং বিমিনি দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া শহর “আটলান্টিস”।গল্প কথন বাহামার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য।

জুনকানু হল সঙ্গীত, নৃত্য সমৃদ্ধ একটি ঐতিহ্যবাহী আফ্রো-বাহামিয়ান কুচকাওয়াজ যা প্রতি বক্সিংডে, নববর্ষের দিনে এবং অন্যান্য ছুটির দিন যেমন মুক্তি দিবস উদযাপন করতে নাসাউ প্রভৃতি কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত[১১৭]। বাহামার প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে, যা ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড নামে পরিচিত, রেগাটাস বা নৌ প্রতিযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। এই দ্বীপগুলি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের বাসভূমি। পুরানো দিনের নৌকায় চড়ে জলবিহার ও তৎসঙ্গে নানা আমোদ-প্রমোদের আয়োজন এই উৎসবের অঙ্গ[১১৮]

কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে নানা হস্তশিল্পের প্রচলন রয়েছে যা এখানকার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ।খড় বা গাছের পাতা থেকে তৈরি ঝুড়ি, টুপি, ব্যাগ, "ভুডু পুতুল" প্রভৃতি পণ্যদ্রব্য পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়[১১৯]

ওবেহ একধরনের আফ্রিকান-বাহামিয়ান জাদুবিদ্যা, পরের অশুভকামনায় ব্যবহৃত হয়, যার অনুশীলন বর্তমানে বাহামায় আইনত নিষিদ্ধ [১২০][১২১]


প্রতীক

বাহামিয়ান পতাকা ১৯৭৩ সালে গৃহীত হয়েছিল। এর রং বাহামিয়ান জনগণের শক্তির প্রতীক; এর নকশা প্রাকৃতিক পরিবেশ (সূর্য এবং সমুদ্র) এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকগুলিকে প্রতিফলিত করে। পতাকাটি তিনটি আনুভূমিক সমান্তরাল ভাগে বিভক্ত। উপর ও নীচের নীলরং সমুদ্রের প্রতীক ও মধ্যের হলুদ রং সূর্যের। একটি কালো সমবাহু ত্রিভুজ মাস্তুলের সূচক।[১২২]

বাহামার সম্মানসূচক পদক বা কোট অফ আর্মস এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ঢাল এবং তার দুইপাশে রয়েছে একটি মার্লিন এবং একটি ফ্ল্যামিঙ্গো, যথাক্রমে বাহামার জাতীয় পশু এবং পাখি।। ফ্ল্যামিঙ্গো ভূমিতে এবং মার্লিন সমুদ্রে অবস্থিত ।ঢালের উপরিভাগে সূর্য, নিম্নে সমুদ্র, মধ্যে জাহাজ এবং সবার উপরে একটি শঙ্খের খোল, যা দ্বীপের বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢালের নীচে উদ্ধৃত রয়েছে জাতীয় নীতিবাক্য:"ফরওয়ার্ড, আপওয়ার্ড, অনওয়ার্ড টুগেদার।"[১২৩]

বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এল্ডার।বাহামার সর্বত্র এবং সম্বৎসর এই ফুল ফুটতে দেখা যায়।১৯৭০-এ নিউ প্রভিডেন্সের চারটি গার্ডেন ক্লাবের সদস্যদের সম্মিলিত জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে এটিকে নির্বাচন করা হয়েছিল ‍[১২৪]

খেলাধুলা

খেলাধুলা বাহামিয়ান সংস্কৃতির অন্য়তম প্রধান অঙ্গ। জাতীয় ক্রীড়া ক্রিকেট। এটিই দেশের প্রাচীনতম ক্রীড়াওৢ বটে। ১৮৪৬ সাল থেকে বাহামায় এই খেলা শুরু হয়।১৯৩৬ সালে বাহামা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পত্তনি হয়। বাহামা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য় না হওয়ায় বাহামার খেলোয়াড়রা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট টীমে খেলবার সুযোগ পায় না। তবু ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি দেশে ক্রিকেটের যথেষ্ট প্রাধান্য় ছিল। ১৯৭০ সাল থেকে খেলাটির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে কারণ তখন থেকে ক্রীড়া শিক্ষকদের পদে পূর্বের ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অনুরাগী শিক্ষকদের পরিবর্তে নিযুক্ত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের তেমন জনপ্রিয়তা না থাকায় বাহামার খেলায় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, বাস্কেটবল, বেসবল, সফটবল,ভলিবল, অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল প্রভৃতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই খেলাগুলি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় এবং এদের দর্শকের সংখ্যাও বেশি। অ্যাথলেটিক্স, সাধারণত দেশে 'ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড' নামে পরিচিত, বাহামিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল খেলা। এতে বাহামিয়ানদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সাফল্যের কারণে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড সম্ভবত বাস্কেটবলের পাশে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।[১২৫] নাসাউ এবং প্রান্তিক দ্বীপপুঞ্জে ট্রায়াথলনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুটবল লিগগুলি বাহামা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত হয়। ক্রিকেট এখনও কিছু স্থানীয় স্তরে খেলা হয়। উইন্ডসর পার্ক এবং হেইন্স ওভালে শনিবার ও রবিবার ক্রিকেট খেলা হয়।

আরেকটি খেলা হল ঘোড়দৌড়, যা ক্রিকেটের আগে ১৭৯৬ সালে শুরু হয়েছিল। অন্যান্য জনপ্রিয় খেলা হল সাঁতার, টেনিস এবং বক্সিং, যেখানে বাহামিয়ানরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু সাফল্য উপভোগ করেছে। অন্যান্য খেলা যেমন গল্ফ, রাগবি লীগ, রাগবি ইউনিয়ন, সকার, এবং নেটবলেরও আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে।

বাহামা ১৯৫২ সালে অলিম্পিক গেমসে প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং তারপর থেকে প্রতিটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ১৯৮০ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে বাহামা অলিম্পিক বয়কট করেছিল। এপর্যন্ত বাহামিয়ান খেলোয়াড়রা মোট ষোলটি পদক জিতেছে, সবগুলোই অ্যাথলেটিক্স এবং সেলিংয়ে। বাহামা দশ লাখের নিচে জনসংখ্যা সহ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জিতেছে[১২৬]। ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ানে অনুষ্ঠিত প্রথম পুরুষদের সিনিয়র ফিফা টুর্নামেন্ট “ফিফা বিচ সকার বিশ্বকাপ”-এর, আয়োজক ছিল বাহামা। এছাড়া বাহামা তিনবার আন্তর্জাতিক রিলেরেসের আয়োজন করেছে [১২৭] [১২৮]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী