বরোদা রাজ্য

ভারতের রাজকীয় রাজ্য (১৭২১-১৯৪৯)

বরোদা রাজ্য ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি ২১ টি তোপ সেলামী সম্মানপ্রাপ্ত দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যটির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদান করা অবধি এই রাজ্যটি মারাঠা সাম্রাজ্যের অধীনে গায়কোয়াড় রাজবংশ দ্বারা শাসিত হতো। বরোদা ছিল এই রাজ্যের রাজধানী ও প্রশাসনিক দপ্তর, বরোদা রেসিডেন্সির মাধ্যমে এই রাজ্যটি ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তথ্য অনুসারে এটির মোট রাজস্বের পরিমাণ ছিল ১,৩৬,৬১,০০০ ভারতীয় মুদ্রা।[১] ১লা মে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বরোদা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর পূর্বে দুবছর রাজ্যটিতে একজন মধ্যস্থ সরকার নিয়োজিত ছিলেন। [২]

বরোদা রাজ্য
વડોદરા
১৭২১–১৯৪৯
পতাকা
রাজ্যের পতাকা (১৭২১–১৮১৮)

বরোদা রাজ্য, ১৯০৯
রাজধানীবরোদা
আয়তন 
• ১৯২১
২০,৯৭৬ বর্গকিলোমিটার (৮,০৯৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা 
• ১৯২১
২১,২৬,৫২২
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠিত
১৭২১
১ মে ১৯৪৯
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মারাঠা সাম্রাজ্য
ভারত
বর্তমানে যার অংশগুজরাত, ভারত
"আ ক্যাটালগ অব মনুস্ক্রিপট এণ্ড প্রিন্টেড রিপোর্টস, ফিল্ড বুকস, মেময়েরস, ম্যাপস ..." খণ্ড. ৪, "কন্টেইনিং দ্য ট্রিটিস, ইটিসি., রিলেটিং টু দ্য স্টেটেস উইদিন দ্য বোম্বে প্রেসিডেন্সি"
বরোদা রাজ্যের মহারাজার মানধ্বজা (১৮৭৪-১৯৩৬)
বরোদা রাজ্যের মহারাজার মানধ্বজা (১৯৩৬-১৯৪৯)

ইতিহাস

প্রাচীন ইতিহাস

বরোদা রাজ্য, ১৮৯৬
বরোদার মহারাজা স্যার তৃতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড় (১৮৬৩–১৯৩৯)

বরোদার স্থানীয় নাম বড়োদরা যা এসেছে একটি সংস্কৃত শব্দ বটদরা থেকে যার অর্থ বটবৃক্ষের হৃদয় বা মূল অংশ৷ গুজরাতি কবি ও বরোদার স্থানীয় প্রেমানন্দ ভট্টের লেখনীতে বরোদার (বড়োদরা) পাশাপাশি এই শহরটির একাধিক নাম রয়েছে, এগুলি হলো "বীরক্ষেত্র" বা "বীরাবতী"৷ প্রাক ইঙ্গ ব্যবসায়ী ও পরিব্রাজকরা তাদের অপভ্রংশে এই জায়গাটিকে ব্রোদেরা বলে উল্লেখ করতেন৷ সম্ভবত এই নাম থেকেই বরোদা নামের উৎপত্তি৷[৩] ভৌগোলিকভাবে বর্তমান ভারতের গুজরাত রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক পরস্পর অসংলগ্ন খণ্ডে ১০০০ বর্গমাইল ক্ষেত্রফলের অধিক ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট অঞ্চল জুড়ে ছিল এই রাজ্যটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে রাজ্যটি প্রশাসনিক সুবিধার্থে চারটি প্রান্তে বিভক্ত ছিলো যথা, খাড়ি প্রান্ত, বরোদা প্রান্ত, নবসারি প্রান্ত এবং আমরেলি প্রান্ত৷ এর মধ্যে আমরেলি প্রান্তের অন্তর্ভুক্ত ছিলো গুজরাতের উপকূল বরাবর দ্বারকার নিকট ওখা এবং দিউয়ের নিকট কোডিনার ছিটমহল৷[৪]

১৭০৫ খ্রিস্টাব্দে মারাঠারা প্রথম গুজরাত আক্রমণ করে৷ ১৭১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠা নেতা খাণ্ডে রাও দাভাড়ে ঐ অঞ্চলে নিজের শক্তি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন৷ ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে তিন সাতারা ফিরে এলে তাকে সেনাপতি পদে আসীন করা হয়৷ ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে বালাপুরের যুদ্ধের সময়ে তাঁরই এক সেনাধ্যক্ষ দমজী গায়কোয়াড় শামসের বাহাদুর উপাধি পান৷ ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে দমজী মারা গেলে তার ভাগিনেয় পিলাজীরাও তার উত্তরসূরী ঘোষিত হন৷[৫]

মারাঠা সেনাধ্যক্ষ পিলাজীরাও গায়কোয়াড় ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে মুঘলদের থেকে সোনগড় দুর্গ ও সংলগ্ন অঞ্চল দখল করলে বরোদা রাজ্যের আনুষ্ঠানিক পত্তন ঘটে৷ এর পূর্বে পিলাজীরাওগুজরাতের পেশোয়ার অধীনে রাজস্ব আদায়ের অধীক্ষক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন৷ মারাঠারাই সুরাটের উত্তর ও দক্ষিণাংশের দখল নিয়ে "সুরাট সরকার" গঠন করেছিলেন৷ সোনগড় বহুদিন (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) গায়কোয়াড়দের গৃহ বলে উল্লেখিত হতো৷[৬][৭] ১৮০৩ থেকে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ সম্পন্ন হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মারাঠাদের থেকে গুজরাতের বৃহৎ অঞ্চলের মালিকানা লাভ করেন৷ বরোদার গায়কোয়াড়রা পৃথকভাবে ব্রিটিশ সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত করেন৷ চুক্তি অনুসারে তারা ব্রিটিশের আনুগত্য গ্রহণ করে ব্রিটিশ করদ রাজ্যে পরিণত হবে এবং বিনিময় ব্রিটিশরা এই রাজ্যটি সরাসরি দখল করবে না৷ এভাবেই রাজ্যের আভ্যন্তরীন বিষয় দেশীয় রাজার ও বাহ্যিক বিষয় ব্রিটিশ ভারতের আওতায় আসে৷

দেশীয় রাজ্য

বরোদার দ্বিতীয় সয়জী রাওয়ের (১৮১৯-১৮৪৭) রৌপ্যমুদ্রা৷ মুদ্রায় মুঘল সম্রাট মহম্মদ দ্বিতীয় আকবরের নাম ও ১২৩৮ সন (১৮২২-২৩ খ্রিস্টাব্দ)৷ নাগরী লিপিতে লেখা প্রকৃষ্ট "স"-এর অর্থ সয়জীরাও৷ এছাড়া মুদ্রায় ছিলো বরোদা গায়কোয়াড়দের পতাকায় দৃশ্যমান বক্রাসির অনুরূপ
বরোদার তৃতীয় সয়জীরাও (১৮৭৫-১৯৩৯)-এর সময়কালীন মুদ্রা৷ মুদ্রায় রাজার মুখ ও মুদ্রণকাল ১৯৫৫ দৃশ্যমান

স্যার খাণ্ডেরাও গায়কোয়াড়ের মৃত্যু হলে সকলে ভেবেছিলো তার ভাই মলহার রাও হয়তো তারপর সিংহাসনে আরোহণ করবেন৷ মলহার রাও পূর্বে বিভিন্ন অভিযানে নিজের পরাক্রম প্রমাণ করতে সক্ষম হন৷ ঐ সময়েই খাণ্ডেরাওয়ের বিধবা পত্নী মহারাণী যমুনাবাঈ গর্ভবতী ছিলেন৷ আগত সন্তানে লিঙ্গ নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত সিংহাসনে অভিষেক বিলম্বিত করা হয়৷ ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুলাই কন্যাসন্তান জন্মলাভ করলে মলহাররাও রাজসিংহাসনে বসেন৷

মালহাররাও দিকবিদিক চিন্তা না করে রাজকোষের অর্থ ব্যয় করা শুরু করেন এবং অতি শীঘ্র রাজকোষ শূন্য হয়ে এলে তিনি প্রজাদের উপর স্বৈরাচারী শাসন ও অত্যাচার করা শুরু করেন। তিনি নিজের কুকীর্তি লুকিয়ে রাখার জন্য কলোনেল আর. ফায়রে সি.বি. কি আর্সেনিক প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করেন। দ্যা সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইন্ডিয়া (ভারতের রাজ্য সচিব) লর্ড সেলিসবারির আদেশ অনুসারে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল তারিখে মলহার রাওকে গদিচ্যুত করা হয় ও মাদ্রাজে অভিবাসন দেওয়া হয়।১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজেই তিনি মারা যান।[৮] বরোদা রাজ্যের রাজ সিংহাসন পদ খালি হওয়ার দরুন মহারানী যমুনাবাঈ রাজপরিবারের একটি অতিরিক্ত শাখার সদস্যদের আহ্বান করেন। তিনি তাদেরকে পার্শ্ব রাজবংশীয় হিসেবে বংশানুক্রমে বরোদা রাজ্যের রাজ্য ভার গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন।

মকরপুরা রাজপ্রাসাদ, ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ খান্দেরাও দ্বারা নির্মিত

কাশীরাও এবং তার তিন পুত্র আনন্দরাও, গোপালরাও এবং সম্পতরাও ৬০০ কিলোমিটার দূর কাবলন থেকে নিজেদের উপস্থাপন করতে বরোদায় আসেন রানী যমুনাবাঈয়ের কাছে।

ঘটনাক্রমে ব্রিটিশ সরকার গোপালরাওকে রাজ্যের পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করলে রানী ২৭শে মে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে যমুনাবাঈ তাকে দত্তকপুত্র রূপে গ্রহণ করেন৷ সয়জীরাও নামে তার পুনরায় নামকরণ করা হয়৷ ঐ বছরই ১৬ই জুন তিনি তৃতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড় নামে আনুষ্ঠানিকভাবে শাসক ঘোষিত হন৷ শাসক তৃতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড় ২৮ ডিসেম্বর ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া জন্য রাজ্যটি ব্রিটিশ রিজেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়৷

বিংশ শতাব্দী

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ২০ জুলাই ব্যাংক অফ বরোদার মতো অন্যান্য বহু প্রতিষ্ঠান রাজ্যে নির্মিত হয়৷ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে সয়জীরাও বরোধা ধারা সভা বা বরোদা বিধানসভা প্রতিষ্ঠা করেন৷

মহারাজা তৃতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড় দ্বারা ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত লক্ষ্মীবিলাস রাজপ্রাসাদ

শতাব্দীর প্রথম দিকে ভারতের চারটি বৃহত্তর রাজ্য যথা, হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, জম্মু ও কাশ্মীর ও বরোদা রাজ্যের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ভারতে নিযুক্ত গভর্নর জেনারেলের সরাসরি শাসনাধীন একজন রেসিডেণ্ট নিযুক্ত করা হয়৷[৯] ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের তথ্যানুসারে বরোদা রাজ্য ৩,২৩৯ কিমি (১,২৫১ মা) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিলো এবং মোট জনসংখ্যা ছিলো ২০,৩২,৭৯৮ জন৷ ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে দ্য পিটসবার্ঘ প্রেসের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে এই রাজ্যের রাজকীয় সংগ্রহে ছিলো দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত হীরেখচিত নেকলেস হার৷ এটির মূল্য ছিলো তৎকালীন ১,০০,০০,০০০ ডলার, যা রাজ্যের নজরবৌগ দুর্গে সংরক্ষিত ছিলো৷ এছাড়াও সংগ্রহে ছিলো দুর্মূল্য রত্ন পাথর ও মুক্তার বয়নে তৈরী কাপড়, যা মম্মদের গম্বুজের চাদর হিসাবে ব্যবহার হত৷[১০]

ডা. বি.আর.আম্বেদকর তার আত্মজীবনীমূলক বই ওয়েটিং ফর এ ভিসার দ্বিতীয় অধ্যায়ের বরোদার জনসাধারণের মধ্যে অস্পৃশ্যতা বিষয় উল্লেখ করেন৷

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বরোদা রিজেন্সিতে অবস্থিত বরোদা রাজ্যের সাথে পার্শ্ববর্তী ছোটো ছোটো রাজ্য ও বোম্বে প্রেসিডেন্সির উত্তর দিকে অবস্থিত রিজেন্সিগুলি তথা —রীবাকাণ্ঠা এজেন্সি, সুরাট এজেন্সি, নাশিক এজেন্সি, খৈরা এজেন্সি এবং থানা এজেন্সি একত্রিত করে বরোদা ও গুজরাত রাজ্য এজেন্সি গঠন করা হয়৷[১১] ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতের একাধিক ছোট ছোট দেশীয় রাজ্য, এস্টেট এবং থানাকে একত্রিত করে তুলনামূলক বৃহত্তর প্রশাসনিক এককে উত্তীর্ণ করার পরিকল্পনায় হল সংযুক্তির পরিকল্পনা বা দা অ্যাটাচমেন্ট স্কিম। পশ্চিম ভারতে এই একক গঠনের ক্ষেত্রে ১৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার ক্ষেত্রফল যুক্ত এবং অর্ধ মিলিয়ন জনবসতি বিশিষ্ট বরোদা রাজ্য ছিল মূল ক্ষেত্র। বৃহত্তম দেশীয় রাজ্য টি সঙ্গে যুক্ত করা হয় অন্যান্য একাধিক ক্ষুদ্রতর দেশীয় রাজ্য। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের পয়লা ফেব্রুয়ারি তারিখে পেথাপুর এবং ওই বছরই জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে দেলোটি সহ কাতোসান থানা, কলসাপুরা, মাগুনা, মেমদপুরা, রামপুরা, রানিপুরা, তেজপুরা, বরসোরা, পালেজ তালুক এবং বরিষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ইজপুরা রাজ্য একত্রিত করা হয়। এর পরবর্তী সময়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জুলাই তারিখে অম্বলিয়ারা, ঘোরাসর, ইলোল, খাডাল, পাতড়ি, পুনাদ্রা, রণাসন, বসোড়া এবং বাও রাজ্য গুলিকে একত্রিত করা হয়।[১২] ওই একই সময়ের মধ্যে কিছু ছোট ছোট তালুক যুক্ত করা হয়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই তারিখে সচোদর রাজ্য সহ কিছু ছোট ছোট অনধিকৃত জমি এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। অন্তিমে ডিসেম্বর মাসে বাজানা, বিলখা, মালপুর, মাণসা এবং বড়িয়া নামক ছোট ছোট রাজ্যগুলিকে যুক্ত করা হয়।[১৩].[১৪]

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ই নভেম্বর তারিখে এই এজেন্সিটিকে পশ্চিম ভারত রাজ্য এজেন্সির (উইসা) অন্তর্ভুক্ত করা হয় ও বৃহত্তর বরোদা, পশ্চিম ভারত ও গুজরাত রাজ্য এজেন্সি গঠন করা হয়৷[২] প্রাথমিকভাবে বরোদা ছিলো বোম্বে রাজ্যর অংশ৷ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১ মে তারিখের পর মহারাষ্ট্রগুজরাত নামে দুটি রাজ্য গঠিত হলে এটি গুজরাত রাজ্যের অংশীভূত হয়৷ গুজরাতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ডা. জীবরাজ নারায়ণ মেহতা৷

কোলীদের বরোদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ

চণ্ডপ তালুকের দুই জাতিপ্রধান ভাই যমজী প্যাটেল ও নেতাজী প্যাটেল কোলী বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন৷ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭|সিপাহী বিদ্রোহের সময়কালে চণ্ডপের কোলীরা বরোদা রাজ্যের গায়কোয়াড় বরলীদের সিংহাসনচ্যুত করার জন্য বিদ্রোহ সংঘটিত করেন৷ গায়কোয়াড়রা এই খবর জানতে পেরে বিদ্রোহ দমনে চণ্ডপে সেনা প্রেরণ করেন৷ কিন্তু রাজার প্রেরিত সৈন্যরা চণ্ডপের কোলীদের হাতে নিহত হয়৷ এরপর তারা পার্বত্য অঞ্চলে চলে যান ও কিছু মাস তাদের বিদ্রোহ অব্যহত রাখেন৷ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ব্রিটিশ ও বরোদার শাসকদের সম্মিলিত সৈন্যদল কোলীদের চণ্ডপ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়৷[১৫]

বরোদা রাজ্য রেলওয়ে

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম ন্যারোগেজ হিসাবে স্থাপিত গায়কোয়াড় বরোদা রাজ্য রেলওয়েটি বরোদা রাজ্যেই অবস্থিত৷ এটি ছিলো ৮ মাইল (১৩ কিমি) দীর্ঘায়িত দাভৈ থেকে মিয়াগাঁও অবধি বিস্তৃত ন্যারোগেজ পথ৷[১৬] দাভৈকে কেন্দ্রীয় বিন্দু করে গোয়াগেট, চান্দোড়, বোড়েলি এদং সমলয়া অবধি রেলপথ বিস্তৃত হয়৷ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে এটি বম্বে ও বরোদার মাধ্যমে মধ্য ভারত রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়৷ অতিসম্প্রতি এই লাইন ব্রডগেজ হচ্ছে৷[১৭]

বরোদা রাজ্য নৌবাহিনী

খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সুরাট শহর থকে ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত বিলিমোরাতে বরোদা রাজ্যের প্রথম নৌঘাঁটি স্থাপিত হয়৷ এটি বন্দর বিলিমোরা সুবা আর্মোর নামে পরিচিত ছিলো৷ এখানে ৫০ টি নোঙরযোগ্য নৌবহরের স্থান ছিলো, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিলো পণ্যবাহী এবং সেনার যুদ্ধজাহাজ৷ পর্তুগীজ, ওলন্দাজ ও ফরাসি আক্রমণ প্রতিহত করা ছিলো এই বন্দরের অন্যতম কাজ৷[৬]

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধর পর রাজনৈতিক আবহ বদলে গেলে ব্রিটিশ ও বরোদার রাজার সৈন্য কলোনৈল ওয়াকারের হস্তগত হয়৷ ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ রেসিডেণ্ট কাথিয়াবাড়ে পৌঁছালে কাকতালীয়ভাবে ওখা বন্দরে শত্রু আক্রমণ ও চুরি হয়৷ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বরোদার শাসক বর্তমান জুনাগড় জেলার কোডিনার দখল করেন, এখানেই ছিলো সিন্ধ থেকে বোম্বে অবধি যাওয়ার কোডিনার বন্দর৷ এখানে চারটি যুদ্ধ জাহাজ স্থাপন করা হয়, সেগুলি ছিলো আনন্দপ্রসাদ, সরসুবা, আমানতবর্ত এবং আন্নেমারিয়া[৬]

শাসকবর্গ

কীর্তি মন্দির, বরোদার গায়কোয়াড়দের স্মৃতিমন্দির
  • ১৭২১ - ১৭৩২ : পিলাজীরাও গায়কোয়াড়
  • ১৭৩২ - ১৭৬৮ : দমজী গায়কোয়াড়
  • ১৭৬৮ - ১৭৭৮ : প্রথম সয়জীরাও গায়কোয়াড়
  • ১৭৭৮ - ১৭৮৯ : প্রথম ফতেসিংরাও গায়কোয়াড়
  • ১৭৮৯ - ১৭৯৩ : মনজীরাও গায়কোয়াড়
  • ১৭৯৩ - ১৮০০ : গোবিন্দরাও গায়কোয়াড়
  • ১৮০০ - ১৮১৮ : আনন্দরাও গায়কোয়াড়
  • ১৮১৮ - ১৮৪৭ : দ্বিতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড়
  • ১৮৪৭ - ১৮৫৬ : গণপতরাও গায়কোয়াড়
  • ১৮৫৬ - ১৮৭০ : দ্বিতীয় খাণ্ডেরাও গায়কোয়াড়
  • ১৮৭০ - ১৮৭৫ : মলহাররাও গায়কোয়াড়
  • ১৮৭৫ - ১৯৩৯ : তৃতীয় সয়জীরাও গায়কোয়াড়
  • ১৯৩৯ - ১৯৫১ : প্রতাপসিংরাও গায়কোয়াড়
  • ১৯৫১ - ১৯৮৮ : দ্বিতীয় ফতেসিংরাও গায়কোয়াড়

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে সমস্ত রাজকীয় উপাধি অকার্যকর করা হয়৷

  • ১৯৮৮ - ২০১২ : রঞ্জিতসিং প্রতাপসিং গায়কোয়াড়
  • ২০১২ - বর্তমান : সমরজিৎসিং গায়কোয়াড়

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী