এপিএক্স আলফা: আলফা কণা এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার সিআইভিএ(CIVA): ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্রের অবলোহিত ও দৃশ্যমান তরঙ্গ বিশ্লেষক কনসার্ট(CONSERT): বেতার তরঙ্গ দ্বারা ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্র পরীক্ষণ কোসাক(COSAC): ধূমকেতুর নমুনা ও গঠন বিশ্লেষণ মুপুস(MUPUS): ভূপৃষ্ঠ ও উপ-ভূপৃষ্ঠ বিজ্ঞান বিষয়ক বহুমুখী সেন্সর টলেমী(PTOLEMY): গ্যাস ক্রোম্যাটোগ্রাফ এবং মদ্ধম রেজোলিউশান ভর স্পেকট্রোমিটার রোলিস(ROLIS): রোসেট্টা ল্যান্ডারের ছবি তোলার প্রযুক্তি রোম্যাপ(ROMAP): রোসেট্টা ল্যান্ডারের ম্যাগনেটোমিটার এবং প্লাজমা মনিটর এসডি২(SD2): নমুনা সংগ্রহ, খোদাই এবং বণ্টন করে সেসেমে(SESAME): ভূত্বকে বৈদ্যুতিক শব্দ তৈরি এবং শব্দ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ
ফিলে (/ˈfaɪliː/ or /ˈfiːleɪ/[৫]) ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির একটি ধুমকেতুতে অবতরণকারী রোবটিক ল্যান্ডার। এটি রোসেটামহাকাশযানের সঙ্গে যুক্ত ছিল[৬] পৃথিবী ছাড়ার পর ১০ বছর ধরে ৬৭পি/চুরিয়ুমভ-গেরাশিমেঙ্কোধুমকেতুতে নির্ধারিত অবতরনের পূর্ব পর্যন্ত[৭][৮][৯] ১২ নভেম্বর, ২০১৪ এটি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সফলভাবে ধুমকেতুর উপরিতলে অবতরন করে, এ ধরনের অবতরণ এটিই প্রথম।[১০][১১] এটির যন্ত্রাংশ দ্বারা ধুমকেতুর উপরিতল থেকে ইতিহাসে এই প্রথমবার ছবি পাওয়া সম্ভব হল। এর ফলে ধূমকেতুর গঠন বিশ্লেষণ করার বিষয়ে অনেকদূর অগ্রগতি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।[১২] ফিলের গতিপথ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করছে জার্মানির ডার্মস্টাটে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্পেস অপারেশনস সেন্টার(ESOC)।[১৩]ফিলে মহাকাশযানের নামকরণ করা হয়েছে ফিলি ওবেলিস্ক'এর নামানুসারে যার থেকে প্রাপ্ত বর্ণনা ও রোসেটা শিলালিপির বর্ণনার সাহায্যে মিশরীয়হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জানা যায়, পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে ফিলে নিষ্ক্রিয় ও নিরাপদ অবস্থায় চলে গেছে, যা রোসেটা মহাকাশযানের সাথে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মিশন পরিচালকরা আসাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে ফিলের সোলার প্যানেলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়বে এবং যন্ত্রটি পুনরায় চালু হবে।[১৪]ফিলে ২০১৫ এর ১৩ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত রোজেটার সাথে বিক্ষিপ্ত ভাবে যোগাযোগ করে।[১৫][১৬][১৭]
মিশন
ফিলের লক্ষ্য হচ্ছে সফলভাবে ধুমকেতুর গায়ে অবতরন করা, নিজেকে সেখানে থিতু করা এবং তারপর ধুমকেতুর গঠন সম্পর্কে পৃথিবীতে তথ্য পাঠানো। ২ মার্চ,২০০৪ সালের ০৭:১৭ ইউটিসিতে ফরাসি গায়ানা থেকে একটি এরিয়েন ৫জি+ রোসেটা মহাকাশযান এবং ফিলে রোবট অবতরণযানকে বহন করে যাত্রা শুরু করে এবং ৩৯০৭ দিন (১০.৭ বছর) মহাকাশ পাড়ি দিয়ে 'কমেট ৬৭পি/চুরিয়ুমভ-গেরাশিমেঙ্কো' নামক ধূমকেতুতে পৌঁছায়। এটি কিন্তু ২০০৫ সালের ৪ জুলাই টেম্পল ১ নামক ধূমকেতুতে অবতরণকারী ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোবের মতো কোন ইমপ্যাক্টর নয়। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফিলে মহাকাশযানে প্রথমবারের মতো বেশকিছু যন্ত্রকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়। এতে ব্যবহৃত ক্যামেরা প্রযুক্তি CIVA এ'সময় ছবি পাঠাতে থাকে। কিন্তু তখন দেখা যায়, রোসেটার যন্ত্রগুলো তখন প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ পাচ্ছিল না। তাসত্ত্বেও রোম্যাপ মঙ্গল গ্রহের ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের পরিমাপ করে। অন্যান্য যন্ত্রের বেশিরভাগেরই এই কাজগুলো করতে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ প্রয়োজন ছিল এবং সেগুলো তখন বন্ধ ছিল।[১৮]
বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য
এই মিশনের বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ধূমকেতুর ভূত্বকের গঠন, খনিজ পদার্থ, আইসোটোপ বিশ্লেষণ, পদার্থবিজ্ঞানগত বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো ও চৌম্বকীয় এবং প্লাজমা পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করা।[১৯]
অবতরণ ও পরবর্তী কার্যকলাপ
১২ নভেম্বর, ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিলে রোসেটার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৫ নভেম্বর, ২০১৪ তে ধূমকেতু ৬৭পি'র কাছাকাছি অবস্থানরত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) মহাকাশযান রোসেটা থেকে রোবটযান ফিলে বিচ্ছিন্ন হয়।[২১] ১৫ সেপ্টেম্বর,২০১৪-তে ইএসএ ধূমকেতুটির একটি ছোট লোব "সাইট জে"কে ফিলের গন্তব্যস্থল ঘোষণা করে।[২২] অক্টোবর মাসে ইএসএ জনসাধারণের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা শুরু করে এবং ঐ প্রতিযোগিতার ফলাফলের ভিত্তিতে অ্যাজিলিকা দ্বীপের নামানুসারে সাইট জে'র নতুন নাম রাখা হয় অ্যাজিলিকা।[২১]
২০১৪ সালের ১১-১২ নভেম্বর বেশ কয়েকবার ভাবা হয়েছিল ফিলে মহাকাশযানকে আর অগ্রসর হতে দেয়া হবে কিনা। রোসেটা মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে এর শীতল গ্যাস থ্রাস্টার বিকল হয়ে গেলেও এটি মেরামত করা সম্ভব ছিল না বলেই সেই অবস্থায়ই ফিলে মহাকাশযানকে অগ্রসর হতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[২৩][২৪] ধূমকেতু থেকে ১৪ মাইল (২৩ কিলোমিটার) দূরে থাকা অবস্থায়, ফিলে রোবট মহাকাশযান রোজেটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং কোনো রকম ইঞ্জিনের শক্তি ছাড়াই এটি শুধুমাত্র ধূমকেতুর দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এর ওপরে অবতরণ করে।[১০] রোসেটা মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার তারিখ ও সময় হচ্ছে ১২ নভেম্বর ২০১৪ এর ৮ঃ৩৫ ইউটিসি এসসিইটি।[২৫][২৬]
অবতরণের ঘটনাবলী
পৃথিবীর যোগাযোগ স্টেশনে একটি ২৮ মিনিট বিলম্বের পর ফিলের অবতরণের সংকেত গ্রহণের সময়টা ছিল ১৬ঃ০৩ ইউটিসি।[১][২৭] সে সময় মিশনের বিজ্ঞানীরা জানতেন না যে, ল্যান্ডারটি অবতরণের সময় ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে উঠেছিল। এটি ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ শুরু করার সময় ধূমকেতুর কাছে যাচ্ছিল আবার ফিরে আসছিল যা বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে।[২৮] পরে অধিকতর বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে এটি দুইবার লাফিয়েছিল।[২৯][৩০]
ফিলে মহাকাশযানের ধূমকেতুটির সাথে প্রথম সংস্পর্শে আসার সময় ১৫:৩৪:০৪ ইউটিসি এসসিইটি।[৩১] যন্ত্রটি ধূমকেতু থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩৮ সেন্টিমিটার বেগে লাফিয়ে ১ কিমি. উচ্চতায় উঠে যায়।[৩০] অনুমান করা হয় যে, মহাকাশযানটির গতিবেগ সেকেন্ডে ৪৪ সেন্টিমিটার অতিক্রম করলেই এটি ধূমকেতুর মহাকর্ষ শক্তি অর্থাৎ মহাকাশযানের প্রতি এর আকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে ফেলত।[৩২] অবতরণ সম্পন্ন হয়েছে বুঝতে পারার পর প্রতিক্রিয়াশীল চাকা (যা ঘূর্ণন প্রবণতা সৃষ্টি করে) স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ভরবেগ মহাকাশযানে চলে যায়, ফলে মহাকাশযানটি প্রতি ১৩ সেকেন্ডে একটি ঘূর্ণন দিতে থাকে।[৩১] ১৬:২০ ইউটিসি এসসিইটি সময়ে প্রথমবার যখন মহাকাশযানটি লাফিয়ে ওঠে, ধারণা করা হয় যে, তখন এটি ধূমকেতুর ভূমির একটি চূড়ায় আটকেছিল যা এর ঘূর্ণনের সময় ২৪ সেকেন্ডে পরিণত করে।[৩১][৩৩]ফিলে ১৭:২৫:২৬ ইউটিসি এসসিইটি সময়ে দ্বিতীয়বার অবতরণ করে এবং প্রতি সেকেন্ডে ৩ সেন্টিমিটার বেগে লাফিয়ে উঠে।[৩০][৩১] ১৭:৩১:১৭ ইউটিসি এসসিইটি সময়ে এই রোবোটিক মহাকাশযান চূড়ান্তভাবে ধূমকেতুতে অবতরণ করে।[৩১] এটি বর্তমানে একটি পর্বত বা গোলাকৃতি প্রাচীরের ছায়ায় প্রতিকূল ভুমিতে ৩০ ডিগ্রী হেলানো অবস্থায় থাকলেও অক্ষত রয়েছে।[৩৪] “রোসেটা” মহাকাশযান থেকে প্রাপ্ত ধূমকেতুর নকশা এবং “ফিলে” মহাকাশযানে অবস্থিত “কনসার্ট” নামক যন্ত্রের তথ্যের যৌথ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কয়েকশ মিটার বিস্তৃত একটি অঞ্চলে শনাক্ত করা হয়েছে যার কোন এক স্থানে “ফিলে” মহাকাশযান আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।[৩৫]
একটি টেলিমেট্রি বিশ্লেষণে জানা গেছে অবতরণের প্রাথমিক প্রভাবের যে আশংকা করা হয়েছিল তার চেয়ে ভালো অবতরণ হয়েছিল। কারণ মহাকাশযানের হার্পুন এবং থ্রাস্টার কোনটিরই প্রয়োজন পরেনি। [৩৬][৩৭]
সর্বশেষ কার্যকলাপ এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন
প্রাথমিক তড়িৎকোষ(ব্যাটারি) যন্ত্রপাতিগুলোকে ৬০ ঘণ্টা সচল রাখতে পারত।[৩৮] ইএসএ(ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) আশা করেছিল যে রোবটিক ল্যান্ডারের বাইরের সোলার পানেলে যে তড়িৎকোষ ছিল সেটি অনেকখানি শক্তি ধারণ করতে পারবে, কিন্তু অবতরণ অঞ্চলের সীমিত সৌরশক্তি (ধূমকেতুতে ১২.৪ ঘণ্টায় একদিন হয় এবং প্রতিদিন ৯০ মিনিট সূর্যালোক থাকে[৩৯]) ফিলে মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে যথেষ্ট নয়, অন্তত ধূমকেতুর কক্ষপথে বর্তমান অবস্থানে সম্ভবই না।[৪০][৪১] ১৪ নভেম্বর ২০১৪ সকালে হিসেব করা হয় যে তড়িৎকোষের শক্তি দিয়ে কেবল সেদিনের মত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব ছিল। যে সমস্ত যন্ত্র পরীক্ষা সম্পাদনার জন্য নড়াচড়ার প্রয়োজন নেই সেগুলো থেকে প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ৮০ শতাংশ তথ্য পাওয়ার পর, মাটি ভেদকারী “মুপুস” ও “এসডি২ ড্রিল” নামক যন্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়। তাৎক্ষনিকভাবে “মুপুস”[৪২] , “কোসাক” এবং “টলেমী” নামক যন্ত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায়। শেষদিকে “কনসার্ট” নামক যন্ত্র ব্যবহার করে তথ্য পাওয়া যায়। ঐদিন সন্ধ্যায় ফিলে ৪ সেমি. উপরে উঠে এবং ৩৫ ডিগ্রী ঘুরে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে যায় যাতে এর বৃহত্তম সোলার প্যানেল ভবিষ্যতে সর্বাধিক সৌরশক্তি গ্রহণ করতে পারে। [৪৩][৪৪] এর কিছুক্ষন পরই বৈদ্যুতিক শক্তি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে এবং সবগুলো যন্ত্র বন্ধ হতে বাধ্য হয়। তথ্য পাঠানোর গতি কমতে থাকে।[৩৯] ১৫ নভেম্বর ০০:৩৬ ইউটিসি সময়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[৩]
জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টারের পরিচালক স্টিফ্যান ইউলামেক বলেনঃ
যন্ত্রপাতির তথ্য
সেসেম (SESAME) নামক যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, যদিও ধারণা করা হয়েছিল যে ফিলের প্রথম অবতরণস্থল “নরম এবং তুলতুলে”; কিন্তু বাস্তবে তা ছিল ধুলোর স্তরে ঢাকা বিশাল পরিমাণ পানির বরফ। আরও জানা যায়, ঐ বরফের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি এবং ঐ অঞ্চলে ধূমকেতুর কার্যকলাপ সীমিত ছিল। তৃতীয় অবতরণস্থলে মুপুস (MUPUS) নামক যন্ত্র ধূমকেতুর ভিতরে বেশিদূর যেতে পারেনি, যদিও এর শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই এলাকায় ধারাবাহিকভাবে কঠিন বরফ থাকার কথা জানা গেছে।[৪৫][৪৬]
কোসাক (COSAC) নামক যন্ত্র ধূমকেতুটির পরিবেশে কিছু জৈব অণুর সন্ধান পায় যাদের মধ্যে রয়েছে কার্বন এবং হাইড্রোজেন। তবে মাটির উপাদান বিশ্লেষণ করা যায়নি, কারণ কঠিন বরফের মধ্য দিয়ে রোবটিক ল্যান্ডার “ফিলে” খনন করতে পারেনি।[৪৭] এসডি২ ড্রিল (SD2 drill) নামক যন্ত্র কোসাক নামক যন্ত্রে মাটির নমুনা পাঠানোর জন্য যাবতীয় দরকারি পদক্ষেপ নেয়[৪৫] কিন্তু কোসাকের চুল্লিতে(ওভেন) কিছুই প্রবেশ করেনি বলে জানা গেছে।[৪৮]
ভবিষ্যতে সচল হওয়ার সম্ভাবনা
যদিও দেখা যাচ্ছে যে ফিলে মহাকাশযান পৃথিবীতে যোগাযোগ করার মত সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু এটা সম্ভব যে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ধূমকেতুটি সূর্যের যথেষ্ট কাছে চলে যাবে বলে ল্যান্ডারটি পর্যাপ্ত সৌরশক্তি পাবে যার ফলে ইএসএ একে পুনরায় সচল করে তুলতে পারবে। [৩৯] প্রকল্প পরিচালক স্টিফান ইউলমানেক বলেন যে পুনরায় তথ্য লাভের প্রক্রিয়া চালু করার জন্য সোলার প্যানেলে অল্প কয়েকদিন সূর্যালোক পরাই যথেষ্ট। [৪৯]
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবতরণের ঘটনাবলী ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, ল্যান্ডারটির একটি অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট ছিল যা মহাকাশযানটিকে একজন ব্যক্তি রূপে উপস্থাপন করে। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে ক্যামেরা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়, চুর্যু মভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতুতে ‘’ফিলে’’ মহাকাশযানের অবতরণকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।[৫০][৫১]
‘’ফিলে’’ মহাকাশযানের বিভিন্ন যন্ত্রকে তাদের সংবাদ ও বৈজ্ঞানিক ফলাফল ঘোষণার জন্য নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্ট দেয়া হয়।[৫২]
ফিলের নকশা
এই ল্যান্ডারটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২২ কিলোমিটারের একটি কক্ষপথ থেকে ছুড়ে মারা বস্তুর মত এগুতে থাকে[৫৩] এবং প্রতিসেকেন্ডে ১ মিটার বেগে ধূমকেতুতে নামে।[৫৪] এর পাদস্থম্ভের নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে এটি অবতরণের প্রাথমিক ধাক্কায় বেশি লাফিয়ে না ওঠে, কারণ ধূমকেতুটির মুক্তিবেগ(যে বেগে কোন বস্তু নিক্ষেপ করলে তা অভিকর্ষ বা মহাকর্ষ বল অতিক্রম করতে পারে) হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১ মিটারের মত। [৫৫][৫৬]ফিলে তারপর যেন একটি হার্পুনকে প্রতি সেকেন্ডে ৭০ মিটার বেগে নিক্ষেপ করে নিজেকে ধূমকেতুতে আটকাতে পারে, সে ব্যবস্থাও ছিল।[৫৭][৫৮] অবতরণের পর লাফিয়ে উঠার প্রবণতা হ্রাস করতে “ফিলের” উপর একটি থ্রাস্টার চালানোর ব্যবস্থা ছিল যা একই সাথে হার্পুন নিক্ষেপের কারণে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া বল ও দমন করতে পারে। [২৩]
পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য রোসেটা রিলে স্টেশন হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল যাতে ‘’ফিলের’’ বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা হ্রাস পায়। ধূমকেতুতে মিশন পরিচালনার সময় ধরা হয়েছিল কমপক্ষে ১ সপ্তাহ। তবে প্রয়োজনে ১ মাস মিশন পরিচালনার ব্যবস্থা ছিল। ল্যান্ডারটির মূল কাঠামো বানানো হয়েছে কার্বন ফাইবার দিয়ে, সাম্যাবস্থায় রাখার জন্য একটি পাতে আকার প্রদান করা হয়েছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য একটি প্লাটফর্ম বানানো হয়েছে, এবং সবগুলো যন্ত্র যুক্ত করার জন্য একটি ষড়ভুজাকৃতি স্যান্ডউইচের আকার দেয়া হয়েছে। এর মোট ভর ১০০ কেজি। ল্যান্ডারের বাইরের দিক শক্তি তৈরির জন্য সৌর কোষ দিয়ে ঢাকা।[৮]
এই মহাকাশযানটির নকশা মূলত ৪৬পি/ওয়িরতানেন নামক ধূমকেতুর সাথে সাক্ষাতের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পূর্বে আরেকটি অ্যারিয়ান ৫ ঐ ধূমকেতুতে অবতরণে ব্যার্থ হওয়ায় একই রকেট দিয়ে অবতরণের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।[৫৯] ফলে অবতরণের লক্ষ হিসেবে নির্ধারিত হয় ৬৭পি/ছুর্যুlমভ-গেরাসিমেঙ্ক নামক ধূমকেতু।[৫৯]
ফিলের শক্তি ব্যবস্থাপনা দুইপর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ল্যান্ডারটি সম্পূর্ণভাবে ব্যাটারির শক্তি চলছিল। এই শক্তি শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় পর্বে বিকল্প হিসেবে সৌর কোষ দ্বারাচার্জিত ব্যাটারির সাহায্যে সচল থাকার ব্যবস্থা ছিল।[১৮] প্রথম পর্বের ব্যাটারির ক্ষমতাছিল ১০০০ ওয়াট-ঘণ্টা যা দিয়ে প্রথম ৬০ ঘণ্টা সচল থাকা সম্ভব ছিল। দ্বিতীয় পর্বের ব্যাটারির ক্ষমতাছিল ১৪০ ওয়াট-ঘণ্টা যা প্রথম পর্বের শক্তি শেষ হলে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। সোলার প্যানেলগুলো ২.২ বর্গমিটার জায়গা দখল করে এবং এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে সূর্যথেকে ৩ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল একক দূরত্বে থেকে এটি ৩২ ওয়াট শক্তি প্রদান করতে পারে।[৬০]
যন্ত্রপাতি
ল্যান্ডারটিতে ১০ টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছিল, যাদের মোট ভর ছিল ২৬.৭ কেজি যা লান্ডারটির মোটভরের ৪ ভাগের এক ভাগ।[১৯]
এপিএক্সএস
আলফা কণা এক্স-রশ্মি স্পেক্ট্রোমিটার-এর কাজ হচ্ছে আলফা কণা এবং এক্স-রশ্মি শনাক্ত করা, যা ধূমকেতুর মাটির গঠন বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।[৬১] এই যন্ত্রটি মার্স পাথফাইন্ডারের এপিএক্সএস এর উন্নত সংস্করণ।
কোসাক
ধূমকেতুর নমুনা এবং গঠন (COmetary SAmpling and Composition) নামক যন্ত্রটি গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফ এবং টাইম অফ ফ্লাইট ভর স্পেক্ট্রোমিটার এর সমন্বয়ে ধূমকেতুর মাটির নমুনা এবং উদ্বায়ী উপাদানের গঠন বিশ্লেষণ করে।[৬২][৬৩]
টলেমী
একটি যন্ত্র যা ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্রের মুখ্য উদ্বায়ী পদার্থের স্থিতিশীল আইসোটোপ অনুপাত পরিমাপ করে।[৬৪][৬৫]
সিআইভিএ
ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্রের অবলোহিত ও দৃশ্যমান তরঙ্গ বিশ্লেষক (Comet Nucleus Infrared and Visible Analyser),[৬৬] (কখনো বলা হয় ÇIVA[৬৭]) হচ্ছে সাতটি ভিন্নক্যামেরার একটি গ্রুপ যারা ধূমকেতুর পৃষ্ঠের প্যানারমিক অর্থাৎ ৩৬০ডিগ্রী ছবি তুলে এবং এদের সাথে আরওছিল একটি আলোক-অণুবীক্ষণযন্ত্র এবং অবলোহিত স্পেকট্রোমিটার। প্যানারমিক ক্যামেরাগুলো(সিআইভিএ-পি) ল্যান্ডারের ধারে ৬০ ডিগ্রী পরপর বসানো। এদের পাঁচটি দ্বিমাত্রিক (মনো ইমেজার) ওদুইটি ত্রিমাত্রিক (স্টেরিও ইমেজার) ছবি উপস্থাপন করে। প্রত্যেকটি ক্যামেরায় ১০২৪×১০২৪ পিক্সেল সিসিডিডিটেক্টর আছে।[৬৮]অণুবীক্ষণযন্ত্র এবং স্পেকট্রোমিটার (সিআইভিএ-এম) ল্যান্ডারের বেস-এ বসানো যারা ধূমকেতুর মাটি থেকে প্রাপ্ত নমুনার গঠন, বিন্যাস এবং প্রতিক্ষেপকধর্ম (রিফ্লেক্টিভিটি) বিশ্লেষণ করে। [৬৯]
রোলিস
রোসেটা ল্যান্ডার চিত্রণ ব্যবস্থা(Rosetta Lander Imaging System) হচ্ছে একটিসিসিডি ক্যামেরা যা অবতরণের সময় উচ্চ-রেজোলিউশান ছবি তোলে এবং যেসমস্ত স্থানেঅন্যান্য যন্ত্রপাতি কাজ করে সেসব জায়গার ছবি তোলে।[৭০] সিসিডি ডিটেক্টর ১০২৪×১০২৪ পিক্সেল সম্পন্ন।[৭১]
কনসার্ট
বেতার তরঙ্গের সাহায্যে ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্রের শব্দভিত্তিক গবেষণা (COmet Nucleus Sounding Experiment by Radiowave Transmission) -এই যন্ত্রটি বিবর্ধিত তড়িৎচুম্বক তরঙ্গব্যবহার করে ধূমকেতুর প্রাণকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ গঠন নির্ণয় করতে পারে। ‘’রোসেটা’’ মহাকাশযান থেকেএকটি রাডার প্রাণকেন্দ্রে সংকেত পাঠাতে পারে যা ‘’ফিলে’’ মহাকাশযানের একটি সংগ্রাহকে গৃহীত হবে।[৭২][৭৩]
মুপুস
ভূপৃষ্ঠ ও উপ-ভূপৃষ্ঠ বিজ্ঞানের জন্য বহুমুখী সেন্সর (MUlti-PUrpose Sensors for Surface and Sub-Surface Science)- এই যন্ত্রটি ধূমকেতুর ভূপৃষ্ঠের ঘনত্ব, তাপ এবং বলবিদ্যা সংক্রান্তবৈশিষ্ট্য পরিমাপ করবে।[৭৪]
রোম্যাপ
রোসেটা ল্যান্ডার ম্যাগনেটোমিটার এবং প্লাজমা মনিটর (Rosetta Lander Magnetometer and Plasma Monitor) হচ্ছে ম্যাগনেটোমিটার এবং প্লাজমা সেন্সর যারা প্রাণকেন্দ্রেরচুম্বকক্ষেত্র এবং এর সাথে সৌর বায়ুর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে।[৭৫]
সেসেম
ভূপৃষ্ঠের বৈদ্যুতিক শব্দায়ন এবং শব্দ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা (Surface Electric Sounding and Acoustic Monitoring Experiments) –এটি তিনটি যন্ত্র নিয়ে গঠিত যারা ধূমকেতুর বাইরেরপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিমাপ করে। শব্দের সাহায্যে ধূমকেতুর ভূপৃষ্ঠের গবেষণা (Cometary Acoustic Sounding Surface Experiment) বা ‘’সিএএসএসই’’ নামক যন্ত্র শব্দ যে রাস্তা দিয়ে ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করবে তার পরিমাপ করে।ভেদ্যতা নির্ণায়ক (Permittivity Probe) বা ‘’পিপি’’ নামক যন্ত্র এর বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণকরে। ধুলোর প্রভাব পর্যবেক্ষণ (Dust Impact Monitor) বা ডিআইএম ধূমকেতুর ভূপৃষ্ঠে পরে যাওয়াধুলোর পরিমাণ নির্ণয় করে।[৭৬]
এসডি২
নমুনা সংগ্রহ, খনন এবং বণ্টন ব্যবস্থা ধূমকেতুথেকে মাটির নমুনা নিয়ে বিশ্লেষণের জন্য টলেমী, কোসাক এবং সিআইভিএ নামক যন্ত্রে প্রেরণ করে। [৭৭] এসডি২ ৪ টি প্রাথমিক উপ-ব্যবস্থা ধারণ করে : ড্রিল,কয়েকটিচুল্লী বা ওভেন, আয়তন মাপক এবং ক্যারৌজেল অর্থাৎ একটি ঘূর্ণনশীল বস্তুযা কোন কিছুবহন করেনির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যায় (উদাহরণস্বরূপ বিমানবন্দরে লাগেজবাহী যন্ত্র যা ঘুরতে থাকে এবং এভাবেযাত্রীর লাগেজ বা মালামাল তার হাতের কাছে এসে পরে)।[৭৮][৭৯] খননকারী ব্যবস্থা ২৩০ মিমি. পর্যন্ত খনন করে সেখানে একটি প্রোব পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে চুল্লীপাঠাতে পারে।[৮০] নমুনা উত্তপ্ত করারজন্য ২৬ টি প্লাটিনাম চুল্লী রয়েছে যাদের মধ্যে ১০ টি মধ্যম তাপমাত্রার এবং ১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াসপর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠায় এবং ১৬ টি উচ্চ তাপমাত্রার এবং ৮০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাওঠায়। এছাড়া আরেকটি চুল্লী রয়েছে যা পুনরায় ব্যবহারের জন্য ড্রিলকে খানিকটা পরিষ্কার করে।[৮১] চুল্লীগুলো একটি ক্যারৌজেলের উপর বসানো থাকে যা সক্রিয় চুল্লীকে সঠিক যন্ত্রে পাঠিয়ে দেয়।[৮২] আয়তন মাপক একটি চুল্লীতেপাঠানো সামগ্রীর পরিমাণ নির্ণয় করে এবং সম্ভবত সিআইভিএ-এর অপটিকাল জানালায় সমানভাবে সামগ্রীপাঠাতে ব্যবহার হয়।[৮৩] এসডি২ এর উন্নয়নকার্য পরিচালিত হয়েছে ইতালীয় স্পেস এজেন্সির দিকনির্দেশনায় এবং এর মুখ্য ঠিকাদার ছিল টেকনোস্পাজিও এস.পি.এ, টেকনোমেয়ার এস.পি.এ., মিডিয়া ল্যারিও, এবংড্যালারা.[৭৯] যন্ত্রপাতিগুলোর কলাকৌশল পর্যবেক্ষক আমালিয়াএরকলি-ফিঞ্জি।[৮৪]
বেলজিয়ান ইন্সিটিউট ফর স্পেস অ্যারোনমি (বিআইআরএ) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে এক হয়ে রোসেটা অরবিটার এর আয়ন ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ স্পেকট্রোমিটারের (রোসিনা) একটি সেন্সরের (ডিএফএমএস) তৈরি করে।[৮৬][৮৭] বেলজিয়ান ইন্সিটিউট ফর স্পেস অ্যারোনমি (বিআইআরএ) এবং রয়্যাল অবজারভেটরি অফ বেলজিয়াম (আরওবি) ফিলে মহাকাশযান অবতরণে সহায়তার জন্য রোজেটার কাছে মহাকাশের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য পাঠাতো। সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় ছিল সৌর প্রোটন ঘটনা ।[৮৮]
দুইটি কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এই মিশনে ভূমিকা রেখেছে। সাস্কাতুনের সাস্কাতছেয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত এসইডি সিস্টেম তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন বানিয়েছিল যা দ্বারা পৃথিবী থেকে রোজেটা মহাকাশযানের যোগাযোগ করা হত। [৮৯]অটোয়ার অ্যাডগা-রহেয়া গ্রুপ এমওআইএস(প্রক্রিয়াজাত এবং পরিচালনা তথ্য ব্যবস্থা;Manufacturing and Operating Information Systems)সফটওয়্যার প্রদান করে যা প্রক্রিয়াকরণ এবং নির্দেশের ধারাবাহিক কার্যকলাপ সফটওয়্যারকে সাহায্যকরে। [৯০]
ফিনিশ মেটেওরোলজিকাল ইন্সটিটিউট নির্দেশ, তথ্য এবং ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার (সিডিএমএস) স্মৃতি (মেমোরি) এবং ভেদ্যতা বা পারমিটিভিটি প্রোব (পিপি)প্রদান করে।[৯১]
ফ্রেঞ্চ স্পেস এজেন্সি এবং কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার (আইএএস, এসএ, এলপিজি, এলআইএসএ) একসাথে কাজ করে ব্যবস্থাটির সার্বিক প্রকৌশল, বেতার যোগাযোগ, ব্যাটারিবিন্যাস, কনসার্ট, সিআইভিএ এবং গ্রাউন্ড সেগমেন্ট অর্থাৎ সামগ্রিক প্রকৌশল প্রদান করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন];জার্মানি: জার্মান স্পেস এজেন্সি (ডিএলআর) প্রদান করে ‘’ফিলের’’ গঠন, তাপীয় উপব্যবস্থা, ফ্লাইহুইল, সক্রিয় ডিসেন্ট সিস্টেম (ডিএলআর সংগ্রহ করেছে এটি কিন্তুতৈরি হয়েছেসুইজারল্যান্ডে)[৯২] রোলিস, নিচে-পর্যবেক্ষণের ক্যামেরা, সেসেম, শব্দ তৈরি এবংভূকম্পন সংক্রান্ত যন্ত্র। মুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয় মুপুস তৈরি করে (এর নকশাএবং নির্মাণ হয়েছিল পোলিশ অ্যাকাডেমি অফ সাইন্সের স্পেস রিসার্চ সেন্টারে [৯৩]) এবং ব্রাউন্সছ্বেইগ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি রোম্যাপ যন্ত্রপাতি তৈরি করে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর সোলার সিস্টেম রিসার্চ তৈরি করে ভার বহনের প্রকৌশল, নিক্ষেপের কৌশল, ল্যান্ডিং গিয়ার, নোঙর করার হারপুন, কেন্দ্রীয়কম্পিউটার, কোসাক, এপিএক্সএস এবং অন্যান্য উপব্যবস্থা।
হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সাইন্স এর উইঙ্গার রিসার্চ সেন্টার ফর ফিজিক্সে নির্দেশ ও তথ্যব্যবস্থাপনা উপব্যবস্থার (সিডিএমএস) নকশা করা হয়।[৯৪]বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি অ্যান্ডইকোনোমিকস এর বেতার তথ্যযোগাযোগ এবং তড়িৎচুম্বক তত্ত্ব অনুষদে শক্তি উপব্যবস্থার(পিএসএস) নকশা করা হয়।[৯৫] সিডিএমএস হচ্ছে যন্ত্রের ত্রুটি সহ্যকারী কম্পিউটার, আর পিএসএস নিশ্চিত করেব্যাটারি এবং সৌর উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে, ব্যাটারির চার্জ নিয়ন্ত্রণ করে এবংভ্রমণের সময় শক্তি বণ্টন নিশ্চিত করে।
মায়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস টেকনোলজি আয়ারল্যান্ডলিমিটেড রোজেটা মিশনের জন্য বৈদ্যুতিক সহায়তা ব্যবস্থা প্রসেসরের (ইএসএস) নকশা, নির্মাণ ও পরীক্ষাকরে। ইএসএস নামক যন্ত্রটি ল্যান্ডার এবং মহাকাশযানের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে।[৯৭]
মুগ ব্র্যাডফর্ড (হেরেলি, নেদারল্যান্ড) একটিভ ডিসেন্ট সিস্টেম (এডিএস) প্রদান করে যা ২০১৪ সালে ‘’ফিলে’’ যখন ছুর্যুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতুতে পৌঁছায় তখন অবতরণের (ডিসেন্ট) জন্য প্রয়োজনীয় ঘাতবল প্রদান করে। এডিএস কে কার্যকরী করার জন্য সুইজারল্যান্ডে ব্লেউলার-বমার মেকানিকের সাথে একটি কৌশলগত দল গঠন করা হয়।[৯২]
পোলিশ অ্যাকাডেমি অফ সাইন্সের রিসার্চ সেন্টার ভূপৃষ্ঠ ও উপ-ভূপৃষ্ঠ বিজ্ঞানের জন্য বহুমুখী সেন্সর তৈরি করে (Multi-Purpose Sensors for Surface and Subsurface Science) (MUPUS).[৯৩]
মাদ্রিদের ইন্সটিটিউটো দি অ্যাস্ট্রোফিজিকা দি আন্দালুসিয়া এবং স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল মহাকাশযানটির মিডিয়াম-গেইন অ্যান্টেনা ব্যবস্থা, তাপীয় নিয়ন্ত্রণ অ্যান্টেনাগুলো এবং অসিরিস ক্যামেরার নকশা বানায় এবং তৈরি করে। [৯৮] আবার ট্রেস ক্যানটোস-এ (মাদ্রিদ) এর কেন্দ্রে নক্ষত্র অনুসরণকারী যন্ত্র এবং পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উন্নয়ন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়। জিএমভি-এর স্প্যানিশ বিভাগ “ফিলে” মহাকাশযানের সে সমস্ত যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ করে যেগুলো মহাকাশযানের অবতরণকেন্দ্র নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আলো ও দৃশ্যমানতা হিসাব করে। সেনার(SENER) অর্থাৎ স্প্যানিশ অ্যারোনটিকস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি দুইটি- নিক্ষেপণযোগ্য খুঁটি(মাস্তুল), ১৫ টি সক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং গিয়াডা যন্ত্রের যাবতীয় ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ, দুইটি পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা এবং দুইটি নক্ষত্র অনুসারকের দুর্বল বিকিরণের অপটিকাল প্রদর্শন, ক্যামেরাগুলোর এনএসি-এর ফিল্টার চাকার ড্রাইভার, এবং অসিরিস যন্ত্রের (ধূমকেতুর ছবি তোলার জন্য এটি রোজেটায় বসানো ছিল) ডব্লিউএসি সরবরাহ করে। ক্রিসা গ্রুপ স্টার ব্রাউজার ও পর্যবেক্ষণ ক্যামেরার ইলেকট্রনিক ইউনিট প্রদান করে; ইলেকনর গ্রুপের একটি দল ডেইমস স্পেস প্রদান করে, যা গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তা নির্ণয় করে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ কোম্পানি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো অবদান রেখেছে সেগুলো হচ্ছেঃ ইন্সটিটিউটো দি টেকনিকা অ্যারোস্পেসিয়াল, এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস স্প্যানিশ ডিভিশন, অন্যান্য ছোট কোম্পানি গঠনগত বলবিদ্যা এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ যেমন এএস্পেস (মহাকাশ সংক্রান্ত পুরনো চুক্তি)-এর মত উপচুক্তিতে অংশ নেয়[৯৯] এবং ইউনিভার্সিদাদ পলিটেকনিকা দি মাদ্রিদ ও অবদান রাখে।[৯৮]
ওপেন ইউনিভার্সিটি এবং রাদারফোর্ড অ্যাপেলটন ল্যাবরেটরি (আরএএল) টলেমী নামক যন্ত্রের উন্নয়ন করে এবং যাত্রাকালীন সময়ে ল্যান্ডারটি যাতে গরম থাকে সেজন্য আবরণও তৈরি করে। সুররেয় স্যাটেলাইট লিমিটেড (এসএসটিএল) ল্যান্ডারটির প্রতিক্রিয়াশীল চাকা তৈরি করে। এটি অবতরণের মুহূর্তগুলোতে যন্ত্রটির ভারসাম্য বজায় রাখে। [৯৮] প্রস্তুতকারক কোম্পানি ই২ভি সিআইভিএ এবং রোলিস তৈরি করে যারা অবতরণ দৃশ্য ধারণ করতে পারে এবং নমুনার ছবি তুলতে পারে। এছাড়াও কোম্পানি আরও তিনটি ক্যামেরা সিস্টেম প্রদান করে।[১০১]
জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, নাসা রোজেটার তিনটি যন্ত্রাংশ তৈরিতে অবদান রাখে- অ্যালাইস,মিরো এবং আইইএস; এছাড়া রোজিনা নামক যন্ত্রের জন্য অনেকগুলো বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ তৈরি করে। অ্যালাইস,মিরো এবং আইইএস ধূমকেতুটির গতি, এর কমা এবং লেজের বৃদ্ধি এবং এর পদার্থগুলো অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান, বিকিরণ ও সৌর বায়ুর সাথে কিরুপ প্রতিক্রিয়া দেয় সেসব বিষয়ে তথ্য প্রদান করবে।
ছবিঘর
“ফিলে” মহাকাশযানের পরিকল্পিত অবতরণের নকশা
“ফিলে”র পাদস্তম্ভের স্ক্রুর নকশা (যেগুলো আটকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল)
রোজেটা থেকে জার্মানির ডার্মস্ট্যাডে ইএসওসি-তে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি সংকেত পাওয়া যায়
"ফিলে"র জন্য নির্ধারিত অবতরণ স্থল অ্যাজিলিকা (সাইট যে)
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
ভাঙ্গেলিস সেই তিনটি মিউজিক ভিডিওর কম্পোজ করে যেগুলো ইএসএ প্রকাশ করেছিল একটি ধূমকেতুর মধ্যে প্রথম সফল অবতরণকে কেন্দ্র করে।[১০২][১০৩][১০৪]২০১৪ সালের ১২ নভেম্বরে সার্চ ইঞ্জিন গুগল এর হোমপেজে “ফিলে” মহাকাশযানের উপর একটি গুগল ডুডল প্রকাশ করে।[১০৫]
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
Ball, Andrew J. (নভেম্বর ১৯৯৭)। "Rosetta Lander"। CapCom। Midlands Spaceflight Society। 8 (2)।