প্রতিভা
প্রতিভা (ইংরেজি: Genius) ব্যক্তির অসাধারণ সৃজনীশক্তি, ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট গুণাবলী বিশেষ। তিনি অন্তঃর্নিহিত ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার সক্ষমতা, সৃজনশীলতা অথবা জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে একে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন।যিনি এ গুণাবলীর অধিকারী তিনি প্রতিভাবান হিসেবে চিহ্নিত। জনগণ পৃথক চিন্তা-চেতনায় কোন ব্যক্তির চাতুর্য্যতা, উপস্থিত ও তীক্ষ্ণবুদ্ধিকে প্রতিভারূপে আখ্যায়িত করে থাকে। গণিতে পারঙ্গমতা, বিজ্ঞানে অনন্য সাধারণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবনী শৈলী কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিভিত্তিক খেলাধুলা হিসেবে স্বীকৃত দাবা খেলায় সবিশেষ দক্ষতা প্রদর্শনে জাতি তথা বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করতে পারেন। এছাড়াও, লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, শিল্পী, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি সৃজনশীল সুকুমার বৃত্তিতেও তিনি যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেন। প্রতিভাবান মানুষেরা মতবিনিময় ও সংলাপ করতে পছন্দ করে। এরা ভাল স্মৃতি শক্তির অধিকারী নাও হতে পারেন। এরা জন্ম থেকে বেশি দার্শনিক চিন্তা করতে সক্ষম। বেশি জীবন ও মহাবিশ্ব নিয়ে জানতে ইচ্ছুক হয়। এদের চিন্তা ভবনা খুব দ্রুত ও আলাদা হয় তাই হাতের লেখা খুব খারাপও হতে পারে।
প্রতিভার বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিভা শব্দটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নির্দিষ্ট অনেকগুলো বিষয়ে দক্ষ অথবা শুধুমাত্র একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন,যেটাকে প্রাকৃতিক ভাবে অর্জিত বলা যেতে পারে। কি কারণে প্রতিভা এবং দক্ষতা প্রদর্শিত হয় - এ সংক্রান্ত গবেষণা কর্ম শৈশবেই রয়েছে। কিন্তু মনোবিজ্ঞানে ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে অন্তঃদৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
উৎপত্তি
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/28/Albert_Einstein_Head_cleaned.jpg/250px-Albert_Einstein_Head_cleaned.jpg)
প্রাচীন রোমে পৌরাণিক উপকথারূপে প্রতিভায় পথপ্রদর্শকস্বরূপ আত্মিক অথবা অধিষ্ঠাত্রী দেবতারূপে ব্যক্তি, পরিবার অথবা স্থানকে নির্দেশ করতো।[১] সম্রাট অগাস্টাসের সময়কালে শব্দটির ব্যবহার মধ্যম মানের শব্দের অর্থ উদ্দীপনা, মেধাকে নির্দেশ করতো।[২]
বৈশিষ্ট্যাবলী
বহুমূখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে স্যার আইজাক নিউটন কিংবা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি'র নাম আধুনিক সভ্য সমাজে সর্বজনস্বীকৃত।[৩] এছাড়াও, নিকোলা টেসলা, আলবার্ট আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং প্রমূখ ব্যক্তিগণও অত্যন্ত সুপরিচিত।
আলবার্ট আইনস্টাইনকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি অনন্য সাধারণ গুণাবলীর পাশাপাশি গণিতে অত্যন্ত সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষতঃ ভাষা বিষয়ে যথেষ্ট নৈপু্ণ্যতা প্রদর্শন করতে পারেননি। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং জোহন ওল্ফগ্যাং ভন গ্যাটে প্রমূখ ব্যক্তিগণও অসাধারণ প্রতিভাশালী ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট পারঙ্গমতা প্রদর্শন ও সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিভা সাধারণতঃ জন্মগত বৈশিষ্ট্য যা শৈশবকালীন সময়ে শিশুদের মাঝে দেখা যায় যা তাকে প্রতিভাবান হিসেবে সমাজ কর্তৃক স্বীকৃতি দেয়া হয়।
মেধা প্রতিভার সমমর্যাদাসম্পন্ন ও সমমানের অধিকারী নয়। মেধা একটি বিশেষ গুণাবলী ও দক্ষতাবিশেষ যা দ্রুত আয়ত্ত কিংবা শেখার সক্ষমতা অর্জন করতে সাহায্য করে। অপরদিকে একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি খুবই সৃজনশীলতার অধিকারী এবং অসম্ভব যে-কোন ধরনের কার্য সম্পাদন করতে পারেন যা কেউ, কখনো কল্পনাও করতে পারেন না।
গ্যেটের ন্যায় কিছু প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিত্ব যারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও, অনেক প্রতিভাশালী ব্যক্তি অপ্রত্যাশিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন যা কাম্য নয়। তাঁরা অত্যন্ত ভুলোমনা বা আত্মভোলা, তেমন বেশি সাধারণ বিচার-বুদ্ধি নেই অথবা প্রায়শঃই তারা মানসিক অবসাদে জর্জরিত থাকেন এবং মনের ভাব-ভঙ্গী পরিবর্তন করে থাকেন।
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
- Harold Bloom (নভেম্বর ২০০২)। Genius: A Mosaic of One Hundred Exemplary Creative Minds। Warner Books। আইএসবিএন 0-446-52717-3।
- Clifford A. Pickover (১৯৯৮-০৫-০১)। Strange Brains and Genius: The Secret Lives of Eccentric Scientists and Madmen। Plenum Publishing Corporation। আইএসবিএন 0-306-45784-9।
- James Gleick (১৯৯২-০৯-২৯)। Genius: The Life and Science of Richard Feynman। Pantheon। আইএসবিএন 0-679-40836-3।
- Stephen Jay Gould (১৯৯১)। The Mismeasure of Man, revised and expanded। W. W. Norton। আইএসবিএন 0-393-03972-2।
- David Galenson (২০০৫-১২-২৭)। Old Masters and Young Geniuses: The Two Life Cycles of Artistic Creativity। Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-12109-5।
- Francis Galton। Hereditary Genius। আইএসবিএন 0-312-36989-1।
- Simonton, Dean Keith (১৯৯৯)। Origins of genius: Darwinian perspectives on creativity। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-512879-6।
- Simonton, Dean Keith (২০০৪)। Creativity in Science: Chance, Logic, Genius, and Zeitgeist। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-54369-X।
- Simonton, Dean Keith (২০০৯)। Genius 101। New York: Springer। আইএসবিএন 978-0-8261-0627-8। lay summary (২৮ জুলাই ২০১০)।
বহিঃসংযোগ
- Wilson, Tracy V. (১৯৯৮–২০০৯)। "How Geniuses Work"। HowStuffWorks.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০০৯।
- Solway, Kevin (১৯৯৬)। "Quotations on Genius"। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০০৯।
- Gupta, Sanjay (২০০৬)। "Brainteaser: Scientists Dissect Mystery of Genius"। CNN.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০০৯।
- Emory University 'ScienceNet'[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] about 'genius.'