পুষ্প রত্ন সাগর
পুষ্প রত্ন সাগর (দেবনাগরী: पुष्प रत्न सागर) (জন্ম পুষ্প রত্ন তুলাধর) (২৯ অক্টোবর ১৯২২ – ১১ নভেম্বর ২০১১) হলেন একজন নেপালি বণিক, ব্যাকরণবিদ, অভিধানবিদ ও অভিধান লেখক, যিনি নেপালের প্রকাশনার অগ্রদূত হিসেবে খ্যাত।[১] পুষ্প রত্ন কাঠমান্ডুর অসন ধলাসিক্ব এলাকায় তুলাধর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় ভারতের গঙ্গা সাগরে (সাগর দ্বীপ) তীর্থ যাত্রা করার কারণে তাকে সাগর নামে অভিহিত করা হয়। তার পিতা নেপালি বণিক পুষ্প সুন্দর তুলাধর এবং মায়ের নাম ধন মায়া। তিনি তার পিতা মাতার তৃতীয় ও সর্বকনিষ্ঠ পুত্র।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4f/Pushpa_ratna_sagar.jpg/200px-Pushpa_ratna_sagar.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/db/Subodh_book_cover.jpg/200px-Subodh_book_cover.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/14/Chou_sagar.jpg/200px-Chou_sagar.jpg)
প্রারম্ভিক জীবন
পুষ্প রত্ন সাগর স্থানীয় শিক্ষক জগৎ লাল মাস্টারের পার্শ্ববর্তী স্বগৃহে পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পুষ্প রত্ন সাগর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি কাঠমান্ডুর ইতুল বহাল এলাকার বনিয়া গোত্রের নানি দেবী বনিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তিব্বতের লাসার উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু ত্যাগ করেন।[২] সেখানে তিনি পৈতৃক বাণিজ্য কুঠিতে যোগ দেন, যা স্থানীয়ভাবে ঘোরাসিয়র নামে পরিচিত ছিল।[৩]
কর্মজীবন
লাসায় অবস্থানকালে পুষ্প রত্ন নেপালের রাণা শাসক নেপাল ভাষাকে অবদমনের অপচেষ্টা ও লেখকদের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের দ্বারা আলোড়িত হন।[৪] তিনি তার মাতৃভাষার প্রতি সম্মানার্থে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। এর প্রেক্ষিতে নেপাল ভাষার একটি ব্যাকরণ রচনার প্রয়াস চালান, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপকারী বিনেচুত হবে। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন এবং ব্যাকরণের পাণ্ডুলিপি লেখা সমাপ্ত করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সুবোধ নেপাল ভাষা ব্যাকরণ নামে তার রচিত ব্যাকরণ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নেপাল থেকে থৌনকনহে নামক নেপাল ভাষার সর্বপ্রথম মাসিক সাময়িকী প্রকাশ করেন। সাময়িকীটির প্রতিষ্ঠার সময় পুষ্প রত্ন সাগর এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন।[৩] নেপাল ভাষার প্রকাশনা বিকাশের স্বার্থে তিনি আরও দুইজন তিব্বতি সমমনা ব্যক্তিদের সাথে একটি জোট গঠন করেন। এই দুইজন ব্যক্তি হলেন পূর্ণ কাজি তাম্রকার ও রত্ন মান সিংহ তুলাধর। এই তিনজন একত্রে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পুষ্প রত্নের কাঠমান্ডুর ১১/১২২ অসন তিয়ৌড় টোলের বাসায় নেপাল প্রেস নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রটি ছিল কলকাতা থেকে আনা একটি দ্বিতীয় হস্তের ভিকোবোল্ড লেটারপ্রেস যন্ত্র।
এছাড়াও পুষ্প রত্ন সাগর বেশ কিছু সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ধর্মোদয় সভার একজন সক্রিয় সভ্য ছিলেন, যা ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সারনাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নেপাল থেকে বহিষ্কৃত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও নিবেদিত ব্যক্তিরা থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারণার জন্য এই ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৫]
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নেপালি বাণিজ্য সঙ্ঘ, লাসার কাঠমান্ডু দপ্তরের সচিব নিযুক্ত হন। সে সময় তিনি কাঠমান্ডু ভ্রমণরত চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সম্মানে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে পুষ্প রত্ন সাগর নেপাল প্রিন্টিং প্রেস নামে একটি মুদ্রণালয় প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নেপাল ভাষার প্রতি তার অবদান জারি রাখেন। তিনি নেপাল ভাষা, নেপালি ও ইংরেজি ভাষায় শব্দগুলোর যথার্থ অর্থ সমন্বয়ে একটি অভিধান সংকলন করেন; এবং ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নেপাল ভাষায়া শব্দকোষ নামে অভিধানটি প্রকাশ করেন।[৬]
সম্মাননা
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ অক্টোবর নেপাল ভাষা পরিষদ পুষ্প রত্ন সাগরকে "ভাষা থুয়া" (ভাষার রক্ষক বা পোষক) উপাধিতে ভূষিত করে।[৭]
তিনি নেপাল লিপি গুঠি নামক সংগঠনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মনোনীত হন, যার উদ্দেশ্যে নেপালি পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণ করা।[৮]
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে পুষ্প রত্ন তুলাধর ধর্মোদয় সভা কর্তৃক আয়োজিত একটি সম্মেলনে নেপালে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তার অবদানের জন্য তাকে সংবর্ধিত করে। এরপর নেপালের প্রতিনিধি সভার সভাপতি সুভাস নেমওয়াং পুষ্প রত্নকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠি দেন।[৯]
প্রকাশিত কর্ম
- সুবোধ নেপাল ভাষা ব্যাকরণ (নেপাল ভাষার সহজবোধ্য ব্যাকরণ), ১৯৫২
- নেপাল ভাষায়া মৌলিক শব্দকোষ (নেপাল ভাষার মৌলিক অভিধান), ১৯৯৮
আরও দেখুন
- লাসা নেওয়ার