পুরুষ পুরুষ যৌনক্রিয়ার চর্চা
পুরুষ যৌনক্রিয়ার চর্চা হচ্ছে মানুষের যৌন ক্রিয়াকলাপের সেই বিষয় যেখানে যৌন আচরণ ও যৌন পরিচয়কে বিবেচনায় না নিয়ে পুরুষে পুরুষে সঙ্গম নিয়ে আলোচনা করা হয়। ১৯৪৮ সালে গবেষক কিনসে তার প্রতিবেদন অনুসারে জানান, ৩৭ শতাংশ পুরুষ জীবনে একবারের জন্য হলেও সমলৈঙ্গিক যৌনাচারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।[১] এই জাতীয় বিষয়ের উপর জরিপ গুলোতে প্রাপ্ত ফলাফল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দরুণ সম্পূর্ণ সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয় না।[২][৩]
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
যৌন ক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের যৌন সংক্রমণ রোগ দেখা যায়। ২০০৭ সালে দুটি বড় জনসংখ্যা সার্ভেতে করা গবেষণা প্রতিবেদনে অনুসারে দেখা যায়, "বেশির ভাগ গে পুরুষ এর অনিরাপদ বাৎসরিক যৌন সঙ্গীর সংখ্যা বিষমকামী নারী পুরুষের যৌন সঙ্গীর সমান।"[৪][৫]
অর্জিত প্রতিরক্ষার অভাবজনিত রোগলক্ষণসমষ্টি (এইডস) হচ্ছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি রোগ; যা অনাক্রম্য স্বল্পতা ভাইরাস (এইচআইভি) দ্বারা হয়ে থাকে।[৬][৭][৮] বিশ্বজুড়ে এইচ আইভি সংক্রমণের ৫-১০% হয় পুরুষ কর্তৃক পুরুষে সঙ্গমের ফলে।[৯] যাইহোক, পশ্চিমা সমাজের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষে এই রোগ অন্য পুরুষ দ্বারা সঙ্গমের দরুণ হয়।[১০] যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে ৩৮৭৩৯ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিলেন সমকামী বা উভকামী পুরুষ।[১১] ২০১৬ সালে লণ্ডনে প্রাপ্ত ৫১৬৪ জন এইচআইভি পাওয়া গিয়েছে এমন রোগীর মধ্যে ৫৪ শতাংশ রোগী সমকামী এবং উভকামী পুরুষ।[১২] যদিও ২০১৭ সালে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের প্রতিবেদন অনুসারে এই হার হ্রাস পাচ্ছে।[১৩][১৪]
উপদংশ বা সিফিলিস মানুষ থেকে মানুষে সরাসরী স্পর্শের মাধ্যমে উপদংশ ক্ষত দ্বারা স্থানান্তরিত হয়। প্রধানত বহির্যোনাঙ্গ, যোনি অথবা পায়ুর উপরে ক্ষত সৃষ্ট হয়।[১৫] ২০০৬ সালে সিফিলিসে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের রোগীদের ৬৪ শতাংশই পুরুষে পুরুষে যৌন সঙ্গমে করেছিল।[১৫] অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে পুরুষ-পুরুষ যৌনতার চর্চাকারীদের মধ্যে সিফিলিস বা উপদংশের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গিয়েছে। সিফিলিসের সংস্পর্শে এলে এইচ আইভি সংক্রমণের হারও বৃদ্ধি পায়। আবার উল্টোটাও ঘটে অর্থাৎ এইচ আইভি আক্রান্তের সিফিলিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একটা জরিপ অনুসারে পুরুষ পুরুষ যৌনতার চর্চাকারীদের মধ্যে যাদের সিফিলিস আছে, তাদের অর্ধেক এইচআইভিতেও আক্রান্ত।[১৬] এই যে সিফিলিসের বৃদ্ধির হার, সহজলভ্য নমুনার উপর করা কিছু গবেষণার ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে এই বৃদ্ধির মুল কারণ কন্ডম ব্যতীত পুরুষ-পুরুষ সঙ্গমের মধ্যে নিহিত রয়েছে।[১৭] যদিও দেশজুড়ে হওয়া বৃহত্তর পরিসরে করা গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, পুরুষ পুরুষ সঙ্গম এর সঙ্গমের সময় কনডম ব্যবহারের হার হ্রাস পায়নি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, শেষ দশকে পুরুষ পুরুষ সঙ্গমের তুলনায় নারী নারীতে সঙ্গমের হার অধিক বৃত্তি পেয়েছে।[১৮]
যুক্তরাষ্ট্রের জরিপ অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পুরুষ নারীতে যৌন সঙ্গম (পুনাস) করেছে তাদের তুলনায় যারা পুরুষে পুরুষে যৌনসঙ্গম (পুপুস) করেছে তাদের মধ্যে এইচআইভি, সিফিলিস এবং এনাল ওয়ার্ট বেশি দেখা যায়। পক্ষান্তরে যৌন হার্পিস পুনাস তে বেশি দেখা যায়, তুলনামুলক কম দেখা যায় পুপুসতে। ক্ল্যামিডিয়া, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, গনোরিয়া এবং লাইস এসব রোগগুলো দুই দলেই সমান ভাবে হয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।[১৯]