পাকুইশা যুদ্ধ

পাকুইশা যুদ্ধ ইকুয়েডরপেরুর মধ্যকার সংক্ষিপ্তকাল স্থায়ী সামরিক সংঘাত ছিল। ১৯৮১ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী এ যুদ্ধটি তিনটি পর্যবেক্ষণ ফাঁড়িকে ঘিরে সংঘটিত হয়েছিল। বিষয়টি ১৯৪১ সালের ইকুয়েডর-পেরুর যুদ্ধে চুক্তিমাফিক পূর্বেই নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়টি পেরু অবগত হলেও ইকুয়েডর রিও দি জানেইরো প্রটোকলে সম্মতি প্রকাশ করেনি। ১৯৯৮ সালের শেষদিকে রিও প্রটোকল বাস্তবায়নের নিশ্চয়কারীরা সিদ্ধান্ত দেন যে, সীমান্তের ঐ অঞ্চলটি কর্ডিলেরা ডেল কন্ডরের সীমারেখায় অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ১৯৪০-এর দশক থেকে পেরু দাবী করে আসছে।

কন্ডর যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: ইকুয়েডর-পেরু সংঘাত
তারিখজানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১
অবস্থান
কন্ডর পার্বত্য এলাকা
ফলাফলবিরোধপূর্ণ অঞ্চলে ইকুয়েডরের পরাজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
পেরুর বিজয়ী; ১৯৪২ সালের চুক্তির প্রাধান্যতায়।
বিবাদমান পক্ষ
পেরু পেরুইকুয়েডর ইকুয়েডর
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
পেরু ফার্নান্দো বেলায়ান্দে টেরি
পেরু রাফায়েল হয়োজ রুবিও
ইকুয়েডর জাইম রল্দোস আগুইলেরা
২০১১ সালে ইকুয়েডর-পেরু সীমান্ত

১৯৮০ সালে ইকুয়েডর পাকুইশা সীমান্তে জনবহুল মাচিনাজা মেয়েকু এবং পর্বতময় কর্ডিলেরা ডেল কন্ডর ও নাঙ্গারিৎজা উপত্যকা দখল করে নেয়। এ ঘটনার পরপরই ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি জেইম রলদোস ব্যক্তিগতভাবে সামরিক ফাঁড়ি এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। উভয় পক্ষই কর্ডিলেরা ডেল কন্ডর অঞ্চল ও সেনেপা উপত্যকায় সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে থাকে। এরফলে এ ঘটনা সর্পিল বাঁক নেয় ও তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৯৫ সালে সংঘটিত সেনেপা যুদ্ধের পুণরাবৃত্তি ঘটায়।

যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইকুয়েডরের সর্বত্র পাকুইশা যুদ্ধ নামে পরিচিত হলেও স্পেনীয়দের কাছে এ ঘটনাটি ফলসো পাকুইশা যুদ্ধ নামে পরিচিত। তবে পেরুতে মাঝেমধ্যেই পাকুইশা ঘটনা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি

ইকুয়েডরের তিনটি সামরিক ফাঁড়িকে ঘিরে এ বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। পাকুইশা, মেয়াইকো ও মাচিনাজা - এ তিনটি স্থান কোমাইনা নদী উপত্যকা ও পূর্বাংশের কন্ডর ঢালের পিছনে অবস্থিত। ঐ ফাঁড়িগুলো ইকুয়েডর-পেরু সীমান্তে অ-নির্ধারিত এলাকায় অবস্থিত ছিল। ঐ ফাঁড়ি স্থাপনের ফলে পেরু সরকার আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ, ১৯৭০-এর দশকের শেষদিক থেকে উভয় দেশের সামরিক নেতৃবৃন্দ সমস্যা সমাধানকল্পে বেশ কয়েকবার সভা আহ্বান করেছিল। এতে বিতর্কিত এলাকায় কোন নতুন সামরিক ফাঁড়ি স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।[১] এরফলে কন্ডর র‌্যাঞ্জের পূর্বাংশে ইকুয়েডরের কোন সামরিক উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা ছিল না।

ফাঁড়ি স্থাপন করে ইকুয়েডরের এ দখলদারিত্ব ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওএএসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় পেরুভীয় প্রতিনিধি অভিযোগ উত্থাপন করেন। ঐ সভায় পেরুভীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিয়ের আরাইজ স্তেলা বলেন যে, ইকুয়েডরের সামরিক ফাঁড়ি স্থাপন ভূয়া, অন্যদিকে ইকুয়েডর তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা জানায়।

২৮ জানুয়ারি ইকুয়েডরের এ আগ্রাসনের পরবর্তী সময়ে ইকুয়েডরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলফনসো বারেয়া ভাল্দেরদের বক্তব্য আসে। পাকুইশা, মেয়াইকো এবং মাচিনাজার সামরিক ফাঁড়ি স্থাপনের অর্থ হচ্ছে ইকুয়েডরীয় শহরের বিরুদ্ধে নয়।[২]

সংঘাতমুখর এলাকায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটে। উভয় দেশই অন্য দেশকে নিশ্চয়তাবিধানকারী হিসেবে যুদ্ধ বিরতি বাস্তবায়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তদারকিতে রাখে।[৩]

আক্রমণ পরিচালনায় ফুয়ের্জা এইরিয়া দেল পেরু (এফএপি) এ-৩৭বি, মিরাজ ৫পি ও সু-২২ ব্যবহার করে। এফএই ১৭৯ যুদ্ধকল্পে এ-৩৭বি ও মিরাজ এফ-১ বিমান এফএপি আক্রমণ মোকাবেলায় অগ্রসর হয়। ২৮ জানুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে এফএই ও এফএপির মধ্যে দুইটি এ-৩৭বি বিমানের সংঘর্ষ হয়েছিল।

১৯৪১ সালে ইকুয়েডর-পেরুর যুদ্ধের চুক্তিমাফিক পেরুর অঞ্চলে স্থাপিত পাকুইশা ফাঁড়ি দখলে ইকুয়েডরের সক্ষমতা ছিল। পেরুর অভিযান সফলতা লাভ করে। ফলসো পাকুইশার ফাঁড়িটি ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে পেরুর সেনাবাহিনী দখল করে নেয়। ইকুয়েডর-পেরুর সীমান্তে অ-নির্ধারিত এলাকায় সংঘটিত হওয়া সংঘর্ষটি ইকুয়েডরের সাথে যুদ্ধবিরতির পর্যায়ে গেলেও তারা এ থেকে সরে আসে ও কর্ডিলেরা ডেল কন্ডর সম্মেলনের দিকে ধাবিত করে।

ফলাফলস্বরূপ পেরু ও ইকুয়েডর সরকার প্রত্যেকের নিশ্চয়তাবিধানকারী দেশের সহায়তায় তাদের বাহিনীকে নিবৃত্ত করে। এই ভদ্রোচিত চুক্তি ১৯৮০-এর দশকে বিরোধপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে শুরু করে নিয়মিত প্রহরার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।

ভদ্রোচিত চুক্তি

১৯৪১ সালের দূর্যোগ এড়ানোর পর বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি এড়াতে ও ইকুয়েডরের সম্ভাব্য দক্ষিণাংশ আগ্রাসন মোকাবেলার্থে শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পঁচিশ হাজার ব্যক্তির সমন্বয়ে জেনারেল রিচেলিউ লেভয়ের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষামূলক কাজে অংশ নেয়।

তখনো ইকুয়েডরীয় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় আটদিনের মধ্যে নীতিগত অভিযান পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছিল। লেভয়ের সকল কর্মকর্তা, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ সরবরাহ ইত্যাদির সমন্বয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রদান করেন। এতে তারা চব্বিশ ঘণ্টা সেনাবাহিনীতে থাকবে ও প্রতিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পেরুর সেনাবাহিনী খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে সশস্ত্র সরঞ্জামাদি একত্রিত করে বিস্ময়ান্বিত করে। এরফলে লেভয়ের ও তার লোকেরা পেরুর উত্তরাংশ দখলে ট্যাংক বিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, পরিখায় ফাঁদ তৈরি ও অন্যান্য বিষয়াদি বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়।

সৌভাগ্যবশতঃ এ বিষয়টি সাধারণ যুদ্ধে পরিণত হয়নি যাতে উভয় দেশের বিপুল ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারতো। সর্বত্র সম্ভাব্য মোকাবেলা এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের মধ্যকার সরাসরি আলাপ-আলোচনা চিলি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি ইকুয়েডরের এল অরো প্রদেশের হুয়াকুইলাস শহরের সীমান্তে ও পেরুর তাম্বেস বিভাগের আগুয়াস ভার্দেসে আলাপ-আলোচনাগুলো হয়েছিল। এর ফলাফল হিসেবে সরোসা-দু-বইস আইন প্রণয়ন করা হয়।

সরাসরি আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণকারীরাই সম্ভাব্য সম্মুখ সমরে অংশ নিতেন। আলোচনা চলাকালেও লেভয়ের যুদ্ধকৌশল তার লোকদের সাহস ও প্রতিপক্ষের নৈতিকতার মধ্যে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ছয়টায় শারীরিক অনুশীলনের পাশাপাশি সেনা কার্যক্রম ও বাহিনীর অন্যান্য বিষয়ে যোগ দিতেন। এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী লেভয়েরকে তার মন্ত্রণাদাতারা তাকে অনমনীয় মনোভাবের অধিকারীরূপে চিত্রিত করেন।

পরবর্তী ঘটনা

সীমান্তে সহিংসতা চলতে থাকে। ১৯৯৮ সালে ব্রাসিলিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইকুয়েডর-পেরুর অঞ্চলের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। পুরো জানুয়ারি মাসেই সহিংসতা চলেছিল। ঐ মাসেই রিও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। সীমান্তে চিহ্নিতকরণে অনেকগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা থাকা স্বত্ত্বেও চুক্তি বাস্তবায়ন ঐ সময়ে সম্ভব হয়নি।

কর্ডিলেরার উপরে-নিচে উভয় দেশেরই অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটি নির্মিত হয় ও অঞ্চলটি সামরিকায়ন হয়ে যায়। পেরুর ঘাঁটিগুলো হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। অন্যদিকে ইকুয়েডরের ঘাঁটিগুলো নুড়ি পাথরের রাস্তায় বিভিন্ন সামরিক ফাঁড়িতে যোগাযোগের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়।

কিছু সূত্র দাবি করে যে, ইকুয়েডরের সীমান্ত চিহ্নিতকরণ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ঘরোয়া অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে।

ইউএসআইপি'র ভাষ্য মোতাবেক জানা যায়, যুদ্ধ শেষে ইকুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতীয় মতামত জরীপ পরিচালনা করে। এতে রিও প্রটোকলের অকার্যকারিতা ও ইকুয়েডরের আমাজন নদীতে প্রবেশের সার্বভৌমত্ব দাবী করা হয়। ১৯৮৩ সালে ইকুয়েডরের কংগ্রেস রিও প্রটোকলের অকার্যকারিতার বিষয়ে তার অবস্থান পুণর্ব্যক্ত করে।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী