নোরা বি ৫২
নোরা বি-৫২ হচ্ছে সার্বিয়ার মিলিটারি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বেলগ্রেড-এর তৈরি ১৫৫ মিমি স্বচালিত কামান। এমটিআই ১৯৮৪ সালে প্রথম স্বচালিত নোরা বি (নোরা সি এর উপর ভিত্তি করে তৈরি) এর নকশা করে ফ্যাব্রিকা অটোমোবিলা পিরবোজ (পিরবোজ মোটরগাড়ি কারখানা) এর ৮x৮ ট্রাকের উপর ১৫২ মিমি নোরা এম৮৪ কামান বসানোর মাধ্যমে।[২] এটি ছিল একটি তৃতীয় প্রজন্মের গোলন্দাজ অস্ত্র।
নোরা বি ৫২ | |
---|---|
নোরা বি-৫২ কামান | |
প্রকার | স্বচালিত কামান |
উদ্ভাবনকারী | সার্বিয়া |
উৎপাদন ইতিহাস | |
নকশাকারী | মিলিটারি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বেলগ্রেড |
উৎপাদনকারী | কমপ্লেক্স ব্যাটল সিস্টেম ফ্যাক্টোরি, ভেলিকা প্লানা, সার্বিয়া |
উৎপাদন খরচ (প্রতিটি) | $০.৭ মিলিয়ন (২০০৫ সালে, কে-জিরো ভার্সন) |
উৎপাদন সংখ্যা | ৪টি প্রোটোটাইপ ৭২টি নির্মিত, ৪২টি নির্মানাধীন |
তথ্যাবলি | |
ওজন | ৩৪ টন (কে-আই), ২৭.৪ - ২৮ টন (কে-জিরো, কে-ওয়ান, এম০৩) |
দৈর্ঘ্য | ১১০০০ মিমি |
প্রস্থ | ২৯৫০ মিমি |
উচ্চতা | ৩৪৫০ মিমি |
ক্রু | ৩-৫ |
Elevation | -৩° হতে +৬৫° |
Traverse | ৬০° |
গুলির হার | সংস্করণভেদে মিনিটে ৬-১২টি গোলা, প্রথম ৩টি ২০ সেকেন্ডে |
সর্বোচ্চ পাল্লা | ৫৬ কিমি[১] |
Armor | সামনে ও পিছনে- স্ট্যানাগ ৪৫৬৯ লেভেল ৩, পার্শ্বে- স্ট্যানাগ ৪৫৬৯ লেভেল ১, মাইন সুরক্ষা- স্ট্যানাগ ৪৫৬৯ লেভেল ২এ ও ২বি, নিয়ন্ত্রিত বায়ুচলাচল দ্বারা জৈব-রাসায়নিক ও নিউক্লিয় সুরক্ষা |
প্রাথমিক যুদ্ধাস্ত্র | ১৫৫ মিমি/৫২-ক্যালিবার |
Secondary armament | ৭.৬২ মিমি মেশিনগান, বিকল্প হিসেবে ৭.৬২ মিমি বা ১২.৭ মিমি দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র |
ইঞ্জিন | টার্বো ডিজেল ৪১০ অশ্বশক্তি |
সাসপেনশন | ৮x৮ অফ-রোড চাকা |
অপারেশনাল রেঞ্জ | ১,০০০ কিমি (৬২০ মা), ৮০ কিমি/ঘ (৫০ মা/ঘ) গতিতে (কে-আই) |
গতিবেগ | পাকা রাস্তায়: ৯০ কিমি/ঘ (৫৬ মা/ঘ) অর্ধপাকা রাস্তায়: ২৫ কিমি/ঘ (১৬ মা/ঘ) রাস্তার বাইরে: ১৫ কিমি/ঘ (৯.৩ মা/ঘ) (কে-আই) |
২০০০ সালে এমটিআই ৫২-ক্যালিবার ১৫৫ মিমি কামান ব্যবহার করে নতুন চতুর্থ প্রজন্মের গোলন্দাজ অস্ত্র তৈরি করে যা বি-৫২ নামে পরিচিত হয়।
সংস্করণ
সংস্করণভেদে বি-৫২ এর কার্যপ্রক্রিয়া পুরপুরি স্বয়ংক্রিয় যাতে রয়েছে একটি ৩৬-রাউন্ড স্বয়ংক্রিয় লোডার। এই কামানটি বিভিন্ন সংস্করণে তৈরি হয়েছে:
- কে-জিরো
- প্রথম ধারাবাহিক সংস্করণ। খোলা টারেট, মনুষ্য পরিচালিত এবং দৃষ্টিসীমার মধ্যে।
- কে-ওয়ান(এস)
- অর্ধ-খোলা টারেট, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, স্বনির্ভর স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন, স্বয়ংক্রিয় গোলাবর্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, স্বল্পসংখ্যক পরিচালনাকারী।
- এম০৩
- অর্ধ-খোলা টারেট, কে-জিরো, কে-ওয়ান এর উপর ভিত্তি করে তৈরি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। সার্বিয়া সেনাবাহিনীর জন্য এস (S) উপাধি।
- কে-ই
- অর্ধ-খোলা টারেট, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। রপ্তানি সংস্করণ।
- কে-আই
- কে-ওয়ান, সাথে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, বন্ধ টারেট, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, শক্তিশালী কাঠামো, প্রক্ষিপ্ত গোলার গতিপথ ও গতি পরিমাপের জন্য কামানের নলে বসানো রাডার, কেবিন ও টারেটে নিউক্লিয়-জৈব-রাসায়নিক সুরক্ষা, স্বয়ংক্রিয় গোলানিক্ষেপ-সাসপেনশন ব্যবস্থা স্মোক গ্রেনেড লঞ্চার, পরিচালনাকারীদের জন্য আভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা ও নতুন সফটওয়্যার। সার্বিয়া সেনাবাহিনীর জন্য এস (S) উপাধি।
- আলেকজান্ডার (এমজিএস-২৫)[৩]
- নতুনতম সংস্করণ, ২০০৯ সালে পরিকল্পিত, কে-টু উপাধিপ্রাপ্ত। ২৫ লিটার প্রকোষ্ঠ, উচ্চ গোলাবর্ষণ হার, লেজার নিয়ন্ত্রিত দীর্ঘ পাল্লার গোলা, স্বল্পসংখ্যক পরিচালনাকারী, নতুন স্বয়ংক্রিয় কার্যপ্রক্রিয়া, স্বল্প ওজন (২৫ টন), কামানের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তরদিকে লক্ষ্যস্থিরকরণ, নতুন স্মোক ও লাইট গ্রেনেড। ২০১২ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কয়েক বছরের ক্রমবিকাশের পর ২০১৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল আর্মস ফেয়ার পার্টনার-এ এর একটি প্রোটোটাইপ উপস্থাপিত হয় যার নাম দেয়া হয় আলেকজান্ডার। বর্তমানে এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে এমজিএস-২৫ আলেকজান্ডার। এতে রিভলভার টাইপ স্বয়ংক্রিয় লোডার রয়েছে যাতে ১২ রাউন্ড গোলাবর্ষণের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় থাকে এবং আরও ১২ রাউন্ড গোলা থাকে ক্রু-প্রকোষ্ঠ ও ইঞ্জিন-হাইড্রোলিক প্রকোষ্ঠের পিছনে অবস্থিত স্টোরেজ বাক্সে। এমজিএস-২৫ মিনিটে ৬টি গোলাবর্ষণ করতে পারে এব সব গোলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গোলাবর্ষণ চালিয়ে যেতে পারে। সাধারণ গোলা ব্যবহার করে এই কামান সর্বোচ্চ ৩২.৫ কিমি পাল্লায় গোলাবর্ষণ করতে পারে, ১৫৫ মিমি এইচই ইআরএফবি আরএ / বিবি (ভিএলএপি) গোলার ক্ষেত্রে এই পাল্লা দাঁড়ায় ৫৬ কিমিতে।[১][৪] বড় প্রকোষ্ঠ থাকায় এটি বাজারে প্রাপ্য ১৫৫ মিমি কামানের সব ধরনের গোলা ব্যবহার করতে পারে। উচ্চপর্যায়ের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকায় এমজিএস-২৫কে ১০০ মিটার দূর থেকেও পরিচালনা করা সম্ভব।
বিভিন্ন সংস্করণে আলাদা কাঠামো, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, টারেট, লোডার ও অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে। আদর্শ সরঞ্জাম হিসেবে রয়েছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ভূমিতে নেভিগেশন ব্যবস্থা। স্বয়ংক্রিয় লোডার যুক্ত সকল সংস্করণে একক লক্ষ্যে একাধিক কামান থেকে গোলাবর্ষণ এবং সকল গোলা একই সময়ে আঘাত করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্রাস্ত্রের গুলি, গোলার স্প্লিন্টার ও কিছু ক্ষেত্রে মাইন থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে।[৫][৬][৭]
ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করে নোরা বি-৫২কে ১৫২ মিমি কামান দ্বারাও সজ্জিত করা সম্ভব।
ইতিহাস
সার্বিয়া, কেনিয়া, বাংলাদেশ ও মায়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর নিকট নোরা বি-৫২ গোলন্দাজ অস্ত্র ব্যবস্থা, বিওভি এম১১ রেকি বাহন, বিওভি এম১০ কমান্ড বাহন, গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণ ও আবহাওয়া বাহন, গোলা লোডিং ট্রাক এবং গোলন্দাজ যুদ্ধক্ষেত্র সফটওয়্যার বিক্রি করেছে।[৮][৯] একটি সম্পূর্ণ সজ্জিত ব্যাটারিতে সাধারণত ৬-১২টি স্বচালিত কামান, ১-২টি বিওভি এম১১ রেকি বাহন, তিনটি বিওভি এম১০ কমান্ড বাহন, ৩-৬টি গোলাবাহী ট্রাক, যোগাযোগ বাহন, ২-৩টি রসদবাহী যান এবং ১-২টি দিকনির্দেশ ও অবস্থান নির্ণয়ের জন্য রাডার ও সাউন্ড-রেঞ্জিং যান থাকে।
গোলা
নোরা বি-৫২তে বিভিন্ন ধরনের দেশি ও বিদেশি ১৫৫ মিমি গোলা ব্যবহার করা যায়। গোলার উপর ভিত্তি করে পাল্লা ও লক্ষ্যের উপর প্রভাবের ভিন্নতা দেখা যায়।
নাম | ধরন | পাল্লা (মিটারে) | ক্যালিবার | মন্তব্য |
---|---|---|---|---|
এম১০৭ | এইচই এম৮৮ | ৩২০০০ | ১৫৫ মিমি | |
এম০৪ | ইআরএফবি | ৩৪০০০ | ১৫৫ মিমি | |
এম০২ | ইআরএফবি/বিবি | ৪১৮৫০ | ১৫৫ মিমি | |
এম০২ | ইআরএফবি-বিবি | ৪৪০০০ | ১৫৫ মিমি | নির্মানাধীন।[১০] |
এম১৫ | এইচই ইআরএফবি আরএ/বিবি | ৫৬০০০ | ১৫৫ মিমি | [১] |
ক্রাসনোপল | বিবি | ২০০০০ | ১৫৫ মিমি | নিয়ন্ত্রিত |
— | এইচই ভি-এলএপি | ৬৭০০০ | ১৫৫ মিমি | আলেকজান্ডার-এর ২৫ লিটার প্রকোষ্ঠের জন্য নির্মানাধীন। |
ব্যবহারকারী
বর্তমান ব্যবহারকারী
- সার্বিয়া: ১২+ সক্রিয়।[১১]
- বাংলাদেশ: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৫৪টি নোরা বি-৫২ কে-আই সক্রিয়।[১২] এগুলোতে স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন ও লক্ষ্যস্থির করার জন্য স্যাগেম সিগমা ৩০ নেভিগেশন ব্যবস্থা লাগানো হয়েছে।[১৩]
- সাইপ্রাস: সাইপ্রিয়ট ন্যাশনাল গার্ড ২৪টি ব্যবহার করছে।[১৪]
- কেনিয়া: ৩০টি অর্ডারকৃত, ৬টি সক্রিয়।[৯][১৫]
- মায়ানমার: মায়ানমার সেনাবাহিনীতে ৩০টি সক্রিয়।[১৩][১৬]
সম্ভাব্য ব্যবহারকারী
২০১৭ সালে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নোরা বি-৫২ এর পরীক্ষা চালিয়েছিল।[১৭][১৮][১৯]