নিখিলজ্যোতি ঘোষ
নিখিলজ্যোতি ঘোষ[১] (১৯১৮-১৯৯৫) একজন ভারতীয় সংগীতশিল্পী, শিক্ষক এবং লেখক ছিলেন। ঘাতবাদ্য তবলায় তাঁর দক্ষতার জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন।[২] ১৯৫৬ সালে তিনি সংগীত মহাভারতী নামে সংগীতের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাপিত করেন, এবং ভারত ও বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে বাদ্য পরিবেশন করেন।[৩] ওস্তাদ হাফিজ আলী খান পুরস্কার প্রাপক, নিখিলজ্যোতির বাজন শৈলী, দিল্লি, আজরাদা, ফারুখাবাদ, লখনউ এবং পাঞ্জাবের ঘরানা সংগীতের সাথে সংযুক্ত ছিল বলে জানা যায়। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাঁকে গানের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ প্রদান করে।[৪]
নিখিলজ্যোতি ঘোষ | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | বরিশাল, পূর্ববঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত | ২৮ ডিসেম্বর ১৯১৮
মৃত্যু | ৩ মার্চ ১৯৯৫ ভারত | (বয়স ৭৬)
পেশা | সুরকার সংগীত শিক্ষক লেখক |
পরিচিতির কারণ | তবলা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ঊষা নয়ামপল্লি |
সন্তান | নয়ন ঘোষ, ধ্রুব ঘোষ, তুলিকা ঘোষ |
পিতা-মাতা | অক্ষয় কুমার ঘোষ |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ ওস্তাদ হাফিজ আলী খান পুরস্কার |
জীবনী
নিখিল ঘোষ ১৯১৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বড় ভাই পান্নালাল ঘোষ ছিলেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন বংশীবাদক।[৫][৬] তাঁর বাবা সেতার বাদক অক্ষয় কুমার ঘোষের কাছ থেকে সংগীতের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেবার পর, তিনি বেশ কয়েকজন নামী সংগীতকারীর অধীনে কন্ঠ সঙ্গীত এবং তবলার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে আছেন - আহমেদ জান থিরাক্বা, আমির হুসেন খান এবং জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ। তিনি তাঁর সময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য সংগীতকারদের সাথে মঞ্চে তবলা বাজানো শুরু করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে আছেন ফৈয়াজ খান, হাফিজ আলী খান, আলাউদ্দিন খাঁ, ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, বড়ে গুলাম আলী খান, আমির খান, পান্নালাল ঘোষ, রবিশঙ্কর, আলী আকবর খান, বিলায়েত খাঁ, ভীমসেন জোশী, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, বসন্ত রাই, জসরাজ, আমজাদ আলি খান এবং শিব কুমার শর্মা।[৩]
ঘোষ ১৯৫6 সালে সঙ্গীত মহাভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি এমন একটি বিদ্যালয়, যেটি শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষার জন্য নিবেদিত।[৩] এখানে তিনি বেশ কয়েকজন উচ্চাভিলাষী সংগীতশিল্পীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জগতে তাঁদের নাম তৈরি করেছেন; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অনীশ প্রধান, একনাথ পিম্পল, দত্ত ইয়াণ্ডে, করোদিলাল ভট্ট, জার্ট ওয়েগনার এবং কিথ ম্যানিং।[৭] তিনি তাঁর দুই পুত্র নয়ন ঘোষ এবং ধ্রুব ঘোষকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন[৮] যথাক্রমে তবলা এবং সারঙ্গীতে। পাশাপাশি তাঁর কন্যা, তুলিকা ঘোষকে কন্ঠসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।[৭][৯] সকলেই তাঁকে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় সহায়তা করতেন।[৮][১০]
ঘোষ ভারতে এবং বিদেশের বহু মঞ্চে বাদ্য বাজিয়েছিলেন। অ্যালডেবোরো (১৯৫৮), এডিনবার্গ (১৯৫৮), ব্রাতিস্লাভা (১৯৮০, ১৯৮২), হেলসিঙ্কি (১৯৮৫), রোম (১৯৮৫), অ্যাথেন্স (১৯৮৫) এবং ১৯৭৮ সালে প্যারিসে ইউনেস্কো সংগীত সম্মেলনে একক তবলা বাদ্য প্রস্তুত করেছিলেন।[৩] তিনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক সংগীত শিক্ষক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি প্রচলিত সংগীত স্বরলিপি ব্যবস্থায় উন্নতি করেছিলেন এবং ফান্ডামেন্টালস অব রাগ অ্যান্ড তাল : উইথ এ নিউ সিস্টেম অব নোটেশন শিরোনামে তাঁর পদ্ধতি সম্পর্কিত একটি বই লিখেছিলেন।[১১] পরবর্তীকালে, তিনি সহজেই স্বরলিখনের জন্য বইটির বদলে আরেকটি পাণ্ডুলিপি বই লেখেন। এর পরে তাঁর চূড়ান্ত কাজ ছিল দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব মিউজিক অব ইন্ডিয়া, এই বই লেখার কৃতিত্ব তিনি দেন তাঁর সংগীত বিদ্যালয়, সংগীত মহাভারতীকে।[১২]
১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ নাগরিক সম্মান প্রদান করে[৪] এবং তিনি ১৯৯৫ সালে ওস্তাদ হাফিজ আলী খান পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে উষা নয়ামপলি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে ৩রা মার্চ স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে ৭৬ বছর বয়সে মারা যান।[৩]
আরো দেখুন
- নয়ন ঘোষ
- পান্নালাল ঘোষ
- জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ
- আহমেদ জান থিরাক্বা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- "Pandit Nikhil Ghosh - Tabla solo - Rela - Tisra jati"। YouTube video। Doyen of Farrukhabad। ১৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ মে ১৮, ২০১৬।
- "Ghosh Family Jugalbandi - Rageshree"। YouTube video। cenk altiner। ১৬ মে ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ মে ১৮, ২০১৬।
আরো পড়ুন
- Regula Burckhardt Qureshi (৬ মে ২০১৬)। Master Musicians of India: Hereditary Sarangi Players Speak। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 209–। আইএসবিএন 978-1-135-87396-7।