নাভিরজ্জু

নাভিরজ্জু (নাভিনাল [১] , জন্মরজ্জু বা ফিউনিকুলাস অ্যাম্বিলিকালিস) হলো অমরাযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উন্নয়নশীল ফিটাস বা ভ্রূণ এবং অমরার মধ্যে একটি সংযোগ। প্রসবকালীন বিকাশের সময়, নাভিরজ্জুটি ফিটাসের শারীরবৃত্তীয় এবং জেনেটিক্যালি অংশ হিসেবে বিদ্যমান থাকে। মানুষের মধ্যে নাভিরজ্জুতে সাধারণত দুটি ধমনী এবং একটি শিরা থাকে। ধমনীদুটোকে নাভির ধমনী এবং শিরা দুটিকে নাভির শিরা বলে। নাভিরজ্জু, ওয়ারটন জেলির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। নাভির শিরা, অমরা থেকে অক্সিজেন, পুষ্টি সমৃদ্ধ রক্ত নিয়ে ফিটাসে সরবরাহ করে। বিপরীতভাবে, ফিটাসের হৃৎপিণ্ড নাভির ধমনীর মাধ্যম, স্বল্প অক্সিজেন এবং পুষ্টিহীন রক্ত অমরায় নিয়ে যায়।

নাভিরজ্জু
তিন মিনিট বয়সী নবজাতকের নাভিরজ্জু। নাভিরজ্জুটি বাঁধা অবস্থায় আছে।
বিস্তারিত
শনাক্তকারী
লাতিনfuniculus umbilicalis
মে-এসএইচD014470
টিইTE {{{2}}}.html EE6.0.2.2.0.0.1 .{{{2}}}{{{3}}}
শারীরস্থান পরিভাষা

গঠন এবং বিকাশ

নাভিরজ্জুর প্রস্থচ্ছেদ
৮ সপ্তাহ ৩ দিন বয়সী ভ্রূণের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি। ভ্রূণটি অ্যামনিওটিক স্যাকের পাতলা ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত। নাভিরজ্জুটি মাঝখানে অমরার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে

নাভিরজ্জু, কুসুমথলি এবং অ্যালানটয়েসের অবশিষ্টাংশ থেকে বিকাশ লাভ করে এবং ধারণ করে। এটি মানব ভ্রুণের বিকাশের পঞ্চম সপ্তাহের মধ্যে গঠিত হয়।[২] রজ্জুটি সরাসরি মায়ের সঞ্চালন ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত নয়। এটি অমরার সাথে সংযুক্ত। যা সরাসরি মিশ্রণ ছাড়াই মাতৃরক্তে বিভিন্ন উপাদান স্থানান্তর করে। নাভিরজ্জুর দৈর্ঘ্য গর্ভাবস্থা জুড়ে ভ্রূণের মুকুট-রাম্প দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান। একটি পূর্ণ মেয়াদী নবজাতকের মধ্যে নাভিরজ্জু সাধারণত প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) লম্বা এবং ব্যাস প্রায় ২ সেন্টিমিটার (০.৭৫ ইঞ্চি) হয়। এই ব্যাস অমরার মধ্যে দ্রুত হ্রাস পায়। নাভির ধমনীর দুটি প্রধান স্তর আছে: একটি বহিঃস্থ স্তর বৃত্তাকারভাবে সাজানো মসৃণ পেশী কোষ এবং একটি অভ্যন্তরীণ স্তর যা অনিয়মিত এবং আলগাভাবে সাজানো কোষ দ্বারা গঠিত।

নাভিরজ্জুতে ওয়ারটন জেলি থাকে। এটি একটি জিলেটিনাস পদার্থ যা মূলত মিউকোপলিস্যাকারাইড থেকে তৈরি এবং ভেতরের রক্তনালীগুলোকে রক্ষা করে। নাভিরজ্জুতে একটি শিরা এবং দুটি ধমনী আছে। শিরাটি ভ্রূণে অক্সিজেন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে। আর ধমনী দুটি ভ্রূণ থেকে মাতৃদেহে অক্সিজেন ও পুষ্টি কমে যাওয়া রক্ত বহন করে। [৩] মাঝে মাঝে, নাভিরজ্জুতে শুধুমাত্র দুটি রক্তনালি (একটি শিরা এবং একটি ধমনী) বিদ্যমান থাকে। যা ভ্রূণের অস্বাভাবিক অবস্থা নির্দেশ করে।

কাজ

ফিটাসের সংবহনতন্ত্রের সাথে সংযোগ

নাভিরজ্জু উদরের মাধ্যমে ভ্রূণে প্রবেশ করে। যে বিন্দুতে (বিচ্ছেদের পর) আম্বিলিকাস (বা নাভি) হয়ে উঠবে। ভ্রূণের অভ্যন্তরে, নাভির শিরা যকৃতের বিপরীত ফাটলের দিকে অব্যাহত থাকে, যেখানে এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এই শাখাগুলির মধ্যে একটি হলো হেপাটিক পোর্টাল শিরা (তার বাম শাখার সাথে সংযুক্ত), যা যকৃতে রক্ত বহন করে। দ্বিতীয় শাখাটি ডাক্টাস ভেনোসাস নামে পরিচিত। এ শিরাটি বাইপাস করে এবং নিম্ন মহাশিরায় প্রবাহিত হয়, যা হৃৎপিণ্ডের দিকে রক্ত বহন করে। অভ্যন্তরীণ ইলিয়াক ধমনী থেকে দুটি ধমনীর শাখা মূত্রনালীর উভয় পাশে নাভিরজ্জু অতিক্রম করে এবং বর্তনী সম্পন্ন করে অমরায় ফিরে আসে।[৪]

জন্মের পরে পরিবর্তন

বাহ্যিক হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতিতে, নাভিরজ্জু জন্মের কিছুক্ষণ পরেই শারীরিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাপমাত্রা হ্রাস এবং মসৃণ পেশী সংকোচনের ফলে রক্তনালীর সংকোচন দ্বারা ওয়ারটন জেলি ফুলে ওঠা এবং পরিমাণ কমে যাবার কারনেই নাভিরজ্জু বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় রক্ত প্রবাহ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে একটি প্রাকৃতিক ক্ল্যাম্প তৈরি করা হয়। ১৮°C বাতাসে, এই শারীরবৃত্তীয় ক্ল্যাম্পিং তিন মিনিট বা তার কম সময় লাগে।[৫]

ক্লিনিকাল গুরুত্ব

সমস্যা এবং অস্বাভাবিকতা

একটি নবজাতকের বাঁধা নাভিরজ্জু

বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা নাভিরজ্জুকে প্রভাবিত করতে পারে, যা মা এবং শিশু উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে:[৬]

  • উদাহরণস্বরূপ, রজ্জুর মধ্যে একটি গিঁট [৭] , বা নুচল কর্ড [৮] ( ভ্রূণের গলায় দড়ি র্পিং)[৯]। কিন্তু এই অবস্থা ভ্রূণ সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে না।
  • ভেলামেন্টাস কর্ড সন্নিবেশ
  • একক ধমনী
  • অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড প্রোল্যাপস
  • ভাসা প্রেভিয়া

ক্ল্যাম্পিং এবং কর্তন

কাঁচি দিয়ে নাভিরজ্জু কাটা হচ্ছে
নাভিরজ্জু ক্ল্যাম্প
এক দিন বয়সী নবজাতক, যেটির নাভিরজ্জু কাটা হয়েছে
৭ সেমি (২.৭৫ ইঞ্চি) লম্বা নাভিরজ্জু

রজ্জুটি বিভিন্ন সময়ে আটকে রাখা যেতে পারে; যাইহোক, জন্মের অন্তত এক মিনিট পর নাভিরজ্জুটি আটকে রাখা উচিত। এতে করে সুবিধা হলো নবজাতকের যদি জন্ডিসের ক্ষুদ্র ঝুঁকি থাকে তবে তা চিকিৎসার সুযোগ থাকে। ক্ল্যাম্পিং করার পর রজ্জুটি কাটা হয়। স্নায়ুর অনুপস্থিতির কারণে রজ্জুর কর্তন ব্যথাহীন হয়।[১০]

রজ্জুর ক্ল্যাম্প নিরাপদ এবং দ্রুত। প্রথমে রজ্জুতে ক্ল্যাম্প প্রয়োগ করা হয় এবং তারপর ছুড়ি দিয়ে রজ্জুটি কাটা হয়। ক্ল্যাম্প এবং কাটার পর, নবজাতকের নাভি এলাকায় একটি প্লাস্টিক ক্লিপ পরানো হয়, যতক্ষণ না রজ্জুর সংকুচিত অঞ্চল শুকিয়ে যায় এবং পর্যাপ্তভাবে সিল করা হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, হাসপাতালের বাইরে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের ক্ষেত্রে একজন ইমার্জেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইএমটি) রজ্জুটি কেটে দেয়। একটি দীর্ঘ অংশ তথা রজ্জুটির ১৮ সেমি (৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত দৈর্ঘ্য নবজাতকের সাথে সংযুক্ত রাখা হয়।[১১][১২]

অবশিষ্ট নাভিরজ্জু ১০ দিন পর্যন্ত থাকে। তারপর এটি শুকিয়ে যায় এবং পড়ে যায়।

নাভিরজ্জুর রক্ত সংরক্ষণ এবং গুরুত্ব

নাভিরজ্জুর রক্ত কর্ড ব্লাড বা রজ্জুরক্ত নামে পরিচিত। এ রক্ত অভেদ্য স্টেম সেলের (টাইপ সিডি৩৪-পজিটিভ এবং সিডি৩৮-ঋণাত্মক) একটি সমৃদ্ধ এবং সহজলভ্য উৎস। এই রক্তকোষগুলো বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

মস্তিষ্কে আঘাত[১৩] এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিসের[১৪] মতো অবস্থার চিকিৎসায় কর্ড ব্লাড স্টেম সেলের ব্যবহার ইতোমধ্যেই মানুষের মধ্যে গবেষণা করা হচ্ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসার [১৫][১৬] জন্য এবং শ্রবণশক্তি কমে যাবার চিকিৎসার ক্ষেত্রে [১৭] কর্ড ব্লাড স্টেম সেলের ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষণা চলছে।

অন্যান্য প্রাণীতে নাভিরজ্জু

মানুষের নাভিরজ্জুতে একটিমাত্র নাভির শিরা থাকলেও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন গবাদি পশু এবং ভেড়াতে দুটি স্বতন্ত্র নাভির শিরা রয়েছে। [১৮]

কিছু কিছু প্রাণীতে, মা রজ্জুটিকে কামড়িয়ে এবং চিবিয়ে অমরা থেকে সন্তানকে পৃথক করে। যাতে করে শিশুটি শিকারী প্রাণী দ্বারা আকৃষ্ট না হয় সেজন্য অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে মা রজ্জুটিকে খেয়ে ফেলে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শিম্পাঞ্জিতে, মা রজ্জুটি ছেড়ে দেয় এবং তার তরুণ শাবককে রজ্জু এবং অমরা দিয়ে পরিচর্যা করে যতক্ষণ না রজ্জুটি শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে আলাদা হয়ে যায়। সাধারণত জন্মের এক দিনের মধ্যে রজ্জুটি পরিত্যক্ত হয়। (এটি ১৯৭৪ সালে জঙ্গলে প্রাণীবিজ্ঞানীরা প্রথম নথিভুক্ত করেন[১৯])

কিছু প্রজাতির হাঙ্গর হলো হাতুড়ি, রিকুইম এবং মসৃণ হাউন্ড। এরা ভিভিপ্রস এবং তাদের অমরার সাথে সংযুক্ত একটি নাভিরজ্জু আছে।

মনে করা হয় যে যেসব প্রাণী ডিম পাড়ে তাদের মিথ্যা নাভিরজ্জু আছে যা ভ্রূণ এবং কুসুমকে সংযুক্ত করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মানব নাভিরজ্জুতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ

একাধিক আমেরিকান এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায়, নাভিরজ্জুর রক্তে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী একাধিক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই প্লাস্টিক, কম্পিউটার সার্কিট বোর্ড, ধোঁয়া এবং কৃত্রিম সুগন্ধি থেকে উদ্ভূত।[২০] সর্বমোট ৩০০টিরও বেশি রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিসফেনল এ (বিপিএ), টেট্রাব্রোমোবিসফেনল এ (টিবিবিপিএ), টেফলন সম্পর্কিত পারফ্লুরোঅক্টানোইক এসিড, গ্যালাক্সোলিড এবং কৃত্রিম সুগন্ধি। আমেরিকার গবেষণায় আফ্রিকান-আমেরিকান, হিস্পানিক-আমেরিকান এবং এশিয়ান-আমেরিকানদের ক্ষেত্রে এসব বিষাক্ত পদার্থের উচ্চ মাত্রা দেখানো হয়েছে। এটা মনে করা হয়, উচ্চ দূষণের এলাকায় বাস করলে নাভিরজ্জুর রক্তে এসব পদার্থের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্ত চিত্র

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে Umbilical cord সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী