নয়া দামান

সিলেটি বিয়ের গীত বা ধামাইল

আইলারে নয়া দামান সিলেটি ভাষায় রচিত একটি বিখ্যাত বিয়ের গীত যা ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।[১][২] গানটি নানা কথায় ও নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরে সিলেটসহ বাংলাভাষী অঞ্চলসমূহে গীত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ বেতার সিলেট থেকে সত্তর দশকের শুরু দিকে এটি প্রচার পেয়ে আসছে বলে জানা যায়। তবে ভাইরাল হওয়া সংস্করণ ‘আইলারে নয়া দামান’ সিলেটের মুসলমান সমাজে বিয়ের গীত হিসেবে অত্যধিক জনপ্রিয়।[৩][৪]

ইতিহাস

সিলেট বেতারের জন্য ১৯৭৩ সালের দিকে এয়ারুন্নেছা খানম নামের এক শিল্পীর কণ্ঠে গানটি প্রথম রেকর্ড হয় বলে জানান লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ। আবার ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম এই গানটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন সিলেটের কয়েকজন শিল্পী। তাদের সাথে ছিলেন সিলেটের সঙ্গীত শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসও।[৩] যা ১৯৭৪ সালে ‘বিদিতলাল দাস ও সঙ্গীরা’ কর্তৃক বাংলাদেশ টেলিভিশনে নওয়াজেশ আলী খানের প্রযোজনায় ও শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ‘বর্ণালী’ অনুষ্ঠানে বিয়ের গান হিসেবে গীত হয়েছিল।[৪] দিব্যময়ী দাশের নাতনি (রামকানাই দাশের কন্যা) কাবেরি দাশ জানিয়েছিলেন আইলারে নয়া দামান গানটির মূল ভার্সনের গীতিকার দিব্যময়ী দাশ।[৫] যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ১৯৬৫ সালের দিকে তার ঠাকুরমা লোককবি দিব্যময়ী দাশ গানটি রচনা করেন।[৬] ১৯৭৩ সালে গানটি দিব্যময়ী দাশের কাছ থেকে সংগ্রহ করে শিল্পী ইয়ারুন্নেসা খানম সিলেট বেতারে রেকর্ড করেছিলেন বেশকিছু শব্দ বদল করে।[৭]

নতুন সংস্করণ

প্রবাসী বাংলাদেশী কম্পোজার মুজাহিদুর আব্দুল্লাহের (মুজা) সংগীত আয়োজনে তোশিবা বেগমের কণ্ঠে নতুন সংস্করণ নয়া দামান অনেকের নজর কাড়ে এবং ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর মূলগানটিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।[৮][৯] বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড চিকিকৎসারত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনজন তরুণ ডাক্তারের স্বল্পদৈর্ঘ্য নাচে গানটি চিত্রায়ণের পর।[২]

তসিবা বেগম

তসিবা বেগম সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজারের কামারগাঁও গ্রামে জন্ম করলেও বেড়ে উঠেন সিলেট নগরীর খাদিম নগর এলাকায়। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মেজ, তসিবার ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল।[৯] গানটি বিভিন্ন মুখে ও নাচে ভাইরাল হলেও কণ্ঠশিল্পী তসিবার কথা কেউ না বলায় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, টিকটকের মাধ্যম খোলা গলায় গান গাওয়া। সেখানে আমার বিভিন্ন ধরনের গান রয়েছে। তার মধ্যে একটি আইলারে নয়া দামান। প্রবাসী শিল্পী মুজা ভাইয়ের কথায় সিলেট থেকে গানটি রেকর্ড করে দেই। পরে মুজা ভাইয়ের ইউটিউবে গানটি প্রকাশিত হয়। মুহূর্তে টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে গানটি ভাইরাল হয়। সবাই ক্রেডিট নিচ্ছে আমরা যে গান গাইলাম কেউ তো আমাদের কথা বলছে না।[১০]

গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তসিবা আরটিভি নিউজকে জানান, আমি সিলেটের পুরোনো গানগুলো গাইতে চাই। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সিলেটের গানের বিপুল ভান্ডার তুলে ধরতে চাই। তবে ঠিক রাখতে চাই মূল সুর ও কথা, যাতে এগুলো বিকৃত হতে হতে হারিয়ে না যায়।[১১]

রামকানাই দাশের সংস্করণ

নয়া দামান গানটি হাসপাতালের করিডোরে তিন ডাক্তার কর্তৃক নাচের সঙ্গে ভাইরাল হবার পর নিউ ইয়র্ক থেকে বিতর্ক উসকে দেন প্রয়াত দিব্যময়ী দাশের কন্যা ও পুত্র। ফেসবুক পোস্ট হতে প্রাপ্ত তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ‘দিব্যময়ী দাশ এই গানটি শ্রদ্ধেয় শিল্পী ইয়ারুন্নেসা খানমকে শিখিয়েছিলেন এবং তিনি প্রথমবার এ গান রেডিওতে গেয়েছিলেন। দিব্যময়ী দাশ রেডিওর এনলিস্টেড গীতিকার না হওয়ায় সেই সময় উনার নাম রেডিওতে আসেনি। পরবর্তীতে দিব্যময়ী দাশের পুত্র পণ্ডিত রামকানাই দাশ এ গান প্রথম রেকর্ড করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত তাঁর একক অ্যালবাম ‘অসময়ে ধরলাম পাড়ি’তে।’[৪]

"আইলোরে নোয়া জামাই"
অসময়ে ধরলাম পাড়ি অ্যালবাম থেকে
রামকানাই দাশ কর্তৃক একক সঙ্গীত
রেকর্ডকৃত২০০৪
স্টুডিওবেঙ্গল ফাউন্ডেশন
লেখকদিব্যময়ী দাশ

আইলোরে নুয়া জামাই আসমানের তারা

বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের ন্যাড়া
জামাই বও জামাই বও

আইলোরে জামাইয়ের ভাই বও দেখতে বটের গাইল
উঠতে বইতে ছয় মাস লাগে করইন আইন চাইন
জামাই বও জামাই বও

আইলোরে জামাইয়ের বইন হিজলের মুড়া
টুকনি দিলে ফ্যাদা পড়ে ষাইট সত্তুর বুড়া
জামাই বও জামাই বও

আইলোরে জামাইয়ের ভাই আসমানের চাঁন
যাইবার লাগি কওরে যদি কাইট্টা রাখমু কান
জামাই বও জামাই বও

কুঞ্জের ভিতরে জামাই বইছে গো সাজিয়া
পাড়ার লোকে দেখতো আইছে দিব্যময়ীর বিয়া

জামাই বও জামাই বও

ভাইরাল হওয়া সংস্করণ

ভাইরাল হওয়া গান নিয়ে অভিযোগ করে তসিবা আরটিভি নিউজকে বলেন, টেলিভিশনে নিউজ হয়েছে কিন্তু আমার নাম সেভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ছায়াছবি নাকি গানটি বিখ্যাত করেছে। অথচ ছায়াছবি আমার গান ব্যবহার করেছে।[১১]

"নয়া দামান"
বিদিতলাল দাস ও সঙ্গীরা কর্তৃক বর্ণালী’ অনুষ্ঠানে বিয়ের গান
রেকর্ডকৃত১৯৭৪
স্টুডিওবাংলাদেশ টেলিভিশনে
ধারালোকগীতি
লেখকগিয়াসউদ্দিন আহমদ
প্রযোজকনওয়াজেশ আলী খান

আইলারে নয়া দামান আসমানের তেরা

বিছানা বিছাইয়া দিলাম শাইল ধানের নেড়া
দামান বও দামান বও

ও দামান কওরে কতা খাওরে বাটার পান
যাইবার কতা কও যদি কাইট্টা রাখমু কান
দামান বও দামান বও

আইলারে দামানের ভাই হিজলের মুড়া
ঠুনকি দিলে মাটিত পরইন ষাইট/সত্তইরের বুড়া
দামান বও দামান বও

আইলারে দামানের বইন কইবা একখান কতা
কইনার ভাইর ছে’রা দেইখা হইয়া গেলা বোবা
দামান বও দামান বও

আইলারে দামানের ভাই বও দেখতে বটের গাইল
উঠতে বইতে ছয় মাস লাগে করইন আইন চাইন

দামান বও দামান বও

জনপ্রিয়তা

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সোলাইমান সুখন নিজের ফেসবুকে নয়া দামান গানের সঙ্গে নেচে ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন।[১২] স্টার জলসা খ্যাত 'মহাপীঠ তারাপীঠ' ধারাবাহিকের মা তারা, নবনীতা দাস নিজের ইনস্টাগ্রামে 'আইলারে নয়া দামান' গানের সংগে শরীরভর্তি গয়না পরে সেজে-গুজে নাচেন।[১৩] নয়া দামান গানটি কয়েক মাস ধরে সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিংয়ে থাকায় গানটির সঙ্গে নিজের বিয়ের রংয়ের অনুষ্ঠানে নেচে ইন্টারনেট জগতে ভাইরাল হন খুলনার খাদিজা ইসলাম সূচনা নামের এক মেয়ে,[১৪] যা ছায়াছবি নামে একটি ইউটিউব পেজে ভাইরাল হয়।[১৫] পরবর্তীতে সঙ্গীত শিল্পী সালমার কণ্ঠেও গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।[১৬]আইলারে নয়া দামান এই জনপ্রিয় গানের সাথে মিল রেখেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কুরবানীর গরুর নাম রাখা হয় ‘নয়া দামান’। ঈদুল আযহার আগে নয়া দামান নামের এই গরুটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বেশ আলোচনা উঠে।[১৭]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী