নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী

ভারতীয় ফুটবল খেলোয়াড়

নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী (জন্ম: ২৭ আগস্ট ১৮৬৯ — মৃত্যু: ১৭ জানুয়ারি ১৯৪০) (ইংরেজি: Nagendra Prasad Sarbadhikari) ভারতে ফুটবল খেলার জনক ।[৩][৪] তার উদ্যোগেই ভারতীয়দের মধ্যে ফুটবল জনপ্রিয় হয়। [৫][৬] তিনি ক্রিকেটও খেলতেন। তিনি অনেকগুলি ক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং সংগঠন করেছিলেন। তিনি একজন সাহিত্যকারও ছিলেন। তাকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করেছেন ধ্রুব ব্যানার্জী। ছবিতে নগেন্দ্রপ্রসাদ ভূমিকায় ছিলেন দেব

নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী
জন্ম(১৮৬৯-০৮-২৭)২৭ আগস্ট ১৮৬৯
মৃত্যু১৭ জানুয়ারি ১৯৪০(1940-01-17) (বয়স ৭০)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত
মাতৃশিক্ষায়তনহেয়ার স্কুল[১]
সন্তানমুকুর সর্বাধিকারী (পুত্র)[২]

প্রথম জীবন ও পরিবার

নগেন্দ্রপ্রসাদের আদি নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রাধানগরে। তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তার পিতা সূর্যকুমার সর্বাধিকারী ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনে প্রথম ভারতীয় ডিন ছিলেন। মাতা হেমলতা দেবী। শোভাবাজারের রাজা আনন্দকৃষ্ণ দেবের মেয়ে কৃষ্ণকমলিনীর সঙ্গে নগেন্দ্রপ্রসাদের বিবাহ হয়েছিল।[৭] নগেন্দ্রপ্রসাদের ভাই বিনয়েন্দ্র প্রথম ভারতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়ন। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েল্‌সের মের্সনিক লজের সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় ডাঃ সত্যপ্রসাদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নন-অফিসিয়াল উপাচার্য দেবপ্রসাদ এবং কর্নেল সুরেশপ্রসাদ তার দাদা। তার ভাইপো বেরী সর্বাধিকারী ছিলেন বিখ্যাত বাঙালী ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক।

ক্রীড়াপ্রতিভা এবং সংগঠন

নগেন্দ্রপ্রসাদ মাত্র ১০ বছর বয়েসে ময়দানে গোরা সৈন্যদের ফুটবল খেলা দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি হেয়ার স্কুলে তার সহপাঠীদের সঙ্গে দল গড়ে ফুটবল খেলতে আরম্ভ করেন। এর মাত্র দুই বছর আগে ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে গোরা সৈন্যরা ময়দানে ফুটবল খেলা শুরু করেছিল । প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক মিঃ স্ট্যাক নগেন্দ্রপ্রসাদের উৎসাহ দেখে তাকে খেলার শিক্ষা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি ময়দানে অনেকরকম খেলার নেতৃত্ব দিতেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি বাংলার অদ্বিতীয় সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসাবে বিখ্যাত হয়েছিলেন।[৮]

এই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন জেলায় ক্লাব সংগঠন করতে থাকেন। তার প্রতিষ্ঠা করা ওয়েলিংটন ক্লাব গড়ের মাঠে দেশীয় ব্যক্তিদের প্রথম খেলার তাঁবু। তিনি এই ক্লাবে ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি, হকিটেনিস খেলার ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি আরও কিছু ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেমন বয়েজ ক্লাব (ভারতের প্রথম ফুটবল সংগঠন), ফ্রেন্ডস ক্লাব, হাওড়া স্পোর্টিং ক্লাব, প্রেসিডেন্সি ক্লাব প্রভৃতি। এইসমস্ত ক্লাবে জাতিধর্মনির্বিশেষে সবাই খেলতে পারত। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত শোভাবাজার ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি হাওড়াতে বন্ধু বামাচরণ কুণ্ডুর সাথে ভারতের প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘ট্রেডস কাপ’ আয়োজন করেন। তার চেষ্টায় বিভিন্ন শ্রমজীবী শ্রেণীর যুবকেরা অভিজাত ঘরের ছেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে শরীরচর্চা করার সুযোগ পান। এই নিয়ে ওয়েলিংটন ক্লাবে আপত্তি ওঠায় তিনি ক্লাব ভেঙে দেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন-

"আমি বুকের রক্ত দিয়ে ক্লাব তৈরি করেছি, বংশপরিচয় নিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করিনি৷ জাতপাত নিয়ে খেলার আসর আমি সাজাব না, তৈরি করব খেলোয়াড় জাত।"[৯]

তার প্রচেষ্টাতে ক্রিকেটে হ্যারিসন শিল্ড প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল এবং সাহেবদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে দেশীয়দের প্রতিযোগিতা করার রাস্তা খুলে গিয়েছিল। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয়দের নিয়ে কলকাতায় বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আই.এফ.এ শিল্ড গঠনে উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র ভারতীয়। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে শোভাবাজার ক্লাব সমস্ত ইউরোপীয় ক্লাবকে পরাজিত করে ট্রেডস কাপ জয় করে। সেই বছরই আই.এফ.এ শিল্ড খেলা হয়। ১৯১১ সালে মোহনবাগান শিল্ড জয় করার আগে এটা বাঙালি ক্লাবের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল। ১৮৯৩ সালে আই.এফ.এ শিল্ডে শোভাবাজার ক্লাব একমাত্র ভারতীয় দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে।[১০] ১৮৭৭ থেকে ‌১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ অবধি তিনি ৭০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছিলেন।[৮]

ক্রিকেটে তিনি প্রথম ভারতীয় বোলার যিনি ইংরেজদের সাথে খেলায় ওভার হেড বোলিং করতে পারতেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার মোনা বসু এবং সুধন্বা বসু তার শিষ্য ছিলেন। বাঙালি যুবকদের নিয়ে রাগবি দল তিনিই প্রথম তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে তিনি ক্লাব থেকে রাগবি খেলা উঠিয়ে দেন।[৮]

নগেন্দ্রপ্রসাদ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবে হকি এবং টেনিস খেলার সূচনা করেন। এই ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তৎকালীন সময়ে বাঙালি ফুটবলাররা খালি পায়ে খেললেও তিনি বুট পরে খেলতেন। তিনি বিদেশী খেলার প্রবর্তক হলেও বিভিন্ন দেশীয় খেলাতেও উৎসাহী ছিলেন। দর্শক ও খেলোয়াড়দের কাছে তিনি হুজুর বলে পরিচিত ছিলেন।[৮]

অন্যান্য

নগেন্দ্রপ্রসাদ ইংরেজিসংস্কৃত ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি কবি, সাহিত্যরসিক, নাট্যকার এবং নাট্যসমালোচক ছিলেন। তিনি শেক্সপিয়ারের টেম্পেস্ট এবং মার্চেন্ট অফ ভেনিস অনুবাদ করেছিলেন। হিন্দুধর্মশাস্ত্র এবং তন্ত্রশাস্ত্রে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি কীর্তন গানেও দক্ষ ছিলেন।[৮]

নগেন্দ্রপ্রসাদ বাঙালি যুবকদের সামরিক ও আধা-সামরিক শিক্ষা দেবার চেষ্টা ছাত্রাবস্থা থেকেই শুরু করেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাঙালি পল্টন তৈরি করেন।[৮]

চলচ্চিত্র

নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর জীবন অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্র গোলন্দাজ নির্মাণ করেছেন পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জী। যা মুক্তি পেয়েছে ১০ অক্টোবর ২০২১ ইংরেজি। এই ছবিতে নগেন্দ্রপ্রসাদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেব[১১]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী